মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯


              মে সংখ্যা যাদের লেখা দ্বারা সমৃদ্ধ



 কবিতা:-
                 আবদুস সালাম, দেবযানী বসু, অনুপম চক্রবর্ত্তী,
               অনুপ মন্ডল, শিবাশিস দত্ত, সুপ্রীতি বর্মন, সৌরভ বর্ধন,                      আরিয়ান প্রিয়স পাল, জ্যোতির্ময় মুখার্জি, রবিন বনিক,                      চিত্তরঞ্জন গিরি, দেবব্রত রায়, জীবন রাজবংশী,                                  সৌরভ ঘোষ, কৌশিক চক্রবর্ত্তী, চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় ।
গদ্য:-
                    অনুপম চক্রবর্ত্তী
গল্প:-
                    সৌমেন সরকার, বিনয় ভট্টাচার্য্য,পারমিতা ভট্টাচার্য্য



                    মে দিবসের চিত্রকল্প
                                           আব্দুস সালাম

রাক্ষসের  দশমুখ থেকে  বেরিয়ে আসছে  আগুনের হলকা
পুড়ে মরছে  বিশ্বপ্রহসনময় মে দিবসের প্রজাপতি
বহুজাতিক মানচিত্রে আঁকা সুদ কষা পাটিগণিত
অনাহার, অর্ধাহার,অচিকিৎসায় ধুঁকছে অগুনতি -পা
অভিজ্ঞ শকুনের চোখ টর্চের মতো জ্বলে
ফেরেশতারাও মাতোয়ারা হয় মে দিবসের গানে
পর্দার আড়ালে কারা যেন চাবুক হাতে রচনা করাচ্ছে শ্রমদিবসের সংবিধান
লোনা ঘামে তৈরী হয় সভ‍্যতার গন্ধধূপ
পৃথিবীর যুপকাষ্টে ছাঁটা যায় শ্রমিকের ডানা।


                                       নখের আঁচড়
                             অনুপম চক্রবর্তী

                            রোদ স্নানে বিকেল উদাসী হয়
                           ভেতরের গন্ধ বাস্প জুরে ,
                           ফুরিয়ে আসে সব সমান্তরাল ।
                          প্রতিটি সম্ভাবনার গা ঘেঁসে
                          অনেক ভাঙচুর থাকে -
                          নিয়ম মাফিক আলাপচারিতায় । 
                          আঁচলের শূন্যতায় বাঁধা টুকরো
                         মাংসাশী আবেগের মত ,
                         নখের আঁচড়ে ক্ষত হয় অন্ধকার । 


                                     রবিন বণিক

                          কবির রক্ত

          তারপর একটু একটু করে কবির রক্ত দিয়ে
         জোড়া দিয়ে যাচ্ছ রোদ—
         প্রত্যাশা করিনি,প্রকাশ্যেও বলিনি
        যারা ফেলে রেখে গেছে রুগ্ন অন্তরীক্ষ—
        তখনও জন্ম হয়নি চাঁদের
       যে অতীত সামনে এসে দাঁড়িয়েছে নতমস্তকে
       তাকে বলো আর কিছু না হোক– কবির রক্তে
       উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একশো যুবতী গ্রাম
       কথার কথা সাজিয়ে ওরা আকাশ ভেজায় জলে
      কবির রক্তে পাতা ভিজিয়ে রাখছে গাছ—


                             
পোড়ামাটির গাছ

হাঁটতে হাঁটতে কবিতার মাঝপথে এসে একদিন
চোখে পড়লো এক উঁচু পাথর, তাতে লেখা ছিল
যা কিছু পুড়ে যায় তা আমার জলরঙ—
বুঝিনি— আসলে আমার পুড়ে যাবার মতো
কিছুই ছিল না, একটু একটু করে ভীষণ ছায়া
নিভৃতে পুড়ে পুড়ে পাথর হয়েছিল , কাঁদতে পারিনি
সেদিন আমার মা–র বুকে কোনো নদী ছিল না
একটা একটা করে সমস্ত নৌকো উল্টে পড়েছিল
নিঃসঙ্গ আঁচলে, বিস্তীর্ণ উঠোন জুড়ে ছিল শীতের ইতিহাস
পিতামহের ঘরে জলরঙের কোনো উদ্ভিদ ছিল না
বাবার পুরোনো আসবাব ঘেঁটে জানতে পারি সেখানেও
পোড়াবার মতো কোনো কৃতজ্ঞতা ছিল না, কোনো
উপত্যকা রঙের মৃদঙ্গ ছিল না—
আসলে
সব ছায়াপথের শেষে অপেক্ষা করে থাকে পোড়ামাটির গাছ—



                                    শিবাশিস দত্ত

                                           ঈশ্বরীয়

এ কোন জোনাকিসন্ধ্যা....মোহফুল ফোটার পর আবছা আলো ঘিরে থাকে কাচপোকার দল... বহ্নিমান অতীত থেকে নেমে আসে সিভিলাইজড সন্তাপ ! 
অস্তি আর নাস্তির মাঝে যে জটিল বিভাবনা, কিংবা দেহাতি ভাষার কোনো তাজ্জব স্বপ্ন-- এ কোন অনঙ্গ অমৃতাশন? কাঠকয়লায় আঁকা দেবীমুখ ভুলে গেছো, নির্বাণের আবেশ কিংবা অনুরাগে পথভ্রষ্ট হলে বুঝি !
তরল ছায়ায় টানা ঘোড়ামুখ উত্তোলিত হলে নিওলিথ যুগের ভাবাবেগ জেগে ওঠে। তূষানলে দগ্ধ হয় অরুন্তূদ প্রেম, সংবিতের কানাকড়ি নিয়ে গোল বাধে।
জড়ভরতের দেশে ঘুমন্ত কবি-লেখকদের নাসিকাগর্জন শুনি, মশানের কম্প্র আলোর প্রচ্ছদ দেখে ভালুকের চোখে জল আসে। গানের ভেতর শাব্দিক দুর্ঘটনার আবহ রচিত হয়, বিশ্বাসের খুদকুড়ো নিয়ে বসে থাকে পরাণের মা। রাত গভীর হলে কপালের টিপ খসে পড়ে, জলে মুখ ঢাকে নিস্তনী বনিতা।
***********
                   আত্মজ্ঞান

আঁধারের বুক চিরে নেমে আসে অনিবার্য শূন্যতা
মুঠোভর্তি দেহতাপ নিয়ে হেঁটে যায় অভুক্ত রমণী
অস্থিরতা আর অপূর্ণতার মাঝে যা কিছু ভিস্যুয়াল
তা থেকে তুলে নাও ব্রেকাপের রং, অপরিণত মৃত্যুর জটিল নকশা।
নির্দিষ্ট স্নেহসুখ নিয়ে বেড়ে ওঠে মায়াজল,
সবুজ রঙের পাখি, নক্ষত্রপ্রেমের পূর্বরাগ।
স্বপ্ন কিম্ভুতকিমাকার হতে পারে
গাছেদের শয্যা ভেবে বাঘছাল পাতি
বনকপোতের ভীড়, কবচকুণ্ডল হারিয়ে ফেলার পর
সুফিদের সিলসিলা ঘুরে জেনে নিই আত্মজ্ঞান কাকে বলে।
আবে কোন শালা আমার কী করবে বে
আমি এখন এ শহরের আঁভাগার্দদের দলে।

শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯


              মে সংখ্যা যাদের লেখা দ্বারা সমৃদ্ধ



 কবিতা:-
                 আবদুস সালাম, দেবযানী বসু, অনুপম চক্রবর্ত্তী,
               অনুপ মন্ডল, শিবাশিস দত্ত, সুপ্রীতি বর্মন, সৌরভ বর্ধন,                      আরিয়ান প্রিয়স পাল, জ্যোতির্ময় মুখার্জি, রবিন বনিক,                      চিত্তরঞ্জন গিরি, দেবব্রত রায়, জীবন রাজবংশী,                                  সৌরভ ঘোষ, কৌশিক চক্রবর্ত্তী, চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় ।
গদ্য:-
                    অনুপম চক্রবর্ত্তী
গল্প:-
                    সৌমেন সরকার, বিনয় ভট্টাচার্য্য,পারমিতা ভট্টাচার্য্য

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৯


                                 দেবযানী বসু



জ্বর জয়ন্তী

প্রকাশ্য রাস্তায় হাঁড়িকাঠ
মালাবদল ঘটে যায় আর রজত জয়ন্তী
বার করে আনি তাঁর দাঁতের ফাঁক দিয়ে
পোড়া গির্জা নোত্রদোম
উঠোনের বাঘিনীর লেজ পোড়ে ধাপে ধাপে
তাঁর কবিতা পড়ি গভীর লাপিস লাজুলি
ফুটকি ফেলে ফেলে
ভালোবাসার উঠোনে কাঠবিড়ালিদের ঘাসফুল চর্চা
মেলে ধরা ছাতার তাপে সেঁকে নিচ্ছি ছোট্ট জ্বর
*********
শুক্র মায়া
যে কোনো বিশ্বাসের বাইরে আসলে শুক্রবার ঝলমল করে ওঠে। পোড়ো বাড়ির নিঃশ্বাসে নবরত্ন কুল কুল। বিশ্বাসের বাইরেটা সহ্য করা যায় পঞ্চাশ ডিগ্ৰি সেলসিয়াসে। আমাদেরকে ভয়াবহ বোঝানো হয়। কতো কতো দীর্ঘ অতীত নিজের আবহাওয়া তৈরি করে নেয়‌। এগিয়ে চলেছে গপ্পুড়ে অফিস। খুব দ্রুত ইচ্ছেগুলো পিকু করে নাও শরীরে। শুক্রমায়া বুঝে নাও।এ বিষয়ে হাঁড়িকাঠ নতুন কোনও.... 


                           অনুপ মণ্ডল
                          

                                               হ্রসস্বর
ডাকিনি তন্ত্রের ললন্তিকা স্তনকলায় বিষ ছিল না,দুঃখও ঝরেনি
অল্প জলে আঁশটে গন্ধের মতো মদ বসেছিল হাঁটু মুড়ে
রোদের উঠোনে ভালোবাসা উলকো মাছের মতো লাফায়
তোমার রচিত দুপুরের নির্জনতা  ভালো করেই চিনে নিয়েছি
                                   হ্রস্বস্বরে পেঁচিয়ে  ছিল মগ্ন দাঁড়াস
        পাড়ার কনিষ্ঠতম বেশ্যাকেও
   আমি তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পেয়েছি।জানি
      আমারই মতো তারও একটা উল্টো জামা পরা মহাকাশ আছে।

                                          
বিবাহ
    অতিরিক্ত নীলের আকাঙ্ক্ষায় আপনা থেকে সেেও কাছে  আসেে
        আয়নার মতো ভালোবাসা হয়।আপন মনে কথা বলে স্বচ্ছতা
                ক্রমে আলো নিভে আসে
     অন্ধত্ব সম্পূর্ণ হয়ে এলে একদিন বিবাহ উৎসব
     একদিন কথাকলি কলাবৃত্ত তো আর একদিন
     সব  আলো নিভিয়ে চিিরচেনা মহাকাশের পরিক্রমণশীল ঝড়।

                                    সুপ্রীতি বর্মন


মৌচাক

শীর্ণকায় মরাল শরীর বুক দিয়ে হাঁটে
রুক্ষসূক্ষ বসবাস ইমন কল্যান
গর্ভবতী ফুলের শুক্রাণুর শোকে।।
সন্যাসী দুপুরে ঢুলঢুল চোখে
দুরন্ত উঠানামা শ্বাস ভাদর বৌয়ের আচরণের ভাঁজে।।
আজানুলম্বিত অতলান্ত দৃষ্টি মাধুকরীর
লজ্জাশীলা অধিবাস মৌচাক ভাঙা গৃহদস্যু
অলস আজানুলম্বিত দীর্ঘকায় ক্যালেন্ডার আঁচল
গতানুগতিক ধান্ধায় মুখ গুঁজে দোহন দুগ্ধবতী গাভী।।
ফর্দ করা পাতায় শিরার বাকল ঘষে মুখশুদ্ধি।।
ডেইলি সোপে অতিরঞ্জিত সাতকাহন পুরুষ নারী
হেলতে দুলতে গরুর গাড়ির অগ্রগতির চাকা
সমান্তরাল কর্ষণে মধ্যবর্তী ক্ষুধার ফাঁকে।।
********

ব্যঙ্গার্থ জীবন

ব্যঙ্গার্থ জীবনের মধ্যযুগীয় স্তম্ভ অনেকটা মাতৃবৎসল মেরুদন্ড অপলকা 
তোমার ক্ষয়ে যাওয়া বৈভবের মক্ষীরানী অহেতুক ঘ্যান ঘ্যান বাবুয়ানীর চটুল স্রোত
যৌনগন্ধী ফাঁদে তোমার চড়া সুদের সস্তা প্রেক্ষাগৃহ আড়মোড়া ভাঙা ক্লিভেজ রোদে বিছানার অভয়ারণ্যে
ব্যাকক্লিপে আঁটা যুবতী বাৎসল্য তোমার দীঘল চোখের সোহাগ রস উন্নাসিক ক্ষুন্নিবৃত্তি 
নাভিনমনে তোমার উত্থিত শ্বাসে উপপাদ্য কামার্ত শীৎকারে তোমার হাভাতে জিভে মহাকালের প্রলয় নাচনে প্রেমিকের জন্মদাগ
উত্তুঙ্গ স্তনে তোমার আড়চোখে সমুদ্র শোষণ অগস্ত্যের পুরুষ্টু কমন্ডুলে শেষনাগ ফণীর রতিদগ্ধ মণির কবচে প্রেতযোনির নাদান ঘাট।


                                      বহুগামী
                                  সৌরভ বর্ধন


                  শীতকালে শুধু পায়ের পাতা
                 ডোবাতে পারবে ভেবে       হাত বাড়াও
                ওই আগুনও ধোঁয়ায় উড়বে কিছু পাখি
                তাদের কি বাসা নেই
               নাকি গিলেছে সবই কৃষ্ণগহ্বর
              এসময় তারাদের ঠোঁট পুড়ে গ্যাছে ভেবে
              হাত বাড়াও
              কোথাও মরু গোলাপ নেই , কিচ্ছু নেই ভেবে
              হাতের আলনায় সাজিয়ে রাখো মাংসমজ্জা
              ধমনী লোম আদর করো
                                          এই আদর-কফিনে
            শেষ পেরেক পুঁতবে দাঁত ও তার সহযোগীরা
             আমি অপেক্ষা করো
            তুমি হাত বাড়াচ্ছি গরম বুকে, এখন শীতকাল
           শীতকাল বহুগামী হতে চায় না, আমিও তাই
          চেয়ে চেয়ে আজ আমাকেও উদভ্রান্ত বলা যায়

                        আরিয়ান প্রিয়স পাল
                                                ১
             
              সৌরভ বিশাই

কথা কাছে সাক্ষী থেকে এগিয়ে গেছে সে,
নরম মাটির,ফলক ভিড়ে,একটু দেওয়াল ঘেসে।
মেঘের সাথে আপোস করা প্রথম ভোরের বৃষ্টি
অবাক ঠোঁটের উজ্জ্বলতা,মিষ্টি লাগে সত্যি।
ঝলমলিয়ে ছুটছে জলে,তোমার চেনা বেশে
বার্তা যারই স্বপ্ন কুটির,তফাৎ গোনার শেষে।
মন খারাপের আত্মগোপন বর্ণ গঠন গিফ্ট
এমন কিছু শব্দ গেঁথে জোড়া আমার স্ক্রিপ্ট।
মধ্যে থাকা আকাশ বিচার,নীল থেকে বাইরে
ঠাঁই নিয়েছে পদ্ম ভিড়ে,কাঁটা ফুলের সাইরেন।
পথ খুঁজেছে নবীন চোখে শীতল স্মৃতির প্রান্তে
দিনের মতো রাত মেখে নেয় বাতাস ছোঁয়ার অন্তে।
দিগন্তে তার ভীষণ চেনা কলকাতারই বর্ষা দিন
প্রথম আবেগ,পরশপাথর তোমার জন্মদিন.....
*******
 
                   
রিমা
চোখের নিচে জ্যোৎস্না আলোক সজ্জারত দিক।
ঘোড়ায় পেশা নতুন ডিমে কুসুম খোঁজার মতো
সন্ধ্যে সরল মেঘগণিকায় নতুন কোনো তারিখ
আঘাত তখন মন খারাপের দুপুর গড়ার ক্ষত।
তরল সুবাস জলে নীচে মেঘ জমেছে আজব।
আজ লুকোনো গন্ধ বিরাগ বশত গোনা রথি
শাড়ির পারে স্বপ্ন মাখে লাল হলুদের আভাস
সেই মেয়েটাই বৃষ্টি দিনে হয়ত কারোর সাথী।
নিরাশ করা আলতো চুলে মুখ ডুবিয়ে দেখি
দুঃখ জমে রুটির সাথে মরিচ পাতায় মিশে
স্মরণ খেলা ছোঁয়ায় প্রেমে শক্ত নাকের বুটি
রাগের শেষে কষ্টগুলো আঙুল দিয়ে পেশে।
আঘাত তবে বুঝতে বোধহয় আগন্তুকের হাসি
মেঘ শুকালে বিষাদ ঠোঁটে রক্ত জমে বাসি।।


                           জ্যোতির্ময় মুখার্জী

                                            

ছায়ার ভিতর খসে পড়ছ সহজ
আর তুমি যেভাবে খুলেছ বিকাল
অপেক্ষা
তারিখরা খরখরিয়ে উঠল। ঘরগুলো লজিক‍্যাল হল। শব্দগুলো বেলুন হতে হতে ফুস্ করে চুপসে নিল আমাকে
ঢেকে রাখার মধ‍্যে
কোনো ছলছল সুখ নেই রে পাগলী
বরঞ্চ বোতাম খোলো
*********


                                         

    ভুল চেহারা
   এখানে মৃত্যুরা হেলে আছে বৃষ্টির ছায়ার মতো
  আর, চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে মা
  গভীর ঘুমে
  খর্ব হবে
  খর্ব হবে
  তোমার ভুল চেহারা ।



                            আহত পাখির গান
                  জীবন রাজবংশী        


                     ধূলিকণা মিশ্রিত ভস্যমান দুঃখ গুলো
                     উড়তে উড়তে আকাশের বুকে দানা বাঁধে।
                     জমতে জমতে একদিন -
                     দমকা হাওয়ায় বর্ষার সুরে ঝরে পরে বৃষ্টি হয়ে।
                    বৃষ্টির নূপুরের ধ্বনিতে শোনা যায়,
                    আহত পাখির গান। 

                              স্বরলিপি
                
                                 চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়

চড়ুই পাখির ছোট বাসা, সময়ের আসা যাওয়া সস্তা মিছিলে;
নতুন শহর এলে, ঠোঁটে ধরা কুটো, ছবি আঁকি রঙ পেন্সিলে।
অগোছালো কবিতার খাতা, এক একটা পাতা ছিড়ে
উনুনে ঢোকাই,
পারমানবিক চুল্লির, পোড়া শেষ হয়ে গেলে - পড়ে থাকে, মুঠো মুঠো ছাই।
আগেও যা ছিল থাক, রাখঢাক, আমার তো চিরকালই কম;
কাঠফাটা বৈশাখী রোদে, প্রেমের বারুদে, আচমকা সিগারেটে দম।
ভিনদেশী কিশোরীর মত, বেড়ে ওঠে রোদে জলে, ক্যালেন্ডারের মল মাস,
দুহাতের মুঠো, ভরে দেয় উড়ো হাওয়া, কথায় কেবল বাড়ে কথা, দীর্ঘশ্বাস।
আমিও তো সুখ খুঁজে ফিরি, আদতে ভিখারি, অনুবীক্ষনে;
রাইকিশোরীর সাথে দেখা, আরশিনগর মুখোমুখি, কোন কুক্ষনে।
ফিরে যায় হুইসেলে ট্রেন, বেঁধে রাখা সযত্নে,  লোটাকম্বল;
যে যার মতন বেঁচে থাক, কবির তো সঞ্চয় সামান্য, স্বর সম্বল।

                     শিমূল তোর জন্যই

                                চিত্তরঞ্জন গিরি
                        

জ্যোৎস্নার পা ছুঁয়ে পৃথিবীর ধূলি মেখে ছিলেম ।
অনেক জনমের বধিরতায় রুদ্ধদ্বারে শুধু জং লেগে যায়
হালকা রং- ক্রমশ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে থাকে
ওরা আমার গতিকে কমিয়ে দিতে চাইছে
কুরুক্ষেত্রের মহাশ্মশানে গান্ধারীর যত অভিশাপ অগ্নিবান হোক, অবিচল শ্রীকৃষ্ণ কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে উঠেনি
একবছর নয় ,হাজার  বছর, লক্ষ বছর ,বিপ্লবের দাঁড় বেয়ে চলেছি
দু এক ফোঁটা বৃষ্টি মিলেছে সান্তনার
ভিজে গেলেও বারুদ এখনো জেগে রয়েছ কাল জন্মের শুদ্ধ বাষ্পের প্রতীক্ষায়
এখনো আধো আলোয় সবুজ টিয়া ফসিল হয়ে জেগে রয়েছে
সেলুলোজ এর স্থূলতা গতিহীনতায় যতই ভুগুক ধ্রুবতারার অস্তিত্ব ,গাঢ় রাত্রির কোরকে।তাকে যে আসতেই হবে, শিমুল ফুল ফোটানোর জন্য  ।

                    একটি অন্ধকারের বিস্মরণ
   
                                   দেবব্রত রায়


                           নিরস্ত্র তুমিও ছিলে   
                          অথচ,মাংসাশী, ক্ষিপ্র এবং চতুর।
                         ( জংলি-চিতা--- শেয়ালের মতো)
                         সেই ভীতি আজও নিরব হরিণ-চোখে!
                        একটি আগুন-ফুলকি-র
                        ব্যবধান-ই তোমাকে শিখিয়েছিল
                        দ্রুত পরিবর্তনের একমাত্র
                        সমার্থক শব্দ
                       (অথচ),চরম-পরিস্থিতিতেও তুমি
                     কোনোকিছুর-ই সঠিক ব্যবহার
                     শিখলে না এমনকি,ভুল-ও না!অপ-
               ব্যবহারে এখন শধু-ই একটি অন্ধকারের বিস্মরণ! 


                                       সৌরভ ঘোষ
                            পরিত্যক্ত নদীর বাঁকে চুপচাপ  


                   মাঝে বান এসেছিলো...
                   চলে গেছে-
                 আরও বেশি ফাটাফুটি ফেলে
                কলমের ঠকিয়ে দেওয়া লেবু গাছ আমি
                কাঁটাগাছের প্রথম ফল শেষ ছিল...
                জানি,
               অশোক গুল্মের মত একদিন কাটা পড়ব
               আমাকে সমূলে উপড়ে ওরা পুঁতে দেবে
              ভালো জাতের কোনো আসল কদম চারা
              তা'হলে,
             অন্তত কয়েক বছরেই কাঁচা কাঠ পাওয়া যাবে...



                                          ★★গদ্য★★
                                        আত্মহরণ
                    অনুপম চক্রবর্তী   
অবহেলার ঠোঁটে এক চুমুক বিষ , আত্মহননের স্বাদ চেখে দেখে । কিন্তু পোষ্টমর্টেম রিপর্টে শুধু বিষেরই উল্লেখ থাকে , ঠোঁট দুটোর কোন উল্লেখ থাকে না । কেননা ঠোঁটের কারুকার্য বিষের উৎকর্ষতায় দগ্ধতার সারিবদ্ধ বিস্ফোরনে ক্রমাগত মৃত্যুবরণ করে । সেই মৃত্যু কখনো আনন্দের হয় , আবার কখনো নির্মম হয় । সেই নির্মমতাও এক বিচিত্র বিবর্ন সময়ের নৈশয়িক যৌনতার পরিনতির দিকে যায় । এক চলমানতার ধৈর্য্যশীল পথের বাঁকে বাঁকে যেখানে পাওয়া আর না পাওয়ার অনেক জটিলতা পেরিয়ে
হৃদয়ের সহজলভ্যতা খুঁজে নেয় এক অনিবার্জ টিকে থাকার প্রতিনিয়ত অভ্যেস ছুঁয়ে দেখা বাস্তবতার প্রতিটি মুহূর্ত । বোঝা আর না বোঝার মধ্যে যতটা দূরত্ব থাকে , ঠিক ততটাই আপোস থাকে । মানুষ প্রতিনিয়ত এক অদেখা মৃত্যুর শিকার যা আস্তে আস্তে গ্রাস করে । আত্মহত্যা একদিনের নয় । প্রতিনিয়ত টুকরো টুকরো অবহেলার যুক্তবর্নে প্রতিহিংসার এক নেগেটিভ উৎকর্য , যেখানে পরাজয়ের গ্লানি সুসজ্জিত আত্মমর্যাদার অস্তিত্ব খোঁজে । আর এর পরিনতি হয় আত্মহনন । 

                                       বাৎসল্য
                                 পারমিতা ভট্টাচার্য্য
                                
কাজরী খুব গরীব। এক ছেলে, এক মেয়ে আর ঘরে পঙ্গু স্বামী কে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। আর আছে কমলা। নিজের মেয়ের মতই স্নেহ করে কাজরী কমলা কে। কমলাও খুব বাধ্য কাজরীর। সেও কাজরী কে খুব ভালোবাসে। যা বলে তাই শোনে। কমলা হলো আসলে কাজরীর পোষা গরু। গত তিন দিন হলো তার একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাছুর হয়েছে। দেখতে হয়েছে ঠিক কমলার মত। কপালে তার একটা মস্ত বড় চাঁদ। তাই কাজরীর ছোট্ট ছেলেটা তার নাম রেখেছে - চাঁদা। বড্ড ভালোবাসে চাঁদা কে ওরা দুই ভাই বোন। অন্য দিকে কাজরীও খুব ভালোবাসে কমলা কে, কারণ ওর দুধ বেচেই মূলত সংসার চলে কাজরীর। শুধু কি দুধ? ঘি, ঘুঁটে সব কিছুই। তাই সংসার খরচের বাইরে গিয়েও কাজরী যত্ন করে কমলা কে। চানা, খোল, ভুসি সবই খাওয়ায় কমলা কে। একটু বেশি দুধের আশায় কোথায় হালি ঘাস, কাঁটানটে, কুকসিনে পাতা প্রভৃতিও কমলার জন্য জোগাড় করতো কাজরী। এই ক'দিন কমলার দুধ কী করে কমে গেল সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পাচ্ছিল না কাজরী। এতো খাটে গরু টার পিছনে,  সবই কি তাহলে পন্ডশ্রম? এক দিন কাজরী দেখে এই সবই তার গুণধর ছেলের কাজ। দিন কুড়ি হয়ে যেতেই কাজরী কমলার বাছুর টাকে রাতের দিকে বেঁধে রাখতো। কারণ বাছুরে দুধ খেয়ে নিলে আর বেশি দুধ পাওয়া যাবে না। অন্য দিকে কমলার ছোট বাছুরের কষ্ট কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারতো না কাজরীর ছোট্ট ছেলেটা।  সে মা কে বারবার বলতো, চাঁদা কে ছেড়ে দিতে। ছোট ছেলের কথায় কে আর কান দেয়। তাই সে ভোরের বেলা উঠে ছোট্ট বাছুরটা কে চুপিচুপি মায়ের চোখের আড়াল করে চোরের মত দুধ খাইয়ে আসতো। চুরি করে খেতেও যেমন মজা তেমন চুরি করে খাইয়েও তেমন আনন্দ, তা ওই টুকুনি ছোট্ট হৃদয় অনুধাবন করতে পেরেছিল। মায়ের কাছে ধরা পড়তেই কাজরী তার ছোট্ট ছেলে কে কান মোলা দেয়। ছেলেটির মধ্যে একটুও অনুশোচনা আঁচ পেল না কাজরী। বরং দেখল একটি অবলা প্রাণীর জন্য তার ছোট্ট ছেলেটির গভীর আকুতি। মা ও সন্তানের যে গভীর মেলবন্ধন তা শুধু মাত্র মনুষ্য জগতের জন্য যে সীমাবদ্ধ তা নয়, সমগ্র প্রাণী জগতই এর আওতাভুক্ত। এটাই কাজরীর ছোট্ট ছেলেটি অনুধাবন করতে শিখিয়েছিল তাকে। আসলে এই চৌর্যবৃত্তি তে কারো কোনও ক্ষতি ছিল না। এটা একটা ছোট্ট হৃদয় কে মহান করেছিল মাত্র। দিন আনা - দিন খাওয়া সংসারে নিজে না খেয়ে অপরের কথা ভাবা, বিশেষ করে মায়ের কাছে বকুনি খেয়েও এতো টুকুনিও মন খারাপ না করে আনন্দে মন ভরে ওঠার মাঝেও একটা অসম্ভব পরিতৃপ্তি আছে, সেটাই বাচ্চা ছেলেটি আত্মস্থ করতে পেরেছিল। 


                     বেচারাম স্বামী
                               বিনয় ভট্টাচার্য
বেচারাম বাবুর শরীর অসুস্থ ।নিতান্ত আর্থিক কষ্টে ভুগছিলেন বেচারা বেচারাম ।বন্ধু কেনারাম আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো ।সুযোগ বুঝে বেচারামের বাড়ি বেচে দিয়ে কেনারাম তার বৌকে নিয়ে পালিয়েআয় ,? গেলো । বেচারাম সুস্থ হয়ে উঠলো ।
এলাকা ছেড়ে সে পাড়ি জমালো হিমালয়ের পথে ,এখন সে মঠে মন্দিরে শিষ্যদের মনুষ্যত্বের পাঠ দেয় । বলে মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ ।বেচারাম স্বামী ভক্তদের দানে পরিতৃপ্ত  পরিতুষ্ট এখন সে মঠাধ্যক্ষ্য । মানুষ তাকে প্রবঞ্চনা করেছিলো ,সেই মানুষই তাকে  পরমানন্দের পথ দেখালো ।

                           গঙ্গা আর ফিরবে না
                             
গতকাল রাত থেকে গঙ্গাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।পাঁচ বছরের ছোট্ট একরত্তি মেয়েটা যে কোথায় গেল তার কোন পাত্তাই যেন মিলছেনা।ওর বাবা স্থানীয় থানায় কমপ্লেন করেছে,এই দুদিন যাবৎ সারা বসিরহাট এলাকা চষে ফেলেছে,তবুও তার খোঁজ মেলেনি।কাউন্সিলার থেকে শুরু করে মন্ত্রী সকলেই আশ্বাস দিয়েছে তাকে খুঁজে দেবার।
চারিদিকে দাঙ্গা হাঙ্গামা চলছে  ফেসবুকে অশ্লীল ছবি না কি একটা পোস্ট করা নিয়ে-গঙ্গার বাবা সেসব বোঝে না।তার একটা ছোট চায়ের দোকান।ওর মায়ের হাল এই দুদিনেই কেঁদে কেঁদে মৃতপ্রায় হয়ে উঠেছে।
তিনদিন কেটে গেল।অবশেষে গঙ্গার খবর পাওয়া গেল।স্থানীয় পুলিশ এসে জানাল যে,মিসিং রিপোর্ট লেখানোর তিনদিন পর তার খোঁজ মিলেছে।একটা পুরোনো বাড়ীর কুঁয়ো থেকে তার টুকরো টুকরো হওয়া দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ!
ওর বাবা ভাবল,তিনদিন আগেই তো যখন বসিরহাটের নানান প্রান্ত থেকে খুনোখুনির খবর আসছিল তখন গঙ্গা ওই দিকেই পুরোনো বাড়ীটার কাছে সকলের চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিল।
কাউন্সিলার থেকে মন্ত্রী-সকলে এসে সমবেদনা জানিয়ে গেলেন।কথা দিলেন এর একটা বিহিত হবেই।গঙ্গার বাবার হাতে দিলেন একটা এক লক্ষ টাকার চেক ক্ষতিপূরণ হিসাবে!গঙ্গার মায়ের জ্ঞান ফিরছে না,গঙ্গার বাবা দুচোখে সবকিছু ঝাপসা দেখছে।চেকের শক্ত কাগছটা তার কাছে একটা ছোট্ট রাখী বলে মনে হল!
    

সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৯




কবিতাঃ-
       
            সায়ন্তনী হোড়, অনুপম চক্রবর্ত্তী, আবদুস সালাম,
                    কিশলয় গুপ্ত,     বিশ্বাস, কৃপণ মৈত্র

গল্প:-
                    বটু কৃষ্ণ হালদার,পারমিতা ভট্টাচার্য



                             সাঁতারের ওপার থেকে

                       অনুপম চক্রবর্তী


                       সব স্মৃতি সাধ্যে মেলানো যায় না
                       ক্ষতের গায়ে লুকিয়ে থাকে প্রবণতা ,
                       আমি তার চেনা দাগে বিকেল আঁকি ।
                      সমস্ত না পারার মুখোমুখি জেগে থাকে
                      সমস্ত প্রয়োজন বোধ -
                     জীবন আঁকি ফুরিয়ে যাওয়ার কৌশলে । 
                     সব আলো রাস্তা ভেজায় না
                     প্রকাশ্যে যেটুকু পাওয়া -
                    তারই মাঝে চরিত্র হারায় অন্ধকার ।
                    জলে পড়ে থাকে কিছু বে-কায়দা
                    কিছু সাঁতারের ওপার থেকে ,
                     নির্লিপ্ত উঠে আসে ।


                      অবহেলিত সেলাই

                         সায়ন্তনি হোড়         
পুড়তে থাকা এসব
কাঁচা অনুভূতিদের গায়ে আজও লেগে থাকে
কিছু  সূক্ষ্ম জলীয় নকশা ,
           যাদের খুব  গোপনে আমাদের অলিখিত সংসারের কাছে গচ্ছিত রাখি  
প্লিজ  এভাবে ঠোঁট সেলাই করে রেখো না ,
  মরচে পড়ে যাচ্ছে   শব্দের উপর ।
দ্যাখো !  তোমার সবটুকু অবহেলার ঋণ শোধ
করে দিয়েছি  ,
                    এই বিক্ষত আয়নার কাছে ।
গর্ভবতী হচ্ছে  আকাশ ।  সূর্যের ভাঙা ভাঙা আলো ।
   তবুও এই ফাটল ধরতে থাকা আলোর মধ্যেও একটা ফুলের আত্মহত্যার গল্প খুঁজে পাওয়া সম্ভব  ।। 




                                      নতুন বছর
                                আবদুস সালাম


               মৃতময়  বিশ্বাসের আঙিনায় রতিগলা ভোরের চোখ
              উন্মাদনার তরঙ্গে মিশে যাচ্ছে কফিন বন্দী লাশ
             আত্মনির্ভর ঘাসে শিহরিত তামাটে জীবন
             কুয়াশার ভিতর নুইয়ে পড়ে ভাঙনের নীরবতা
            শ‍্যাওলা মাখা ভবিষ্যত চেয়ে আছে ওপারে
            কি পাবো না পাবো ভাবতে ভাবতে নীরবতা সিদ্দ হয়
           কুয়াশার ফুল ঝরে যায়
           খুলে পড়ে ব‍্যস্ত উপমার অভিনব উল্লাস
           ভিন্ন উচ্চারণে প্রথিত হয় মুর্ছনার প্রাচীর
           বেজে ওঠে অত‍্যাচারের বাজনা,
           কাঁপে প্রতিবেশীর রঙমহল
           অবধারিত সত্য হার মানে
           ব‍্যতিক্রমী অভ‍্যাসে খেলা করে অলৌকিক চাঁদ
           নতুন বছর আসে
           ভাসে শপথের বন‍্যায় 
           মানবিক শপথের মঞ্চে গলা ফাটায় ইবলীসের দল
           নিপীড়িত মানুষ দেখে ভিন্ন ভিন্ন হাহাকার  ভিন্ন ভিন্ন রঙের                   তীব্র নীল স্রোত ।


                               ছায়া দেখে দাড়াও
    
                                  কিশলয় গুপ্ত


                            ছায়া দেখে দাঁড়াও- রোদ্দুরে
                           অমলকান্তি পুড়েছিল খনিজপ্রেমে
                          এখন আর শান্তিকল্যান লেখা নেই
                          সাদা কবুতরের শ্রীচরনে
                          হা কৃষ্ঞ বলার মতো একটা মানুষ
                          রামরাজ্যে খুঁজে পাওয়া দায়!
                         আকাশ জোড়া লেজ ঝোলা ঘুড়িতে
                         ছয়লাপ অসুখের হাজারো বার্তা
                         অভিমানের সব উপসংহার আছে
                         মন খারাপের মতো সুবর্ণ সকালে
                         অমলকান্তি পুড়েছিল রোদ্দুরে
                         ছায়া দেখে দাঁড়াও-


              চিকের আড়ালের গল্প থেকে
                          শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস


         গাল-গল্প ঠিক করে দেওয়া সম্ভব হলে ছাপাবেন।
         এমনটা হয়নি কিছুই ইতিহাস ক্লাসে।
         স্যারের হাতের কাজের ছোঁয়ায় মীরজাফর চিকের আড়ালে। 
        গল্পটি প্রথম মাতৃভাষার দিন পঠিত হলো পলাশী পাড়া উচ্চ                বিদ্যালয়ের ফুটন্ত জলের মত সপ্তম শ্রেণীর জন্য।
       শ্রেণীশিক্ষক হিসেবে মাঠ মাঠ হলুদরঙ- কে
       নীল করে দিতে হাজারদুয়ারীর গঙ্গায় ছিপ ফেলেছে চিকের               আড়ালের গল্পটা।


                                   গোপন লজ্জা
                                   কৃপান মিত্র
                  নগ্নকুমারীর গোপন লজ্জার মতো মেঘঢাকা
                  চাঁদ আমার শয‍্যায় দৃঢ় আলিঙ্গনে আবিষ্টতায়
                 শুয়ে আছে রমনের আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে
                 সূর্যকে বিদায় দিয়ে বিষন্নতার নিশিফুলের
                 পাপড়ি সবে মেলতে শুরু করেছে পেঁচার
                 স্থিরদৃষ্টির আয়নায় শিকার আহ্বান ,রতিরমন
                 নিশর্ত আত্মসমর্পণ, আমার ভাঙা জানালার
                 উদাম আহ্বান দুটি দেহ একাকার ,গোপন
                 দৃষ্টিরা কৌতূহলি চোখে দরজার ওপারে,
                 পাতাছায়া মেহেদি লাম্পট‍্যের অত‍্যাচারে
                সেরাসুন্দরীর  লজ্জাহর কামুক বাদশা...









                                       ছন্দপতন
                    পারমিতা ভট্টাচার্য            

                       
আজ রাস্তার দু ধারে আবীরের সমারোহ দেখে রাইয়ের মনে পড়ে যায় অর্কর কথা। আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে অর্ক মারা যায় ক্যান্সারে। রাই কে ওর বাপের বাড়ির লোকজন অনেক চেষ্টা করেছিল নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এক মাত্র ছেলের মা বাপ ছিল ওর শ্বশুর শ্বাশুড়ি। রাই কে ভালোবাসতও ভীষন তারা। তা ছাড়া শ্বশুর বাড়ির চারিদিকে, সারা বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে আছে অর্কর স্মৃতি। ইচ্ছে করলেও এই বাড়ি থেকে পা ওঠেনি রাইয়ের। তাই পাঁচ বছরের মেয়ে তৃষা কে নিয়ে সে শ্বশুর বাড়ি তেই রয়ে গিয়েছিল। অর্কর অফিসের কাজটা বহু চেষ্টা করে সে জোগাড় করেছিল। না হলে মেয়ের পড়াশোনা, বৃদ্ধ দুই মানুষের খরচ, সংসার খরচা কী করে চালাবে সে? 
আজও হোলি। ঠিক দু বছর আগে অর্ক এদের ছেড়ে চলে গেছে। শুধু অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে রাস্তার ধারে চূড় করে রাখা আবীরের দিকে রাই, আর ভাবে নিজেদের ফাগুয়া নিয়ে মাতামাতির কথা। তার পর কী যে হলো! আসতে আসতে ওজন কমে যেতে লাগলো ওর। বীভৎস রকমের রোগা হয়ে গেল সে। ধরা পড়লো ক্যান্সার। কেমো থেরাপির ফলে সারা মাথা প্রায় ন্যাড়া হয়ে গেল। চোখ দুটো কোটর থেকে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায় যন্ত্রণায়। শেষটায় আর সহ্য করা যেত না অর্কর চিৎকার। রাইও পারেনি সহ্য করতে। তাই চিরতরে মুক্তি দিয়েছিল অর্ক কে। আলমারি তে অতি সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখা ফাঁকা পয়জনের শিশিটা প্রতি হোলির দিন দরজা বন্ধ করে বের করে সে। আর অর্কর ছবির সামনে ভেঙ্গে পরে কান্না। কতটা ভালোবাসলে যে মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবা যায় তা শুধু সেই জানে। 



                              ডঃ খালকোর চেম্বার

                      বটু কৃষ্ণ হালদার

        
রাত প্রায় একটা নীলাচল এক্সপ্রেস এসে দাঁড়া ল আদ্রl স্টেশন এ, বড়বাবু নেমে পড়ে, স্টেশন পুরো ফাঁকা, বৃষ্টি তখনও টুপ টুপ ঝরে চলেছে, কয়েকটা আর পি এফ পুলিশ এসে জিজ্ঞেস করে
আপনি কোথায় যাবেন?
বড় বাবু উত্তর দেয়, আমি চাণ্ডিল পি ওয়ে অফিস এর বাবু, যাবো পুরুলিয়া তে কিন্তু এত রাতে তো কোনো গাড়ি নেই কি যে করি
একটা পুলিশ জবাব দেয় স্টেশন চত্বর বাজারে র মাস্তান রঘু খুন হয় সন্ধ্যা তাই সব জায়গায় পাহারা চলেছে, আপনার তো এখানে থাকা হবে না বড় বাবু,
ঠিক আছে আমি তাহলে রেল হাসপাতালে একটু যোগাযোগ করি, চলি, নমস্কার জানিয়ে বড়ো বাবু রওনা দেয় হাসপাতালে 
ইমারজেনসি ওয়ার্ড এর নার্স টা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, বড় বাবু টেবিলে টোকা দিতে ধড়  পড় করে জেগে উঠে, কে?  কে? বলে চিৎকার করে ওঠে
তার পর বলে কাকে চাই?
ওরে বাবা পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে খুব, আর সহ্য হচ্ছে না ম্যাডাম পেটে হাত বোলাতে থাকে বড় বাবু 
নার্স টি চশমা টা নামিয়ে তার দিকে কট কট করে তাকিয়ে কি যেনো দেখতে থাকে
বড় বাবু একটু ভয় পেয়ে যায়
নার্স টি দৌড়ে ভিতরে চলে যায়, মিনিট দুই তিন পর ফিরে আসেন, একা নন সদলবলে, প্রায় চার জন.
গেলেন একা এলেন চার জন কে সঙ্গে নিয়ে, তিন জন মহিলা, এক জন পুরুষ 
বড়ো বাবু এবার সত্যই ভয় পেয়ে গেলেন. ব্যপার টা তার বোধগম্য হচ্ছে না কোনো মতে, তার উপর হাসপাতাল একেবারে ফাঁকা, দুই একটা জীর্ণ রোগী ভর্তি কেবল মাত্র যে কোনও মুহূর্তে হয় তো টেসে যাবে, মনে মনে ভাবতে লাগল, তবে কি রেল কর্মীদের কোনো অসুখ করছে না.
হঠাৎ লোকটি বড় বাবুর দিকে এগিয়ে এলেন, জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে আপনার?
ডাক্তার বাবু আমার তল পেটে খুব ব্যথা. 
ডাক্তার হাত দিয়ে সেই জায়গায় টিপতে থাকে,
বড় বাবু উফ বলে আওয়াজ করে. 
কেশ তো সিরিয়াস মনে হচ্ছে, আপনি ভর্তি হয়ে যান, কয়েকটা ওষুধ দিচ্ছি খাবার খেয়ে, খেয়ে নেবেন, তার পর কাল সকালে যা করার করব.
একটা নার্স তাকে নিয়ে গিয়ে বেড দেখিয়ে বলে, আপনি এখানে জামা কাপড় ছেড়ে রেস্ট নিন, একটু পরে আপনার খাবার ও ওষুধ  দিয়ে যাবে, 
বড় বাবু অগত্যা জামা কাপড় ছেড়ে বেডে, ফ্রেশ হয়ে শুতে যাবে, এমনে সময়ে  দুরের বেড দিয়ে একটা হাসির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে, 
এত রাতে এ কার হাসি, ভূতের নয় তো, হাসপাতাল গুলো তে তো আবার এমন অপঘlতি আত্মার কথা অকছার মিথ্যা নয়, পিছন ফিরে তাকাতে আঁতকে ওঠে বড়ো বাবু, 
একটা বুড়ো, দাঁত নেই, টাক মাথা, কালো কুচকুচে, পাঁজরের হাড় বেরিয়ে আসতে চাইছে, বুক থেকে,
এখানে কি মনে করে এসেছেন বাবু, আমি তো মরা রুগ্ন মানুষ বটে, পালিয়ে যান, পালিয়ে যান, এ ডাক্তার নয় বাবু, কসাই বটে, পালিয়ে যান, হে হে, হে, হাসতে হাসতে গিয়ে নিজের বেড এ শুয়ে পড়েন,
একটা নার্স এসে খাবার টেবিল এ খাবার টা রাখে, উঠে পড়ুন খেয়ে নিন, ওষুধ টা একটু পরে দিয়ে যাচ্ছি,
এমনিতেই এই সব কান্ড দেখে বাবুর খিদে গেছে ঘুছে, শুধু ভাবছে, একটু রাত কাটানোর মিথ্যা অজুহাতে, সত্যই প্রাণ টা যাবার জোগাড়, উপায় নেই দেখে খাবার টা খেতে থাকে,
মনে মনে বলে আগে তো খাবার টা একটু খেয়ে নিন, তার পর ভাবl যাবে, কোনো মতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে খেতে থাকে,
পিছন থেকে কে যেনো বলে খেয়ে নেন বাবু, ভালো করে খেয়ে নেন, হে হে হে.... 
এমনে সময় একজন লোক কে তার কাছে আসতে দেখে বাবু র একটু সাহস হয়, তার হাতে গোটা কয়েক ওষুধ এর প্যাকেট, ভাবে যেই আসুক না কেন এর রহস্য আমি উন্মোচন করবোই.
লোক টি কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে আরে বাবু আপনি এ অসময়ে এখানে?
কে বটে রে, নন্দী নাকি?
চিনতে পারলেন তাহলে, আমি সেই অধম বাবু,
তা আপনি কেনো এখানে মরতে এলেন?
সব ঘটনা খুলে বললেন, কিন্তু হাসপাতালের এই অবস্থা কেনো রে?
দাঁড়ান বাবু,, নন্দী এদিক ওদিক তাকিয়ে মেন দরজা টা আস্তে করে বন্ধ করে দেয়, তার পর একটা ব্যাগ থেকে বোতল বার করে, কি যেনো ঢাললো, কাঁচের গ্লাসটাতে , নিন বড়ো বাবু
এসব জোগাড় ও তোর কাছে আছে তাহলে. 
কি যে বলেন বাবু, আমি তো আপনার শিষ্য বটে, নিন,  তার পর দেখে
বড়ো বাবু এক নিশ্বাসে সে টুকু শেষ করে, আরো একটু ঢেলে দেয় গ্লাস এ 
বছর দুই আগে এসেছিলাম এখানে, আমাদের অফিসের রবি ও ভর্তি ছিল পা ভেঙে, জানিস আমি তো ডাবের মধ্যে মদ ভরে এনেছিলাম রবি র জন্যে, মনে আছে তোর 
সে কথা বলতে, কিন্তু এখন খুব খারাপ অবস্থা হাসপাতালের, শুনেছি ডাক্তার নাকি ভগবান, আর এত কসাই বাবু, রোগী ভর্তি হলে, আগে অপারেশন করার জন্যে ছটফট করতে থাকে, কি রোগ হয়েছে জানার দরকার নেই, এখন দেখ বেন  চলুন, যন্ত্র পাতি গুলো পূজা করছে, আপনাকে অপারেশন করবে বলে
কি বলিস রে, আমাকে বাঁচা রে নন্দী, 
বাবু ওই পিছনের দিকে একটা ভাঙা দরজা আছে, আমি খিল টা খুলে দিচ্ছি, ওখান দিয়ে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে সোজা দক্ষিণ দিকে দৌড়াতে থাকবেন, ওই ভাবে  অনেকেই বাঁচিয়ে ছি, কিন্তু সাবধানে লাফ দেবেন কিন্তু, নিন প্যান্ট জামা পরে নিন
বড়ো বাবু সুযোগ বুঝে সব গুছিয়ে নেয়, নন্দী দরজা টা খুলে দেয়,
বাবু বেরিয়ে গিয়ে সোজা লাফ দিয়ে দৌড়াতে থাকে প্রাণ পনে
কয়েকটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে বাবুর পিছনে পিছনে ধাওয়া করে, অবশেষে স্টেশনে পৌঁছায়, সেখানে হাপাতে হাপাতে একটা চেয়ারে গিয়ে বসে, তখন সময় প্রায় সাড়ে পাঁচটা, হাওড়া চক্রধর পুর প্যাসেঞ্জার গাড়ির আসার সময় হয়েছে, গ্রীন সিগন্যাল টা জ্বলজ্বল করছে, গাড়ি প্লাটফর্ম এ আসে, বাবু সোজা গাড়ি তে উঠে গিয়ে, একটা সিট এ শুয়ে পড়ে।


শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

সাহিত্য কালচার মাসিক সাহিত্য পত্রিকা
                     প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা

        
                          
    
    কবিতা:-
   
            আবদুস সালামসৌরভ ঘোষ,
          সনাতন মাজী (ময়না)কৃষ্ণেন্দু দাস ঠাকুর,
          মারুফ আহমেদ নয়নশিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়
                         

   
      গল্প:-
                                         সোহম ঘোষ
                          

                  
                       পায়ে পায়ে

                              কৃষ্ণেন্দু দাস ঠাকুর

                       এই যে, 
                              মেঘ --বৃষ্টিতে ভাসায় 
                                        মাটি --আঁকড়ে ধরে
                   গাছ পাতাকে গর্ভবতীর মতো যত্ন নেয় 
                   বাতাস তাকে স্বাদ দেয়
                   কিশোরীর চোখের মতো শাপলা ফুল।
                   নীল রঙের স্বপ্ন পুড়েও পালক
                                     ছেড়ে যায় ডানা
                  আমি জানি। তুমিও জানো।তবু অজানা
                  জানালা বড়ো প্রিয়।দাগ পড়ে যায় রেখায় 
                  ঘাস রেখে দাও বুকপকেটে 
                  বাদামী খামের ঠিকানা ভিজে যাবে
                 একবার,পা আর হাত মিলিয়ে মিলিয়ে ফেলি।