মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০



                                     ব্যাকওয়ার্ড
                                       সহেলি দেব
                 একতারাতে তুষ্ট হওয়া বরফ পুষ্ট নদীর
                 সন্ধ্যা আবেগ উল্কা স্রোতে গলছে দরদীর...
                 মুগ্ধ চোখে দেখছি, শুধু হৃদয় তখনও কাঁপা
                তোমার পাড়িয়ে যাওয়া ফুলই; আমার কনকচাঁপা!
                তবু তোমার ফেলে আসা জিভে; রয়ে গেছে প্রায়শ্চিত্ত-
               এ যুগে দিব্যিরা বড়ই দুর্বল তবু বহুল প্রচলিত।
               জোনাকি মিশ্রিত হৃদ বুকের কোনও প্রথায়...
               জেনে রাখো মেহবুব সাজিয়েছে ফুল লতায়পাতায়।
               হাতে হাত রেখে আলো আঁধারির কোনও সন্ধ্যায়
               ভালোবাসার গভীরে; প্রবলতম বুকের অধ্যায়...
              তারপর বহুদিন পেন্সিলের দাগ মুছে নিয়ে সিলেটে-
              কিছু অক্ষত স্মৃতিদের ভুলিয়ে দিতে দিতে...
             পালটে যায় রঙ, পালটে যায় মন ছদ্মবেশী হতে হতে
              তবে তুমিও আস্থা রেখো মূল্যহীন ফেরতের...

                     অস্থির স্নায়ুযুদ্ধরা
                       রাহুল গাঙ্গুলি

                    নদীটা চলছিল।থেমে গেলো হঠাৎ _____
                    স্নান করছিলো যারা
                   আচমনীয় রীতিনীতি থেকে ভাঙা সেতু
                   ছটফট্ ছটফট্।লালরঙ চিরকালই হিংসুটে
                  স্নানঘাট মনোরঞ্জন ~  ১লা মানুষ
                  নাহ।মানুষ নয় মহিলা
                  নাহ।মহিলা নয় মা
                 নাহ।মা নয় ~ ম-ম গন্ধের থ্যাঁতলানো যোনি
                 পুড়ে যাওয়ার শোধবোধ
                 নখের এক্কাদোক্কায় স্বয়ংক্রিয় ডিটোনেটর্
                লুকিয়ে থাকা শেকড় ঘটায় বিস্ফারণ
                নাহ।এটা ২০২০ নয়
                বরং ~ ২০৫০ সাল।ঘটছে।ঘটবে এবং ঘটবেই
                তার নামও প্রমীলা


               সরল বর্গীয় শব্দসমূহ
                          সায়ন্তিনী হোড়

                    ঘাসের ক্লিভেজ ছুঁয়ে যাওয়ার সময়
                   আকাশ ও অধ্যায়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হয়
                  ঠোঁট গলে পড়লে
                  বুদবুদের গায়ে চুমুর চিহ্ন এঁকে দিই
                 পাখির পালকের শব্দচুর
                 আমার নথ ভেঙে দেয়,
                 তখন এক একটা নগ্ন অভিধানের সাথে
                 সম্পর্ক ছিন্ন হতে থাকে সরলবর্গীয় শব্দের
                লুপ্তপ্রায় আকাশের গলায় ভেসে ওঠে
                অভিযোগের আঙুল
                 দূরত্ব : অভিমানের  ঠোঁট  : শূন্যতা   

                   পৃথাগোরাসের গিটার
                                রথীন বণিক

              কুঁচানো গিলোটিন ভেঙে উঠে আসুক চাতাল
             এই ক্রমজমান ত্রিভুজে
             চোখ থেকে টিপটপ ইহলোক খুলে গেলে
            আর ডাকব না
            সফেন স্ট্রীমার
            রাশি রাশি আইওনক্সে
           এনো না অগোছালো পাহাড়
           ওই ঘনায়মান হারপিকে
           মিথ্যে মিথ্যে চুষে
          হেসে উঠুক পৃথাগোরাসের গিটার ।

                                    শেষ অংক 
                        বিমল মণ্ডল

                    অমাবস্যায় ব্যর্থ চাঁদ শুয়ে
                    অন্ধকার নামে তোমার উঠানে
                    মন ঢাকো নিরবধি
                    যন্ত্রণা তারাদের মাঝে
                    তবুও হেঁটে যাও  
                    অনবদ্য এক শব্দময়তায়
                    সারারাত আকাশ আকাশের বিলোল প্রাসাদে
                    স্বপ্নের জগতে মজেছে চাঁদ
                    তুমিও পরিচ্ছন্ন ভোরে
                    চাঁদে আগুনের
                    শেষঅঙ্ক দেখে গেলে! 
                                    ঠোঁট
                                        প্রদীপ সিং

                           গোলাপের পাপড়ির মতো -
                           লালরঙে বিকেলের কমনীয়তা ।
                           মনে হয় স্পর্শেই নেমে আসবে -
                          এক নাতিশীতোষ্ণ অনুভূতি ।
                          ভাঁজে ভাঁজে তার কামনার আকাঙ্ক্ষা ।
                          চুম্বনের অপেক্ষায় তার অপেক্ষা ।
                         ঠোঁট পাল্টে গেলে ,
                         উষ্ণতার কোমলতার ভাগে  ফারাক পড়ে না ?


                                 ডাইমেনশন  

                                  অনুপ মণ্ডল
      
 অন্তর্ঘাতের ফিসফিসানি।নদীনালা;গুহা ও পর্বত
চরে বেড়ানো হাঁস ও হাঁসুলীর প্রতিক্রিয়াশীল উঠোন
লতিয়ে বাড়ছে টালির চালে লাউয়ের ডগা ও প্রহেলিকা
আমোদে আছে আহ্লাদে আছে,আহ্লাদীর মা দিদিশাশুড়ি
                                                   কেবল আমিই শুধু
দড়ির ক্ষতমুখ আগুন আক্রান্ত থুতুর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে
                       অপর প্রান্ত ষট্ চক্রে বসিয়ে রেখেছি
                         ডাইমেনশন হারানো গুহাবাসী জীবন
পাথরের খাঁজে ছায়াপুরুষ হয়ে শুয়ে থাকি,কাক ডাকে
ভরদুপুরে মিথিলার বন‍্যা;ম‍্যামথ শিকারের উল্লাস ধ্বনি
               পাথরের গায়ে আঁকিবুকি কাটি,বানিয়ে নিই
     শেয়ালচতুর্দশীর বোধগম‍্য সহস্রাধিক চোখ ও এক
সময়রূপ চতুর্থ মাত্রা উদ্ধারকারি ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক রমণী


                                               করমর্দন
                     বদরুদ্দোজা শেখু


                    হাত মেলাই। হাত ধরি।
                   হাত ধরি উষ্ণতার জন্য। সদিচ্ছার জন্য।
                   বিশ্বাসের জন্য। আস্থার জন্য। বন্ধুত্ত্বের জন্য।
                   অন্য কোনো অজুহাত নাই , লক্ষ্য বা 
                   উপলক্ষ্য নাই ।অভিসন্ধি নাই।অপবুদ্ধি নাই।
                   হাত ধরি। করমর্দন করি।
                  শুভেচ্ছা দেওয়ার জন্য। সৌজন্য
                  জ্ঞাপন করার জন্য। সাক্ষাৎকে
                  সুন্দর করার জন্য। সম্মিলনকে
                 নন্দিত করার জন্য। পরিপার্শ্বকে
                 স্বচ্ছন্দ সহজ আর অনুকূল করার জন্য। সখ্যতার
                 বোধকে জাগ্রত করার জন্য , অন্যতাকে
                 দূর করার জন্য , দূরত্ত্বকে নৈকট্য -গ্রথিত
                 করার জন্য , শিষ্টাচারকে সম্পৃক্ত
                রাখার জন্য, আর আনন্দের আবহ রাখার জন্য।
               এর মধ্যে অন্য কোনো
               ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা যদি কেউ করে
               অন্য কোনো সম্পর্ক যদি কেউ ধরে
              অন্য কোনো গন্ধ যদি শুঁকে
              অথবা অন্য কোনো দুষ্ট ছায়া দ্যাখে
               তাকে কখনোই  মিত্র বলতে পারবো না ,
               বরং বলবো তাকে ঔদার্যের গুপ্তচর,
               আনন্দের হন্তারক, অনাস্থার তল্পিবাহক ।।


                      বাড়িয়ে দিয়ে হাতখানি
                                  রূপাঞ্জলি ব্যানার্জী
   

        আজও  কাকভোরেই ঘুমটা ভেঙে যায় মৃদুলার।অলসভাবে বিছানায় কিছুটা গড়াগড়ি দিয়ে উঠেই পড়ে শেষমেশ। এতদিনের অভ্যাস  তাই এই অখন্ড অবসরের সকালগুলোও এখনো একই সময়ে শুরু হয়। এককাপ চা  নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসে।ক'দিন ধরেই একটা ভাবনা মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে তার।কথাটা জানার পর থেকেই সব কেমন যেন উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে।কিছু  স্মৃতি কুয়াশার মতো যেন ঘিরে রেখেছে মনটাকে।
  
        অকালে স্বামী মৃত্যু বা আস্তে আস্তে সন্তানদের ব্যস্ত জীবন থেকে নিজের ব্রাত্য হয়ে যাওয়া কোনোটাই মৃদুলাকে এতোটা একা করে দেয়নি যতটা আজ সে।দীর্ঘ তিরিশ বছরের শিক্ষিকা জীবনের অবসান তাকে চরম একাকীত্বের অবসাদে ডুবিয়ে দিয়েছে।এখন তার একলা জীবনের  সারাদিনের সঙ্গী বলতে শুধু কমলা।সেই সংসার জীবনের শুরু থেকে আজও একইভাবে মৃদুলার পাশে। বর্তমানে মৃদুলার সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা সবটা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গী।আর এই কমলার কাছে কথাটা যখন জানলো তখন মৃদুলার তার একলা জীবনটাকে আরো একবার নতুন উদ্যমে সাজাতে ভীষণ ইচ্ছে করলো। নতুন করে আরেকবার মানুষ গড়ার ইচ্ছেটা জেগে ওঠে তার শিক্ষিকা মননে।তাছাড়া তার সেদিনের করা ভুলটাও আজ যদি শুধরে নেওয়া যায়।সেদিন সমাজ আর পরিবারের চাপে আর বাকি দুই সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে  সবটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল সে।কিন্তু আজ আর তার কোনো পিছুটান নেই।নেই কোনোরকম চাপের ভয়।তাই মনস্থির করেই নেয় ভাবনাটা কে বাস্তবায়িত করবেই। 
      অনেক বোঝানোর পর কমলা তার মেয়ে আর তার সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে মৃদুলার সাথেই থাকতে রাজি হয়।মৃদুলা ওদের আশ্বস্ত করে সে শিশুটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে উপযুক্ত  শিক্ষা দিয়ে এই সমাজের একজন করে তুলবে। ওর যোগ্যতাই হবে ওর একমাত্র পরিচয়। আর কোনো শিশুকে মৃদুলা  হিজড়ে হওয়ার অপরাধে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিতে দেবেনা। এটাই হবে তার ভুলের একমাত্র  প্রায়শ্চিত্ত।


                                            লাথি
                             আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস   
  

   "কি গো দাদি,কি করছ?"
     "বিড়ি বাঁধছি।আয়।বোস।"
     জরিনার এটা নিজের দাদি নয়।তার নিজের দাদি নেই।অনেক দিন আগে স্তন ক‍্যানসারে মারা গেছে।জরিনার এটা পাড়া দাদি।নাম নূর বিবি।
     জরিনা বসল গিয়ে,"কেমন আছো?"
     "ভালো আছি।তুই ভালো আছিস?"
     "হ‍্যাঁ দাদি,ভালো আছি।"
      নূর বিবি তখন বলল,"তোদের যে এখন ভালো থাকারই বয়স।তা ভালো তো থাকবিই ।"তারপর বলল,"তা হ‍্যাঁ রে জরিনা,শুনলাম, তোর বলে বিয়ের কথা আলোচনা চলছে?কাল বলে তোকে দেখতে লোক আসবে?তা সত্যি নাকি?"
      জরিনা বলল,"হ‍্যাঁ, সত্যি।"
      নূর বিবি তখন বলতে লাগল,"তা এখুনি বিয়ে করে ফেলবি?সে কি রে!সবে তো ক্লাস নাইনে উঠলি।কলেজে পড়বি না?"
      জরিনা বলল,"পড়ার ইচ্ছে তো ছিল।কিন্তু মা আর না পড়ালে কি করে পড়ব?"
     "তোর মা'র কথা তুই শুনবি কেন?সে পড়াশোনার মূল্য কি বোঝে?"
      জরিনা তার উত্তরে বলল,"মা-রও হয়তো ইচ্ছে ছিল পড়ানোর।কিন্তু না পারলে কি করে পড়াবে?মা-র অবস্থার কথাও তো দেখতে হবে।জুলুম করে শুধু পড়লে তো হবেনা।বাপ বেঁচে থাকলে অবশ্য এখন বিয়ে দিত না।আমিও বিয়ে করতে রাজি হতাম না।মা-র হঠাৎ যদি এখন কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কে বিয়ে দিবে?চতুর্দিক ভেবে চিন্তে দেখে বিয়ে করতে রাজি হলাম।"
       নূর বিবি অমনি টপ্ করে বলে ফেলল,"কেন,আমরা ছিলাম না?আমরা তোর বিয়ে দিতাম। আমরা বুঝি তোর কেউ না!"
       জরিনা বলল,"কেউ হবেনা কেন?আমি কি বলেছি,কেউ হও না?"
        নূর বিবি বলল,"মুখে না বললে কি হবে? তোর কথা থেকে সেটাই বোঝা যাচ্ছে।যাইহোক,কোন দেশে বিয়ের কথা আলোচনা চলছে তাই বল।"
        জরিনা বলল,"গ্রামের নাম রূপ খালি।"
        নূর বিবি বলল,"অতদূরে বিয়ে করবি?যদি তোকে মেরে ফেলে?তা অতদূরে কে বিয়ে লাগাল শুনি?"
        জরিনা বলল,"সম্পর্কে আমার খালুজি হয়।"
        "তোর মায়ের কি বুদ্ধি নেই?অতদূরে কেউ মেয়ের বিয়ে দেয়? যেতে পারবে তো?বাসে তো চাপতে পারে না।বমি করে।মাথা ঘোরে বলে। তাহলে একটা বেটির অতদূরে বিয়ে দেওয়া কেন?তা ছেলে কি করে?"
       "কি করবে?জমিতে চাষ আবাদ করে।"
       "তারমানে ছেলে মাঠে খাটে তাইতো?"
       "হ‍্যাঁ।" তারপর জরিনা বলল,"তাছাড়া আমাদের মতো ঘরের মেয়েছেলেদের কি চাকরি করা ছেলের সাথে বিয়ে হবে?কোন দিনই হবে না।"
        নূর বিবি সেটা মানতে পারল না।সে বলল,"না হওয়ার কি আছে। কপালে থাকলে হতেও পারে।"
       জরিনা বলল,"যদিওবা হয় লাখে একটা। ওকে হওয়া বলে না।"
       "বেশ,তোর কথাই ঠিক হল।"জরিনার কথা নূর বিবি পরে মেনে নিল।নিয়ে বলল,"ছেলে দেখতে ফর্সা তো?"
        "খুব একটা ফর্সা হবেনা।সে না হোক।ওতে অসুবিধা নেই।আমি তো ফর্সা আছি।"
       শুনে নূর বিবি চমকে উঠল,"কি বললি!ছেলে ফর্সা হবেনা?তোর মতো মেয়ে শেষে মাঠে খাটা একটা কালো কুচ্ছিত রাখাল ছেলেকে বিয়ে করবি?ছি:!ছি:!ছি:!"
      জরিনা বলল,"তুমি যত কালো বলছ, অত কালো হবেনা।"
      "তুই দেখেছিস?"
      "দেখিনি।"
      "তো?"
      "আমার সেই ঘটক খালুর মুখে শুনেছি।"
      "তারমানে যা বলেছি তার থেকে আরো বেশি কালো হবে ধ‍র।ঘটকরা কোনদিন সত্যি কথা বলে না।তোকে ওরকম বলেছে তাই।আমি বলছি, তুই ও ছেলেকে বিয়ে করিসনা।কালো ছেলে বিয়ে করে জীবনে সুখী হতে পারবিনা।আমার কথা শোন।টাকা পয়সা লাগছে না নাকি?"
      "তো লাগছে না?টাকা ছাড়া আজকাল বিয়ে আছে নাকি?পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ লাগছে। বাপের তো কিছু ছিল না।বাড়ির মাটি টুকু ছাড়া।তবে মা তার বাপের মাঠান পাঁচ কাঠা জমি পেয়েছে।ওই জমিটা বিক্রি করে আমার বিয়ের টাকা দিবে।"
       টাকা লাগার কথা শুনে নূর বিবি আরো চমকে উঠল,"কি বললি,পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগছে!" তারপর সে বলল,"টাকা দিয়ে কালো ছেলে বিয়ে করবি কেন?টাকা যদি দিতেই হয় একটা ভালো ছেলেকে দিবি।তোর মা না হয় স্কুলে লেখাপড়া করেনি।তার বুদ্ধি কম থাকতেই পারে।তুই তো লেখাপড়া করেছিস।তা-ও তোর বুদ্ধি এত কম!"
       "কি করব বলো।আমার কপালে যদি কালো ছেলে লেখা থাকে ফর্সা ছেলে পাবো কোথায়?"
       নূর বিবি অমনি মুহূর্তের মধ্যে জরিনার কথা উড়িয়ে দিল,"ছাড় তোর কপাল!আমার কথা শুনে ও ছেলেকে তুই বিয়ে করবিনা।ফর্সা ছেলে বিয়ে কর।"
       জরিনা বলল,"তোমার কথা শুনে করব নাহয়।কিন্তু ফর্সা ছেলে পাবো কোথায়?তোমার হাতে আছে নাকি?"
       "আমার হাতে আছে কি রে!আছেই তো।না থাকলে বলব কেন?খুব সুন্দর একটা ছেলে আছে আমার হাতে।দেখতে একেবারে নায়ক।তোর সঙ্গে দারুণ মানাবে ।রোজগার করে খুব ভালো।তোর কোন জিনিসের অভাব রাখবে না।পাকা বাড়ি। বাড়ির ভিতরেই পায়খানা, বাথরুম।মাঠে পায়খানা ফিরতে যেতে হবেনা।নিজস্ব মোটরসাইকেল আছে।মোটরসাইকেলে চেপে দু-জনে হলে সিনেমা দেখতে চলে যাবি।আহা,কি সুখ!"
       জরিনা বলল,"ছবি আছে?"
       "থাকবে না কেন?ঘরে বাক্সের ভিতর ঢোকানো আছে। বের করে এনে তোকে দেখাচ্ছি।"নূর বিবি অমনি ঘরের ভিতর থেকে বাক্স খুলে ছবি বের করে এনে জরিনাকে দেখাল,"দ‍্যাখ!"
       জরিনা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখল।পরনে নীল জিনস প‍্যান্ট।গায়ে রঙিন শার্ট।চোখে চশমা পরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে।দেখতে দেখতে জরিনা একবার নূর বিবির দিকে তাকাল।
       নূর বিবি বলল,"দেখতে নায়ক নয়?"
       জরিনা মুচকি হেসে বলল,"হ‍্যাঁ।"
      নূর বিবি এবার ছবিটা তার হাত থেকে নিয়ে বলল,"এই ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে লাগাব।"
       "লাগাও।"জরিনা তখন মুখে বিয়ে লাগাতে বললেও পরে বলল, "বড়লোকের ছেলে আমার মতো গরিবের মেয়েকে বিয়ে করবে?"
       নূর বিবি বলল,"করবে।"
       "করবে?"
       "হ‍্যাঁ, করবে।"
       জরিনা তখন বলল,"করেও যদি টাকা বেশি চাইবে।আমার মা-র কি বেশি টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে?তাহলে বিয়ে আর হচ্ছে না।"
       নূর বিবি তখন অমনি বলে দিল,"অত চিন্তা করছিস কেন?এক টাকা চাইবে না।তোকে শুধু বিয়ে করবে।"
      "তোমাকে বলেছে?"
      "না বললে জানলাম কি করে?কালই তো ফোন করেছিল। করে একটা ভালো মেয়ে দেখতে বলল আমাকে।বলল,কোন টাকা পয়সা লাগবেনা।শুধু মেয়েটা ভালো চাই।গরিব ঘরের মেয়ে হলেও কোন অসুবিধা নেই।তাই তোকে বলছি, ওই কালো ছেলে তুই আর বিয়ে করবি না।রাকিবকে বিয়ে কর।আরে,সুন্দর স্বামী কাছে আর স্বর্গে থাকা এক জিনিস।এক বেলা খেতে না পেলেও শান্তি।বুঝলি?"তারপর বলল,"রাকিব কে চিনতে পারলি?"
      জরিনা বলল,"কে?"
      নূর বিবি বলল,"যার ছবি দেখলি।আমার বাপের দেশে বাড়ি।থাম,রাকিবকে একবার ফোন লাগিয়ে দিই।কথা বল।"
      জরিনা ফোন লাগাতে নিষেধ করল,"থাক,এখন ফোন লাগাতে হবে না।আমি ফোনে কথা বলব না।লজ্জা লাগবে।"
      "ফোনে কথা বলবি তো লজ্জা কি?"নূর বিবি শুনল না। অমনি ফোন লাগিয়ে দিল।
      "হ‍্যালো!"
      "কে,রাকিব?"
      "হ‍্যাঁ, বলো।"
      "বলছি,তুই একটা মেয়ে দেখতে বলেছিলি না?তো একটা মেয়ে দেখেছি।মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর।আমাদের নিজেদের মধ্যে।ব‍্যবহারও খুব ভালো।যাকে বলে অমায়িক মেয়ে।বিয়ে করলে তুই সুখী হবি জীবনে।শান্তি পাবি জীবনে।সে এখন আমার কাছে বসে আছে।কথা বল।..." বলতে বলতে নূর বিবি জরিনাকে ফোনটা হঠাৎ দিয়ে দিল,"নে জরিনা,কথা বল।"
       জরিনার ফোনটা না ধরে আর উপায় হল না,"হ‍্যালো!"
      "কে,জরিনা?"
      "হ‍্যাঁ।কিন্তু আপনি কি করে জানলেন,আমার নাম জরিনা?"জরিনা বলল।
      "এক্ষুনি নূর বিবির মুখে শুনলাম না?"
      "ও,আচ্ছা।"
      "তোমার নামটা কিন্তু দারুণ!"
       জরিনা হাসল।
       রাকিব বলল,"আমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি,জরিনা।তুমি দেখতে খুবই সুন্দরী।তাই আমি তোমাকেই বিয়ে করব।"
        জরিনা বলল,"দাদির মুখে আপনার অনেক গল্প শুনলাম।এবং আপনার ছবি দেখলাম। আপনি বড়লোকের ছেলে। এবং দেখতে খুব সুন্দর।আপনি কি আমার মতো গরিব মেয়েকে বিয়ে করবেন?"
       "বিশ্বাস হচ্ছে না?তুমি ওখানেই থাকো।আমি এক ঘণ্টার মধ‍্যে চলে আসছি।আর হ‍্যাঁ,ফোনটা নূর বিবিকে একটু দাও।তার সঙ্গে জরুরি দুটো কথা আছে।বলে নিই।"
        জরিনা নূর বিবিকে ফোনটা দিল,"নাও।তোমার সঙ্গে কথা বলবে।"
        নূর বিবি ফোনটা হাতে নিয়ে কানে ধরে একটু সরে গিয়ে বলল,"কি,বল।"
        "তুমি এক্ষুনি জরিনাকে এক কাপ চায়ের সঙ্গে ট‍্যাবলেটটা গুলে খাইয়ে দাও।দিয়ে তোমার কাছে বসিয়ে রাখো।আমি এক্ষুনি আসছি।"
        "ঠিক আছে, আয়।"
         সঙ্গে সঙ্গে রাকিব লাইন কেটে দিল। নূর বিবি জরিনাকে তখন বলল,"রাকিব আসছে।তুই একটু বোস।আর হ‍্যাঁ,তোকে এক কাপ চা বানিয়ে দিই।খা।"
       জরিনা বলল,"তা বানাও,খাই।"
       নূর বিবি এরপর ঘর থেকে এক কাপ চা বানিয়ে আনল।জরিনা চা খেতে শুরু করল।খেতে খেতে বলল,"চা খেতে খুব একটা ভালো লাগছে না, দাদি।মন বলছে,ফেলে দিই।"
      নূর বিবি বলল,"আমি কি আর তোদের মতো অত ভালো চা বানাতে পারি?ফেলবি কেন, খেয়ে নে। খেলেই কাজ দেবে।"
       নূর বিবির কথায় জরিনা খেয়েই নিল।সে তাকে বুঝতেই দিল না যে,চায়ের সঙ্গে সে একরকম একটা ট‍্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছে।যা খেলে মেয়েদের শরীরে ও মনে অকস্মাৎ কামক্ষুধা জেগে ওঠে।কোন পুরুষ তার সঙ্গে তখন অনায়াসে মিলিত হতে পারে।তাই  চায়ের স্বাদ তাকে বিস্বাদ লাগছে।
                                             ★ দুই★
       সাদা রংয়ের একটা আর টি আর মোটরবাইকে চেপে রাকিব চলে এল ।এসে বাইকের উপর থেকে নামল।ছবিতে আগে দেখা ছিল বলে জরিনা তাকে দেখেই চিনতে পারল। সত্যি সে নায়ক একটা।
       রাকিবের তাকে আগে দেখা ছিল না।তবু তার তাকানো আর লাজুক হাসি দেখে সে তাকে ঠিকই  চিনতে পারল।অতএব সে তাকে বলল,"আমি বলেছিলাম না,আমি আসব?এলাম?"
      জরিনা মুখ টিপে হাসল।
      রাকিব বলল,"আমি মুখে যা বলি কাজেও তাই করি।অন্য কোন প্রেমিকের মতো আমি শুধু মুখেই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে প্রেমিকার মন ভোলাই না।"
         জরিনা এবারও হাসল।
        রাকিব তার সেই হাসি দেখে বলল,"অপূর্ব!" ও সে পরে নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল,"কই গো,বসতে জায়গা টায়গা দেবে না নাকি?"
        নূর বিবি তাদের বসার জন্য একটা বন্ধ ঘরের দ‍রজা খুলে দিল।দিয়ে বলল,"তোরা এই ঘরে বোস। বসে গল্প কর।আমি বাইরে আছি।কোন প্রয়োজন হলে জানলা দিয়ে টুক করে ডাকবি। তাহলেই আমি দ‍রজা খুলে দেব।"
       ভিতরে তারা ঢুকে গেল।পরে নূর বিবি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।ভিতরে একটা চৌকি আর দুটো বালিশ ছাড়া কিছু নেই।নিচে পা ঝুলিয়ে চৌকির উপর তারা তখন পাশাপাশি বসল।বসে রাকিব বলল,"আমি যে তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি এবার সেটা প্রমাণ হল তো?"
       নত মুখে জরিনা বলল,"হল।"
       রাকিব জরিনার চিবুক ধরে তখন বলল,"তুমি খুব সুন্দর, জরিনা।তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।"
      জরিনা বলল,"আমাকে তাহলে বিয়ে করবেন তো?"
      "করব না তো কেন এসেছি?...." বলতে বলতে রাকিব জরিনার মাথার চুলের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিল ।ও চুল নাড়তে নাড়তে বলল,"তোমার মাথার চুল খুব সুন্দর !"তারপর নাকে শুঁকে ঘ্রাণ নিয়ে বলল,"আ:,কি সেন্ট!কি মেখেছ!"
      জরিনা বলল,"কি মাখব?কিছু মাখি নি।"
      রাকিব এবার জরিনার হাত ধরল।ও তার হাতের আঙুল নাড়ল।নাড়তে নাড়তে বলল,"তোমার হাতের আঙ্গুল গুলো কি সুন্দর!"
     জরিনা এবার চুপ করে থাকল।
     রাকিব এরপর জরিনার ঠোঁটে হাত দিল,"তোমার ঠোঁটও দারুণ !"
      জরিনা এবারও কিছু বলল না।এবারও চুপ করে থাকল।ও চৌকির উপর শুয়ে গেল।
      তার চুপ করে থাকা ও কিছু না বলা আর চৌকির উপর শুয়ে যাওয়া দেখে রাকিব বুঝতে পারল,ওষুধের কাজ শুরু হয়েছে।রাকিব তখন আর দেরি করল না। তার মনের নেশা মেটাতে শুরু করল।....
     এরপর সন্ধ্যার অন্ধকার যখন ঘনিয়ে এল  রাকিব তখন জরিনাকে বলল,"তোমার সঙ্গে যখন আমার শারীরিক সম্পর্ক ঘটেই গেল তখন আমি তোমাকে আর রেখে যাবো না। আজকেই তোমাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করব।তুমি কি বলছ, বলো।"
     জরিনা বলল,"আমি কি বলব?"
     "তাহলে আজকেই আমার সঙ্গে তোমাকে যেতে হবে।"
      জরিনা এক কথায় রাজি হয়ে গেল,"যাবো।"ও রাকিবের হাত দুটো ধরে বলল,"নিয়ে গিয়ে  আমাকে কষ্ট দিওনা হবে?আমি তোমাকে বিশ্বাস করে----"
        রাকিব বলল,"কষ্ট দেব না।"
        "ঠিক আছে, চলো তাহলে।"
        জরিনা বললে পরে রাকিব সঙ্গে সঙ্গে জানলা দিয়ে মুখ বের করে নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল,"কই গো,আছো নাকি?"
        নূর বিবিও সঙ্গে সঙ্গে জানলায় চলে এল, "হ‍্যাঁ, আছি।"
         "তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও।"
         নূর বিবি দরজা খুলে দিল।
         রাকিব তাকে তখন বলল,"আমরা এক্ষুনি বেরিয়ে যাব।"
          রাকিবের বলা হলে পরে জরিনা বলল,"মা তো খুব খোঁজাখুঁজি করবে।এবং কান্নাকাটি করবে।তুমি মাকে বুঝিয়ে রেখো।"
          নূর বিবি জরিনাকে সাহস দিল,"তুই কোন চিন্তা করিসনা।আমি ঠিক বুঝিয়ে রাখব।"
         "ঠিক আছে, আমরা যাচ্ছি তাহলে।"রাকিব বলল।
          নূর বিবি বলল,"তোরা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছিস।আমাকে কিছু দিয়ে যাবিনা মিষ্টি খেতে?"
         "অবশ্যই দিয়ে যাবো।"রাকিব প‍্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে নূর বিবির হাতে দিল,"এটা তোমাকে দিলাম।তোমার যা ইচ্ছা করবে কিনে খেয়ো।"
          নূর বিবি খুব খুশি হল,"আমি পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ি।প্রত‍্যেক নামাজ অন্তে আমি তোদের জন্য জায়নামাজে বসে দোয়া করব।তোদের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়।তোরা যেন খুব সুখী হোস।"ও পরে বলল,"যাবি তো এক্ষুনি চলে যা।শুভ কাজে দেরি করতে নেই।তোরা গেলে পরে আমি সন্ধ‍্যার নামাজ পড়ব।তাছাড়া হঠাৎ যদি তারমিনা চলে আসে তোদের বিয়ে ভালো করেই দিবে।আমারও।"তারমিনা যে জরিনার মা হয় সেটাও বলল।
         শুনে রাকিব তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে জরিনাকে নিয়ে সে তখন ছুটল।
        ওজু করে নূর বিবি এবার সন্ধ্যার নামাজ পড়বে।তার আগে রাকিব তাকে কত টাকা দিয়ে গেল মুঠি খুলে সে একবার দেখে নিল।পাঁচ হাজার টাকা।রাকিবের সঙ্গে এটাই তার চুক্তি হয়েছিল।
                                          ★তিন★
         রাকিবের গাড়ি পবনের চাইতেও বেগে উড়ে চলল।ফলে জরিনার মাথার চুল, বুকের উড়না সব এলোমেলো হয়ে গেল।বাতাসের ঝাপটায় তার চোখ দিয়ে জল ঝরল।জরিনা তাই গাড়ি আস্তে চালাতে বলল,"গাড়ি আস্তে চালাও।"
         মাথায় হেলমেট পরা রাকিব জরিনার কথা শুনতে পেল কি পেল না কোন উত্তর করল না।খানিক বাদে জরিনা ফের বলল,"গাড়ি আস্তে চালাও।"এবার সে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আগের থেকে জোরে বলল।
         রাকিব বলল,"এখন কি গাড়ি আস্তে চালানোর সময় আছে?ধরা পড়ে গেলে তুমি আমি দু'জনেই ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো।তোমার কি কোন অসুবিধা হচ্ছে?"
       "পড়ে যাবো বলে ভয় লাগছে।আর বাতাসে চোখ দিয়ে জল ঝরছে।"
       "পড়বে না।তুমি আমাকে ভালো করে ধরো। আর চোখ বন্ধ করে বসো।"
       রাকিবের কথা মতো জরিনা তাই করল।প্রায় ঘণ্টা খানেকের উপর গাড়ি একইভাবে ছোটাল। এরপর রাকিব শহরে পৌঁছে গেল।শহরের একটা পাঁচতলা হোটেলে গিয়ে তারা উঠল।জরিনাকে হোটেলের একটা রুমে বসিয়ে রেখে রাকিব বলল,"তুমি এখানে একটু বসো,জরিনা।আমি একটু আসছি।"
         "কোথা থেকে?"
         "বাইরে থেকে।"
         জরিনা বলল,"আমি একা বসতে পারব না। একা বসতে আমার ভয় করবে।আমিও তোমার সঙ্গে যাবো।"
        রাকিব জরিনাকে সাহস দেওয়ার জন্য তখন বলল,"ভয় কি!কোন ভয় নেই।"
        "না।তা-ও আমার ভয় করবে।কেউ যদি এসে চেপে ধরে আমি তখন কি করব।এখানে আমি কাকে চিনি?"
        রাকিব ফের তাকে সাহস দিল,"বললাম তো ভয় নেই।এখানকার মানুষ সবাই খুব ভালো।কেউ তোমাকে কিছু শুধিয়ে দেখবেনা।বিরক্ত করবে না।"
        জরিনা তখন বলল,"তুমি বাইরে কোথায় যাবে?"
        রাকিব বলল,"সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। এখানে তো সিগারেট পাওয়া যাবে না।তাই রাস্তার ওপারে একটু যেতে হবে।"
       "আজ অমনি থাকো।সিগারেট খেতে হবে না। একটা রাত সিগারেট না খেলে কি হবে?"
        "তোমার মাথা খারাপ !সিগারেট না খেলে হয়?"রাকিব বলল।
       জরিনা যখন কোন ভাবেই তাকে আটকাতে না পারল তখন অত্যন্ত ভীতা হয়ে বলল,"যাচ্ছ যাও।কিন্তু খুব বেশি দেরি করোনা যেন।তাড়াতাড়ি চলে এসো।"
        রাকিব "যাবো আর আসব" বলে বেরিয়ে এল।
                                            ★চার★
         ঘণ্টা খানেক হতে চলল তবু রাকিব ফিরে এল না।একা ঘরে জরিনার ভয় করতে লাগল। তার কাছে কোন ফোনও নেই যে সে ফোন করে ডাকবে।যদি না আসে সে কি করবে?কোন পুরুষ এসে যদি তাকে এখন....ভয়ে জরিনার কণ্ঠতালু শুকিয়ে গেল।আর সে বারবার ঢোঁক গিলল।
        আর ঠিক এই সময় রাকিবের থেকে বয়সে কিছু বড় হবে এক ব‍্যক্তি ঘরে এসে ঢুকল,"কি করছ,সুন্দরী?" বলে।
       জরিনা ভীষণ ভাবে আঁতকে উঠল।তারপর চিৎকার করে উঠল,"কে আপনি?"
       "বলব।অত ব‍্যস্ত হচ্ছ কেন?আগে দরজাটা বন্ধ করতে দাও।বন্ধ করি।"
        জরিনা চিৎকার করে উঠল,"না,দরজা বন্ধ করবেন না।দরজা বন্ধ করবেন না,বলছি।"
        সে শুনল না।দরজা বন্ধ করেই দিল,"কি হল,এবার বলো।"
        "আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন?দরজা খুলে দিন।দরজা খুলে দিন,বলছি।নাহলে রাকিব এসে পাবেনা।"
        সে তখন বলল,"রাকিব আর আসবে না।"
        জরিনা ভীতা হয়ে তখন পিছনের দেওয়ালের দিকে সরে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল,"আপনি কে?এখানে কেন?বেরিয়ে যান।বেরিয়ে যান,বলছি।"
         হাসতে হাসতে সে বলল,"আমি এই হোটেলের মালিক।সুতরাং তুমি বেরিয়ে যেতে বললেই কি আমি বেরিয়ে যাবো?কক্ষনো না।"
        দৃপ্ত কণ্ঠে জরিনা এবার তার উত্তরে বলল,"আপনি হোটেলের মালিক হতে পারেন।তা বলে একা একটা মেয়ের ঘরে আসতে পারেন না।এটা অন‍্যায়।আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান।রাকিব আসুক তখন যা বলার ওকে বলবেন।আমার সঙ্গে আপনার কোন প্রয়োজন নেই।আপনি এখন আসতে পারেন।"
        "রাকিবের সঙ্গে প্রয়োজন আমার মিটে গেছে।প্রয়োজন এখন আমার তোমার সঙ্গে।"
        "আমার সঙ্গে!আমার সঙ্গে আপনার কি প্রয়োজন?"
        সে বলল,"অত দূরে থাকলে কি করে বলব?কাছে এসো তবে তো বলব।"জরিনাকে সে আহ্বান করল।
        জরিনা তখন 'না' বলে বলল,"আপনি ভালোই ভালোই বেরিয়ে যান বলছি।নাহলে রাকিব এলে তাকে সব বলে দিয়ে আপনাকে কঠিন শাস্তি দেওয়াব।"
        জরিনার কথা শুনে সে 'হো হো' করে হাসল,"তুমি এখনো রাকিবের কথা ভাবছ?রাকিব আর আসবে না বললাম না?"
         "কে বলল আসবে না?"
         "আমি বলছি।রাকিব চলে গেছে।"
         "চলে গেছে!কোথায় চলে গেছে?"
         "বাড়ি।"
          জরিনা বিশ্বাস করল না।সে বলল,"এ হতে পারেনা।সে আমাকে ভালোবাসে।আমিও তাকে ভালোবাসি।আর আপনি বললেই হল না?রাকিব সিগারেট কিনতে গেছে।হয়তো দোকানে ভিড় আছে বলে দেরি ক‍রছে।পেয়ে গেলে সে ঠিকই ফিরে আসবে।রাকিব কথা দিয়েছে সে আমাকে বিয়ে করবে।"
          জরিনার কথার উত্তরে সে বলল,"তুমি হলে পাড়া গ্রামের অতি সাধারণ মেয়ে।তাই বুঝতে পারোনি।রাকিব তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে।ফিরে আসবে না।"
        "কি!"
        "হ‍্যাঁ।"
         তখন চমকে উঠলেও পরে জরিনা বলল,"আমি আপনার কোন কথা বিশ্বাস করি না। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।হ‍্যাঁ,আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।"
        "আমি মিথ্যা কথা বলছি না।আমি তোমাকে সত্যি কথাই বলছি,জরিনা।"
         জরিনা তার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হল,"এ কি!আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?"
         সে হাসল,"টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় রাকিব আমাকে বলে গেছে।"তারপর বলল,"জানো তো,মেয়েছেলে আমি কেনাবেচার ব‍্যবসা করি।তোমাকে রাকিব বিয়ে করবে বলে নিয়ে এসে আমার কাছে বিক্রি করেছে।শুধু তুমি নও,আরো অনেক মেয়েকে সে বিয়ে করবে বলে এই ভাবে নিয়ে এসে বিক্রি করেছে।তোমরা মেয়েরা হলে বোকা।তাই তোমরা যেকোন ছেলের প্রেমের প্রলোভনে পড়ে যাও।আর তার সঙ্গে বেরিয়ে চলে আসো।আসার আগে তার সম্পর্কে একবারও কোন কথা ভেবে দেখ না।"
         জরিনা বলল,"আমি তাকে বুঝতে পারিনি।আমি তাকে চিনতে পারিনি।"
         সে বলল,"তুমি তো কোন চেষ্টাই করোনি। তুমি আসলে রাকিবের সুন্দর চেহারা দেখে ভুলে গিয়েছিলে।জানো তো,রাকিব তার ওই সুন্দর চেহারার জন‍্যই তোমাদের মতো মেয়েদের সহজে পটাতে পারে।তোমাকে ধরলে পরে  রাকিবের একশো একটা মেয়ে বিক্রি করা হল।সব তারা তোমার মতো গরিব ঘরের মেয়ে।সব গ্রামে ওর একটা করে মেয়ে ফিট করা আছে।তারাই রাকিবকে মেয়ে ঠিক করে দেয়।রাকিবের কাছ থেকে তারা কমিশন খায়।"
          জরিনার অমনি নূর বিবির কথা মনে পড়ে গেল।তার এই দাদিই তাকে সেরেছে ।সে তখন বুঝতে পারল।এবং পরে তার মনে হল,এখান থেকে সে যদি বেরোতে পারে ওই নূর বিবির বিরুদ্ধে বিচার ডাকবে।তাকে শাস্তি দিতেই হবে। নাহলে সে আরো অনেক মেয়ের সর্বনাশ করবে।তার সর্বনাশের হাত থেকে গ্রামের মেয়েদের বাঁচাতে হবে।বিষয়টা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে হবে।ও সে নিজে একটা সংগঠন গড়ে তুলবে।হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মেয়েদের নিয়ে ।সেই সংগঠনের কাজ হবে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।মেয়েদের সত‍র্ক করা।ভুল পথে ভুল করেও যাতে তাদের পা না পড়ে। ভালোবাসার শিকার মেয়েরা যাতে না হয়।...
        এরপর জরিনা তার কাছে মুক্তি চাইল,"...আপনি আমায় মুক্তি দিন।"
         সে মুক্তি দিল না।....
      
                                            ★পাঁচ★
       রাত্রে জরিনার মা জরিনার খোঁজে বের হল। পাশের বাড়ি গুলো দেখল।ও আরো অনেক লোককে ধরে জিজ্ঞেস করল।কিন্তু জরিনার খোঁজ কেউ দিতে পারল না।জরিনাকে কেউ দেখেনি বলল।জরিনার জন্য তার মনে তখন চিন্তা হল।মন খারাপ করে সে বাড়িতে বসে থাকল। থাকতে থাকতে তার নূর বিবির কথা মনে পড়ল।জরিনা তার কাছে যায়।বসে।সব বাড়ি গেলেও তার নূর বিবির বাড়ি যাওয়া হয়নি।তার কাছে গেলে সে জরিনার খোঁজ পেতে পারে।ভেবে সে নূর বিবির বাড়ি গেল।গিয়ে নূর বিবির পাশ খানে বসল,"চাচি,আজ তোমার কাছে আমার জরিনা আসেনি?"
          নূর বিবি বলল,"না তো।"তারপর বলল,"তুমি এসেছ ভালো হল।নাহলে তোমার কাছে আমাকেই যেতে হতো।তোমার জরিনা আমাকে ফোন করেছিল ।খবরটা দেওয়ার জন্য।"
          জরিনার ফোন করার কথা শুনে সে চমকে উঠল, "ফোন করেছিল!"
         "হ‍্যাঁ।"
         "কখন?"
         "আধঘণ্টা হল।"
         "কিন্তু জরিনার কাছে তো মোবাইল নেই।ও তাহলে ফোন করল কি করে?"
         নূর বিবি বলল,"কার মোবাইল থেকে করেছিল তা তো বলতে পারব না।আমার নাম্বার ও জানে ।তাই আমার মোবাইলে করেছিল।"
       "করে কি বলল?"সে জানতে চাইল।
       "তোমাকে খোঁজাখুঁজি করতে এবং চিন্তা করতে নিষেধ করল।"
       "কোথায় আছে বলল?"
       "সেসব কিছু বলল না।জিজ্ঞেস করলাম তা-ও বলল না।তবে একটা কথা বলল।"
       "কি বলল?"
        নূর বিবি বলল,"কাল বলে ওকে দেখতে লোক আসবে।ছেলে বলে দেখতে ভালো না। কালো।কালো ছেলেকে ও বিয়ে করবে না।তাই  কোথাকার একটা ছেলের সঙ্গে বেরিয়ে গেছে।"
        "কি বললে তুমি!"
        "হ‍্যাঁ।ফোনে আমাকে যেরকম বলল আমি তোমাকে সেরকমই বললাম।"
        সে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না।তারস্বরে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল,"জরিনা,ও জরিনা,এ তুই কি করলি মা...এ তুই কি করলি...জ‍রিনা..."
        নূর বিবি তাকে কাঁদতে নিষেধ করল।এবং আল্লার কাছে জরিনার জন্য দোয়া করতে বলল।
        দুই হাত তুলে সে তখন দোয়া করতে লাগল,"আল্লা,ও আল্লা।আমার জরিনাকে তুমি সুখে রাখো।ভালো রাখো। হেফাজতে রাখো।...."
                                             ★ছয়★
         তিন বছর বাদে জরিনা বাড়ি ফিরে এল। হোটেলের এক সিকিউরিটির সঙ্গে হাত করে পালিয়ে।বাড়ি এসে জরিনা সব কথা তার মাকে খুলে বলল। দুই মা মেয়ে গলা ধরে খুব কাঁদল। পরে তারা দুই মা মেয়ে মিলে নূর বিবির বিরুদ্ধে সালিশ ডাকল। সালিশে প্রচুর লোক জমায়েত হল।সকল লোকের সামনে উঠে দাঁড়িয়ে জরিনা তার বক্তব্য পেশ করল।সকলে বক্তব্য শুনল।শোনার পর নূর বিবিকে  সালিশের লোক উঠে দাঁড়াতে বলল।নূর বিবি উঠে দাঁড়াল। সালিশের লোক তাকে তখন জরিনার বক্তব্যের সত‍্যতা জিজ্ঞেস করল।অর্থাৎ জরিনা যা বলল সেসব কি সব সত্যি?
         কালো ঘোমটার আড়ালে নূর বিবির মুখ ঢাকা ছিল।ঘোমটার আড়াল থেকে সে বলল,"না।বিলকুল মিথ্যা।"
         জরিনা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল,"না।ও মিথ্যা কথা বলছে।ওর কথা আপনারা কেউ বিশ্বাস করবেন না।শুনবেন না।"
         সালিশের মধ্যের একজন লোক তখন জরিনাকে বলল,"তুই-ই যে সত্যি বলছিস তার গ‍্যারান্টি কি?"
         জরিনা বলল,"রাকিব আমাকে যে হোটেলে বিক্রি করেছিল সেই হোটেলই হল গ‍্যারান্টি প্রমাণ।"
         নূর বিবি জনগণকে সাক্ষী মেনে বলল,"আমি যে এরকম কাজ করব আপনাদের কি সেটা মনে হয়?"
         সালিশের অর্ধেকেরও বেশি লোক হাত উঁচিয়ে তখন বলল,"না,আমাদের সেটা মনে হয় না।"
         আর অর্ধেক লোক চুপ করে থাকল।
         নূর বিবি বলল,"আমি কিছু বলব না।গ্রামের মানুষ আপনারাই ভালো জানেন, আমি কি রকম মানুষ।আমার স্বামী কি রকম মানুষ।তাছাড়া  আমরা পবিত্র মক্কা ভূমি ভ্রমণ করে এসেছি।আর ও একটা চরিত্র হীনা মেয়ে।তিন বছর হোটেলে ছিল।ওর জাত ধর্ম বলে কিছু নেই। সব চলে গেছে।আপনারা ওর কথা কি শুনছেন?ওকে মারুন, মারুন ওকে।"
         তারপরই সালিশের লোক উত্তেজিত হয়ে জরিনাকে মার শুরু করল।আর অশ্রাব্য গালি। শালি,একটা খানকি মেয়ে।....
         ভদ্র সালিশের ব‍্যবহারে জরিনার মা স্তম্ভিতা হয়ে গেল ।এর প্রতিবাদের সে  কোন রাস্তা খুঁজে পেল না।দম দম করে সে শুধু লাথি মারল মাটিতে!....
         পুনশ্চঃ নূর বিবির মতো মানুষেরা সমাজে এই ভাবেই বেঁচে যায় চিরকাল।আর মার খায় জরিনারা।

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯

নভেম্বর সংখ্যা

                 নভেম্বর সংখ্যার সূচিপত্র



                                           কবিতা
                       রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য~ জেগে থাকে লুব্ধক
                       কুনাল গোস্বামী~     স্বপ্নের কালপুরুষ
                      অভিজিৎ মান্না~  অর্ধেক আকাশ
                      কল্যান মাহাতো~   সময়
                      কৌশিক চক্রবর্ত্তী~  বৃষ্টিপাত
                      রুনা দত্ত~  ফেলিন স্বপ্ন
                       বদরুদ্দোজা শেখু~  সুলতান
                      
                                           প্ৰবন্ধ  
                   রাণা চ্যাটার্জী~  ভ্রমন পিপাসু বাঙ্গালি
                                         অনুগল্প
                     সিদ্ধার্থ সিংহ:~   সত্যি সত্যি
                     ডঃ রুমলা মুখার্জী:~ অনুতাপের আগুন


                                   জেগে থাকে লুদ্ধক
                                 
                                  রঞ্জনা ভট্টাচার্য

 ডিউলার কিচেনে বাসি তরকারি জ্বাল দেবার পর টবে জল দিই। আমার কোন অভাব নেই।
শুধু গতজন্মের বিষাদ আছে। মাঝরাতে লালপাড় সাদা শাড়ি পরে পালতোলা নৌকার কাছে বসি, ছলাৎ ঢেউ থেকে উঠে আসা হাওয়া
আমার আঁচল খসিয়ে দেয়। শেষরাতে গোল
চাঁদ ওঠে আকাশে,লক্ষ্মীর পা আঁকা চাঁদ।
ঘরে ফিরে যেতে বলে। প্রচুর হোমটাস্ক দিয়ে
দেয় নিবিড় তারাগুলো। কোন দিন ভুল ঘরে ঢুকি নি, তবু চাবি হারিয়ে ফেলা আমার অভ্যাস।
কিছু বৃন্তচ্যুত ফুল পিছু ডাকে, তবু ঘরে ফিরতে হয় নৌকা ছেড়ে, কিছু আলো আলো মুখে  জেগে থাকে লুব্ধক।

                          স্বপ্নের কালপুরুষ....
                                কুনাল গোস্বামী


     অবিন্যস্ত নীলাম্বরী ছুঁতে চায় দ্রাঘিমার চিবুক
     ঈর্ষায় ভেঙে পড়ে স্বপ্নের কালপুরুষ
     কত নৈসর্গিক সুখের অভিলাষে সে আজ প্রাক্তন, প্রাক্তনই বটে...
    ক্রমবর্ধমান সময়ের চক্রে
    হতে পারে মেঘেদের অশ্রুধারায় বেড়ে চলেছে নীলিমার লবণাক্তের      পরিমাণ 
    তাতেও কি মিটেছে আশ?ছুঁতে পেরেছে দ্রাঘিমার চিবুক?
    সহস্র ঢেউয়ের মৃদু মৃদু আর্তনাদ এসে আছড়ে পড়ে প্রেমিকের বুকে
    যে বুকে আজও কোনো শিল্পীর স্পর্শে তুফান গড়ে ওঠে

                                 অর্ধেক আকাশ 
                           অভিজিৎ মান্না 

                        আমি ক্রমশ ঝুঁকে যাচ্ছি
                        তুমি হাসছো নতুন ভঙ্গিমায় l
                        শুকনো বাতাস আর ঘোলা জল ঝিটিও না
                        এ যে কষ্ট টানে গভীরতার  সিঁড়ি ভেঙে l
                        ঠাঁই হবে না এ নৌকায় 'বুঝে গেছি তুমি অন্য মেঘ l 

                                               সময়
                                   কল্যাণ মাহাতো
                
                       পল পল করে পলকে নিবেছে সময়
                       ছুটন্ত গাড়িতে যাত্রী যেমন
                      তেমনি ফেলে এসেছি
                      সময়ের পোড়া জঞ্জালের পাঁশ
                      আর ধোঁয়া
                      পুনর্নবীকরণের আশা নেই জেনেও
                      ঘেঁটেছি ছাই
                      অমূল্যরতনের আশে ...

                                              বৃষ্টিপাত         
                                   কৌশিক চক্রবর্তী  

তুমি যেটুকু আগুন ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছ শখের বিছানা থেকে
আমি ততটা ঘাসমাঠও তৈরি করে রাখি নি তোমার বুকে
শুধু আমার সমস্ত কবিতা থেকে প্রথম চারটি পংক্তি 
খুব অনায়াসে কাকভেজা হয়ে উঠতে দেখেছি চিরকাল
কোনোদিন কোনও নক্ষত্র মেনে বসন্ত আসেনি এইখানে
কোনোদিন পাতা খসে পড়বার আগে মিলিয়ে নেয় নি সমাধির বরাদ্দ মাটি
তবু কিকরে বলেছিলে তুমি আমার শোবার জন্য তোলা আছে নির্দিষ্ট ঘর?
আজও সুযোগ বুঝে আমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি দেয়ালের পরে
কেন জানি না আজ সকাল থেকেই এই বন্ধঘরেও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল...

                                       ফেনিল স্বপ্ন
                                         রুনা দত্ত
                   কিছু এলোমেলো আদুরে মুহুর্ত
                   তোমার মতো আমার ও আছে।
                   যেখানে পায়রার বুকের মতো 
                   নরম তুলতুলে উষ্ণতায় ওম নিতে নিতে
                  আমি মোমের মতো গলে গলে পড়ি ।
                  উষ্ণতায় আর্দ্রতায় জারিত হতে হতে
                   জাফরানি রঙের সুগন্ধী ছুঁয়ে
                  ভীষণভাবে নারী হয়ে উঠি ।
                  সব সীমারেখা অতিক্রম করে
                  মহব্বতের দিলদরিয়ায়
                 ফেনিল স্বপ্নের মতো ভেসে যেতে থাকি । 

                                          সুলতান          
                                  বদরুদোজা শেখু

কে বলে আমি উলুখাগড়া ? আমিই সুলতান , আমিই রাজা
আফিম চরস তাই ছেড়েছি, ধরেছি অধম কল্কি গাঁজা
নেশায় ক্যামন্ বুঁদ হ'য়ে যাই , উড়িয়ে দিই এক্কাগাড়ি
পক্ষীরাজের ডানায় ডানায় তেপান্তরে জমাই পাড়ি,
সেইখানে ঝুন-পাকা দাড়ি পীর বাবাজীর দরগাহ্ আছে
আস্ত তারার আশরফি সব ফুল ফুটে' রয় শুকনো গাছে
এক ফালি চাঁদ দিচ্ছে উঁকি দিনের বেলায় ভেল্কিবাজি
কাউকে পেলেই পাঞ্জা লড়েন , জপেন মুখে  ' গাজী গাজী ' ,
আমি রাজী , এই বাবাজীর কাছেই নাকি হারাবো মান ?
কারণ আমি গাঁজার সাধক, আমিই রাজা আমিই সুলতান,
আমিই ওড়াই এক্কাগাড়ি মঙ্গলে আর চাঁদের দেশে - - -
নইলে কি আর শ্রেষ্ঠ হতাম এই পৃথিবীর প্রাণের দেশে ??



                          ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি
                                রানা চ্যাটার্জী

বেড়াতে যেতে পারলে কে না খুশি হয়।শীতের মরসুম হোক আর গরমের ছুটি অথবা একঘেয়েমি জীবনে নিদেনপক্ষে শনি,রবি বার মিলিয়ে আর তিন চার দিনের ছুটির সুযোগ এলেই এক পায়ে একটু হাওয়া বদলের অপেক্ষায় থাকি অনেকে।সারা বছর মনে মনে  বেড়ানোর পরিকল্পনা তৈরি তে কিন্তু আমরা বাঙালির জুড়ি নেই ।কিন্তু বেড়ানোর সুযোগ হলেও সবাই কিন্ত মনের জোরে বেরিয়ে পড়তে পারে না,ঠেলে গুঁজেও কাউকে জোড় করে কৈ রে যা রে পরিবার নিয়ে ঘুরে আয় এটাও যে খুব ফলপ্রসূ হয় তা নয়।এর জন্য চাই যে বা যারা বেরুবে তাদের মনের তাগিদ,
বেড়ানোর খিদে ও ,"বেরুবো,যা হবে দেখা যাবে",এই মানসিকতার বেশ প্রয়োজন।
বেড়ানোর দিক থেকে শুধু ভারত বর্ষে নয় পৃথিবীতে যত জাতি আছে,বাঙালি তার নামের সাথে যথেষ্ট সুনাম রেখে চলে আজও। অতীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না থাকলেও ,"থাকবো না কো বদ্ধ ঘরে,দেখবো এবার জগৎ টাকে বলে বেরিয়ে পড়তে বাঙালি বেশ সিদ্ধ হস্ত ছিল বলেই প্রমান।পাশের রাজ্যে সমুদ্র সৈকতে যত না সেই রাজ্যের পর্যটক,বাঙালির আনা গোনা স্রোতের মতো বারো মাস,আবার সে বেনারসের ঘাট হোক আর আগ্রার তাজমহল,দক্ষিণী কন্যাকুমারী,কি রাজস্থানের কোন আনাচে কানাচে কিংবা দার্জিলিং বা সিকিমের ছাঙ্গু, গুরুদংমার যাইহোক সর্বত্র ভ্রমণ পিপাসু বাঙ্গালীর চরণ ধূলি ও উৎসুক মুখের জয় জয়কার।
তাই দেখবেন,যেখানে যত দূরেই যান,দু চার জন নিজের লোকের মতো বাঙালি,অনর্গল এই মিষ্টি ভাষায় বকে যাওয়ার লোক ঠিক জুটে যায়। সেবার মহারাষ্ট্রে মহা বালেশ্বরের কাছে এক গুহায় যখন পৌছালাম,কিছু আগে বৃষ্টি হয়ে অন্ধকার যেন আরো ঝুপ করে নেমে গেছে। গাইড বললেন খুব সাবধানে নামলে নামুন,নইলে ছেড়ে দিন,প্রচুর ছোট বাঁদর ও আছে নিচে।জাস্ট দু চারটে সিঁড়ি , বসে বসে চেষ্টা করছি নামার,ও বাবা,বাঁদর দের কিচ কিচানির সাথে কানে এলো বাংলায় অনর্গল বক বক করা দুই প্রেমিক প্রেমিকার গল্প। আর নামিনি,না না অন্ধকার আর বাঁদরের ভয়ে নয়,ওদের প্রাইভেসি যাতে নষ্ট না হয় এটা  মনে করেই উঠে এসেছিলাম।
সেবার একটু চেন্নাই ছুঁয়ে মাইসোর যাবার পরিকল্পনা ছিল পরিবার নিয়ে।ট্রেনের সামনের সিটে বসা দুই ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা কিছুক্ষন পর খুব ভাব জমিয়ে ফেললেন।অবশ্য আমার কেউ সামনে অপরিচিত বসলে সে যদি খুব বেশি মুখ বুজে থাকা মানুষ না হয়,কিছুক্ষন পর যে বক বক করে গল্প করবেনই এই নিয়ে আমি নিশ্চিত থাকি। কথায় কথায় ওই ভদ্রমহিলা দিদির একটা কথা আমায় ভীষণ  উৎসাহিত করে ছিল।উনি কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন,"একঘেয়েমি এই জীবনে সারা বছর ধরেই একটু একটু করে সঞ্চয় করি,বেড়াতে আমাদের বেরুতেই হবে,এমনকি তাতে খাবার মেনুতে চার দিনের পরিবর্তে তিন দিন মাছ করেছি। "ওনার এই জীবন কাহিনী সত্যিই আমায় ভীষণ উৎসাহিত করে ওনার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়েছিল,কমায় নি। ভালো লেগেছিল ওনার ভাবনা। বেড়ানো যে পরিমান এনার্জি দেয় এই ব্যস্ত জীবনে মানুষের,সামান্য হলেও এই ভ্রমণ  খোলা হাওয়া যে নিয়ে আসে আমাদের জীবনে তা যারা সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পরে তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন।সব সময় যে অর্থই বেড়ানোর প্রতিবন্ধকতা হয় তা নয়,বেড়ানোর ইচ্ছাটাও বেশ গুরুত্বপূর্ন


                              সত্যি সত্যি 
                        সিদ্ধার্থ সিংহ
মুর্শিদাবাদ ঘুরতে যাচ্ছে বানেশ্বর। ট্রেনের দোলানিতে বেশ তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। ভাবছিল, গতকালের কথা।
গতকাল বিকেলবেলায় জীবনদ্বীপের উল্টো দিকে এলিয়ট পার্কে বসেছিল ওরা। ও মুর্শিদাবাদ যাচ্ছে শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ঝুম্পার। সেটা দেখে ও বলেছিল, দুটো দিনের তো ব্যাপার। যাব আর আসব।
--- দু... উ... উ... উ... টো... দিন! তোমাকে দু'দিন, মানে আটচল্লিশ ঘণ্টা না দেখে থাকতে হবে!
বানেশ্বর বলেছিল, তুমি আমাকে খুব ভালবাসো, না?
--- হু। লজ্জা পেয়ে উপর-নীচে মৃদু মাথা দুলিয়েছিল ঝুম্পা।
--- আচ্ছা, তুমি কি এ রকম ভাবে আর কাউকে ভালবেসেছ?
--- ধ্যাৎ, আজেবাজে কথা বোলো না তো...
--- না, বলছি, আমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে? --- না।
--- আচ্ছা, তা হলে গত পাঁচ বছরে?
--- না। ঝুম্পা বলেছিল।
--- গত আট বছরে?
--- উঁহু, না।
--- তা হলে বারো বছরে?
---  কোন সাল সেটা? কোন সাল! না... না... নাঃ।
--- গত কুড়ি বছরেও কি এত ভালবাসিনি কাউকে? সত্যি বলছ? আমাকে ছুঁয়ে আছে কিন্তু। মিথ্যে বললে আমি মরে যাব।
ঝুম্পা বলেছিল, সত্যি বলছি, বিশ্বাস করো। আমি কাউকেই তোমার মতো এত ভালবাসিনি।
গতকালের সেই কথা ভাবতে ভাবতে বানেশ্বরের চোখ বুজে এসেছিল। হঠাৎ হুড়মুড় করে কারা যেন চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়ল। সবাই বুঝতে পারল, এরা কেউ ছিঁচকে চোর, ছিনতাইবাজ কিংবা ডাকাত নয়। এরা টেরোরিস্ট। উগ্রপন্থী। এই ট্রেনটাকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য এরা একেবারে তৈরি হয়ে এসেছে। যে কোনও সময় যা কিছু ঘটে যেতে পারে।
ও মুর্শিদাবাদে যাচ্ছে হাজারদুয়ারি দেখতে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! তা হলে কি গতকাল ওর চোখে চোখ রেখে ঝুম্পা মিথ্যেকথা বলেছিল!

সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯


                            অনুতাপের আগুন  
                        ডঃ রমলা মুখার্জী
  
   ড় কাল্পনিক আর উদার পরাগকে  রূপসার বড় ভালো লাগে।পড়াশোনায় বেশ ভালো,সবাইকে বেশ সহযোগিতাও করে।ইংরাজী অনার্সে ভালো ফল করে পরাগ ভর্তি হয়েছে এম.এতে।রূপসাও একই সংগে পড়ে।
     রূপসার ভালো লাগা ক্রমশই ভালোবাসায় পরিণত হল পরাগের সাথে কিছু অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশনের সময়ে।অসাধারণ আবৃত্তি করে পরাগ,রূপসা পরাগের প্রেমে একেবারে পাগল হয়ে উঠল।বড়লোকের খামখেয়ালী মেয়ে,তাই  পরাগ রূপসাকে এড়িয়ে চললেও শেষ পর্যন্ত রূপসার পাগলামিতে ধরা দিয়ে বসল।এম এতে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে,নেট পরীক্ষায় ভালো ফল করে পরাগ গবেষণা করতে শুরু করল।কিন্তু রূপসা আর ধৈর্য্য ধরতে পারল না,দুম করে একদিন পাকাপাকিভাবে চলে এল পরাগের কাছে।পরাগের গবেষণা শেষে অধ্যাপনা করার ইচ্ছে,আর তখনই বিয়ের কথা ভাবত।কিন্তু কি করবে,রূপসার বাড়িতে নাকি বিয়ের জন্য রোজই কোন না কোন পাত্রপক্ষ আসছে।একজায়গায় তো প্রায় ঠিকঠাক।মধ্যবিত্ত পরাগের সাথে বিয়ে রূপসার বাড়ি থেকে দেবে না।
    বিধবা মা রমাদেবীকে নিয়ে সুখের সংসার পরাগের। মায়ের পেনশন আর তার  ফেলোশিপের টাকায় ভালোভাবেই চলে যায়, প্রাচুর্য না থাক শান্তি তো আছে।কিন্তু রূপসা আসার কিছু মাস পর থেকেই সেই মহাশান্তির সংসারে জ্বলল অশান্তির আগুন।
   রূপসার দামী দামী পোশাক আর বিউটি পারলারের ঠেলায় পরাগ একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়ল।
রূপসারও ততদিনে মোহভঙ্গ হয়েছে,ধনী ব্যবসাদার অনলের সাথে ঘর বাঁধল রূপসা।
    পরাগ অধ্যাপক হয়েছে,তবুও বিয়ে করছে না।একটা কিসের প্রতীক্ষায় সে দিন গোনে। রমাদেবী বিয়ের কথা পাড়লেই পরাগ বড় রেগে যায়,এর কারণ কি কিছুই রমাদেবী বুঝে উঠতে পারেন না,তাই আর বেশি জোর করেন না।
     প্রবল শীতের এক ঝড়-বৃষ্টির  রাতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার মত এসে হাজির হল রূপসা। সারা শরীরে ক্ষত,অনলের অত্যাচারের চিহ্ন।রমাদেবীর প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করেও পরাগ রূপসাকে ঠাঁই দিল।অনুতাপের আগুনে দগ্ধ রূপসা এখন খাঁটি সোনা।

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯




                                       জবাবি খাম
                                   দেবযানি বসু


              পুরানো আমলের বক্ষবন্ধনী প্রজাপতি আজ
              জল থেকে তরঙ্গ তুলে নেবার আনন্দছবি
              রক্তের বুদ্বুদ বেলুনের ত্বক শুষে নেয় জেনে রেখো
              আমরা সকাল বিকাল অসুখ চিবিয়ে খাই
             ডাকঘরের লকগেট ভেঙে চিঠিগুলো প্রজাপতি হল
             শুঁয়োপোকার সঙ্গে সঙ্গমে মত্ত ছিল চিঠিরা একসময়
             লেস রাখি পুঁতি বসাই কলমে সেলাই করি প্রভা 
             কাউকে ভুলি না বাতিল করি নি তাও উড়ে যায় পতঙ্গ।

                                              মর্ম 
                    দেবাশীষ তেওয়ারি

          এক মুঠো বিশ্রাম অবস্থান করে আছে সরলরেখায়
              সিঁথির থেকে বয়ে চলেছে অন্ধকারের দিকে
              আমি ধারাপাত আটকাতে জানি না
             জানি না শহরের সঠিক সর্বনাম
             এখান থেকে পৃথিবী অনেক দূর
             হারিকেন নিভিয়ে দিলে অন্ধকারের বাহুতে-
             ফাটা দাগ হু হু করে মাথা উঁচিয়ে হাসছে
             কিছুক্ষণ পর ছড়িয়ে যাবে শরীরের সমস্ত সীমানায়
            ঠোঁটের কোণে তখন ভিজতে থাকে বেনামি কাব্যেরা
            ছায়া গুলো মূর্তি হয়ে যাক
           সেভাবে আমি তলিয়ে যাব,ছায়াদের প্রতিযোগিতায়.....
           যেভাবে  কবরের কাছে সুখ রেখে যায় বিষণ্ণ মানুষ ।   

                         শুঁড়ি খানার কবিতা 
                     সনাতন মাজি (ময়না)

    মানুষের ডিম ভাজে আহারী টোলার পাশে,
   দোপাখা উনুনে জ্বলে চন্দন কাঠের গুঁড়ি।
   নষ্ট বীজ পাশাপাশি জাগে আলো ফুট্ -টু-
   ডুম্ , উহ‍্য থাকে জাহান্নাম উঁকি দেয় হাসাহাসি। গাছের যৌনাঙ্গ ফুল     খিলখিলায় রাতে, মুখে গোঁজা জললিঙ্গ
   ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচে।কবিতার খোঁজ করি
   শুঁড়িখানায় এসে , হো হো করে হাসে কবিতা শরম খুলে দেখায় ।


                                         ভ্যা অ ক্যা
                       জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
      প্রেম লিখতে পারে নি তাই প্রজাপতিটি
      অরসিকেষু রসস্য নিবেদনং...... বল খুব হেসেছিল পাখিদের                      চিৎকারেও বিছুটি
     কিছু কম ছিল না।ভ্যাবলাকান্তের দ্বিধাবিদ্ধ লজ্জা
     কনেদেখা আলোর সাথে ১০০ মিটার রেসে চ্যাম্পিয়ন
     এরপর কপালে কে যেন অবুঝকান্ত স্টিকার লাগায়।
     বেশ কটা তীক্ষ্ণ ভ্রূ তির হয়ে চাঁদমারি ছেঁড়ে।
     হাসি আঁকতে পারেনি বলে খুশিগঞ্জের ঘর ছেড়ে
    সে এখন রামগরুড়ের ভাড়াটিয়া।আকাশের দিকে
    তাকায় আর  খুশিমেঘ খোঁজে মেঘদূত কোন ছাড়
    হিমালয়ের মতো গম্ভীর কটি পর্বত কচ্ছপ হাঁটে।
    খোলা রোদে মেলানিন হাসে সে এখন কালো দুপাশে আগুন
     হিম টিম নেই ....... হাসিমুখ ডাকে।
     ফুল দেখে হাসি আঁকা হলো কিন্তু কেউ দেখে না
     তাই খুশিমুখ নাম দিল ক্যাবলাকান্ত।
    তাতে বেশ খানিক প্রশ্রয় লেগে।