মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০


                      বাড়িয়ে দিয়ে হাতখানি
                                  রূপাঞ্জলি ব্যানার্জী
   

        আজও  কাকভোরেই ঘুমটা ভেঙে যায় মৃদুলার।অলসভাবে বিছানায় কিছুটা গড়াগড়ি দিয়ে উঠেই পড়ে শেষমেশ। এতদিনের অভ্যাস  তাই এই অখন্ড অবসরের সকালগুলোও এখনো একই সময়ে শুরু হয়। এককাপ চা  নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসে।ক'দিন ধরেই একটা ভাবনা মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে তার।কথাটা জানার পর থেকেই সব কেমন যেন উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে।কিছু  স্মৃতি কুয়াশার মতো যেন ঘিরে রেখেছে মনটাকে।
  
        অকালে স্বামী মৃত্যু বা আস্তে আস্তে সন্তানদের ব্যস্ত জীবন থেকে নিজের ব্রাত্য হয়ে যাওয়া কোনোটাই মৃদুলাকে এতোটা একা করে দেয়নি যতটা আজ সে।দীর্ঘ তিরিশ বছরের শিক্ষিকা জীবনের অবসান তাকে চরম একাকীত্বের অবসাদে ডুবিয়ে দিয়েছে।এখন তার একলা জীবনের  সারাদিনের সঙ্গী বলতে শুধু কমলা।সেই সংসার জীবনের শুরু থেকে আজও একইভাবে মৃদুলার পাশে। বর্তমানে মৃদুলার সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা সবটা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গী।আর এই কমলার কাছে কথাটা যখন জানলো তখন মৃদুলার তার একলা জীবনটাকে আরো একবার নতুন উদ্যমে সাজাতে ভীষণ ইচ্ছে করলো। নতুন করে আরেকবার মানুষ গড়ার ইচ্ছেটা জেগে ওঠে তার শিক্ষিকা মননে।তাছাড়া তার সেদিনের করা ভুলটাও আজ যদি শুধরে নেওয়া যায়।সেদিন সমাজ আর পরিবারের চাপে আর বাকি দুই সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে  সবটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল সে।কিন্তু আজ আর তার কোনো পিছুটান নেই।নেই কোনোরকম চাপের ভয়।তাই মনস্থির করেই নেয় ভাবনাটা কে বাস্তবায়িত করবেই। 
      অনেক বোঝানোর পর কমলা তার মেয়ে আর তার সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে মৃদুলার সাথেই থাকতে রাজি হয়।মৃদুলা ওদের আশ্বস্ত করে সে শিশুটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে উপযুক্ত  শিক্ষা দিয়ে এই সমাজের একজন করে তুলবে। ওর যোগ্যতাই হবে ওর একমাত্র পরিচয়। আর কোনো শিশুকে মৃদুলা  হিজড়ে হওয়ার অপরাধে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিতে দেবেনা। এটাই হবে তার ভুলের একমাত্র  প্রায়শ্চিত্ত।

কোন মন্তব্য নেই: