সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৯



                                       ছন্দপতন
                    পারমিতা ভট্টাচার্য            

                       
আজ রাস্তার দু ধারে আবীরের সমারোহ দেখে রাইয়ের মনে পড়ে যায় অর্কর কথা। আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে অর্ক মারা যায় ক্যান্সারে। রাই কে ওর বাপের বাড়ির লোকজন অনেক চেষ্টা করেছিল নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এক মাত্র ছেলের মা বাপ ছিল ওর শ্বশুর শ্বাশুড়ি। রাই কে ভালোবাসতও ভীষন তারা। তা ছাড়া শ্বশুর বাড়ির চারিদিকে, সারা বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে আছে অর্কর স্মৃতি। ইচ্ছে করলেও এই বাড়ি থেকে পা ওঠেনি রাইয়ের। তাই পাঁচ বছরের মেয়ে তৃষা কে নিয়ে সে শ্বশুর বাড়ি তেই রয়ে গিয়েছিল। অর্কর অফিসের কাজটা বহু চেষ্টা করে সে জোগাড় করেছিল। না হলে মেয়ের পড়াশোনা, বৃদ্ধ দুই মানুষের খরচ, সংসার খরচা কী করে চালাবে সে? 
আজও হোলি। ঠিক দু বছর আগে অর্ক এদের ছেড়ে চলে গেছে। শুধু অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে রাস্তার ধারে চূড় করে রাখা আবীরের দিকে রাই, আর ভাবে নিজেদের ফাগুয়া নিয়ে মাতামাতির কথা। তার পর কী যে হলো! আসতে আসতে ওজন কমে যেতে লাগলো ওর। বীভৎস রকমের রোগা হয়ে গেল সে। ধরা পড়লো ক্যান্সার। কেমো থেরাপির ফলে সারা মাথা প্রায় ন্যাড়া হয়ে গেল। চোখ দুটো কোটর থেকে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায় যন্ত্রণায়। শেষটায় আর সহ্য করা যেত না অর্কর চিৎকার। রাইও পারেনি সহ্য করতে। তাই চিরতরে মুক্তি দিয়েছিল অর্ক কে। আলমারি তে অতি সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখা ফাঁকা পয়জনের শিশিটা প্রতি হোলির দিন দরজা বন্ধ করে বের করে সে। আর অর্কর ছবির সামনে ভেঙ্গে পরে কান্না। কতটা ভালোবাসলে যে মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবা যায় তা শুধু সেই জানে। 


কোন মন্তব্য নেই: