ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি
রানা চ্যাটার্জী
বেড়াতে যেতে পারলে কে না খুশি হয়।শীতের মরসুম হোক আর গরমের ছুটি অথবা একঘেয়েমি জীবনে নিদেনপক্ষে শনি,রবি বার মিলিয়ে আর তিন চার দিনের ছুটির সুযোগ এলেই এক পায়ে একটু হাওয়া বদলের অপেক্ষায় থাকি অনেকে।সারা বছর মনে মনে বেড়ানোর পরিকল্পনা তৈরি তে কিন্তু আমরা বাঙালির জুড়ি নেই ।কিন্তু বেড়ানোর সুযোগ হলেও সবাই কিন্ত মনের জোরে বেরিয়ে পড়তে পারে না,ঠেলে গুঁজেও কাউকে জোড় করে কৈ রে যা রে পরিবার নিয়ে ঘুরে আয় এটাও যে খুব ফলপ্রসূ হয় তা নয়।এর জন্য চাই যে বা যারা বেরুবে তাদের মনের তাগিদ,
বেড়ানোর খিদে ও ,"বেরুবো,যা হবে দেখা যাবে",এই মানসিকতার বেশ প্রয়োজন।
বেড়ানোর দিক থেকে শুধু ভারত বর্ষে নয় পৃথিবীতে যত জাতি আছে,বাঙালি তার নামের সাথে যথেষ্ট সুনাম রেখে চলে আজও। অতীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না থাকলেও ,"থাকবো না কো বদ্ধ ঘরে,দেখবো এবার জগৎ টাকে বলে বেরিয়ে পড়তে বাঙালি বেশ সিদ্ধ হস্ত ছিল বলেই প্রমান।পাশের রাজ্যে সমুদ্র সৈকতে যত না সেই রাজ্যের পর্যটক,বাঙালির আনা গোনা স্রোতের মতো বারো মাস,আবার সে বেনারসের ঘাট হোক আর আগ্রার তাজমহল,দক্ষিণী কন্যাকুমারী,কি রাজস্থানের কোন আনাচে কানাচে কিংবা দার্জিলিং বা সিকিমের ছাঙ্গু, গুরুদংমার যাইহোক সর্বত্র ভ্রমণ পিপাসু বাঙ্গালীর চরণ ধূলি ও উৎসুক মুখের জয় জয়কার।
তাই দেখবেন,যেখানে যত দূরেই যান,দু চার জন নিজের লোকের মতো বাঙালি,অনর্গল এই মিষ্টি ভাষায় বকে যাওয়ার লোক ঠিক জুটে যায়। সেবার মহারাষ্ট্রে মহা বালেশ্বরের কাছে এক গুহায় যখন পৌছালাম,কিছু আগে বৃষ্টি হয়ে অন্ধকার যেন আরো ঝুপ করে নেমে গেছে। গাইড বললেন খুব সাবধানে নামলে নামুন,নইলে ছেড়ে দিন,প্রচুর ছোট বাঁদর ও আছে নিচে।জাস্ট দু চারটে সিঁড়ি , বসে বসে চেষ্টা করছি নামার,ও বাবা,বাঁদর দের কিচ কিচানির সাথে কানে এলো বাংলায় অনর্গল বক বক করা দুই প্রেমিক প্রেমিকার গল্প। আর নামিনি,না না অন্ধকার আর বাঁদরের ভয়ে নয়,ওদের প্রাইভেসি যাতে নষ্ট না হয় এটা মনে করেই উঠে এসেছিলাম।
সেবার একটু চেন্নাই ছুঁয়ে মাইসোর যাবার পরিকল্পনা ছিল পরিবার নিয়ে।ট্রেনের সামনের সিটে বসা দুই ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা কিছুক্ষন পর খুব ভাব জমিয়ে ফেললেন।অবশ্য আমার কেউ সামনে অপরিচিত বসলে সে যদি খুব বেশি মুখ বুজে থাকা মানুষ না হয়,কিছুক্ষন পর যে বক বক করে গল্প করবেনই এই নিয়ে আমি নিশ্চিত থাকি। কথায় কথায় ওই ভদ্রমহিলা দিদির একটা কথা আমায় ভীষণ উৎসাহিত করে ছিল।উনি কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন,"একঘেয়েমি এই জীবনে সারা বছর ধরেই একটু একটু করে সঞ্চয় করি,বেড়াতে আমাদের বেরুতেই হবে,এমনকি তাতে খাবার মেনুতে চার দিনের পরিবর্তে তিন দিন মাছ করেছি। "ওনার এই জীবন কাহিনী সত্যিই আমায় ভীষণ উৎসাহিত করে ওনার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়েছিল,কমায় নি। ভালো লেগেছিল ওনার ভাবনা। বেড়ানো যে পরিমান এনার্জি দেয় এই ব্যস্ত জীবনে মানুষের,সামান্য হলেও এই ভ্রমণ খোলা হাওয়া যে নিয়ে আসে আমাদের জীবনে তা যারা সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পরে তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন।সব সময় যে অর্থই বেড়ানোর প্রতিবন্ধকতা হয় তা নয়,বেড়ানোর ইচ্ছাটাও বেশ গুরুত্বপূর্ন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন