জানুয়ারী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
জানুয়ারী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০
ব্যাকওয়ার্ড
সহেলি দেব
একতারাতে তুষ্ট হওয়া বরফ পুষ্ট নদীর
সন্ধ্যা আবেগ উল্কা স্রোতে গলছে দরদীর...
মুগ্ধ চোখে দেখছি, শুধু হৃদয় তখনও কাঁপা
তোমার পাড়িয়ে যাওয়া ফুলই; আমার কনকচাঁপা!
তবু তোমার ফেলে আসা জিভে; রয়ে গেছে প্রায়শ্চিত্ত-
এ যুগে দিব্যিরা বড়ই দুর্বল তবু বহুল প্রচলিত।
জোনাকি মিশ্রিত হৃদ বুকের কোনও প্রথায়...
জেনে রাখো মেহবুব সাজিয়েছে ফুল লতায়পাতায়।
হাতে হাত রেখে আলো আঁধারির কোনও সন্ধ্যায়
ভালোবাসার গভীরে; প্রবলতম বুকের অধ্যায়...
তারপর বহুদিন পেন্সিলের দাগ মুছে নিয়ে সিলেটে-
কিছু অক্ষত স্মৃতিদের ভুলিয়ে দিতে দিতে...
পালটে যায় রঙ, পালটে যায় মন ছদ্মবেশী হতে হতে
তবে তুমিও আস্থা রেখো মূল্যহীন ফেরতের...
সন্ধ্যা আবেগ উল্কা স্রোতে গলছে দরদীর...
মুগ্ধ চোখে দেখছি, শুধু হৃদয় তখনও কাঁপা
তোমার পাড়িয়ে যাওয়া ফুলই; আমার কনকচাঁপা!
তবু তোমার ফেলে আসা জিভে; রয়ে গেছে প্রায়শ্চিত্ত-
এ যুগে দিব্যিরা বড়ই দুর্বল তবু বহুল প্রচলিত।
জোনাকি মিশ্রিত হৃদ বুকের কোনও প্রথায়...
জেনে রাখো মেহবুব সাজিয়েছে ফুল লতায়পাতায়।
হাতে হাত রেখে আলো আঁধারির কোনও সন্ধ্যায়
ভালোবাসার গভীরে; প্রবলতম বুকের অধ্যায়...
তারপর বহুদিন পেন্সিলের দাগ মুছে নিয়ে সিলেটে-
কিছু অক্ষত স্মৃতিদের ভুলিয়ে দিতে দিতে...
পালটে যায় রঙ, পালটে যায় মন ছদ্মবেশী হতে হতে
তবে তুমিও আস্থা রেখো মূল্যহীন ফেরতের...
অস্থির স্নায়ুযুদ্ধরা
রাহুল গাঙ্গুলি
রাহুল গাঙ্গুলি
নদীটা চলছিল।থেমে গেলো হঠাৎ _____
স্নান করছিলো যারা
আচমনীয় রীতিনীতি থেকে ভাঙা সেতু
ছটফট্ ছটফট্।লালরঙ চিরকালই হিংসুটে
স্নানঘাট মনোরঞ্জন ~ ১লা মানুষ
নাহ।মানুষ নয় মহিলা
নাহ।মহিলা নয় মা
নাহ।মা নয় ~ ম-ম গন্ধের থ্যাঁতলানো যোনি
পুড়ে যাওয়ার শোধবোধ
নখের এক্কাদোক্কায় স্বয়ংক্রিয় ডিটোনেটর্
লুকিয়ে থাকা শেকড় ঘটায় বিস্ফারণ
নাহ।এটা ২০২০ নয়
বরং ~ ২০৫০ সাল।ঘটছে।ঘটবে এবং ঘটবেই
তার নামও প্রমীলা
স্নান করছিলো যারা
আচমনীয় রীতিনীতি থেকে ভাঙা সেতু
ছটফট্ ছটফট্।লালরঙ চিরকালই হিংসুটে
স্নানঘাট মনোরঞ্জন ~ ১লা মানুষ
নাহ।মানুষ নয় মহিলা
নাহ।মহিলা নয় মা
নাহ।মা নয় ~ ম-ম গন্ধের থ্যাঁতলানো যোনি
পুড়ে যাওয়ার শোধবোধ
নখের এক্কাদোক্কায় স্বয়ংক্রিয় ডিটোনেটর্
লুকিয়ে থাকা শেকড় ঘটায় বিস্ফারণ
নাহ।এটা ২০২০ নয়
বরং ~ ২০৫০ সাল।ঘটছে।ঘটবে এবং ঘটবেই
তার নামও প্রমীলা
সরল বর্গীয় শব্দসমূহ
সায়ন্তিনী হোড়
সায়ন্তিনী হোড়
ঘাসের ক্লিভেজ ছুঁয়ে যাওয়ার সময়
আকাশ ও অধ্যায়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হয়
আকাশ ও অধ্যায়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হয়
ঠোঁট গলে পড়লে
বুদবুদের গায়ে চুমুর চিহ্ন এঁকে দিই
পাখির পালকের শব্দচুর
আমার নথ ভেঙে দেয়,
বুদবুদের গায়ে চুমুর চিহ্ন এঁকে দিই
পাখির পালকের শব্দচুর
আমার নথ ভেঙে দেয়,
তখন এক একটা নগ্ন অভিধানের সাথে
সম্পর্ক ছিন্ন হতে থাকে সরলবর্গীয় শব্দের
সম্পর্ক ছিন্ন হতে থাকে সরলবর্গীয় শব্দের
লুপ্তপ্রায় আকাশের গলায় ভেসে ওঠে
অভিযোগের আঙুল
দূরত্ব : অভিমানের ঠোঁট : শূন্যতা
অভিযোগের আঙুল
দূরত্ব : অভিমানের ঠোঁট : শূন্যতা
ডাইমেনশন
অনুপ মণ্ডল
অন্তর্ঘাতের ফিসফিসানি।নদীনালা;গুহা ও পর্বত
চরে বেড়ানো হাঁস ও হাঁসুলীর প্রতিক্রিয়াশীল উঠোন
লতিয়ে বাড়ছে টালির চালে লাউয়ের ডগা ও প্রহেলিকা
আমোদে আছে আহ্লাদে আছে,আহ্লাদীর মা দিদিশাশুড়ি
চরে বেড়ানো হাঁস ও হাঁসুলীর প্রতিক্রিয়াশীল উঠোন
লতিয়ে বাড়ছে টালির চালে লাউয়ের ডগা ও প্রহেলিকা
আমোদে আছে আহ্লাদে আছে,আহ্লাদীর মা দিদিশাশুড়ি
কেবল আমিই শুধু
দড়ির ক্ষতমুখ আগুন আক্রান্ত থুতুর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে
অপর প্রান্ত ষট্ চক্রে বসিয়ে রেখেছি
দড়ির ক্ষতমুখ আগুন আক্রান্ত থুতুর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে
অপর প্রান্ত ষট্ চক্রে বসিয়ে রেখেছি
ডাইমেনশন হারানো গুহাবাসী জীবন
পাথরের খাঁজে ছায়াপুরুষ হয়ে শুয়ে থাকি,কাক ডাকে
ভরদুপুরে মিথিলার বন্যা;ম্যামথ শিকারের উল্লাস ধ্বনি
পাথরের খাঁজে ছায়াপুরুষ হয়ে শুয়ে থাকি,কাক ডাকে
ভরদুপুরে মিথিলার বন্যা;ম্যামথ শিকারের উল্লাস ধ্বনি
পাথরের গায়ে আঁকিবুকি কাটি,বানিয়ে নিই
শেয়ালচতুর্দশীর বোধগম্য সহস্রাধিক চোখ ও এক
সময়রূপ চতুর্থ মাত্রা উদ্ধারকারি ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক রমণী
সময়রূপ চতুর্থ মাত্রা উদ্ধারকারি ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক রমণী
করমর্দন
বদরুদ্দোজা শেখু
হাত মেলাই। হাত ধরি।
হাত ধরি উষ্ণতার জন্য। সদিচ্ছার জন্য।
বিশ্বাসের জন্য। আস্থার জন্য। বন্ধুত্ত্বের জন্য।
অন্য কোনো অজুহাত নাই , লক্ষ্য বা
উপলক্ষ্য নাই ।অভিসন্ধি নাই।অপবুদ্ধি নাই।
হাত ধরি। করমর্দন করি।
শুভেচ্ছা দেওয়ার জন্য। সৌজন্য
জ্ঞাপন করার জন্য। সাক্ষাৎকে
সুন্দর করার জন্য। সম্মিলনকে
নন্দিত করার জন্য। পরিপার্শ্বকে
স্বচ্ছন্দ সহজ আর অনুকূল করার জন্য। সখ্যতার
বোধকে জাগ্রত করার জন্য , অন্যতাকে
দূর করার জন্য , দূরত্ত্বকে নৈকট্য -গ্রথিত
করার জন্য , শিষ্টাচারকে সম্পৃক্ত
রাখার জন্য, আর আনন্দের আবহ রাখার জন্য।
এর মধ্যে অন্য কোনো
ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা যদি কেউ করে
অন্য কোনো সম্পর্ক যদি কেউ ধরে
অন্য কোনো গন্ধ যদি শুঁকে
অথবা অন্য কোনো দুষ্ট ছায়া দ্যাখে
তাকে কখনোই মিত্র বলতে পারবো না ,
বরং বলবো তাকে ঔদার্যের গুপ্তচর,
আনন্দের হন্তারক, অনাস্থার তল্পিবাহক ।।
হাত ধরি উষ্ণতার জন্য। সদিচ্ছার জন্য।
বিশ্বাসের জন্য। আস্থার জন্য। বন্ধুত্ত্বের জন্য।
অন্য কোনো অজুহাত নাই , লক্ষ্য বা
উপলক্ষ্য নাই ।অভিসন্ধি নাই।অপবুদ্ধি নাই।
হাত ধরি। করমর্দন করি।
শুভেচ্ছা দেওয়ার জন্য। সৌজন্য
জ্ঞাপন করার জন্য। সাক্ষাৎকে
সুন্দর করার জন্য। সম্মিলনকে
নন্দিত করার জন্য। পরিপার্শ্বকে
স্বচ্ছন্দ সহজ আর অনুকূল করার জন্য। সখ্যতার
বোধকে জাগ্রত করার জন্য , অন্যতাকে
দূর করার জন্য , দূরত্ত্বকে নৈকট্য -গ্রথিত
করার জন্য , শিষ্টাচারকে সম্পৃক্ত
রাখার জন্য, আর আনন্দের আবহ রাখার জন্য।
এর মধ্যে অন্য কোনো
ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা যদি কেউ করে
অন্য কোনো সম্পর্ক যদি কেউ ধরে
অন্য কোনো গন্ধ যদি শুঁকে
অথবা অন্য কোনো দুষ্ট ছায়া দ্যাখে
তাকে কখনোই মিত্র বলতে পারবো না ,
বরং বলবো তাকে ঔদার্যের গুপ্তচর,
আনন্দের হন্তারক, অনাস্থার তল্পিবাহক ।।
বাড়িয়ে দিয়ে হাতখানি
রূপাঞ্জলি ব্যানার্জী
আজও কাকভোরেই ঘুমটা ভেঙে যায় মৃদুলার।অলসভাবে বিছানায় কিছুটা গড়াগড়ি দিয়ে উঠেই পড়ে শেষমেশ। এতদিনের অভ্যাস তাই এই অখন্ড অবসরের সকালগুলোও এখনো একই সময়ে শুরু হয়। এককাপ চা নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসে।ক'দিন ধরেই একটা ভাবনা মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে তার।কথাটা জানার পর থেকেই সব কেমন যেন উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে।কিছু স্মৃতি কুয়াশার মতো যেন ঘিরে রেখেছে মনটাকে।
অকালে স্বামী মৃত্যু বা আস্তে আস্তে সন্তানদের ব্যস্ত জীবন থেকে নিজের ব্রাত্য হয়ে যাওয়া কোনোটাই মৃদুলাকে এতোটা একা করে দেয়নি যতটা আজ সে।দীর্ঘ তিরিশ বছরের শিক্ষিকা জীবনের অবসান তাকে চরম একাকীত্বের অবসাদে ডুবিয়ে দিয়েছে।এখন তার একলা জীবনের সারাদিনের সঙ্গী বলতে শুধু কমলা।সেই সংসার জীবনের শুরু থেকে আজও একইভাবে মৃদুলার পাশে। বর্তমানে মৃদুলার সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা সবটা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গী।আর এই কমলার কাছে কথাটা যখন জানলো তখন মৃদুলার তার একলা জীবনটাকে আরো একবার নতুন উদ্যমে সাজাতে ভীষণ ইচ্ছে করলো। নতুন করে আরেকবার মানুষ গড়ার ইচ্ছেটা জেগে ওঠে তার শিক্ষিকা মননে।তাছাড়া তার সেদিনের করা ভুলটাও আজ যদি শুধরে নেওয়া যায়।সেদিন সমাজ আর পরিবারের চাপে আর বাকি দুই সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সবটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল সে।কিন্তু আজ আর তার কোনো পিছুটান নেই।নেই কোনোরকম চাপের ভয়।তাই মনস্থির করেই নেয় ভাবনাটা কে বাস্তবায়িত করবেই।
অনেক বোঝানোর পর কমলা তার মেয়ে আর তার সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে মৃদুলার সাথেই থাকতে রাজি হয়।মৃদুলা ওদের আশ্বস্ত করে সে শিশুটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে এই সমাজের একজন করে তুলবে। ওর যোগ্যতাই হবে ওর একমাত্র পরিচয়। আর কোনো শিশুকে মৃদুলা হিজড়ে হওয়ার অপরাধে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিতে দেবেনা। এটাই হবে তার ভুলের একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত।
লাথি
আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস
আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস
"কি গো দাদি,কি করছ?"
"বিড়ি বাঁধছি।আয়।বোস।"
জরিনার এটা নিজের দাদি নয়।তার নিজের দাদি নেই।অনেক দিন আগে স্তন ক্যানসারে মারা গেছে।জরিনার এটা পাড়া দাদি।নাম নূর বিবি।
জরিনা বসল গিয়ে,"কেমন আছো?"
"ভালো আছি।তুই ভালো আছিস?"
"হ্যাঁ দাদি,ভালো আছি।"
নূর বিবি তখন বলল,"তোদের যে এখন ভালো থাকারই বয়স।তা ভালো তো থাকবিই ।"তারপর বলল,"তা হ্যাঁ রে জরিনা,শুনলাম, তোর বলে বিয়ের কথা আলোচনা চলছে?কাল বলে তোকে দেখতে লোক আসবে?তা সত্যি নাকি?"
জরিনা বলল,"হ্যাঁ, সত্যি।"
নূর বিবি তখন বলতে লাগল,"তা এখুনি বিয়ে করে ফেলবি?সে কি রে!সবে তো ক্লাস নাইনে উঠলি।কলেজে পড়বি না?"
জরিনা বলল,"পড়ার ইচ্ছে তো ছিল।কিন্তু মা আর না পড়ালে কি করে পড়ব?"
"তোর মা'র কথা তুই শুনবি কেন?সে পড়াশোনার মূল্য কি বোঝে?"
জরিনা তার উত্তরে বলল,"মা-রও হয়তো ইচ্ছে ছিল পড়ানোর।কিন্তু না পারলে কি করে পড়াবে?মা-র অবস্থার কথাও তো দেখতে হবে।জুলুম করে শুধু পড়লে তো হবেনা।বাপ বেঁচে থাকলে অবশ্য এখন বিয়ে দিত না।আমিও বিয়ে করতে রাজি হতাম না।মা-র হঠাৎ যদি এখন কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কে বিয়ে দিবে?চতুর্দিক ভেবে চিন্তে দেখে বিয়ে করতে রাজি হলাম।"
নূর বিবি অমনি টপ্ করে বলে ফেলল,"কেন,আমরা ছিলাম না?আমরা তোর বিয়ে দিতাম। আমরা বুঝি তোর কেউ না!"
জরিনা বলল,"কেউ হবেনা কেন?আমি কি বলেছি,কেউ হও না?"
নূর বিবি বলল,"মুখে না বললে কি হবে? তোর কথা থেকে সেটাই বোঝা যাচ্ছে।যাইহোক,কোন দেশে বিয়ের কথা আলোচনা চলছে তাই বল।"
জরিনা বলল,"গ্রামের নাম রূপ খালি।"
নূর বিবি বলল,"অতদূরে বিয়ে করবি?যদি তোকে মেরে ফেলে?তা অতদূরে কে বিয়ে লাগাল শুনি?"
জরিনা বলল,"সম্পর্কে আমার খালুজি হয়।"
"তোর মায়ের কি বুদ্ধি নেই?অতদূরে কেউ মেয়ের বিয়ে দেয়? যেতে পারবে তো?বাসে তো চাপতে পারে না।বমি করে।মাথা ঘোরে বলে। তাহলে একটা বেটির অতদূরে বিয়ে দেওয়া কেন?তা ছেলে কি করে?"
"কি করবে?জমিতে চাষ আবাদ করে।"
"তারমানে ছেলে মাঠে খাটে তাইতো?"
"হ্যাঁ।" তারপর জরিনা বলল,"তাছাড়া আমাদের মতো ঘরের মেয়েছেলেদের কি চাকরি করা ছেলের সাথে বিয়ে হবে?কোন দিনই হবে না।"
নূর বিবি সেটা মানতে পারল না।সে বলল,"না হওয়ার কি আছে। কপালে থাকলে হতেও পারে।"
জরিনা বলল,"যদিওবা হয় লাখে একটা। ওকে হওয়া বলে না।"
"বেশ,তোর কথাই ঠিক হল।"জরিনার কথা নূর বিবি পরে মেনে নিল।নিয়ে বলল,"ছেলে দেখতে ফর্সা তো?"
"খুব একটা ফর্সা হবেনা।সে না হোক।ওতে অসুবিধা নেই।আমি তো ফর্সা আছি।"
শুনে নূর বিবি চমকে উঠল,"কি বললি!ছেলে ফর্সা হবেনা?তোর মতো মেয়ে শেষে মাঠে খাটা একটা কালো কুচ্ছিত রাখাল ছেলেকে বিয়ে করবি?ছি:!ছি:!ছি:!"
জরিনা বলল,"তুমি যত কালো বলছ, অত কালো হবেনা।"
"তুই দেখেছিস?"
"দেখিনি।"
"তো?"
"আমার সেই ঘটক খালুর মুখে শুনেছি।"
"তারমানে যা বলেছি তার থেকে আরো বেশি কালো হবে ধর।ঘটকরা কোনদিন সত্যি কথা বলে না।তোকে ওরকম বলেছে তাই।আমি বলছি, তুই ও ছেলেকে বিয়ে করিসনা।কালো ছেলে বিয়ে করে জীবনে সুখী হতে পারবিনা।আমার কথা শোন।টাকা পয়সা লাগছে না নাকি?"
"তো লাগছে না?টাকা ছাড়া আজকাল বিয়ে আছে নাকি?পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ লাগছে। বাপের তো কিছু ছিল না।বাড়ির মাটি টুকু ছাড়া।তবে মা তার বাপের মাঠান পাঁচ কাঠা জমি পেয়েছে।ওই জমিটা বিক্রি করে আমার বিয়ের টাকা দিবে।"
টাকা লাগার কথা শুনে নূর বিবি আরো চমকে উঠল,"কি বললি,পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগছে!" তারপর সে বলল,"টাকা দিয়ে কালো ছেলে বিয়ে করবি কেন?টাকা যদি দিতেই হয় একটা ভালো ছেলেকে দিবি।তোর মা না হয় স্কুলে লেখাপড়া করেনি।তার বুদ্ধি কম থাকতেই পারে।তুই তো লেখাপড়া করেছিস।তা-ও তোর বুদ্ধি এত কম!"
"কি করব বলো।আমার কপালে যদি কালো ছেলে লেখা থাকে ফর্সা ছেলে পাবো কোথায়?"
নূর বিবি অমনি মুহূর্তের মধ্যে জরিনার কথা উড়িয়ে দিল,"ছাড় তোর কপাল!আমার কথা শুনে ও ছেলেকে তুই বিয়ে করবিনা।ফর্সা ছেলে বিয়ে কর।"
জরিনা বলল,"তোমার কথা শুনে করব নাহয়।কিন্তু ফর্সা ছেলে পাবো কোথায়?তোমার হাতে আছে নাকি?"
"আমার হাতে আছে কি রে!আছেই তো।না থাকলে বলব কেন?খুব সুন্দর একটা ছেলে আছে আমার হাতে।দেখতে একেবারে নায়ক।তোর সঙ্গে দারুণ মানাবে ।রোজগার করে খুব ভালো।তোর কোন জিনিসের অভাব রাখবে না।পাকা বাড়ি। বাড়ির ভিতরেই পায়খানা, বাথরুম।মাঠে পায়খানা ফিরতে যেতে হবেনা।নিজস্ব মোটরসাইকেল আছে।মোটরসাইকেলে চেপে দু-জনে হলে সিনেমা দেখতে চলে যাবি।আহা,কি সুখ!"
জরিনা বলল,"ছবি আছে?"
"থাকবে না কেন?ঘরে বাক্সের ভিতর ঢোকানো আছে। বের করে এনে তোকে দেখাচ্ছি।"নূর বিবি অমনি ঘরের ভিতর থেকে বাক্স খুলে ছবি বের করে এনে জরিনাকে দেখাল,"দ্যাখ!"
জরিনা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখল।পরনে নীল জিনস প্যান্ট।গায়ে রঙিন শার্ট।চোখে চশমা পরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে।দেখতে দেখতে জরিনা একবার নূর বিবির দিকে তাকাল।
নূর বিবি বলল,"দেখতে নায়ক নয়?"
জরিনা মুচকি হেসে বলল,"হ্যাঁ।"
নূর বিবি এবার ছবিটা তার হাত থেকে নিয়ে বলল,"এই ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে লাগাব।"
"লাগাও।"জরিনা তখন মুখে বিয়ে লাগাতে বললেও পরে বলল, "বড়লোকের ছেলে আমার মতো গরিবের মেয়েকে বিয়ে করবে?"
নূর বিবি বলল,"করবে।"
"করবে?"
"হ্যাঁ, করবে।"
জরিনা তখন বলল,"করেও যদি টাকা বেশি চাইবে।আমার মা-র কি বেশি টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে?তাহলে বিয়ে আর হচ্ছে না।"
নূর বিবি তখন অমনি বলে দিল,"অত চিন্তা করছিস কেন?এক টাকা চাইবে না।তোকে শুধু বিয়ে করবে।"
"তোমাকে বলেছে?"
"না বললে জানলাম কি করে?কালই তো ফোন করেছিল। করে একটা ভালো মেয়ে দেখতে বলল আমাকে।বলল,কোন টাকা পয়সা লাগবেনা।শুধু মেয়েটা ভালো চাই।গরিব ঘরের মেয়ে হলেও কোন অসুবিধা নেই।তাই তোকে বলছি, ওই কালো ছেলে তুই আর বিয়ে করবি না।রাকিবকে বিয়ে কর।আরে,সুন্দর স্বামী কাছে আর স্বর্গে থাকা এক জিনিস।এক বেলা খেতে না পেলেও শান্তি।বুঝলি?"তারপর বলল,"রাকিব কে চিনতে পারলি?"
জরিনা বলল,"কে?"
নূর বিবি বলল,"যার ছবি দেখলি।আমার বাপের দেশে বাড়ি।থাম,রাকিবকে একবার ফোন লাগিয়ে দিই।কথা বল।"
জরিনা ফোন লাগাতে নিষেধ করল,"থাক,এখন ফোন লাগাতে হবে না।আমি ফোনে কথা বলব না।লজ্জা লাগবে।"
"ফোনে কথা বলবি তো লজ্জা কি?"নূর বিবি শুনল না। অমনি ফোন লাগিয়ে দিল।
"হ্যালো!"
"কে,রাকিব?"
"হ্যাঁ, বলো।"
"বলছি,তুই একটা মেয়ে দেখতে বলেছিলি না?তো একটা মেয়ে দেখেছি।মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর।আমাদের নিজেদের মধ্যে।ব্যবহারও খুব ভালো।যাকে বলে অমায়িক মেয়ে।বিয়ে করলে তুই সুখী হবি জীবনে।শান্তি পাবি জীবনে।সে এখন আমার কাছে বসে আছে।কথা বল।..." বলতে বলতে নূর বিবি জরিনাকে ফোনটা হঠাৎ দিয়ে দিল,"নে জরিনা,কথা বল।"
জরিনার ফোনটা না ধরে আর উপায় হল না,"হ্যালো!"
"কে,জরিনা?"
"হ্যাঁ।কিন্তু আপনি কি করে জানলেন,আমার নাম জরিনা?"জরিনা বলল।
"এক্ষুনি নূর বিবির মুখে শুনলাম না?"
"ও,আচ্ছা।"
"তোমার নামটা কিন্তু দারুণ!"
জরিনা হাসল।
রাকিব বলল,"আমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি,জরিনা।তুমি দেখতে খুবই সুন্দরী।তাই আমি তোমাকেই বিয়ে করব।"
জরিনা বলল,"দাদির মুখে আপনার অনেক গল্প শুনলাম।এবং আপনার ছবি দেখলাম। আপনি বড়লোকের ছেলে। এবং দেখতে খুব সুন্দর।আপনি কি আমার মতো গরিব মেয়েকে বিয়ে করবেন?"
"বিশ্বাস হচ্ছে না?তুমি ওখানেই থাকো।আমি এক ঘণ্টার মধ্যে চলে আসছি।আর হ্যাঁ,ফোনটা নূর বিবিকে একটু দাও।তার সঙ্গে জরুরি দুটো কথা আছে।বলে নিই।"
জরিনা নূর বিবিকে ফোনটা দিল,"নাও।তোমার সঙ্গে কথা বলবে।"
নূর বিবি ফোনটা হাতে নিয়ে কানে ধরে একটু সরে গিয়ে বলল,"কি,বল।"
"তুমি এক্ষুনি জরিনাকে এক কাপ চায়ের সঙ্গে ট্যাবলেটটা গুলে খাইয়ে দাও।দিয়ে তোমার কাছে বসিয়ে রাখো।আমি এক্ষুনি আসছি।"
"ঠিক আছে, আয়।"
সঙ্গে সঙ্গে রাকিব লাইন কেটে দিল। নূর বিবি জরিনাকে তখন বলল,"রাকিব আসছে।তুই একটু বোস।আর হ্যাঁ,তোকে এক কাপ চা বানিয়ে দিই।খা।"
জরিনা বলল,"তা বানাও,খাই।"
নূর বিবি এরপর ঘর থেকে এক কাপ চা বানিয়ে আনল।জরিনা চা খেতে শুরু করল।খেতে খেতে বলল,"চা খেতে খুব একটা ভালো লাগছে না, দাদি।মন বলছে,ফেলে দিই।"
নূর বিবি বলল,"আমি কি আর তোদের মতো অত ভালো চা বানাতে পারি?ফেলবি কেন, খেয়ে নে। খেলেই কাজ দেবে।"
নূর বিবির কথায় জরিনা খেয়েই নিল।সে তাকে বুঝতেই দিল না যে,চায়ের সঙ্গে সে একরকম একটা ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছে।যা খেলে মেয়েদের শরীরে ও মনে অকস্মাৎ কামক্ষুধা জেগে ওঠে।কোন পুরুষ তার সঙ্গে তখন অনায়াসে মিলিত হতে পারে।তাই চায়ের স্বাদ তাকে বিস্বাদ লাগছে।
"বিড়ি বাঁধছি।আয়।বোস।"
জরিনার এটা নিজের দাদি নয়।তার নিজের দাদি নেই।অনেক দিন আগে স্তন ক্যানসারে মারা গেছে।জরিনার এটা পাড়া দাদি।নাম নূর বিবি।
জরিনা বসল গিয়ে,"কেমন আছো?"
"ভালো আছি।তুই ভালো আছিস?"
"হ্যাঁ দাদি,ভালো আছি।"
নূর বিবি তখন বলল,"তোদের যে এখন ভালো থাকারই বয়স।তা ভালো তো থাকবিই ।"তারপর বলল,"তা হ্যাঁ রে জরিনা,শুনলাম, তোর বলে বিয়ের কথা আলোচনা চলছে?কাল বলে তোকে দেখতে লোক আসবে?তা সত্যি নাকি?"
জরিনা বলল,"হ্যাঁ, সত্যি।"
নূর বিবি তখন বলতে লাগল,"তা এখুনি বিয়ে করে ফেলবি?সে কি রে!সবে তো ক্লাস নাইনে উঠলি।কলেজে পড়বি না?"
জরিনা বলল,"পড়ার ইচ্ছে তো ছিল।কিন্তু মা আর না পড়ালে কি করে পড়ব?"
"তোর মা'র কথা তুই শুনবি কেন?সে পড়াশোনার মূল্য কি বোঝে?"
জরিনা তার উত্তরে বলল,"মা-রও হয়তো ইচ্ছে ছিল পড়ানোর।কিন্তু না পারলে কি করে পড়াবে?মা-র অবস্থার কথাও তো দেখতে হবে।জুলুম করে শুধু পড়লে তো হবেনা।বাপ বেঁচে থাকলে অবশ্য এখন বিয়ে দিত না।আমিও বিয়ে করতে রাজি হতাম না।মা-র হঠাৎ যদি এখন কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কে বিয়ে দিবে?চতুর্দিক ভেবে চিন্তে দেখে বিয়ে করতে রাজি হলাম।"
নূর বিবি অমনি টপ্ করে বলে ফেলল,"কেন,আমরা ছিলাম না?আমরা তোর বিয়ে দিতাম। আমরা বুঝি তোর কেউ না!"
জরিনা বলল,"কেউ হবেনা কেন?আমি কি বলেছি,কেউ হও না?"
নূর বিবি বলল,"মুখে না বললে কি হবে? তোর কথা থেকে সেটাই বোঝা যাচ্ছে।যাইহোক,কোন দেশে বিয়ের কথা আলোচনা চলছে তাই বল।"
জরিনা বলল,"গ্রামের নাম রূপ খালি।"
নূর বিবি বলল,"অতদূরে বিয়ে করবি?যদি তোকে মেরে ফেলে?তা অতদূরে কে বিয়ে লাগাল শুনি?"
জরিনা বলল,"সম্পর্কে আমার খালুজি হয়।"
"তোর মায়ের কি বুদ্ধি নেই?অতদূরে কেউ মেয়ের বিয়ে দেয়? যেতে পারবে তো?বাসে তো চাপতে পারে না।বমি করে।মাথা ঘোরে বলে। তাহলে একটা বেটির অতদূরে বিয়ে দেওয়া কেন?তা ছেলে কি করে?"
"কি করবে?জমিতে চাষ আবাদ করে।"
"তারমানে ছেলে মাঠে খাটে তাইতো?"
"হ্যাঁ।" তারপর জরিনা বলল,"তাছাড়া আমাদের মতো ঘরের মেয়েছেলেদের কি চাকরি করা ছেলের সাথে বিয়ে হবে?কোন দিনই হবে না।"
নূর বিবি সেটা মানতে পারল না।সে বলল,"না হওয়ার কি আছে। কপালে থাকলে হতেও পারে।"
জরিনা বলল,"যদিওবা হয় লাখে একটা। ওকে হওয়া বলে না।"
"বেশ,তোর কথাই ঠিক হল।"জরিনার কথা নূর বিবি পরে মেনে নিল।নিয়ে বলল,"ছেলে দেখতে ফর্সা তো?"
"খুব একটা ফর্সা হবেনা।সে না হোক।ওতে অসুবিধা নেই।আমি তো ফর্সা আছি।"
শুনে নূর বিবি চমকে উঠল,"কি বললি!ছেলে ফর্সা হবেনা?তোর মতো মেয়ে শেষে মাঠে খাটা একটা কালো কুচ্ছিত রাখাল ছেলেকে বিয়ে করবি?ছি:!ছি:!ছি:!"
জরিনা বলল,"তুমি যত কালো বলছ, অত কালো হবেনা।"
"তুই দেখেছিস?"
"দেখিনি।"
"তো?"
"আমার সেই ঘটক খালুর মুখে শুনেছি।"
"তারমানে যা বলেছি তার থেকে আরো বেশি কালো হবে ধর।ঘটকরা কোনদিন সত্যি কথা বলে না।তোকে ওরকম বলেছে তাই।আমি বলছি, তুই ও ছেলেকে বিয়ে করিসনা।কালো ছেলে বিয়ে করে জীবনে সুখী হতে পারবিনা।আমার কথা শোন।টাকা পয়সা লাগছে না নাকি?"
"তো লাগছে না?টাকা ছাড়া আজকাল বিয়ে আছে নাকি?পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ লাগছে। বাপের তো কিছু ছিল না।বাড়ির মাটি টুকু ছাড়া।তবে মা তার বাপের মাঠান পাঁচ কাঠা জমি পেয়েছে।ওই জমিটা বিক্রি করে আমার বিয়ের টাকা দিবে।"
টাকা লাগার কথা শুনে নূর বিবি আরো চমকে উঠল,"কি বললি,পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগছে!" তারপর সে বলল,"টাকা দিয়ে কালো ছেলে বিয়ে করবি কেন?টাকা যদি দিতেই হয় একটা ভালো ছেলেকে দিবি।তোর মা না হয় স্কুলে লেখাপড়া করেনি।তার বুদ্ধি কম থাকতেই পারে।তুই তো লেখাপড়া করেছিস।তা-ও তোর বুদ্ধি এত কম!"
"কি করব বলো।আমার কপালে যদি কালো ছেলে লেখা থাকে ফর্সা ছেলে পাবো কোথায়?"
নূর বিবি অমনি মুহূর্তের মধ্যে জরিনার কথা উড়িয়ে দিল,"ছাড় তোর কপাল!আমার কথা শুনে ও ছেলেকে তুই বিয়ে করবিনা।ফর্সা ছেলে বিয়ে কর।"
জরিনা বলল,"তোমার কথা শুনে করব নাহয়।কিন্তু ফর্সা ছেলে পাবো কোথায়?তোমার হাতে আছে নাকি?"
"আমার হাতে আছে কি রে!আছেই তো।না থাকলে বলব কেন?খুব সুন্দর একটা ছেলে আছে আমার হাতে।দেখতে একেবারে নায়ক।তোর সঙ্গে দারুণ মানাবে ।রোজগার করে খুব ভালো।তোর কোন জিনিসের অভাব রাখবে না।পাকা বাড়ি। বাড়ির ভিতরেই পায়খানা, বাথরুম।মাঠে পায়খানা ফিরতে যেতে হবেনা।নিজস্ব মোটরসাইকেল আছে।মোটরসাইকেলে চেপে দু-জনে হলে সিনেমা দেখতে চলে যাবি।আহা,কি সুখ!"
জরিনা বলল,"ছবি আছে?"
"থাকবে না কেন?ঘরে বাক্সের ভিতর ঢোকানো আছে। বের করে এনে তোকে দেখাচ্ছি।"নূর বিবি অমনি ঘরের ভিতর থেকে বাক্স খুলে ছবি বের করে এনে জরিনাকে দেখাল,"দ্যাখ!"
জরিনা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখল।পরনে নীল জিনস প্যান্ট।গায়ে রঙিন শার্ট।চোখে চশমা পরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে।দেখতে দেখতে জরিনা একবার নূর বিবির দিকে তাকাল।
নূর বিবি বলল,"দেখতে নায়ক নয়?"
জরিনা মুচকি হেসে বলল,"হ্যাঁ।"
নূর বিবি এবার ছবিটা তার হাত থেকে নিয়ে বলল,"এই ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে লাগাব।"
"লাগাও।"জরিনা তখন মুখে বিয়ে লাগাতে বললেও পরে বলল, "বড়লোকের ছেলে আমার মতো গরিবের মেয়েকে বিয়ে করবে?"
নূর বিবি বলল,"করবে।"
"করবে?"
"হ্যাঁ, করবে।"
জরিনা তখন বলল,"করেও যদি টাকা বেশি চাইবে।আমার মা-র কি বেশি টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে?তাহলে বিয়ে আর হচ্ছে না।"
নূর বিবি তখন অমনি বলে দিল,"অত চিন্তা করছিস কেন?এক টাকা চাইবে না।তোকে শুধু বিয়ে করবে।"
"তোমাকে বলেছে?"
"না বললে জানলাম কি করে?কালই তো ফোন করেছিল। করে একটা ভালো মেয়ে দেখতে বলল আমাকে।বলল,কোন টাকা পয়সা লাগবেনা।শুধু মেয়েটা ভালো চাই।গরিব ঘরের মেয়ে হলেও কোন অসুবিধা নেই।তাই তোকে বলছি, ওই কালো ছেলে তুই আর বিয়ে করবি না।রাকিবকে বিয়ে কর।আরে,সুন্দর স্বামী কাছে আর স্বর্গে থাকা এক জিনিস।এক বেলা খেতে না পেলেও শান্তি।বুঝলি?"তারপর বলল,"রাকিব কে চিনতে পারলি?"
জরিনা বলল,"কে?"
নূর বিবি বলল,"যার ছবি দেখলি।আমার বাপের দেশে বাড়ি।থাম,রাকিবকে একবার ফোন লাগিয়ে দিই।কথা বল।"
জরিনা ফোন লাগাতে নিষেধ করল,"থাক,এখন ফোন লাগাতে হবে না।আমি ফোনে কথা বলব না।লজ্জা লাগবে।"
"ফোনে কথা বলবি তো লজ্জা কি?"নূর বিবি শুনল না। অমনি ফোন লাগিয়ে দিল।
"হ্যালো!"
"কে,রাকিব?"
"হ্যাঁ, বলো।"
"বলছি,তুই একটা মেয়ে দেখতে বলেছিলি না?তো একটা মেয়ে দেখেছি।মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর।আমাদের নিজেদের মধ্যে।ব্যবহারও খুব ভালো।যাকে বলে অমায়িক মেয়ে।বিয়ে করলে তুই সুখী হবি জীবনে।শান্তি পাবি জীবনে।সে এখন আমার কাছে বসে আছে।কথা বল।..." বলতে বলতে নূর বিবি জরিনাকে ফোনটা হঠাৎ দিয়ে দিল,"নে জরিনা,কথা বল।"
জরিনার ফোনটা না ধরে আর উপায় হল না,"হ্যালো!"
"কে,জরিনা?"
"হ্যাঁ।কিন্তু আপনি কি করে জানলেন,আমার নাম জরিনা?"জরিনা বলল।
"এক্ষুনি নূর বিবির মুখে শুনলাম না?"
"ও,আচ্ছা।"
"তোমার নামটা কিন্তু দারুণ!"
জরিনা হাসল।
রাকিব বলল,"আমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি,জরিনা।তুমি দেখতে খুবই সুন্দরী।তাই আমি তোমাকেই বিয়ে করব।"
জরিনা বলল,"দাদির মুখে আপনার অনেক গল্প শুনলাম।এবং আপনার ছবি দেখলাম। আপনি বড়লোকের ছেলে। এবং দেখতে খুব সুন্দর।আপনি কি আমার মতো গরিব মেয়েকে বিয়ে করবেন?"
"বিশ্বাস হচ্ছে না?তুমি ওখানেই থাকো।আমি এক ঘণ্টার মধ্যে চলে আসছি।আর হ্যাঁ,ফোনটা নূর বিবিকে একটু দাও।তার সঙ্গে জরুরি দুটো কথা আছে।বলে নিই।"
জরিনা নূর বিবিকে ফোনটা দিল,"নাও।তোমার সঙ্গে কথা বলবে।"
নূর বিবি ফোনটা হাতে নিয়ে কানে ধরে একটু সরে গিয়ে বলল,"কি,বল।"
"তুমি এক্ষুনি জরিনাকে এক কাপ চায়ের সঙ্গে ট্যাবলেটটা গুলে খাইয়ে দাও।দিয়ে তোমার কাছে বসিয়ে রাখো।আমি এক্ষুনি আসছি।"
"ঠিক আছে, আয়।"
সঙ্গে সঙ্গে রাকিব লাইন কেটে দিল। নূর বিবি জরিনাকে তখন বলল,"রাকিব আসছে।তুই একটু বোস।আর হ্যাঁ,তোকে এক কাপ চা বানিয়ে দিই।খা।"
জরিনা বলল,"তা বানাও,খাই।"
নূর বিবি এরপর ঘর থেকে এক কাপ চা বানিয়ে আনল।জরিনা চা খেতে শুরু করল।খেতে খেতে বলল,"চা খেতে খুব একটা ভালো লাগছে না, দাদি।মন বলছে,ফেলে দিই।"
নূর বিবি বলল,"আমি কি আর তোদের মতো অত ভালো চা বানাতে পারি?ফেলবি কেন, খেয়ে নে। খেলেই কাজ দেবে।"
নূর বিবির কথায় জরিনা খেয়েই নিল।সে তাকে বুঝতেই দিল না যে,চায়ের সঙ্গে সে একরকম একটা ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছে।যা খেলে মেয়েদের শরীরে ও মনে অকস্মাৎ কামক্ষুধা জেগে ওঠে।কোন পুরুষ তার সঙ্গে তখন অনায়াসে মিলিত হতে পারে।তাই চায়ের স্বাদ তাকে বিস্বাদ লাগছে।
★ দুই★
সাদা রংয়ের একটা আর টি আর মোটরবাইকে চেপে রাকিব চলে এল ।এসে বাইকের উপর থেকে নামল।ছবিতে আগে দেখা ছিল বলে জরিনা তাকে দেখেই চিনতে পারল। সত্যি সে নায়ক একটা।
রাকিবের তাকে আগে দেখা ছিল না।তবু তার তাকানো আর লাজুক হাসি দেখে সে তাকে ঠিকই চিনতে পারল।অতএব সে তাকে বলল,"আমি বলেছিলাম না,আমি আসব?এলাম?"
জরিনা মুখ টিপে হাসল।
রাকিব বলল,"আমি মুখে যা বলি কাজেও তাই করি।অন্য কোন প্রেমিকের মতো আমি শুধু মুখেই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে প্রেমিকার মন ভোলাই না।"
জরিনা এবারও হাসল।
রাকিব তার সেই হাসি দেখে বলল,"অপূর্ব!" ও সে পরে নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল,"কই গো,বসতে জায়গা টায়গা দেবে না নাকি?"
নূর বিবি তাদের বসার জন্য একটা বন্ধ ঘরের দরজা খুলে দিল।দিয়ে বলল,"তোরা এই ঘরে বোস। বসে গল্প কর।আমি বাইরে আছি।কোন প্রয়োজন হলে জানলা দিয়ে টুক করে ডাকবি। তাহলেই আমি দরজা খুলে দেব।"
ভিতরে তারা ঢুকে গেল।পরে নূর বিবি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।ভিতরে একটা চৌকি আর দুটো বালিশ ছাড়া কিছু নেই।নিচে পা ঝুলিয়ে চৌকির উপর তারা তখন পাশাপাশি বসল।বসে রাকিব বলল,"আমি যে তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি এবার সেটা প্রমাণ হল তো?"
নত মুখে জরিনা বলল,"হল।"
রাকিব জরিনার চিবুক ধরে তখন বলল,"তুমি খুব সুন্দর, জরিনা।তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।"
জরিনা বলল,"আমাকে তাহলে বিয়ে করবেন তো?"
"করব না তো কেন এসেছি?...." বলতে বলতে রাকিব জরিনার মাথার চুলের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিল ।ও চুল নাড়তে নাড়তে বলল,"তোমার মাথার চুল খুব সুন্দর !"তারপর নাকে শুঁকে ঘ্রাণ নিয়ে বলল,"আ:,কি সেন্ট!কি মেখেছ!"
জরিনা বলল,"কি মাখব?কিছু মাখি নি।"
রাকিব এবার জরিনার হাত ধরল।ও তার হাতের আঙুল নাড়ল।নাড়তে নাড়তে বলল,"তোমার হাতের আঙ্গুল গুলো কি সুন্দর!"
জরিনা এবার চুপ করে থাকল।
রাকিব এরপর জরিনার ঠোঁটে হাত দিল,"তোমার ঠোঁটও দারুণ !"
জরিনা এবারও কিছু বলল না।এবারও চুপ করে থাকল।ও চৌকির উপর শুয়ে গেল।
তার চুপ করে থাকা ও কিছু না বলা আর চৌকির উপর শুয়ে যাওয়া দেখে রাকিব বুঝতে পারল,ওষুধের কাজ শুরু হয়েছে।রাকিব তখন আর দেরি করল না। তার মনের নেশা মেটাতে শুরু করল।....
এরপর সন্ধ্যার অন্ধকার যখন ঘনিয়ে এল রাকিব তখন জরিনাকে বলল,"তোমার সঙ্গে যখন আমার শারীরিক সম্পর্ক ঘটেই গেল তখন আমি তোমাকে আর রেখে যাবো না। আজকেই তোমাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করব।তুমি কি বলছ, বলো।"
জরিনা বলল,"আমি কি বলব?"
"তাহলে আজকেই আমার সঙ্গে তোমাকে যেতে হবে।"
জরিনা এক কথায় রাজি হয়ে গেল,"যাবো।"ও রাকিবের হাত দুটো ধরে বলল,"নিয়ে গিয়ে আমাকে কষ্ট দিওনা হবে?আমি তোমাকে বিশ্বাস করে----"
রাকিব বলল,"কষ্ট দেব না।"
"ঠিক আছে, চলো তাহলে।"
জরিনা বললে পরে রাকিব সঙ্গে সঙ্গে জানলা দিয়ে মুখ বের করে নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল,"কই গো,আছো নাকি?"
নূর বিবিও সঙ্গে সঙ্গে জানলায় চলে এল, "হ্যাঁ, আছি।"
"তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও।"
নূর বিবি দরজা খুলে দিল।
রাকিব তাকে তখন বলল,"আমরা এক্ষুনি বেরিয়ে যাব।"
রাকিবের বলা হলে পরে জরিনা বলল,"মা তো খুব খোঁজাখুঁজি করবে।এবং কান্নাকাটি করবে।তুমি মাকে বুঝিয়ে রেখো।"
নূর বিবি জরিনাকে সাহস দিল,"তুই কোন চিন্তা করিসনা।আমি ঠিক বুঝিয়ে রাখব।"
"ঠিক আছে, আমরা যাচ্ছি তাহলে।"রাকিব বলল।
নূর বিবি বলল,"তোরা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছিস।আমাকে কিছু দিয়ে যাবিনা মিষ্টি খেতে?"
"অবশ্যই দিয়ে যাবো।"রাকিব প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে নূর বিবির হাতে দিল,"এটা তোমাকে দিলাম।তোমার যা ইচ্ছা করবে কিনে খেয়ো।"
নূর বিবি খুব খুশি হল,"আমি পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ি।প্রত্যেক নামাজ অন্তে আমি তোদের জন্য জায়নামাজে বসে দোয়া করব।তোদের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়।তোরা যেন খুব সুখী হোস।"ও পরে বলল,"যাবি তো এক্ষুনি চলে যা।শুভ কাজে দেরি করতে নেই।তোরা গেলে পরে আমি সন্ধ্যার নামাজ পড়ব।তাছাড়া হঠাৎ যদি তারমিনা চলে আসে তোদের বিয়ে ভালো করেই দিবে।আমারও।"তারমিনা যে জরিনার মা হয় সেটাও বলল।
শুনে রাকিব তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে জরিনাকে নিয়ে সে তখন ছুটল।
ওজু করে নূর বিবি এবার সন্ধ্যার নামাজ পড়বে।তার আগে রাকিব তাকে কত টাকা দিয়ে গেল মুঠি খুলে সে একবার দেখে নিল।পাঁচ হাজার টাকা।রাকিবের সঙ্গে এটাই তার চুক্তি হয়েছিল।
রাকিবের তাকে আগে দেখা ছিল না।তবু তার তাকানো আর লাজুক হাসি দেখে সে তাকে ঠিকই চিনতে পারল।অতএব সে তাকে বলল,"আমি বলেছিলাম না,আমি আসব?এলাম?"
জরিনা মুখ টিপে হাসল।
রাকিব বলল,"আমি মুখে যা বলি কাজেও তাই করি।অন্য কোন প্রেমিকের মতো আমি শুধু মুখেই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে প্রেমিকার মন ভোলাই না।"
জরিনা এবারও হাসল।
রাকিব তার সেই হাসি দেখে বলল,"অপূর্ব!" ও সে পরে নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল,"কই গো,বসতে জায়গা টায়গা দেবে না নাকি?"
নূর বিবি তাদের বসার জন্য একটা বন্ধ ঘরের দরজা খুলে দিল।দিয়ে বলল,"তোরা এই ঘরে বোস। বসে গল্প কর।আমি বাইরে আছি।কোন প্রয়োজন হলে জানলা দিয়ে টুক করে ডাকবি। তাহলেই আমি দরজা খুলে দেব।"
ভিতরে তারা ঢুকে গেল।পরে নূর বিবি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।ভিতরে একটা চৌকি আর দুটো বালিশ ছাড়া কিছু নেই।নিচে পা ঝুলিয়ে চৌকির উপর তারা তখন পাশাপাশি বসল।বসে রাকিব বলল,"আমি যে তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি এবার সেটা প্রমাণ হল তো?"
নত মুখে জরিনা বলল,"হল।"
রাকিব জরিনার চিবুক ধরে তখন বলল,"তুমি খুব সুন্দর, জরিনা।তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।"
জরিনা বলল,"আমাকে তাহলে বিয়ে করবেন তো?"
"করব না তো কেন এসেছি?...." বলতে বলতে রাকিব জরিনার মাথার চুলের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিল ।ও চুল নাড়তে নাড়তে বলল,"তোমার মাথার চুল খুব সুন্দর !"তারপর নাকে শুঁকে ঘ্রাণ নিয়ে বলল,"আ:,কি সেন্ট!কি মেখেছ!"
জরিনা বলল,"কি মাখব?কিছু মাখি নি।"
রাকিব এবার জরিনার হাত ধরল।ও তার হাতের আঙুল নাড়ল।নাড়তে নাড়তে বলল,"তোমার হাতের আঙ্গুল গুলো কি সুন্দর!"
জরিনা এবার চুপ করে থাকল।
রাকিব এরপর জরিনার ঠোঁটে হাত দিল,"তোমার ঠোঁটও দারুণ !"
জরিনা এবারও কিছু বলল না।এবারও চুপ করে থাকল।ও চৌকির উপর শুয়ে গেল।
তার চুপ করে থাকা ও কিছু না বলা আর চৌকির উপর শুয়ে যাওয়া দেখে রাকিব বুঝতে পারল,ওষুধের কাজ শুরু হয়েছে।রাকিব তখন আর দেরি করল না। তার মনের নেশা মেটাতে শুরু করল।....
এরপর সন্ধ্যার অন্ধকার যখন ঘনিয়ে এল রাকিব তখন জরিনাকে বলল,"তোমার সঙ্গে যখন আমার শারীরিক সম্পর্ক ঘটেই গেল তখন আমি তোমাকে আর রেখে যাবো না। আজকেই তোমাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করব।তুমি কি বলছ, বলো।"
জরিনা বলল,"আমি কি বলব?"
"তাহলে আজকেই আমার সঙ্গে তোমাকে যেতে হবে।"
জরিনা এক কথায় রাজি হয়ে গেল,"যাবো।"ও রাকিবের হাত দুটো ধরে বলল,"নিয়ে গিয়ে আমাকে কষ্ট দিওনা হবে?আমি তোমাকে বিশ্বাস করে----"
রাকিব বলল,"কষ্ট দেব না।"
"ঠিক আছে, চলো তাহলে।"
জরিনা বললে পরে রাকিব সঙ্গে সঙ্গে জানলা দিয়ে মুখ বের করে নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল,"কই গো,আছো নাকি?"
নূর বিবিও সঙ্গে সঙ্গে জানলায় চলে এল, "হ্যাঁ, আছি।"
"তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও।"
নূর বিবি দরজা খুলে দিল।
রাকিব তাকে তখন বলল,"আমরা এক্ষুনি বেরিয়ে যাব।"
রাকিবের বলা হলে পরে জরিনা বলল,"মা তো খুব খোঁজাখুঁজি করবে।এবং কান্নাকাটি করবে।তুমি মাকে বুঝিয়ে রেখো।"
নূর বিবি জরিনাকে সাহস দিল,"তুই কোন চিন্তা করিসনা।আমি ঠিক বুঝিয়ে রাখব।"
"ঠিক আছে, আমরা যাচ্ছি তাহলে।"রাকিব বলল।
নূর বিবি বলল,"তোরা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছিস।আমাকে কিছু দিয়ে যাবিনা মিষ্টি খেতে?"
"অবশ্যই দিয়ে যাবো।"রাকিব প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে নূর বিবির হাতে দিল,"এটা তোমাকে দিলাম।তোমার যা ইচ্ছা করবে কিনে খেয়ো।"
নূর বিবি খুব খুশি হল,"আমি পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ি।প্রত্যেক নামাজ অন্তে আমি তোদের জন্য জায়নামাজে বসে দোয়া করব।তোদের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়।তোরা যেন খুব সুখী হোস।"ও পরে বলল,"যাবি তো এক্ষুনি চলে যা।শুভ কাজে দেরি করতে নেই।তোরা গেলে পরে আমি সন্ধ্যার নামাজ পড়ব।তাছাড়া হঠাৎ যদি তারমিনা চলে আসে তোদের বিয়ে ভালো করেই দিবে।আমারও।"তারমিনা যে জরিনার মা হয় সেটাও বলল।
শুনে রাকিব তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে জরিনাকে নিয়ে সে তখন ছুটল।
ওজু করে নূর বিবি এবার সন্ধ্যার নামাজ পড়বে।তার আগে রাকিব তাকে কত টাকা দিয়ে গেল মুঠি খুলে সে একবার দেখে নিল।পাঁচ হাজার টাকা।রাকিবের সঙ্গে এটাই তার চুক্তি হয়েছিল।
★তিন★
রাকিবের গাড়ি পবনের চাইতেও বেগে উড়ে চলল।ফলে জরিনার মাথার চুল, বুকের উড়না সব এলোমেলো হয়ে গেল।বাতাসের ঝাপটায় তার চোখ দিয়ে জল ঝরল।জরিনা তাই গাড়ি আস্তে চালাতে বলল,"গাড়ি আস্তে চালাও।"
মাথায় হেলমেট পরা রাকিব জরিনার কথা শুনতে পেল কি পেল না কোন উত্তর করল না।খানিক বাদে জরিনা ফের বলল,"গাড়ি আস্তে চালাও।"এবার সে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আগের থেকে জোরে বলল।
রাকিব বলল,"এখন কি গাড়ি আস্তে চালানোর সময় আছে?ধরা পড়ে গেলে তুমি আমি দু'জনেই ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো।তোমার কি কোন অসুবিধা হচ্ছে?"
"পড়ে যাবো বলে ভয় লাগছে।আর বাতাসে চোখ দিয়ে জল ঝরছে।"
"পড়বে না।তুমি আমাকে ভালো করে ধরো। আর চোখ বন্ধ করে বসো।"
রাকিবের কথা মতো জরিনা তাই করল।প্রায় ঘণ্টা খানেকের উপর গাড়ি একইভাবে ছোটাল। এরপর রাকিব শহরে পৌঁছে গেল।শহরের একটা পাঁচতলা হোটেলে গিয়ে তারা উঠল।জরিনাকে হোটেলের একটা রুমে বসিয়ে রেখে রাকিব বলল,"তুমি এখানে একটু বসো,জরিনা।আমি একটু আসছি।"
"কোথা থেকে?"
"বাইরে থেকে।"
জরিনা বলল,"আমি একা বসতে পারব না। একা বসতে আমার ভয় করবে।আমিও তোমার সঙ্গে যাবো।"
রাকিব জরিনাকে সাহস দেওয়ার জন্য তখন বলল,"ভয় কি!কোন ভয় নেই।"
"না।তা-ও আমার ভয় করবে।কেউ যদি এসে চেপে ধরে আমি তখন কি করব।এখানে আমি কাকে চিনি?"
রাকিব ফের তাকে সাহস দিল,"বললাম তো ভয় নেই।এখানকার মানুষ সবাই খুব ভালো।কেউ তোমাকে কিছু শুধিয়ে দেখবেনা।বিরক্ত করবে না।"
জরিনা তখন বলল,"তুমি বাইরে কোথায় যাবে?"
রাকিব বলল,"সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। এখানে তো সিগারেট পাওয়া যাবে না।তাই রাস্তার ওপারে একটু যেতে হবে।"
"আজ অমনি থাকো।সিগারেট খেতে হবে না। একটা রাত সিগারেট না খেলে কি হবে?"
"তোমার মাথা খারাপ !সিগারেট না খেলে হয়?"রাকিব বলল।
জরিনা যখন কোন ভাবেই তাকে আটকাতে না পারল তখন অত্যন্ত ভীতা হয়ে বলল,"যাচ্ছ যাও।কিন্তু খুব বেশি দেরি করোনা যেন।তাড়াতাড়ি চলে এসো।"
রাকিব "যাবো আর আসব" বলে বেরিয়ে এল।
মাথায় হেলমেট পরা রাকিব জরিনার কথা শুনতে পেল কি পেল না কোন উত্তর করল না।খানিক বাদে জরিনা ফের বলল,"গাড়ি আস্তে চালাও।"এবার সে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আগের থেকে জোরে বলল।
রাকিব বলল,"এখন কি গাড়ি আস্তে চালানোর সময় আছে?ধরা পড়ে গেলে তুমি আমি দু'জনেই ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো।তোমার কি কোন অসুবিধা হচ্ছে?"
"পড়ে যাবো বলে ভয় লাগছে।আর বাতাসে চোখ দিয়ে জল ঝরছে।"
"পড়বে না।তুমি আমাকে ভালো করে ধরো। আর চোখ বন্ধ করে বসো।"
রাকিবের কথা মতো জরিনা তাই করল।প্রায় ঘণ্টা খানেকের উপর গাড়ি একইভাবে ছোটাল। এরপর রাকিব শহরে পৌঁছে গেল।শহরের একটা পাঁচতলা হোটেলে গিয়ে তারা উঠল।জরিনাকে হোটেলের একটা রুমে বসিয়ে রেখে রাকিব বলল,"তুমি এখানে একটু বসো,জরিনা।আমি একটু আসছি।"
"কোথা থেকে?"
"বাইরে থেকে।"
জরিনা বলল,"আমি একা বসতে পারব না। একা বসতে আমার ভয় করবে।আমিও তোমার সঙ্গে যাবো।"
রাকিব জরিনাকে সাহস দেওয়ার জন্য তখন বলল,"ভয় কি!কোন ভয় নেই।"
"না।তা-ও আমার ভয় করবে।কেউ যদি এসে চেপে ধরে আমি তখন কি করব।এখানে আমি কাকে চিনি?"
রাকিব ফের তাকে সাহস দিল,"বললাম তো ভয় নেই।এখানকার মানুষ সবাই খুব ভালো।কেউ তোমাকে কিছু শুধিয়ে দেখবেনা।বিরক্ত করবে না।"
জরিনা তখন বলল,"তুমি বাইরে কোথায় যাবে?"
রাকিব বলল,"সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। এখানে তো সিগারেট পাওয়া যাবে না।তাই রাস্তার ওপারে একটু যেতে হবে।"
"আজ অমনি থাকো।সিগারেট খেতে হবে না। একটা রাত সিগারেট না খেলে কি হবে?"
"তোমার মাথা খারাপ !সিগারেট না খেলে হয়?"রাকিব বলল।
জরিনা যখন কোন ভাবেই তাকে আটকাতে না পারল তখন অত্যন্ত ভীতা হয়ে বলল,"যাচ্ছ যাও।কিন্তু খুব বেশি দেরি করোনা যেন।তাড়াতাড়ি চলে এসো।"
রাকিব "যাবো আর আসব" বলে বেরিয়ে এল।
★চার★
ঘণ্টা খানেক হতে চলল তবু রাকিব ফিরে এল না।একা ঘরে জরিনার ভয় করতে লাগল। তার কাছে কোন ফোনও নেই যে সে ফোন করে ডাকবে।যদি না আসে সে কি করবে?কোন পুরুষ এসে যদি তাকে এখন....ভয়ে জরিনার কণ্ঠতালু শুকিয়ে গেল।আর সে বারবার ঢোঁক গিলল।
আর ঠিক এই সময় রাকিবের থেকে বয়সে কিছু বড় হবে এক ব্যক্তি ঘরে এসে ঢুকল,"কি করছ,সুন্দরী?" বলে।
জরিনা ভীষণ ভাবে আঁতকে উঠল।তারপর চিৎকার করে উঠল,"কে আপনি?"
"বলব।অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন?আগে দরজাটা বন্ধ করতে দাও।বন্ধ করি।"
জরিনা চিৎকার করে উঠল,"না,দরজা বন্ধ করবেন না।দরজা বন্ধ করবেন না,বলছি।"
সে শুনল না।দরজা বন্ধ করেই দিল,"কি হল,এবার বলো।"
"আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন?দরজা খুলে দিন।দরজা খুলে দিন,বলছি।নাহলে রাকিব এসে পাবেনা।"
সে তখন বলল,"রাকিব আর আসবে না।"
জরিনা ভীতা হয়ে তখন পিছনের দেওয়ালের দিকে সরে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল,"আপনি কে?এখানে কেন?বেরিয়ে যান।বেরিয়ে যান,বলছি।"
হাসতে হাসতে সে বলল,"আমি এই হোটেলের মালিক।সুতরাং তুমি বেরিয়ে যেতে বললেই কি আমি বেরিয়ে যাবো?কক্ষনো না।"
দৃপ্ত কণ্ঠে জরিনা এবার তার উত্তরে বলল,"আপনি হোটেলের মালিক হতে পারেন।তা বলে একা একটা মেয়ের ঘরে আসতে পারেন না।এটা অন্যায়।আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান।রাকিব আসুক তখন যা বলার ওকে বলবেন।আমার সঙ্গে আপনার কোন প্রয়োজন নেই।আপনি এখন আসতে পারেন।"
"রাকিবের সঙ্গে প্রয়োজন আমার মিটে গেছে।প্রয়োজন এখন আমার তোমার সঙ্গে।"
"আমার সঙ্গে!আমার সঙ্গে আপনার কি প্রয়োজন?"
সে বলল,"অত দূরে থাকলে কি করে বলব?কাছে এসো তবে তো বলব।"জরিনাকে সে আহ্বান করল।
জরিনা তখন 'না' বলে বলল,"আপনি ভালোই ভালোই বেরিয়ে যান বলছি।নাহলে রাকিব এলে তাকে সব বলে দিয়ে আপনাকে কঠিন শাস্তি দেওয়াব।"
জরিনার কথা শুনে সে 'হো হো' করে হাসল,"তুমি এখনো রাকিবের কথা ভাবছ?রাকিব আর আসবে না বললাম না?"
"কে বলল আসবে না?"
"আমি বলছি।রাকিব চলে গেছে।"
"চলে গেছে!কোথায় চলে গেছে?"
"বাড়ি।"
জরিনা বিশ্বাস করল না।সে বলল,"এ হতে পারেনা।সে আমাকে ভালোবাসে।আমিও তাকে ভালোবাসি।আর আপনি বললেই হল না?রাকিব সিগারেট কিনতে গেছে।হয়তো দোকানে ভিড় আছে বলে দেরি করছে।পেয়ে গেলে সে ঠিকই ফিরে আসবে।রাকিব কথা দিয়েছে সে আমাকে বিয়ে করবে।"
জরিনার কথার উত্তরে সে বলল,"তুমি হলে পাড়া গ্রামের অতি সাধারণ মেয়ে।তাই বুঝতে পারোনি।রাকিব তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে।ফিরে আসবে না।"
"কি!"
"হ্যাঁ।"
তখন চমকে উঠলেও পরে জরিনা বলল,"আমি আপনার কোন কথা বিশ্বাস করি না। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।হ্যাঁ,আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।"
"আমি মিথ্যা কথা বলছি না।আমি তোমাকে সত্যি কথাই বলছি,জরিনা।"
জরিনা তার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হল,"এ কি!আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?"
সে হাসল,"টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় রাকিব আমাকে বলে গেছে।"তারপর বলল,"জানো তো,মেয়েছেলে আমি কেনাবেচার ব্যবসা করি।তোমাকে রাকিব বিয়ে করবে বলে নিয়ে এসে আমার কাছে বিক্রি করেছে।শুধু তুমি নও,আরো অনেক মেয়েকে সে বিয়ে করবে বলে এই ভাবে নিয়ে এসে বিক্রি করেছে।তোমরা মেয়েরা হলে বোকা।তাই তোমরা যেকোন ছেলের প্রেমের প্রলোভনে পড়ে যাও।আর তার সঙ্গে বেরিয়ে চলে আসো।আসার আগে তার সম্পর্কে একবারও কোন কথা ভেবে দেখ না।"
জরিনা বলল,"আমি তাকে বুঝতে পারিনি।আমি তাকে চিনতে পারিনি।"
সে বলল,"তুমি তো কোন চেষ্টাই করোনি। তুমি আসলে রাকিবের সুন্দর চেহারা দেখে ভুলে গিয়েছিলে।জানো তো,রাকিব তার ওই সুন্দর চেহারার জন্যই তোমাদের মতো মেয়েদের সহজে পটাতে পারে।তোমাকে ধরলে পরে রাকিবের একশো একটা মেয়ে বিক্রি করা হল।সব তারা তোমার মতো গরিব ঘরের মেয়ে।সব গ্রামে ওর একটা করে মেয়ে ফিট করা আছে।তারাই রাকিবকে মেয়ে ঠিক করে দেয়।রাকিবের কাছ থেকে তারা কমিশন খায়।"
জরিনার অমনি নূর বিবির কথা মনে পড়ে গেল।তার এই দাদিই তাকে সেরেছে ।সে তখন বুঝতে পারল।এবং পরে তার মনে হল,এখান থেকে সে যদি বেরোতে পারে ওই নূর বিবির বিরুদ্ধে বিচার ডাকবে।তাকে শাস্তি দিতেই হবে। নাহলে সে আরো অনেক মেয়ের সর্বনাশ করবে।তার সর্বনাশের হাত থেকে গ্রামের মেয়েদের বাঁচাতে হবে।বিষয়টা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে হবে।ও সে নিজে একটা সংগঠন গড়ে তুলবে।হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মেয়েদের নিয়ে ।সেই সংগঠনের কাজ হবে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।মেয়েদের সতর্ক করা।ভুল পথে ভুল করেও যাতে তাদের পা না পড়ে। ভালোবাসার শিকার মেয়েরা যাতে না হয়।...
এরপর জরিনা তার কাছে মুক্তি চাইল,"...আপনি আমায় মুক্তি দিন।"
সে মুক্তি দিল না।....
★পাঁচ★
আর ঠিক এই সময় রাকিবের থেকে বয়সে কিছু বড় হবে এক ব্যক্তি ঘরে এসে ঢুকল,"কি করছ,সুন্দরী?" বলে।
জরিনা ভীষণ ভাবে আঁতকে উঠল।তারপর চিৎকার করে উঠল,"কে আপনি?"
"বলব।অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন?আগে দরজাটা বন্ধ করতে দাও।বন্ধ করি।"
জরিনা চিৎকার করে উঠল,"না,দরজা বন্ধ করবেন না।দরজা বন্ধ করবেন না,বলছি।"
সে শুনল না।দরজা বন্ধ করেই দিল,"কি হল,এবার বলো।"
"আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন?দরজা খুলে দিন।দরজা খুলে দিন,বলছি।নাহলে রাকিব এসে পাবেনা।"
সে তখন বলল,"রাকিব আর আসবে না।"
জরিনা ভীতা হয়ে তখন পিছনের দেওয়ালের দিকে সরে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল,"আপনি কে?এখানে কেন?বেরিয়ে যান।বেরিয়ে যান,বলছি।"
হাসতে হাসতে সে বলল,"আমি এই হোটেলের মালিক।সুতরাং তুমি বেরিয়ে যেতে বললেই কি আমি বেরিয়ে যাবো?কক্ষনো না।"
দৃপ্ত কণ্ঠে জরিনা এবার তার উত্তরে বলল,"আপনি হোটেলের মালিক হতে পারেন।তা বলে একা একটা মেয়ের ঘরে আসতে পারেন না।এটা অন্যায়।আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান।রাকিব আসুক তখন যা বলার ওকে বলবেন।আমার সঙ্গে আপনার কোন প্রয়োজন নেই।আপনি এখন আসতে পারেন।"
"রাকিবের সঙ্গে প্রয়োজন আমার মিটে গেছে।প্রয়োজন এখন আমার তোমার সঙ্গে।"
"আমার সঙ্গে!আমার সঙ্গে আপনার কি প্রয়োজন?"
সে বলল,"অত দূরে থাকলে কি করে বলব?কাছে এসো তবে তো বলব।"জরিনাকে সে আহ্বান করল।
জরিনা তখন 'না' বলে বলল,"আপনি ভালোই ভালোই বেরিয়ে যান বলছি।নাহলে রাকিব এলে তাকে সব বলে দিয়ে আপনাকে কঠিন শাস্তি দেওয়াব।"
জরিনার কথা শুনে সে 'হো হো' করে হাসল,"তুমি এখনো রাকিবের কথা ভাবছ?রাকিব আর আসবে না বললাম না?"
"কে বলল আসবে না?"
"আমি বলছি।রাকিব চলে গেছে।"
"চলে গেছে!কোথায় চলে গেছে?"
"বাড়ি।"
জরিনা বিশ্বাস করল না।সে বলল,"এ হতে পারেনা।সে আমাকে ভালোবাসে।আমিও তাকে ভালোবাসি।আর আপনি বললেই হল না?রাকিব সিগারেট কিনতে গেছে।হয়তো দোকানে ভিড় আছে বলে দেরি করছে।পেয়ে গেলে সে ঠিকই ফিরে আসবে।রাকিব কথা দিয়েছে সে আমাকে বিয়ে করবে।"
জরিনার কথার উত্তরে সে বলল,"তুমি হলে পাড়া গ্রামের অতি সাধারণ মেয়ে।তাই বুঝতে পারোনি।রাকিব তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে।ফিরে আসবে না।"
"কি!"
"হ্যাঁ।"
তখন চমকে উঠলেও পরে জরিনা বলল,"আমি আপনার কোন কথা বিশ্বাস করি না। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।হ্যাঁ,আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।"
"আমি মিথ্যা কথা বলছি না।আমি তোমাকে সত্যি কথাই বলছি,জরিনা।"
জরিনা তার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হল,"এ কি!আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?"
সে হাসল,"টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় রাকিব আমাকে বলে গেছে।"তারপর বলল,"জানো তো,মেয়েছেলে আমি কেনাবেচার ব্যবসা করি।তোমাকে রাকিব বিয়ে করবে বলে নিয়ে এসে আমার কাছে বিক্রি করেছে।শুধু তুমি নও,আরো অনেক মেয়েকে সে বিয়ে করবে বলে এই ভাবে নিয়ে এসে বিক্রি করেছে।তোমরা মেয়েরা হলে বোকা।তাই তোমরা যেকোন ছেলের প্রেমের প্রলোভনে পড়ে যাও।আর তার সঙ্গে বেরিয়ে চলে আসো।আসার আগে তার সম্পর্কে একবারও কোন কথা ভেবে দেখ না।"
জরিনা বলল,"আমি তাকে বুঝতে পারিনি।আমি তাকে চিনতে পারিনি।"
সে বলল,"তুমি তো কোন চেষ্টাই করোনি। তুমি আসলে রাকিবের সুন্দর চেহারা দেখে ভুলে গিয়েছিলে।জানো তো,রাকিব তার ওই সুন্দর চেহারার জন্যই তোমাদের মতো মেয়েদের সহজে পটাতে পারে।তোমাকে ধরলে পরে রাকিবের একশো একটা মেয়ে বিক্রি করা হল।সব তারা তোমার মতো গরিব ঘরের মেয়ে।সব গ্রামে ওর একটা করে মেয়ে ফিট করা আছে।তারাই রাকিবকে মেয়ে ঠিক করে দেয়।রাকিবের কাছ থেকে তারা কমিশন খায়।"
জরিনার অমনি নূর বিবির কথা মনে পড়ে গেল।তার এই দাদিই তাকে সেরেছে ।সে তখন বুঝতে পারল।এবং পরে তার মনে হল,এখান থেকে সে যদি বেরোতে পারে ওই নূর বিবির বিরুদ্ধে বিচার ডাকবে।তাকে শাস্তি দিতেই হবে। নাহলে সে আরো অনেক মেয়ের সর্বনাশ করবে।তার সর্বনাশের হাত থেকে গ্রামের মেয়েদের বাঁচাতে হবে।বিষয়টা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে হবে।ও সে নিজে একটা সংগঠন গড়ে তুলবে।হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মেয়েদের নিয়ে ।সেই সংগঠনের কাজ হবে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।মেয়েদের সতর্ক করা।ভুল পথে ভুল করেও যাতে তাদের পা না পড়ে। ভালোবাসার শিকার মেয়েরা যাতে না হয়।...
এরপর জরিনা তার কাছে মুক্তি চাইল,"...আপনি আমায় মুক্তি দিন।"
সে মুক্তি দিল না।....
★পাঁচ★
রাত্রে জরিনার মা জরিনার খোঁজে বের হল। পাশের বাড়ি গুলো দেখল।ও আরো অনেক লোককে ধরে জিজ্ঞেস করল।কিন্তু জরিনার খোঁজ কেউ দিতে পারল না।জরিনাকে কেউ দেখেনি বলল।জরিনার জন্য তার মনে তখন চিন্তা হল।মন খারাপ করে সে বাড়িতে বসে থাকল। থাকতে থাকতে তার নূর বিবির কথা মনে পড়ল।জরিনা তার কাছে যায়।বসে।সব বাড়ি গেলেও তার নূর বিবির বাড়ি যাওয়া হয়নি।তার কাছে গেলে সে জরিনার খোঁজ পেতে পারে।ভেবে সে নূর বিবির বাড়ি গেল।গিয়ে নূর বিবির পাশ খানে বসল,"চাচি,আজ তোমার কাছে আমার জরিনা আসেনি?"
নূর বিবি বলল,"না তো।"তারপর বলল,"তুমি এসেছ ভালো হল।নাহলে তোমার কাছে আমাকেই যেতে হতো।তোমার জরিনা আমাকে ফোন করেছিল ।খবরটা দেওয়ার জন্য।"
জরিনার ফোন করার কথা শুনে সে চমকে উঠল, "ফোন করেছিল!"
"হ্যাঁ।"
"কখন?"
"আধঘণ্টা হল।"
"কিন্তু জরিনার কাছে তো মোবাইল নেই।ও তাহলে ফোন করল কি করে?"
নূর বিবি বলল,"কার মোবাইল থেকে করেছিল তা তো বলতে পারব না।আমার নাম্বার ও জানে ।তাই আমার মোবাইলে করেছিল।"
"করে কি বলল?"সে জানতে চাইল।
"তোমাকে খোঁজাখুঁজি করতে এবং চিন্তা করতে নিষেধ করল।"
"কোথায় আছে বলল?"
"সেসব কিছু বলল না।জিজ্ঞেস করলাম তা-ও বলল না।তবে একটা কথা বলল।"
"কি বলল?"
নূর বিবি বলল,"কাল বলে ওকে দেখতে লোক আসবে।ছেলে বলে দেখতে ভালো না। কালো।কালো ছেলেকে ও বিয়ে করবে না।তাই কোথাকার একটা ছেলের সঙ্গে বেরিয়ে গেছে।"
"কি বললে তুমি!"
"হ্যাঁ।ফোনে আমাকে যেরকম বলল আমি তোমাকে সেরকমই বললাম।"
সে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না।তারস্বরে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল,"জরিনা,ও জরিনা,এ তুই কি করলি মা...এ তুই কি করলি...জরিনা..."
নূর বিবি তাকে কাঁদতে নিষেধ করল।এবং আল্লার কাছে জরিনার জন্য দোয়া করতে বলল।
দুই হাত তুলে সে তখন দোয়া করতে লাগল,"আল্লা,ও আল্লা।আমার জরিনাকে তুমি সুখে রাখো।ভালো রাখো। হেফাজতে রাখো।...."
নূর বিবি বলল,"না তো।"তারপর বলল,"তুমি এসেছ ভালো হল।নাহলে তোমার কাছে আমাকেই যেতে হতো।তোমার জরিনা আমাকে ফোন করেছিল ।খবরটা দেওয়ার জন্য।"
জরিনার ফোন করার কথা শুনে সে চমকে উঠল, "ফোন করেছিল!"
"হ্যাঁ।"
"কখন?"
"আধঘণ্টা হল।"
"কিন্তু জরিনার কাছে তো মোবাইল নেই।ও তাহলে ফোন করল কি করে?"
নূর বিবি বলল,"কার মোবাইল থেকে করেছিল তা তো বলতে পারব না।আমার নাম্বার ও জানে ।তাই আমার মোবাইলে করেছিল।"
"করে কি বলল?"সে জানতে চাইল।
"তোমাকে খোঁজাখুঁজি করতে এবং চিন্তা করতে নিষেধ করল।"
"কোথায় আছে বলল?"
"সেসব কিছু বলল না।জিজ্ঞেস করলাম তা-ও বলল না।তবে একটা কথা বলল।"
"কি বলল?"
নূর বিবি বলল,"কাল বলে ওকে দেখতে লোক আসবে।ছেলে বলে দেখতে ভালো না। কালো।কালো ছেলেকে ও বিয়ে করবে না।তাই কোথাকার একটা ছেলের সঙ্গে বেরিয়ে গেছে।"
"কি বললে তুমি!"
"হ্যাঁ।ফোনে আমাকে যেরকম বলল আমি তোমাকে সেরকমই বললাম।"
সে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না।তারস্বরে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল,"জরিনা,ও জরিনা,এ তুই কি করলি মা...এ তুই কি করলি...জরিনা..."
নূর বিবি তাকে কাঁদতে নিষেধ করল।এবং আল্লার কাছে জরিনার জন্য দোয়া করতে বলল।
দুই হাত তুলে সে তখন দোয়া করতে লাগল,"আল্লা,ও আল্লা।আমার জরিনাকে তুমি সুখে রাখো।ভালো রাখো। হেফাজতে রাখো।...."
★ছয়★
তিন বছর বাদে জরিনা বাড়ি ফিরে এল। হোটেলের এক সিকিউরিটির সঙ্গে হাত করে পালিয়ে।বাড়ি এসে জরিনা সব কথা তার মাকে খুলে বলল। দুই মা মেয়ে গলা ধরে খুব কাঁদল। পরে তারা দুই মা মেয়ে মিলে নূর বিবির বিরুদ্ধে সালিশ ডাকল। সালিশে প্রচুর লোক জমায়েত হল।সকল লোকের সামনে উঠে দাঁড়িয়ে জরিনা তার বক্তব্য পেশ করল।সকলে বক্তব্য শুনল।শোনার পর নূর বিবিকে সালিশের লোক উঠে দাঁড়াতে বলল।নূর বিবি উঠে দাঁড়াল। সালিশের লোক তাকে তখন জরিনার বক্তব্যের সত্যতা জিজ্ঞেস করল।অর্থাৎ জরিনা যা বলল সেসব কি সব সত্যি?
কালো ঘোমটার আড়ালে নূর বিবির মুখ ঢাকা ছিল।ঘোমটার আড়াল থেকে সে বলল,"না।বিলকুল মিথ্যা।"
জরিনা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল,"না।ও মিথ্যা কথা বলছে।ওর কথা আপনারা কেউ বিশ্বাস করবেন না।শুনবেন না।"
সালিশের মধ্যের একজন লোক তখন জরিনাকে বলল,"তুই-ই যে সত্যি বলছিস তার গ্যারান্টি কি?"
জরিনা বলল,"রাকিব আমাকে যে হোটেলে বিক্রি করেছিল সেই হোটেলই হল গ্যারান্টি প্রমাণ।"
নূর বিবি জনগণকে সাক্ষী মেনে বলল,"আমি যে এরকম কাজ করব আপনাদের কি সেটা মনে হয়?"
সালিশের অর্ধেকেরও বেশি লোক হাত উঁচিয়ে তখন বলল,"না,আমাদের সেটা মনে হয় না।"
আর অর্ধেক লোক চুপ করে থাকল।
নূর বিবি বলল,"আমি কিছু বলব না।গ্রামের মানুষ আপনারাই ভালো জানেন, আমি কি রকম মানুষ।আমার স্বামী কি রকম মানুষ।তাছাড়া আমরা পবিত্র মক্কা ভূমি ভ্রমণ করে এসেছি।আর ও একটা চরিত্র হীনা মেয়ে।তিন বছর হোটেলে ছিল।ওর জাত ধর্ম বলে কিছু নেই। সব চলে গেছে।আপনারা ওর কথা কি শুনছেন?ওকে মারুন, মারুন ওকে।"
তারপরই সালিশের লোক উত্তেজিত হয়ে জরিনাকে মার শুরু করল।আর অশ্রাব্য গালি। শালি,একটা খানকি মেয়ে।....
ভদ্র সালিশের ব্যবহারে জরিনার মা স্তম্ভিতা হয়ে গেল ।এর প্রতিবাদের সে কোন রাস্তা খুঁজে পেল না।দম দম করে সে শুধু লাথি মারল মাটিতে!....
পুনশ্চঃ নূর বিবির মতো মানুষেরা সমাজে এই ভাবেই বেঁচে যায় চিরকাল।আর মার খায় জরিনারা।
কালো ঘোমটার আড়ালে নূর বিবির মুখ ঢাকা ছিল।ঘোমটার আড়াল থেকে সে বলল,"না।বিলকুল মিথ্যা।"
জরিনা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল,"না।ও মিথ্যা কথা বলছে।ওর কথা আপনারা কেউ বিশ্বাস করবেন না।শুনবেন না।"
সালিশের মধ্যের একজন লোক তখন জরিনাকে বলল,"তুই-ই যে সত্যি বলছিস তার গ্যারান্টি কি?"
জরিনা বলল,"রাকিব আমাকে যে হোটেলে বিক্রি করেছিল সেই হোটেলই হল গ্যারান্টি প্রমাণ।"
নূর বিবি জনগণকে সাক্ষী মেনে বলল,"আমি যে এরকম কাজ করব আপনাদের কি সেটা মনে হয়?"
সালিশের অর্ধেকেরও বেশি লোক হাত উঁচিয়ে তখন বলল,"না,আমাদের সেটা মনে হয় না।"
আর অর্ধেক লোক চুপ করে থাকল।
নূর বিবি বলল,"আমি কিছু বলব না।গ্রামের মানুষ আপনারাই ভালো জানেন, আমি কি রকম মানুষ।আমার স্বামী কি রকম মানুষ।তাছাড়া আমরা পবিত্র মক্কা ভূমি ভ্রমণ করে এসেছি।আর ও একটা চরিত্র হীনা মেয়ে।তিন বছর হোটেলে ছিল।ওর জাত ধর্ম বলে কিছু নেই। সব চলে গেছে।আপনারা ওর কথা কি শুনছেন?ওকে মারুন, মারুন ওকে।"
তারপরই সালিশের লোক উত্তেজিত হয়ে জরিনাকে মার শুরু করল।আর অশ্রাব্য গালি। শালি,একটা খানকি মেয়ে।....
ভদ্র সালিশের ব্যবহারে জরিনার মা স্তম্ভিতা হয়ে গেল ।এর প্রতিবাদের সে কোন রাস্তা খুঁজে পেল না।দম দম করে সে শুধু লাথি মারল মাটিতে!....
পুনশ্চঃ নূর বিবির মতো মানুষেরা সমাজে এই ভাবেই বেঁচে যায় চিরকাল।আর মার খায় জরিনারা।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)