সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০
কবিতা : হামিদুল ইসলাম
বসন্তের ছোঁয়ায় পাততাড়ি গুণি এবেলা ওবেলা
নজরবন্দি পলাশ শিমূল
নৈঃশব্দের বাতাবরণ ভেঙে বেরিয়ে আসে এক মায়াবী মুখ
অস্থিরতা তার শরীর জুড়ে
তার চোখের কোণে স্নান সারে খরস্রোতা নদী ।।
অস্বচ্ছ ভাবনায় ভাঙি ছবির দেয়াল
আগুনে পোড়াই সমস্ত অনুভূতি
তবু দেখি তার অনর্থক ফেরার পথে আমার অসম্ভব ব্যাকুলতা
নিজের অস্তিত্ব অনুভব করি
এক বিশাল ময়াল মৃত্যুকোষ গিলে খায় নিরবধি ।।
শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০
কবিতা : বদরুদ্দোজা শেখু
ঘুমঘোরে জেগে উঠি , ঝিরিঝিরি ভোরের মলয়
শিরশিরে আমেজ দ্যায়, দেহমন বিরহী হৃদয়
আপ্লুত নন্দিত হয় , পাখিরাও শুনি অনুভব করে এই প্রসন্নতা , মৃদু মৃদু সুখী কলরব
ইতস্ততঃ ভেসে আসে, আশপাশে নীরব স্থবির
ঘরবাড়িগুলো ঢুলে দেউড়ির দরমা-টাটির
খিল তুলে, অনাবিল শান্তির প্রহর ঘুরে যায়
জগতের বিপন্ন সত্ত্বার আতঙ্কিত অসহায়
জনপদ জুড়ে জুড়ে, ফুঁড়ে উঠে প্রাগৈতিহাসিক
মানব-সভ্যতা, প্রত্ন খায় বিশ্বত্রাস করোণা-বৃশ্চিক !!
কবিতা : মিঠুন রায়
তোমার অতসীপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করেছে অনেক আগেই,
রান্নাঘরে বাটা হলুদের মতো তোমার মুখশ্রী,
সবুজ বণানী জুড়ে ফুটে উঠেছে শ্বাশত প্রেমের শতদল।
আমি তোমার প্রেমিক নাকি অন্য কেউ,জানিনা।
বৃষ্টির সোঁদা গন্ধে সমোহিত হয়ে পড়ি অপ্রত্যাশিত,
প্রেমের মোহে তোমার সহস্র ভুলেও খুঁজে পাই বিবর্ণ অজ্ঞানতা,
শুধু স্বপ্নের সুতোয় নক্সীকাঁথা বুনি।
কবিতা : ডঃ চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী
রাত-ঘুম ভেঙে দু-লাইন লিখে ফেলার পর
বড়ো প্রশান্তি এসে ঘিরে ধরে
নৈ:শব্দ হাতড়ে তখন স্বপ্ন আছড়ে চৌচির করি
দু:স্বপ্নরা পাড়ি জমায় অন্যত্র!
এক আঁধার রাতই যথেষ্ট মনে হয়
আসল মুক্তোর ছটায় নিজেকে খুঁজে পেয়ে
আমি দাঁড়াই এসে অমিতপরাক্রমী--
হে আর্কিমিডিস, তুমি বার বার আসো,
ফিরে ফিরে আসো
তবেই না সৃষ্টি বাঁচে শাশ্বতকাল !
কবিতা : প্রণব কুমার চক্রবর্তী
উপত্যকা জুড়ে বইছে এক নোতুন হাওয়া .......
এঁকে দিচ্ছে মাটির বুকে কান্না ভেজা মৃত্যুর একটা সুন্দর হিম-শীতলতা
ক্রমশ নিশ্চুপ হয়ে পড়ছে উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা
শঙ্কিত সব গার্হস্থ আলোচনা আর
সকাল-সন্ধ্যার প্রার্থনা
শূন্যতার করিডরে তৈরি হওয়া
নোতুন এক যন্ত্রণার ব্যাকরণ
সূর্য এবং চন্দ্রের উত্তাপ মেখে বৃষ্টি হয়ে
নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে ......
শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০
অনুগল্প : পৌলমী সরকার
একটা চড়, সিদ্ধান্তটা নিতে খুব একটা দেরি করেনি মেয়েটি, হাতের কাছেই পেয়েছিল উপকরণ; ঠাকুমার ঘুমের ওষুধের শিশিটি। মেয়ের অধঃপতনের খবর পেয়েছিল শিল্পী বাবা। সে সমস্ত সত্তা বিকিয়ে দিয়েছে সামান্য কটা টাকার জন্য। ন্যুড মডেল হয়ে টাকা ইনকাম করেছে। এমন মেয়ের বাবা হয়ে বেঁচে থাকার কষ্টে তিনি বাঁচতে চান না একমুহূর্ত... বিছানায় শুয়ে থাক
অনুগল্প : প্রতিমা ভট্টাচার্য মণ্ডল
আজ খুব ভোরেই ঘুম ভাঙ্গলো ঊর্মিলা দেবীর,যদিও তিনি রোজ সকাল সকাল বিছানা ছাড়েন।তারাতারি স্নান সেরে ঠাকুরের কাছে জোর হাত করে বললেন-"ঠাকুর আমার বাবাই এর আজ চল্লিশতম জন্মদিন ওকে ভালো রেখো, সুখে শান্তিতে ভরিয়ে দিয়ো।" মনে মনে ভাবতে লাগলেন ছোট বেলায় নিজেই পায়েস রান্না করে ঠাকুরকে নিবেদন করে ছেলের মুখে দিতেন।এখন সে উপায় নেই।বাবাই এর বাবা মারা গেছেন আট বছর হতে চললো, তার পরের বছরই হরিদ্বার বেরাতে নিয়ে আসে বাবাই আর বৌমা,সঙ্গে দু'বছরের নাতি।তারপর সেই যে হরিদ্বারের ঘাটে রেখে চলে গেলো আর এলোনা। দেখতে দেখতে ছয় বছর পার হয়ে গেলো ঊর্মিলা দেবী জানেন তাঁরা আর কোনদিন আসবে না।
অনুগল্প : কৃষ্ণেন্দু দাস ঠাকুর
অনুগল্প : রবিন বসু
বেশ খেলছিল সত্যব্রত। নিঁখুত গেম । বিভিন্ন মেয়েকে বিয়ের কথা দিয়ে সুযোগ নিয়ে আবার পাঁকাল মাছের মত পিছলে যাচ্ছিল।
কিন্তু গোল বাধল এই শুভমিতার বেলায়। হাত ঝেড়ে ফেলতেই প্রমাণ সহ পাড়ার মহিলা সমিতিকে জানিয়ে দিল। ফলস্বরূপ আজ তাকে ছাঁদনা তলায় বসতে হয়েছে। নিমরাজি চাঁদ সদাগরের মনসা পুজোর মত তাকেও বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে । মহিলা সমিতির সেক্রেটারি মিসেস পাকড়াশি মোবাইলে তোলা ভিডিওটা দেখিয়ে বলেছিলেন, ''আপনার সামনে দুটো বিকল্প আছে। হয় শুভমিতাকে বিয়ে করুন। নাহলে শ্রীঘর ।"
মধ্যবয়স্ক সত্যব্রত এখন বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাঁ হাতে শুভমিতার কপালে সিঁদুর তুলে দিচ্ছে।
অনুগল্প : সিদ্ধার্থ সিংহ
হিন্দি সিনেমার আইটেম গার্ল। ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বেরোচ্ছেন। সুইজারল্যান্ডের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়ামে তাঁর শো। লাইফ টেলিকাস্ট হবে সারা পৃথিবী জুড়ে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ওই দিন স্পেশাল ফ্লাইট দিচ্ছে। লোকে বলে, ডাক্তাররা নাকি এখন আর কাউকে ভায়াগ্রা প্রেসক্রাইব করেন না। বলেন, ওঁর নাচ দেখুন, তা হলেই হবে।
সব ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা হল, ওই শোয়ে কী পরবেন তিনি! উনি কল করলেন পৃথিবীখ্যাত এক ডিজাইনারকে। একটা ছোট্ট লেডিজ রুমাল দিয়ে বললেন, আমাকে একটা ড্রেস বানিয়ে দিন।
ডিজাইনার চুপ। তাঁকে চিন্তিত দেখে আইটেম গার্ল বললেন, কী হল? এতে হবে না?
ডিজাইনার বললেন, হবে না কেন? আমি ভাবছি, যে কাপড়টা বাঁচবে, সেটা দিয়ে কী বানাব!
অনুগল্প : নিখিল মিশ্র ঠাকুর
নব্বোই এর দশকে গ্রাম থেকে আমাকে প্রতিদিন সাতকিমি পথ হেঁটে এবং দেড়ঘন্টা বাস করে সিউরি বিদ্যাসাগর কলেজে পড়তে যেতে হতো। রাস্তায় বড়োবাঁদ নামের পুকুরটার দুই পাশের মাঠ গুলোতে শামুক ভাঙা কেউটে নামে এক প্রজাতির বিষধর ও হিংস্র সাপ থাকতো।
বর্ষাকালের এক সন্ধ্যায় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে বাসস্ট্যান্ডে নেমে আমি চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকারে হা্টছি। বড়োবাঁদের আগের মাঠগুলোতে এসে হঠাৎ করে আমার পা পিছলে গেল। আমি যেই মাঠে পড়েছি,সাথে সাথেই মাঠের অন্যদিক থেকে জলে কিলবিল করে আওয়াজ। আমি বুঝতে পারলাম শামুক ভাঙা কেউটে আসছে। তড়িমরি করে মাঠের আলে উঠে এলাম। আমার একপাটি হাওয়ায় চটি মাঠে গেঁথে রয়ে গেল।
আমি মাঠের আলে নড়াচড়া না করে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি কখন একটা জোরে বিদ্যুৎ চমকাবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খুব জোর বিদ্যুতের ঝলকানি। আমি ঝপাস করে চটি তুলে নিয়ে আপাতত ভরতের মতো খরম মাথায় দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।
দিনলিপি : সবুজ সরকার
১০ এপ্রিল ২০২০ শুক্রবার
রোজকার ন্যায় আমার চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরে সকালের রোদের উষ্ণতা আসতেই ঘুম ভেঙে গেল। শুয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ , তার পরেও। আকাশ-পাতাল ভাবলাম। ঘরের পাশের দেবদারু গাছে ততক্ষণে পাখিদের সভা বসেছে। তারা নিজেদের মধ্যে গল্প করতে ব্যস্ত, দুটো পাখি রীতিমতো ঝগড়া করছে সেই সাত সকালেই। কাচের জানালা খুললেও তারা আমাকে মোটেও তোয়াক্কা করল না। গ্রাহ্য করলো না আমার উপস্থিতি। আমি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে লাগলাম। অধিকাংশই শালিখ পাখি। ধূসর রঙের পাখি ও ছিল বেশ ক' টা। ওদের গা জোয়ারিটাই একটু বেশি। কয়েকটা কাক এসে এই আলোচনায় যোগদান করতে চাইলেও বাকিরা মোটেও পাত্তা দিল না। ইতিমধ্যে কোত্থেকে একটা কাঠঠোকরা উড়ে এসেছে। এদের দলে সে রীতিমত বেমানান। উপায় না পেয়ে ছুটে এলো আমার কাঁচের জানলার কাছেই। সতর্ক চোখ আর ধারালো ঠোঁটে রীতিমতো যোদ্ধা পাখি বলে মনে হচ্ছিল। পাখিগুলোর কোন তাড়া নেই। ব্যস্ততা নেই জীবনে। বেশ লাগছিল। করোনা নিয়ে ভাবনা নেই কোন। জানেই না এসব সম্বন্ধে। আমারও তাড়া নেই আজ। তাই ওদের সাথে কাটিয়ে দিলাম অনেকক্ষণ। সারাদিন যখন এসেছি ঘরে, দেখেছি দেবদারু গাছে কিছু না কিছু পাখি ঠিক আছে। গোটা বিকেল জুড়ে দুটো পাখি মনের সুখে গান গাইলো। ভাষা বুঝতে না পারলেও, সেই সুরে যে প্রাণের ছোঁয়া আছে আমার বুঝতে বাকী নেই। সন্ধ্যে হলে, ঝুপ করে দেবদারু গাছটা একা হয়ে গেল। আমিও। এখন শুধু দেবদারু গাছ আর আমি। আমি আর দেবদারু গাছ।
দিনলিপি : অবাস্তব ডায়েরি
"ধুর বিপ্লব,তোর দ্বারা কিছুই হবে না। একটা পড়াও ঠিক মত বলতে পারিস না। না পড়ে করিস টা কি?" রেগে ক্লাসে সবার সামনে বললেন কণিষ্ক বাবু।
"খেলি স্যার, খেলতে আমার খুব ভাল লাগে।" বলল বিপ্লব।
"খেলে কোন উপকারটা হবে শুনি। রায় বংশের মুখ ডোবাবি দেখছি তুই। না খেলে একটু পড় ভবিষ্যতে কাজে দেবে। যা এখন ক্লাসের বাইরে কান ধরে দাঁড়া!!!"
শেষ বলে ছয়টা মারলে অনেক বছর পর ভারত আবার বিশ্বকাপটা পাবে। টিভির পর্দায় তাকিয়ে কণিষ্ক বাবু চাইছিল যেনো ছয়টা হয়। বলটা ক্রিজ পার করার সাথে সাথে গ্যালারিতে পাঠিয়ে অনেক বছর পর ভারতের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিল বিপ্লব রায়।
সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০
কবিতা : মলয় রায় চৌধুরী
নখ কাটা ও প্রেম
মলয় রায়চৌধুরী
রবীন্দ্রনাথ, দেড়শ বছর পর একটা প্রশ্ন আপনাকে :
কে আপনার নখ কেটে দিত যখন বিদেশ-বিভুঁয়ে থাকতেন--
সেই বিদেশিনী ? নাকি চৌখশ সুন্দরী ভক্তিমতীরা ?
যুবতীরা আপনার হাতখানা কোলের ওপরে নিয়ে নখ
কেটে দিচ্ছেন, এরকম ফোটো কেউ তোলেনি যে !
ওকামপোর হাঁটুর ওপরে রাখা আপনার দর্শনীয় পা ?
মহাত্মা গান্ধীর দুই ডানা রাখবার সাথিনেরা
বোধহয় কেটে দিত নখ ; কেননা বার্ধক্যে পৌঁছে
নিজের পায়ের কাছে নেইলকাটার নিয়ে যাওয়া, ওফ, কি
কষ্টকর, আমার মতন বুড়ো যুবতী-সঙ্গীহীন পদ্যলিখিয়েরা
জানে ; প্রেম যে কখন বয়সের দাবি নিয়ে আসে !
ফিসফিসে-লোকে বলে সুনীলদার প্রতিটি নখের জন্য
উঠতি-কবিনী থাকে এক-একজন। জয় গোস্বামীরও
ছিল, তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে সমুদ্রের পাঁকে চোখ বুজে।
চাইবাসার ছোটোঘরে শক্তিদার নখ কেটে দিচ্ছেন প্রেমিকাটি
দেখেছি যৌবনে। বিজয়াদিদির নখ কেটে দেন কি শরৎ ?
যশোধরা তোর নখ কেটে কি দিয়েছে তৃণাঞ্জন কখনও ?
সুবোধ আপনি নখ কেটে দিয়েছেন মল্লিকার পা-দুখানি
কোলের ওপরে তুলে ? কবি কত একা টের পেতে তার পা-এ
তাকালেই বোঝা যায় । যেমন জীবনানন্দ, হাজার বছর
খুঁজে চলেছেন কোনো এক বনলতা নখ কেটে দিয়ে যাবে তাঁর...।
কবিতা : অনুরুপা পাল চৌধুরী
অনুরূপা পালচৌধুরী
আসক্ত আগুনের স্বাদ তবু নিত্য জানলার মগজ বড্ড বিনিয়াৎ অলিগলি। রোদখালি কাগজের মৃত পার্ক চুঁইয়ে ট্রিগারে সকাল মাখিয়ে উষ্ণ ভাঁড়ের লাশকোড বেমালুম বেমারি বরফ। মৃত্যুর রঙ সাঁতরালাম নিছকই ব্যালিক ভাবনার নিশাচর নদীটি। সেঁকা চাঁদ আর স্যাঁতসেঁতে পাঁজরার মাটি মৃতদ্বারের অ্যারোফেজ গলা বসে যায় অহরহ জলচিজ : চোরাহিমের কুরিয়ারে তুমি ভুলের বাষ্প গুলে জুবেল আগড় আড়মোড়া ভীড় বাজতে বাজতে ভয় তুলি অপেক্ষার লোকেশ। বদলে আগুন বাতলে বাতাস তুলি হিসাবের খুনি মিউকাস।
কবিতা : উত্তম চৌধুরী
ছায়াবৃত্তে জেগেছে কুসুম
উত্তম চৌধুরী
ছায়াবৃত্তে জেগেছে কুসুম
আমিও জেগে উঠতে চাই,
আমাদের অতিপ্রিয় ঘুম
ছোট্ট হতে হতে বনসাই।
যে আলোকে অন্ধকার আসে
আমি তার প্রথম দোসর,
অপসূর অনুসূর খেলা
চোখ মেলে দেখেন ঈশ্বর।
জলশব্দ বায়ুশব্দে লীন
ডান বাম বৃত্ত সমতল
চোখ মুখ আবর্তিত মুখে,
উল্কাপাতে আলোকিত নদী
পারম্পর্য ধরে ঘণ্টা পল
জানালায় ঝোলে অন্তহীন।
কবিতা : বদরুদ্দোজা শেখু
মুখগুলো
বদরুদ্দোজা শেখু
মুখগুলো ক্ষতবিক্ষত
মুখগুলো ভয়ার্ত সন্ত্রস্ত বিধ্বস্ত
মুখগুলো বিপন্ন আতঙ্কগ্রস্ত
মুখগুলো আর্তনাদ করছে , প্রাণভয়ে
চীৎকার করছে ,আপ্রাণ প্রাণভিক্ষা করছে
মুখগুলো পুড়ে যাচ্ছে
পুড়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি বস্তি বাজার , পুড়ে যাচ্ছে ,জ্বলে'পুড়ে' সব খাক হ'য়ে যাচ্ছে
ভয়ঙ্কর লুঠপাট খুন ধর্ষণ হিংসার অট্টহাসির
ভিতর
মুখগুলো বীভৎস করুণ কদাকার
মুখগুলো নিরাশ্রয়
মুখগুলো নিরপরাধ
মুখগুলো রিক্ত নাচার হতভাগ্য
মুখগুলো মানুষের
মুখগুলো কোনো মুখোশ নয়
মানুষ শুধু মানুষ পুড়ছে
আবালবৃদ্ধবনিতা পুড়ছে
জ্বলে'পুড়ে' ছাই হচ্ছে
পুড়ছে সভ্যতা , পুড়ছে মানবতা
পুড়ছে সম্প্রীতি, পুড়ছে সমাজ !
মুখগুলো ক্যানভাস
সারি সারি শুধু জ্বলন্ত মুখ
কাঁপছে কাঁপছে আর কাঁপছে
দাউ দাউ ক'রে জ্বলছে সংবাদ
যুদ্ধে দাঙ্গায় হিংসায় সন্ত্রাসে
পুড়ছে সভ্যতা, ভয় ও ভিক্ষায়
পুড়ছে মানবতা, দায়হীন
দীক্ষাহীন দাক্ষিণ্যহীন
পুড়ছে না বিবেক খুনে' রাষ্ট্রশক্তির
কিংবা তার খুনে' সাঙাৎকুলের,
ফুলের মতোন মুখগুলো
পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে
যার জন্য আদৌ তারা দায়ী নয় ,
ভয় চারিপাশে শুধু দমবন্ধ ভয় - -
কবিতা : আব্দুস সালাম
উদ্বিগ্ন সকাল
আবদুস সালাম
ভাঙা ঘরে চাঁদ উঁকি মারে
রহস্যময়তা ঘিরে নামে বৃষ্টি
হৃদয়ে জমা হয় উদ্বিঘ্ন সকাল
রহস্যময়তা ঘিরে নামে বৃষ্টি
হৃদয়ে জমা হয় উদ্বিঘ্ন সকাল
মন খারাপ তাড়া করে
আমার বাড়ি ঘর আমার নয়
আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়
এদেশ ও নাকি আমার নয়
শরু হয়ে আসে রাস্তা
হিংস্রঃমানুষের আস্ফালনে কাঁপে জন্মভূমি
আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়
এদেশ ও নাকি আমার নয়
শরু হয়ে আসে রাস্তা
হিংস্রঃমানুষের আস্ফালনে কাঁপে জন্মভূমি
নৈতিকতার হাহাকার বাজে সর্বত্র
বেজে ওঠে ধর্মের বিউগল
অসীম পৃথিবীর বদলে যায় ভাষা
বেজে ওঠে ধর্মের বিউগল
অসীম পৃথিবীর বদলে যায় ভাষা
আত্মকেন্দ্রিক কুয়াশা লেপ্টে ধরে জীবনের ঘ্রাণ
পরাজয় মাথা চাড়া দেয় বার বার
পরাজয় মাথা চাড়া দেয় বার বার
নির্বাক পৃথিবী ধর্ম মেখে অদৃশ্য রাস্তায় হাঁটে
কবিতা : বিকাশ চন্দ
হৃদয়ের চুপ কথা
বিকাশ চন্দ
দু'হাতের তালুতে রেখেছি কুঁড়ি মুখ
তখনও রাত্রি আসেনি নীল ঘুম সাথে
জল স্থল জুড়ে তখন ভবঘুরে সন্ধি কাল
এখন অকাল বৈশাখী ধূলো ঝড়
এভাবেই ভিজতে ভিজতে
কখন যেন উঠে আসে আদিম সভ্যতা।
#
পৃথিবীর জন্ম কালই জানে কেবল বৃষ্টির ইতিকথা
কি মায়াবী প্রেম কথা পরকিয়া মুখো মুখি
মুগ্ধতায় প্রাচীন কলাপ হায় বৈশাখী ঝড়
অদ্ভূত ছিল ঠোঁট জুড়ে চুম্বন পিপাসা
সমূহ অস্তিত্ব জুড়ে ভেসে যায় বৃষ্টি জল
হয়তো বা আমার জন্ম কাল ভেসে গেছে কবে
কেবল কিছু সময় এদিক ওদিক
হঠাৎ বিচ্ছিন্ন শরীর হিসেব হীন
রক্ত মাংস জল কাদা মাটি
কোথাও বা আমার চেনা মুখ গুলি বোবা হয়ে গেছে
কেবল চোখগুলো নিষ্পলক পাষান মূর্তি যেন
কিছু থাকে ছদ্মবেশী মানুষ প্রার্থনারত এই পোড়া দেশে।
#
জল নদী সাগর জানে শব্দ উত্তাল কলরোল
সহজাত চুম্বন কাল বারুদ গন্ধী শ্বাস
কেবল শুনি প্রতিধ্বনি পাশাপাশি হৃদয়ের চুপ কথা।
কবিতা : অনিরুদ্ধ সুব্রত
প্রিয় মৌসুমী বায়ু
অনিরুদ্ধ সুব্রত
১
পশ্চিমি ঝঞ্ঝা-ক্ষুব্ধ দিন গুলোর কথা এখন ভুলে যাচ্ছি
পলাশের রক্ত-আগুনের তাপে সেই তো শেষ বার সেঁকে নিয়েছি
বসন্তের বাতাস বরাবর জ্যোস্না-রাতের বাঁশি বেজেছে কতই
মেহগনি সংবেদে ফিরেছে আবার, হিমালয় ছেড়ে গৃহী-সন্ন্যাসীর মতোই
উদাসীন শূন্য চৈত্র-মাঠ আবার ধরেছে বায়না, নিজস্ব ফসল-গর্ভ-গান
দূরে একটি দু'টি খেজুর গাছের হৃদয় আকাশের গায় কাঁটা ফুটিয়ে দেয় ।
২
ভাবছিলাম নাম হোক 'দুপুরবেলা' আমার, বিশেষত এই বয়সে মানায়
শরীরের নাম গ্রীষ্মকাল। ঘেমে নেয়ে কাব্য কি হয়, অস্বস্তির চালসে গায়
ফুটো ফাটা ত্রিপল ঢাকা ঘুন ধরা সেই বাঁশের খুঁটি। চেষ্টা চলে পরিপাটি
তবুও ফাঁটে চাষের মাটি,রসের অভাব,শুকিয়ে আসে গভীর থেকে বুক অবধি।
৩
একটু একটু থমকে বাতাস, অনেকটা শীত শীতল থেকে,ধুলো ধোঁয়ার পথ
কখন দেখি অসহ্য বোধ, গুমোট হয়ে সমস্ত ভাব, মাথায় ওঠে সব উত্তাপ ।
মাঝ দুপুরের আগুনে খাগ দু'চোখ শুধু ধূ ধূ,কাজের মানুষ, মগডালে এক ঘুঘু ।
সহ্য হয় না কঠিন পাচ্য, না-হজম কতই স্বাদ,অসাধ্য সাধ্য করার তবুও সেই সাধ
অনবরত ঘামে ভেজে সহায় যত, ভিজে ওঠে নাক, পিছলে যায় চশমাটা আর
পিছিয়ে পড়ে হাত ।
৪
তবুও বলি ফিরিস্তি এ সব, দুপুরবেলা পাল্টে শরীরের নাম যে গ্রীষ্মকাল।
তাপ সয়ে যাক,বন্ধ বাতাস তাও সয়ে যাক, এখানে জমুক গভীর নিম্নচাপ ।
সকাল ফিরে কী করে পাবে, বাড়ি তোমার নিরক্ষীয়--- বদলে নেবে ?
কোন সকাশে কে-ই বা আছে, জলের কাছে ঘর, এখানে শুধুই বালির ঝড়।
প্রিয় আমার মৌসুমী বায়ু, এই রোদ্দুর এই দুপুরে, এক পশলা বৃষ্টি নামাবে ?
কবিতা : শুধ ব্রত রাউত
কুহুক
শুদ্ধ ব্রত রাউত
যে যার মতো হাসবে
আর যে যার মতো বেরিয়ে যাবে
ব্যক্তিগত গরিমা মকশো করতে
ঢেউ এসে খুলে নেবে পা
তারপর ঢেউয়ের পেছন ছুটে
পায়ের কথা ভুলে তিন/দুই/এক
ফিরে যাবে গৃহহীনতায়
শুধু দেয়াল দিয়ে বেঁধে রাখলেই
শূন্যত্যাগী হয় না সব
ছাদের গায়ে বেজে উঠলেই
পুরনো আওয়াজ নিজের-
বলে মানে না শ্মশান-কোকিল
কিছু কি ছিলো কখনো?
এমন ভাবলেই তো খুলে নিতে হয়
দুর্বোধ্য হরফের ট্রাঙ্ক
কিছু কি বদলেছে আদৌ?
যা ছিলোই না তার গতি কেমন আবার!
রিক্সার চাকা!
চলমান রাস্তা;
পরক্ষণে দেখি সে স্থির আছে আগের মতো!
এ সবই কেবল আবহ বোধয়
যে জামানা পেতেছে যেমন বীর্যের মাদুর!
ঘড়ির দিকে-
তাকাতে ভালো লাগে তাই
দিনরাত মিলিয়ে অন্তত ৩/২/১ বার
কখনো বড় কাটা টা হয়ে ওঠে
ধুসর একটা T-rex
ছোট টা ব্লুয়িশ হামিংবার্ড
এমন করে কোন কিছুই আর আমি হয়ে ওঠে না
কবিতা : নিত্য রঞ্জন মণ্ডল
বৃষ্টি আসা মেঘে
নিত্য রঞ্জন মণ্ডল
সুদূরের চলন্ত ট্রেনে তোমারে দেখেছি
ভালোবাসার মানে এই হয় না কি
সদ্য সকালে ঝুরে পড়া গোলাপের শিশিরে
ভেজা পাপড়ি, শূণ্যতা উঠান ;
কেউ নেই, শূণ্যতার ডাকে
ভাঙা জানলা চৌকাঠ, দু' টি চোখ চেয়ে থাকে ;
বৃষ্টি আসা মেঘে
আমার বিছানার চাদর ভিজে গেছে
রাতের গভীর আঁধারে গায়ে সেই ছেঁড়া কাঁথা
আজ আর গন্ধ পাই না
আমার সেই ভাঙা ঘর নেই
ভাড়া ঘরে থাকি --- কত কথা মুখে মুখে,
ভাড়া দিতে দেরি হলে জীবনের স্রোতে টেনে নিয়ে যায়
বাড়ীর মালিকের মৃত্যুর মত চোখ রাঙানি
আমি শুধু জীবন্ত ভাবে দেখেছি।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)