বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯




                          ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি
                                রানা চ্যাটার্জী

বেড়াতে যেতে পারলে কে না খুশি হয়।শীতের মরসুম হোক আর গরমের ছুটি অথবা একঘেয়েমি জীবনে নিদেনপক্ষে শনি,রবি বার মিলিয়ে আর তিন চার দিনের ছুটির সুযোগ এলেই এক পায়ে একটু হাওয়া বদলের অপেক্ষায় থাকি অনেকে।সারা বছর মনে মনে  বেড়ানোর পরিকল্পনা তৈরি তে কিন্তু আমরা বাঙালির জুড়ি নেই ।কিন্তু বেড়ানোর সুযোগ হলেও সবাই কিন্ত মনের জোরে বেরিয়ে পড়তে পারে না,ঠেলে গুঁজেও কাউকে জোড় করে কৈ রে যা রে পরিবার নিয়ে ঘুরে আয় এটাও যে খুব ফলপ্রসূ হয় তা নয়।এর জন্য চাই যে বা যারা বেরুবে তাদের মনের তাগিদ,
বেড়ানোর খিদে ও ,"বেরুবো,যা হবে দেখা যাবে",এই মানসিকতার বেশ প্রয়োজন।
বেড়ানোর দিক থেকে শুধু ভারত বর্ষে নয় পৃথিবীতে যত জাতি আছে,বাঙালি তার নামের সাথে যথেষ্ট সুনাম রেখে চলে আজও। অতীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না থাকলেও ,"থাকবো না কো বদ্ধ ঘরে,দেখবো এবার জগৎ টাকে বলে বেরিয়ে পড়তে বাঙালি বেশ সিদ্ধ হস্ত ছিল বলেই প্রমান।পাশের রাজ্যে সমুদ্র সৈকতে যত না সেই রাজ্যের পর্যটক,বাঙালির আনা গোনা স্রোতের মতো বারো মাস,আবার সে বেনারসের ঘাট হোক আর আগ্রার তাজমহল,দক্ষিণী কন্যাকুমারী,কি রাজস্থানের কোন আনাচে কানাচে কিংবা দার্জিলিং বা সিকিমের ছাঙ্গু, গুরুদংমার যাইহোক সর্বত্র ভ্রমণ পিপাসু বাঙ্গালীর চরণ ধূলি ও উৎসুক মুখের জয় জয়কার।
তাই দেখবেন,যেখানে যত দূরেই যান,দু চার জন নিজের লোকের মতো বাঙালি,অনর্গল এই মিষ্টি ভাষায় বকে যাওয়ার লোক ঠিক জুটে যায়। সেবার মহারাষ্ট্রে মহা বালেশ্বরের কাছে এক গুহায় যখন পৌছালাম,কিছু আগে বৃষ্টি হয়ে অন্ধকার যেন আরো ঝুপ করে নেমে গেছে। গাইড বললেন খুব সাবধানে নামলে নামুন,নইলে ছেড়ে দিন,প্রচুর ছোট বাঁদর ও আছে নিচে।জাস্ট দু চারটে সিঁড়ি , বসে বসে চেষ্টা করছি নামার,ও বাবা,বাঁদর দের কিচ কিচানির সাথে কানে এলো বাংলায় অনর্গল বক বক করা দুই প্রেমিক প্রেমিকার গল্প। আর নামিনি,না না অন্ধকার আর বাঁদরের ভয়ে নয়,ওদের প্রাইভেসি যাতে নষ্ট না হয় এটা  মনে করেই উঠে এসেছিলাম।
সেবার একটু চেন্নাই ছুঁয়ে মাইসোর যাবার পরিকল্পনা ছিল পরিবার নিয়ে।ট্রেনের সামনের সিটে বসা দুই ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা কিছুক্ষন পর খুব ভাব জমিয়ে ফেললেন।অবশ্য আমার কেউ সামনে অপরিচিত বসলে সে যদি খুব বেশি মুখ বুজে থাকা মানুষ না হয়,কিছুক্ষন পর যে বক বক করে গল্প করবেনই এই নিয়ে আমি নিশ্চিত থাকি। কথায় কথায় ওই ভদ্রমহিলা দিদির একটা কথা আমায় ভীষণ  উৎসাহিত করে ছিল।উনি কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন,"একঘেয়েমি এই জীবনে সারা বছর ধরেই একটু একটু করে সঞ্চয় করি,বেড়াতে আমাদের বেরুতেই হবে,এমনকি তাতে খাবার মেনুতে চার দিনের পরিবর্তে তিন দিন মাছ করেছি। "ওনার এই জীবন কাহিনী সত্যিই আমায় ভীষণ উৎসাহিত করে ওনার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়েছিল,কমায় নি। ভালো লেগেছিল ওনার ভাবনা। বেড়ানো যে পরিমান এনার্জি দেয় এই ব্যস্ত জীবনে মানুষের,সামান্য হলেও এই ভ্রমণ  খোলা হাওয়া যে নিয়ে আসে আমাদের জীবনে তা যারা সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পরে তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন।সব সময় যে অর্থই বেড়ানোর প্রতিবন্ধকতা হয় তা নয়,বেড়ানোর ইচ্ছাটাও বেশ গুরুত্বপূর্ন


                              সত্যি সত্যি 
                        সিদ্ধার্থ সিংহ
মুর্শিদাবাদ ঘুরতে যাচ্ছে বানেশ্বর। ট্রেনের দোলানিতে বেশ তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। ভাবছিল, গতকালের কথা।
গতকাল বিকেলবেলায় জীবনদ্বীপের উল্টো দিকে এলিয়ট পার্কে বসেছিল ওরা। ও মুর্শিদাবাদ যাচ্ছে শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ঝুম্পার। সেটা দেখে ও বলেছিল, দুটো দিনের তো ব্যাপার। যাব আর আসব।
--- দু... উ... উ... উ... টো... দিন! তোমাকে দু'দিন, মানে আটচল্লিশ ঘণ্টা না দেখে থাকতে হবে!
বানেশ্বর বলেছিল, তুমি আমাকে খুব ভালবাসো, না?
--- হু। লজ্জা পেয়ে উপর-নীচে মৃদু মাথা দুলিয়েছিল ঝুম্পা।
--- আচ্ছা, তুমি কি এ রকম ভাবে আর কাউকে ভালবেসেছ?
--- ধ্যাৎ, আজেবাজে কথা বোলো না তো...
--- না, বলছি, আমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে? --- না।
--- আচ্ছা, তা হলে গত পাঁচ বছরে?
--- না। ঝুম্পা বলেছিল।
--- গত আট বছরে?
--- উঁহু, না।
--- তা হলে বারো বছরে?
---  কোন সাল সেটা? কোন সাল! না... না... নাঃ।
--- গত কুড়ি বছরেও কি এত ভালবাসিনি কাউকে? সত্যি বলছ? আমাকে ছুঁয়ে আছে কিন্তু। মিথ্যে বললে আমি মরে যাব।
ঝুম্পা বলেছিল, সত্যি বলছি, বিশ্বাস করো। আমি কাউকেই তোমার মতো এত ভালবাসিনি।
গতকালের সেই কথা ভাবতে ভাবতে বানেশ্বরের চোখ বুজে এসেছিল। হঠাৎ হুড়মুড় করে কারা যেন চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়ল। সবাই বুঝতে পারল, এরা কেউ ছিঁচকে চোর, ছিনতাইবাজ কিংবা ডাকাত নয়। এরা টেরোরিস্ট। উগ্রপন্থী। এই ট্রেনটাকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য এরা একেবারে তৈরি হয়ে এসেছে। যে কোনও সময় যা কিছু ঘটে যেতে পারে।
ও মুর্শিদাবাদে যাচ্ছে হাজারদুয়ারি দেখতে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! তা হলে কি গতকাল ওর চোখে চোখ রেখে ঝুম্পা মিথ্যেকথা বলেছিল!

সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯


                            অনুতাপের আগুন  
                        ডঃ রমলা মুখার্জী
  
   ড় কাল্পনিক আর উদার পরাগকে  রূপসার বড় ভালো লাগে।পড়াশোনায় বেশ ভালো,সবাইকে বেশ সহযোগিতাও করে।ইংরাজী অনার্সে ভালো ফল করে পরাগ ভর্তি হয়েছে এম.এতে।রূপসাও একই সংগে পড়ে।
     রূপসার ভালো লাগা ক্রমশই ভালোবাসায় পরিণত হল পরাগের সাথে কিছু অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশনের সময়ে।অসাধারণ আবৃত্তি করে পরাগ,রূপসা পরাগের প্রেমে একেবারে পাগল হয়ে উঠল।বড়লোকের খামখেয়ালী মেয়ে,তাই  পরাগ রূপসাকে এড়িয়ে চললেও শেষ পর্যন্ত রূপসার পাগলামিতে ধরা দিয়ে বসল।এম এতে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে,নেট পরীক্ষায় ভালো ফল করে পরাগ গবেষণা করতে শুরু করল।কিন্তু রূপসা আর ধৈর্য্য ধরতে পারল না,দুম করে একদিন পাকাপাকিভাবে চলে এল পরাগের কাছে।পরাগের গবেষণা শেষে অধ্যাপনা করার ইচ্ছে,আর তখনই বিয়ের কথা ভাবত।কিন্তু কি করবে,রূপসার বাড়িতে নাকি বিয়ের জন্য রোজই কোন না কোন পাত্রপক্ষ আসছে।একজায়গায় তো প্রায় ঠিকঠাক।মধ্যবিত্ত পরাগের সাথে বিয়ে রূপসার বাড়ি থেকে দেবে না।
    বিধবা মা রমাদেবীকে নিয়ে সুখের সংসার পরাগের। মায়ের পেনশন আর তার  ফেলোশিপের টাকায় ভালোভাবেই চলে যায়, প্রাচুর্য না থাক শান্তি তো আছে।কিন্তু রূপসা আসার কিছু মাস পর থেকেই সেই মহাশান্তির সংসারে জ্বলল অশান্তির আগুন।
   রূপসার দামী দামী পোশাক আর বিউটি পারলারের ঠেলায় পরাগ একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়ল।
রূপসারও ততদিনে মোহভঙ্গ হয়েছে,ধনী ব্যবসাদার অনলের সাথে ঘর বাঁধল রূপসা।
    পরাগ অধ্যাপক হয়েছে,তবুও বিয়ে করছে না।একটা কিসের প্রতীক্ষায় সে দিন গোনে। রমাদেবী বিয়ের কথা পাড়লেই পরাগ বড় রেগে যায়,এর কারণ কি কিছুই রমাদেবী বুঝে উঠতে পারেন না,তাই আর বেশি জোর করেন না।
     প্রবল শীতের এক ঝড়-বৃষ্টির  রাতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার মত এসে হাজির হল রূপসা। সারা শরীরে ক্ষত,অনলের অত্যাচারের চিহ্ন।রমাদেবীর প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করেও পরাগ রূপসাকে ঠাঁই দিল।অনুতাপের আগুনে দগ্ধ রূপসা এখন খাঁটি সোনা।

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯




                                       জবাবি খাম
                                   দেবযানি বসু


              পুরানো আমলের বক্ষবন্ধনী প্রজাপতি আজ
              জল থেকে তরঙ্গ তুলে নেবার আনন্দছবি
              রক্তের বুদ্বুদ বেলুনের ত্বক শুষে নেয় জেনে রেখো
              আমরা সকাল বিকাল অসুখ চিবিয়ে খাই
             ডাকঘরের লকগেট ভেঙে চিঠিগুলো প্রজাপতি হল
             শুঁয়োপোকার সঙ্গে সঙ্গমে মত্ত ছিল চিঠিরা একসময়
             লেস রাখি পুঁতি বসাই কলমে সেলাই করি প্রভা 
             কাউকে ভুলি না বাতিল করি নি তাও উড়ে যায় পতঙ্গ।

                                              মর্ম 
                    দেবাশীষ তেওয়ারি

          এক মুঠো বিশ্রাম অবস্থান করে আছে সরলরেখায়
              সিঁথির থেকে বয়ে চলেছে অন্ধকারের দিকে
              আমি ধারাপাত আটকাতে জানি না
             জানি না শহরের সঠিক সর্বনাম
             এখান থেকে পৃথিবী অনেক দূর
             হারিকেন নিভিয়ে দিলে অন্ধকারের বাহুতে-
             ফাটা দাগ হু হু করে মাথা উঁচিয়ে হাসছে
             কিছুক্ষণ পর ছড়িয়ে যাবে শরীরের সমস্ত সীমানায়
            ঠোঁটের কোণে তখন ভিজতে থাকে বেনামি কাব্যেরা
            ছায়া গুলো মূর্তি হয়ে যাক
           সেভাবে আমি তলিয়ে যাব,ছায়াদের প্রতিযোগিতায়.....
           যেভাবে  কবরের কাছে সুখ রেখে যায় বিষণ্ণ মানুষ ।   

                         শুঁড়ি খানার কবিতা 
                     সনাতন মাজি (ময়না)

    মানুষের ডিম ভাজে আহারী টোলার পাশে,
   দোপাখা উনুনে জ্বলে চন্দন কাঠের গুঁড়ি।
   নষ্ট বীজ পাশাপাশি জাগে আলো ফুট্ -টু-
   ডুম্ , উহ‍্য থাকে জাহান্নাম উঁকি দেয় হাসাহাসি। গাছের যৌনাঙ্গ ফুল     খিলখিলায় রাতে, মুখে গোঁজা জললিঙ্গ
   ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচে।কবিতার খোঁজ করি
   শুঁড়িখানায় এসে , হো হো করে হাসে কবিতা শরম খুলে দেখায় ।


                                         ভ্যা অ ক্যা
                       জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
      প্রেম লিখতে পারে নি তাই প্রজাপতিটি
      অরসিকেষু রসস্য নিবেদনং...... বল খুব হেসেছিল পাখিদের                      চিৎকারেও বিছুটি
     কিছু কম ছিল না।ভ্যাবলাকান্তের দ্বিধাবিদ্ধ লজ্জা
     কনেদেখা আলোর সাথে ১০০ মিটার রেসে চ্যাম্পিয়ন
     এরপর কপালে কে যেন অবুঝকান্ত স্টিকার লাগায়।
     বেশ কটা তীক্ষ্ণ ভ্রূ তির হয়ে চাঁদমারি ছেঁড়ে।
     হাসি আঁকতে পারেনি বলে খুশিগঞ্জের ঘর ছেড়ে
    সে এখন রামগরুড়ের ভাড়াটিয়া।আকাশের দিকে
    তাকায় আর  খুশিমেঘ খোঁজে মেঘদূত কোন ছাড়
    হিমালয়ের মতো গম্ভীর কটি পর্বত কচ্ছপ হাঁটে।
    খোলা রোদে মেলানিন হাসে সে এখন কালো দুপাশে আগুন
     হিম টিম নেই ....... হাসিমুখ ডাকে।
     ফুল দেখে হাসি আঁকা হলো কিন্তু কেউ দেখে না
     তাই খুশিমুখ নাম দিল ক্যাবলাকান্ত।
    তাতে বেশ খানিক প্রশ্রয় লেগে।

                                 সংকট 
                        আব্দুস সালাম
       
                 সুন্দরী মাছরাঙাদের দেখে পরাণ জুড়ায়
                  শ‍্যাওলা মাখা জীবনে প্রেম স্বপ্ন দেখায়
                  উঁকি মারে উত্তাপহীন ক্ষয়াটে সময় 
                  আস্তিনে চাপা পড়ে আছে মেঘলা সন্দেহ
                  অপেক্ষা করে আছে কূটীল ভবিষ্যৎ

                          এক আকাশ নীল রং 
                                     কুনাল গোস্বামী

        আবারও কি ফিরে পাওয়া যায় কবিতা
           স্পর্শ করে প্রেমিকার কম্পিত ঠোঁট, পাঠিকার নরম হাত?
            যাক্ যা গেছে চলে
           এক আকাশ নীল রঙ শুধু থাক আমারই তবে।
           প্রেমরসে যে কবি খুঁজেছিলে তুমি
           সে কবি হারিয়ে গেছে গাঢ় অন্ধকারে ছায়াদের মতো
           উতফুল্ল জীবন স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারিনি বলে
          আজও আমার কবিতায় নিদ্রাহীন অশ্রুনদের নোনতা স্বাদ                           মেলে।
          হয়তো আরও কিছুটা বছর পর যখন ফিরে চাইব অতীত                            স্মৃতিগুচ্ছের দিকে
          তখন জীবনের সাদা ক্যানভাসে লিখে যাব আমার মৃত্যু                              চাই,মৃত্যু চাই,মৃত্যু চাই,
           আর চাই এক আকাশ নীল রঙ।

                              অণুগল্প
   
                                    স্বখাতসলিল
                                    মন্টু কুম্ভকার

ত কয়েকদিন বাড়িতে ছিলাম না । কুলুঙ্গিতে রাখা কড়াই টিতে বড্ড ধুলো জমেছে। আমার আবার কমরে অমানুষিক  কনকনানি । এদিকে বউ এর উঁচু গলা আমার মাথা ছাপিয়ে যায়। ধূলো ঝাড়বার ক্ষমতা আমার যেমন নেই ,তেমন চুপটি করে শুনি-দেখি-ভাবি আর নিজেকে হারানোর বাহানা খুঁজি। কখনো সহজ সরল লাইন বানাই : কবিতা।নিন্দুকের মুখ খুলতে শুরু করে।
বার বার অনুনয় করি-হে বিধাতা এক বালতি মৃত্যুই না হয় দাও মাথাটা চুবিয়ে শান্তি পাই!
আমার ক্ষীণ কন্ঠস্বর বুজে যায় বউ এর আঁচলায় । থমকে যাই।আর মৃত্যু নয় এক বালতি জল দিলে তাড়াতাড়ি ভাত টা ফুটিয়ে নিতাম।

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৯


                                 দীর্ঘ বিষাদ শেষে 
                         অনুপম চক্রবর্তী


                            দীর্ঘ বিষাদ শেষে পড়ে থাকে
                           পৃথিবীর শেষ আবাহন
                           রাত্রি নিবিড় হয়
                           আকাশে বিষ্ময়ের চাঁদ
                           চেয়ে থাকে পাড় ভাঙা দূরত্বের মত
                           দীর্ঘ বিকেল শেষে ঘুমের আলাপ
                           আঙুলে শ্রাবণ নামে
                           টুপটাপ আদরের গায়ে
                          পেরিয়ে বাঁকের পরে বাঁক
                           মুগ্ধতা খুঁজে যায়
                          কোন এক দীর্ঘ জীবনে । 


                                 ★ অনুপ্রবন্ধ 
                         কাঁটা তারে ঝুলে থাকা শব
                                        বৈদুর্য সরকার


দেশের সত্তরোর্ধ্ব স্বাধীনতার হাল হয়েছে পেনসন নাথাকা হাঁপানি ও বাতের ব্যাথায় ভোগা খিটখিটে বুড়ো-স্বরাজ বসুর মতো । যার স্ত্রী ভারতী, ছেঁড়া শাড়িতেসাক্ষাৎ ভারতমাতা । ছেলেরা কেউ বাইরে চাকরিকরছে, নকশাল টাইমে একজন মরেছে, কেউ পাড়ারদাদা হয়েছে, কলেজে পড়ার সময় বাড়ি ছেড়েপালানো বড় মেয়ে ডিভোর্স করে বাপের বাড়ি ফিরেএসেছে, আরেক মেয়ে প্রতিবন্ধী – বাইরে বেরোতেপারে না । মানে, যাকে বলে – একদম সুখের সংসার। তবে ভারতমাতার এই সংসারে বাজারে কিছু ধারজমে যাওয়া সত্ত্বেও কোনও রোববার দুপুরে খাসিরমাংসের খুসবু বেরোয়, পুজোয় সবার নতুন জামা হয়,ছাদ দিয়ে বর্ষায় কয়েক ফোঁটা করে জল পড়লেওইলিশ ভাজার গন্ধও পাওয়া যায় এক আধদিন। শীতেরসন্ধেয় ছাদের টবে ফোঁটা বেলফুলের গন্ধ হাওয়ায়ভাসে বেশ । ভারতীর বন্ধু পাশের পাড়ার হাসিনাঈদের দিন সিমুই দিয়ে যায় ।  নাতি নাতনিরাক্রিসমাসের ছুটিতে এসে টুপি আর কেক নিয়েহুটোপাটি করে । সব মিলিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছে দিন ।            
                       ★
চালু ধারণা, ভারতে মানবসভ্যতার ইতিহাস ( সিন্ধুসভ্যতাকে প্রামাণ্য ধরলে ) পাঁচ হাজার বছর ।  এতবছরেও ভারতবাসী সঠিক বুঝে উঠতে পারলো না –তারা আর্য নাকি অনার্য অথবা মঙ্গোল কিংবাককেশীয় । ভারতে এত বছরে এতরকম আক্রমণ এতরাজার রাজত্ব এসেছে – আসল পরিচয়টাই মুছে গেছে। এত লোকের পূর্বপুরুষ কে যে কোথা থেকে এসেছিলকোনও হদিস নেই ! তাই সাড়ে বত্রিশ ভাজার মতোশুধু টিকে আছে একটাই পরিচয় – ইণ্ডিয়ান । যদিওজানা গেল – আজও সবার নাম নথিভুক্ত নয় ।
                       ★
মাধ্যমিক পরীক্ষায় ম্যাপ পয়েন্টিংয়ে যে ম্যাপ দেওয়াহতো – তার অনেকটাই কল্পিত । লজ্জায় মাথা কাটাগেছে – একদিকের অংশ পাকিস্তান অধিকৃত আজাদকাশ্মীর, আরেকদিকে অক্ষয় চীন । সেখানে এখনপ্রতিবেশী দেশের সেনাবাহিনী মোচ্ছব করছে ।অরুণাচল সীমান্তও অরক্ষিত প্রায় – যে কোনও সময়েক্ষমতাসম্পন্ন চীনের হানাদাররা ধেয়ে আসতে পারে ।তিব্বত নিয়েও দীর্ঘদিনের মন কষাকষি । কাশ্মীরেরঅবস্থা প্যালেস্তাইনের মতো – গুলি থামে না । জম্মুই সম্ভবত ম্যাপের ওপর দিকের সেই প্রান্ত যেখানেনির্বিঘ্নে স্বাধীন ভারতের তেরঙা উড়বে পতপত করে ।যদিও এককালে এখান থেকে যে সব পণ্ডিতরা হারিয়েগেছিল, তাদের কোনও খোঁজ মেলেনি  আজও ।
                       ★
স্বাধীনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন সংগঠনবিভিন্নরকম পতাকা ব্যবহার করলেও ১৯৪৭-র ২২জুলাই থেকে অন্ধ্রের পিঙ্গালি ভেঙ্কইয়ার ডিসাইন করাত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা ব্যবহৃত হচ্ছে । স্বাধীনতাকি প্রকৃত অর্থেই ত্রিবর্ণরঞ্জিত নাকি স্বাধীনতার রংসশস্ত্র বিপ্লবীদের রক্তের মতো লাল অথবা বর্ডারপেরোনো মানুষর মতো পাংশু কিংবা কারাগারেরঅন্ধকারের মতো কালো – সে উত্তর জানতে পারিনিএখনও । লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনেরসময় জঙ্গী হামলার খবর যে ভেসে আসবে না – তাইবা কে বলতে পারে ! কেউ কি বলতে পারে সার্বভৌমরাষ্ট্রের ধারণা নস্যাৎ করে – আঞ্চলিক ম্যাপগুলোক্রমাগত বদলে চলেছে কাদের উস্কানিতে !সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বেশ গালভরা একটা কথাহলেও – তা থেকে গেছে বিজ্ঞাপনী প্রচারের মতো ।যেগুলো নিয়মমাফিক প্রচারিত হয় – কেউ বিশেষকান দেয় না । ভারতে সেক্যুলার গপ্পো নিয়ে রাজনীতিকরে একদল, আরেকদল তার উল্টো কথা বলে লোকখ্যাপায় ।
                       ★
ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ার আগে ভারত কখনও সমষ্টি হিসেবেথাকেনি, বেঁচে ছিল অনৈক্য এবং আঞ্চলিকতায় ।মধ্যযুগে মোগল সুলতানরা, খিলজি-লোধি কেউইপারেনি গোটা ভারত একযোগে শাসন করতে । তারআগে মৌর্য গুপ্ত কুষান যুগেও হয়নি সের’মসম্প্রসারণ । স্বাধীনতা এসেছিল যেহেতু দেশভাগেরপরিণতির মাধ্যমে এবং তা মূলত ধর্মের ওপর ভিত্তিকরে, তাই ধর্মের অনুশাসনগুলো নিয়ে আজকেরবিজ্ঞান প্রযুক্তির এতরকম অগ্রগতির পরেও দেশেরঅধিকাংশ মানুষ ভীষণ ভাবিত । ইতিহাস অনুযায়ীপাঞ্জাব ও বাংলার কিছু অংশ স্বাধীনতার সময়অদলবদল হয়েছিল। হায়দ্রাবাদের নিজাম পাকিস্তানেযেতে চেয়েছিল কিন্তু ওখানকার বেশীরভাগ মানুষছিল হিন্দু। আবার কাশ্মীরে উল্টো ব্যাপার । রাজাহিন্দু কিন্তু প্রজারা মুসলমান । পুরোপুরি কনফিউজিংঅবস্থায় র‍্যাডক্লিফের আগোছালো ম্যাপ অনুযায়ীতাড়াহুড়ো করে দেশভাগ করে কংগ্রেস ও মুসলিমলীগের নেতারা গদিতে বসে পড়ে । যার জের এখনওচলছে – হয়তো যতদিন উপমহাদেশে সভ্যতা থাকবে,ততদিন ভাঙন ধরা এককালের যৌথ পরিবারের মতোখিটমিটি লেগেই থাকবে।
                       ★
পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতসক্রিয় থেকেছিল – রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক যেকারণেই হোক । ফলে এই দেশে আশ্রয় দিতে হয়েছেঘর হারানো কোটি মানুষকে । ১৯৭১ থেকে আসামানুষের স্রোত এখনও অব্যাহত – ওদিক থেকেএদিকে । শোনা যায় একই কায়দায় বাংলাদেশ থেকেকলকাতা হয়ে জঙ্গিদেরও অনুপ্রবেশ ঘটছে । যদিওনাকি তারা সেফ করিডর হিসেবে ব্যবহার করারসুবিধের জন্যই কলকাতায় বিশেষ হাঙ্গামা করে না । 
এই অনুপ্রবেশকে আটকাতে – তৈরি হওয়া অসমেরখসড়া জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিতর্ক চলছে,অরুণাচল নিয়েও একই সংকট । ঘরহারাদের মাথাগোঁজার ঠাই যেমন একটা সেন্টিমেন্ট, ভূমিপুত্রদেরজীবন জীবিকা সংক্রান্ত সমস্যাও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ ।তাই তর্কের কোনও শেষ হয় না । বৃহত্তম গণতন্ত্রেসম্ভবত ভোটারের সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে – কয়েককোটি মানুষের সঠিক পরিচয় জানা গেল না আজও।এটাও জানা গেল না – আনুমানিক আরও কত বছরসংরক্ষণ চালু থাকলে অনগ্রসর মানুষেরা দেশেরমুলস্রোতে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব ।

                                     অণুগল্প 

                           ব্রেক আপের পরের পৃষ্টা
                              অনুপকুমার সরকার

প্যাচপ্যাচেভেজা আঁখি পল্লব জোড়ায় শ্রাবণের ধারা বেয়ে চলেছে । মায়ের ডাক শুনে দ্যুতি হকচকিয়ে কোনমতে চোখ মুছে বলল, কী মা ? তোর বাবাকে একবার ফোন করে দেখ তো কোথায় আছে, এতো দেরি হওয়ার তো কথা নয় । যা গরম পড়েছে আজকে । হ্যাঁ মা করছি দাড়াও একটু । সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে তাদের সম্পর্কের । নীলাদ্রি রোজ ফোন করেই যায় ব্রেক আপ হওয়া সত্ত্বেও । জোড়া তালি দিয়ে হলেও সম্পর্কটা রক্ষা করতে চেয়েছিল নীলাদ্রি । সম্পর্কের টানাপোড়েন নয়, কবেই যে ইতি ঘটেছে সেসব ঠাওর করতে পারছে না । বর্ষাকালীন সময়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা কোনো কোনো নদীও একসময়ে শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিনত হয়ে যায় । মাঝে মাঝে মনে হয়, আদৌ কি এখান দিয়ে কোনো নদী বয়ে গেছে । নীলাদ্রি সাথে দ্যুতির সম্পর্কটাও ঠিক ঐ রকম বর্তমানে ।
দ্যুতি মোটেও হতে চায় না অতীত কাহিনীর গল্পের লাইন । সম্পর্কের অবনতি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে । দিন দিন দ্যুতি ঠিক কেমনই যেন হয়ে যাচ্ছে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না । মেয়েটা কম কথা বলে, ঐ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মুখ হাত ধুয়ে জানালার গ্রিল ধরে বসে থাকে । দ্যুতির দুঃখের গাঙ অনেক গভীর । দেখে ঠাওর করার উপায় নাই । বেশ কয়েক দিন ধরেই মা বাবার সাথেও ব্যবহার ঠিক হচ্ছে না, সেটাও উপলব্ধি করতে পারছে দ্যুতি । রাতেও ঠিক সময়ে ঘুমায় না । দিন দিন শরীরের যে কি হাল হচ্ছে, দেখে মনে হয় খুবই অসুস্থ মেয়েটা । রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন জানালার গ্রিল ধরে আঁধফালি বাকা চাঁদকে গোলাকার হতে দেখেছে । আবার পুনরায় গোলাকার চাঁদকে কমতে কমতে সেই আঁধফালি হতে দেখেছে । আর তখন তার নিজের জীবনের গল্প গুলো আর খুনসুটি দেয় না হৃদয়ের জঞ্জালযুক্ত আঙিনায় । রোজ রাতে তার অতীত বৃতান্তের কাছে ধর্ষিতা হয় দ্যুতি । তাকে কামড়ে জখম করে ছিঁড়ে খায় । তখন দ্যুতি একা একাই মিট মিট করে হাসে । একা একাই কত কথকতা কয় । সন্ধ্যার জানালায় দ্যুতি খুঁজে পায় জোনাকির মিট মিটে আলো আর সঙ্গে ঝি ঝি পোকার কলরব । দ্যুতি কেমনই যেন দিন দিন প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার ঘেরার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে । পূর্ণিমার জ্যোৎস্না জানালার গ্রিল ভেঙে যখন বিছানায় আসে দ্যুতি সেই জ্যোৎস্নার আলোর সাথে খুনসুটি করে । আবার অমাবস্যার কালো অন্ধকারেও একটা জোনাকির মৃদু আলো সমস্ত ঘরকে আলোকিত করে দিয়ে যায় ।

রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৯




                                   ★সূচিপত্র★
কবিতা:-
                       সুপ্রীতি বর্মন,রীতা রায়,রমলা মুখার্জী,চিরঞ্জিত                                   ভান্ডারী,শম্পা বিশ্বাস,বিমল মন্ডল,আব্দুর                                          রহমান,পারমিতা ভট্টাচার্য্য,অভিজিৎ দাশগুপ্ত,
                      অনুপম পাঠক
প্রবন্ধ:-
                       শাবলু শাহাবউদ্দিন

অনুগল্প:-
                      রাণা চ্যাটার্জী,কৃপাণ মৈত্র,আনজারুল,সিদ্ধার্থ সিংহ।
                         এ মাসের কবি
                    কুনাল গোস্বামী
 জন্ম:- ২২শে এপ্রিল ১৯৯৩,
বাসস্থান:- আমতলা(দক্ষিণ ২৪ পরগনা)
পেশা:- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। 
প্রথম লেখা প্রকাশ 'অক্ষর সংলাপ পত্রিকায়'
বিভিন্ন পত্রিকা এবং ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় তার কবিতা।
উল্লেখযোগ্য - অক্ষর সংলাপ,শব্দসাঁকো,শব্দসিঁড়ি,
কচিপাতা,কবিতাকুটির,টার্মিনাস পত্রিকা প্রভৃতি। 
এছাড়াও সোনারপুর আত্মীয়সভা  এবং শব্দসিঁড়ি পত্রিকার তরফ থেকে "কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য" সাহিত্য সম্মানে সম্মানিত হয়েছি।

বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্য মনে প্রাণে ভালোবাসি,আর এই ভালোবাসা থেকেই আমার লেখালেখির পথের সূচনা।

কবিতাগুচ্ছ:- বনধ্ মুঠঠিমে দুনিয়া
                                   সুপ্রীতি বর্মন

                                          (১)
ছয়লাপ পদ্যের চূর্ন অক্ষরে কথার বাঁকে চুরমার ঐকান্তিক প্রেমালাপ।
পিছছুট অতীত এখন হাতের মুঠোয় প্রজন্মের সাবলীল হাঁটাহাটি।
আত্মসর্বস্ব নিজেতে বিভোর ছোট্ট দুনিয়া,অন্তরঙ্গ মুহূর্ত প্রিয়া তোমার আমার
সেলফির স্বর্ণালী মুহূর্তের বিবশ ছবিটি সাক্ষী রেখে মনের ঘরে খিল আঁটি।।
আইবুড়ো গন্ধে চুইংগাম কর্ণলতিতে প্রিয়ার সহবাস যাপন ক্ষুধায় দিনরাত্রি।
দিনরাত কাঙালীপনা হাবিজাবি শুনতে থেকে উন্মুখ সোহাগ উসপার,,,
নিদ্রাহীন ঘোরলাগা চোখে অনিন্দ্য পুরুষ জোনাক সাক্ষী, কলকল ইচ্ছানদীর অনুরণনে,,,
ইচ্ছার পবিত্র আঁচে নরম শরীরের গন্ধে অজানা দৌড় আখমিচালী।।
বিন্দুর মধ্যে সিন্ধু ঝটকা মারে মাসমাইনের সঞ্চিত অর্থে রিচার্জ হেল্পলাইন টকটাইম।।
পুনঃপুনঃ যান্ত্রিক বৈকল্য মাথার মধ্যে অসমাপ্ত ভিটের দেনার ফাঁদ অবাধ্য স্নায়ু
দুঃশ্চিন্তার আগরবাতি তখন পুড়ে খাক আমরণ যেন যৌবন প্রাপ্তি বিনা গাঁটছড়া।। 

                                        (২)

ফ্যায়দা নিচ্ছি পেগে ভ্রান্ত হয়ে সিগারেট বিবি তোমাকে ওষ্ঠে গুঁজে ব্যাচেলর আমি,,, 
একহাতে স্টিয়ারিং আর কানে ক্যানভাসের নৈঃশব্দ্য শিখার প্রতিচ্ছবির আঘাজ বাণী(হিন্দী শব্দ) 
জ্ঞানহীন তখন বৃন্দাবন অন্যমনস্কতার ক্ষতবিক্ষত, রূক্ষ আমন্ত্রনলিপি,,,
দিন প্রতিদিন দুর্ঘটনা, শ্বাসরুদ্ধ এখন আইনি কার্যকলাপ, 
প্যাঁচালো অজগর,গুহ্য অভ্যন্তরে প্রমাদ কি হয় কি হয়
আইনি লাইসেন্স ছাড়া পগার পার কি করে হবে, 
যাবজ্জীবন কারাদন্ডে হবে নিরুদ্দেশ।
তাই সাবধান হে পথিক সাবধান
কামমুগ্ধ চোখে হেরো আপন ঘরনী
কিন্তু জলছোঁয়া সিঁড়িটি ব্যতিরেকে
দ্রিমি দ্রিমি দিনে দুপুরে মাদলের বোল, বক্ষবন্ধনীর সুরে রিংটোন
ঝুড়ি ঝুড়ি বস্তাপচা সিডি ও ডিভিডি এখন,
আটপৌরে শাড়ি কন্যাকুমারী বাক্সবন্দী।।

 জাগরী
রমলা মুখার্জী
জীবনে অনেক সুখ তো পেয়েছো,
একটু না হয় দুখেতে সাজল;
হৃদয়ে অনেক সুর তো তুলেছো,
একটু না হয় বেসুর বাজল।
জীবন অনেক আলোতে ভরেছো,
একটু না হয় আঁধার মাখল,
মনে-বনে শত ফুল তো ফুটেছে,
 একটু না হয় কাঁটাই থাকল!
 জীবন অনেক গড়ার পরেতে
একটু না হয় ভেঙেই পড়ল,
জীবনের চড়াই-উৎড়াই মাঝে
মুখের থেকে মুখোশ সরল।
জীবন অনেক হাসিতে ভরেছো
একটু না হয় কান্না থাকল,
কান্না-হাসির দোল-দোলাতেই
জীবন পথের পথিক জাগল।


                     অষ্টরম্ভা
                                রিতা রায়
      দুদণ্ড তিষ্টতে না দেয় দন্ডভেদে অপগণ্ডের দল,
      খন্ড খন্ড দোর্দন্ড উগ্রতেজে পন্ড এর ছল
      ষন্ডমার্ক গন্ডা গন্ডা
                              ভন্ডমার্কা অষ্টরম্ভা
       অন্ড এর মন্ড গান্ডেপিন্ডে, বাড়ে স্কন্ধের বল |

প্রতিষেধক
চিরঞ্জিত ভান্ডারী

খামটি মেরে ঝোপের ভেতর দুর্বিনীত কৌশল
অন্তরাল থেকে তীক্ষ্ণ তীরে
পলকে করে লক্ষ্যভেদ।
নির্মম ক্ষত দাগে উপশম লাগাই
বিস্মৃতির তলে বিসর্জন দি যন্ত্রণার ইতিহাস।
বুক সহনশীলা নদী হলেও
কতক্ষণ বা বইতে পারে কলার মান্দাস!
ক্ষতদাগ ঘাসের মত বাড়ে তির তির
ক্যানসারের প্রতিরোধ ছাড়া
প্রতিষেধক নেই।






বোহেমিয়ান

শম্পা বিশ্বাস
বোহেমিয়ান ছুটে বেড়ায়
দিগন্তের দিকে একটি কুঁড়ে ঘর
মাত্র দুটি বাহু সম্বল তার
তার ভেতরে ধরে যায়
একগ্লাস ঠান্ডাজল ঠান্ডাজল
আকন্ঠ জুড়িয়ে যায়
আতর যে অাছে তারও
তাতে খুব ধুলো ততদিনে 
ঝেড়ে দিলে খুসবু ছড়াবে দিনেদিনে
খুসবু রঙের ফুল
বাগিচায় কতো কিছু করছে ভ্রমণ
জীবন - জীবনগুল 
আকাশ রাগ দেখালে চাতক হবে জল
আকাশে দশহরা 
পৃথিবী ভর্তি তখন
তার মাথায় দুর্লভ নাগমণি       ।



   অন্ধকারে তুমি
  
   বিমল মণ্ডল

অন্ধকারে ঠিক  চিনতে পারিনি  তোমায়
যা আমার  শরীরের সমস্ত  রঙ শুষেনিয়েছিলে
আমি তোমার শরীরের ক্ষত বুঝতে  পারিনি
শুধু  সংগ্রহ  করেছি ভালোবাসা
তোমায় চিনতে পারিনি  অন্ধকারে
তুমিও  চিনতে পারোনি   আমাকে
কেননা গাছেরা   চিনেছে  আমাকে
অন্ধকারে  তুমি আমায় ফেলে  যেওনা
আমি তোমাকে ঘিরে নতুন আলোতে  বিভোর
অন্ধকারে তুমি  আমায় চিনে নাও। 

                               বৃষ্টি ভেজা পাতা
    
                                   আব্দুর রহমান


                         বৃষ্টি ভেজা পাতা থেকে ঝরে পড়ে
                        জীবনের টুকরো টুকরো ছবি
                       হৃদয়ে থাকা বিবশ ছবিরা
                       ঝরে পড়ে হারিয়ে ইচ্ছার ফোঁটা মৃত্যু
                      আজ‌ও আকাশে মেঘ তারা
                       অনেক অনেক পথ বেয়ে
                      রেখেছে জীবনের ছায়াপথের ফসিল
                      বৃষ্টি চূর্ণ ফোঁটারা হৃদয় যেন ভাঙা কুচি
                     বৃষ্টি ধোয়া স্নাত মন তবুও
                    একটা আবেশ নতুন দেখার ইচ্ছা
                    জন্ম দেয়
                    আকাশের নব নির্মাণের ছায়াবৃত্তে
তফাৎ যাও
                            পারমিতা ভট্টাচার্য্য

             তর্জনী তুলো না তুমি,ওটা তোমায় মানায় না।
            ঐ আঙ্গুলে গাঢ় ট্রিগারের দাগ,
            মনের দগদগে ঘা কে আরও খুঁচিয়ে তোলে।
           পুঁজ - রক্ত মাখা দুঃসময়,
           বায়বীয় স্মৃতি হয়ে চেপে ধরে
          আমার কলার,একটা অদৃশ্য তর্জনী
          তখন মসকরা করে আমার অস্তিত্ব নিয়ে।
          পাশবিক হাত আজ বয়ে নিয়ে চলে
          জাতির পতাকা,শূন্য দৃষ্টিতে ,
         কানে আসে শুধুই সাইরেনের উদ্ধত আওয়াজ
         যেন হুঁশিয়ারি দেয় একটাই.......
         "তফাৎ যাও,তফাৎ যাও।"

সাড়ে তিন হাত জমি

সহানুভূতি কাম্য ছিল না কখনোই,
অনুভূতিরা তাই সূক্ষ্ম আচ্ছাদন
ভেদ করে,স্ফুলিঙ্গের মত প্রকাশিত হতে চায়।
জীবনে হিসেবী হতেই হবে তার কোনো মানে নেই,
দুয়ে - দুয়ে চার যদি নাই হয়!!
তবে কি স্তব্ধ হয়ে যাবে জীবনের গতি?
হিসেবেও ভুল হয় মাঝে মাঝে
একটু বেহিসেবী হলে ক্ষতি কী?
সারা জীবন জুড়ে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকে হিসেবী দস্তখত,
কিন্তু আমাদের বরাদ্দ জমি তো সেই, সাড়ে তিন হাত।

                                প্রতিশোধ          
                     অভিজিৎ দাশগুপ্ত


এই যে মাটি থেকে উপড়ে নিচ্ছ অসহায়,
অপ্রতিবাদী শিকড়গুলোকে অনায়াসে,
মাটিতে কান পাতো শুনতে পারবে অব্যক্ত পাথর যন্ত্রণা।
একদিন আসবে
যেদিন শিকড়গুলো মাটি ছেড়ে তোমার বুকে প্রতিবাদী ঘর বাঁধবে।
তোমার রক্তে, শিরা উপশিরায়, মজ্জায়,
হাড় মাংসে টের পাবে প্রাগৈতিহাসিক অরণ্য নৈঃশব্দ্যযাপন।।

                            
                                       প্রত্যাশা.....

                                  অনুপম পাঠক


যদিও আমি বলে যাই,  আমার এই প্রেমিক হৃদয়' -
তোমাকে ফুলের দেশের নিয়ে যাব বলেছিল, একদিন ...
তবুও,  কি পেয়েছ আমায় ভালবেসে ?
শুধু পরিচয় টুকু পেয়ে মায়ায় জড়িয়েছ নিজেকে
                               - প্রতিশ্রুতি আর মিথ্যে বাগদানে।
জানি, একদিন তুমি সংসারই প্রত্যাশা করেছিলে
যার চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারিনি বলে,
মৃত কঙ্কালে সঞ্জিবনী 
                               - আজও জমিয়ে রেখেছ অক্ষত ভাবে।
যে গভীর রাস্তা তুমি খুঁজে চলেছ
সেই রাস্তার প্রাণে কত জন্মের যন্ত্রণা
লেখা আছে তোমার পথিকৃত ইতিহাসে ।



                                      -: অনুগল্প :-  

                                    
আইটেম বোম
                                     সিদ্ধার্থ সিংহ

হিন্দি সিনেমার আইটেম গার্ল। একেবারে ঝাক্কাস মেয়ে। ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বেরোচ্ছেন। সুইজারল্যান্ডের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়ামে তাঁর শো। লাইফ  টেলিকাস্ট হবে চ্যানেল টু চ্যানেল। সারা পৃথিবী জুড়ে। তবু টিকিটের জন্য দাঙ্গা বেঁধে গেছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ওই দিনের জন্য স্পেশাল ফ্লাইট দিচ্ছে। লোকে বলে, ডাক্তাররা নাকি এখন আর কাউকে ভায়াগ্রা প্রেসক্রাইব করেন না। বলেন, ওঁর নাচ দেখুন, তা হলেই হবে।
সব ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা হল, ওই শোয়ে কী পরবেন তিনি! এমন পোশাক চাই, যাতে তাঁর সমস্ত রেকর্ড ব্রেক করে যায়। উনি কল করলেন পৃথিবীখ্যাত এক ডিজাইনারকে। একটা ছোট্ট লেডিজ রুমাল দিয়ে বললেন, আমাকে এটা ড্রেস বানিয়ে দিন।
ডিজাইনার গালে হাত দিয়ে বসে পড়লেন। ভাবছেন আর ভাবছেন। মনে মনে কত কিছু কাট-ছাঁট করছেন। তাঁকে অত চিন্তাভাবনা করতে দেখে আইটেম গার্ল বললেন, কী হল? এতে হবে না?
ডিজাইনার বললেন, না না, হবে না কেন? হবে হবে। আমি ভাবছি, যে কাপড়টা বাঁচবে, সেটা দিয়ে কী বানাব!
                                      -:অনুগল্প:-
                        
                         দুই প্রকৃতি
                        কৃপান মিত্র
                 
   
 রথিনবাবু কোমায় পড়েছিলেন প্রায় দুবছর।
যখন জ্ঞান হল  কাউকেও চিনতে পারেন না।
ঘোলা চোখে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ ঘুরিয়ে নেন। রথিনবাবুর স্ত্রী এক একজনকে কাছে এনে পরিচয় করিয়ে দেন।ঘোলা চোখের কোণ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
       রথিনবাবুর ভরা সংসার।স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে সায়না। মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক কর্য হয়েছিল তাঁর ।বসতবাটি টাও বন্ধক রাখতে হয়েছিল। এই সমস্ত চিন্তা দিনের চব্বিশ ঘন্টা তাকে কুরে কুরে খেত ।
     একদিন বাথরুমে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলেন তিনি। সেই থেকে কোমায়। রথীনবাবু ঘোলা চোখে তাঁর ঘরটা দেখছেন ।দেখছেন জানালার ফাঁক থেকে বাইরের প্রকৃতিকে। লেংটা গাছে কচি পাতা ধরেছে ।মাচায় লাউ ফুল দেখা যাচ্ছে ।গাঁদা ফুলের আভিজাত্য তখনও অমলিন।শালিকের ঝগড়া কান না পাতলেও দিব্যি শোনা যাচ্ছে।বসন্তদূত একটানা
ডেকেই চলেছে। সময়টা তাহলে কিছু নয়।
      রথীন বাবু ঘাড় তুলে ওঠার চেষ্টা করলে তার স্ত্রী তাকে যত্ন করে ডবল পাশ বালিশে বসালেন।           রথিনবাবু ভাল করে বাইরটা দেখে বললেন ,তাহলে কিছুই বদলায়নি । দুই প্রকৃতি এক ডোরে বাঁধা।
       বাকি কথাটা বলতে পারলেন না তিনি।তাঁর চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গাল গড়িয়ে নিচে পড়লো।
                                       -:অনুগল্প:-

                        স্কুল আমার প্রথম দিন
                               আনজারুল মোল্লা  


আমি যখন শিশু , মায়ের কোল ছেড়ে একদিন দিদিমনির কাছে গেলাম শিশু শ্রেণীতে পড়ার জন্য। সেদিন মনে ছিল ভীষণ ভয়। কি যেন মনে হচ্ছিল !দিদিমণি আমাকে বকবেন নাকি মারবেন এইসব ভাবনা।কিন্তু আমি যখন শিশু শ্রেণী বা আই সি ডি এস ই পড়তে গেলাম দিদিমণি কত সুন্দর ভাবে আমাদের ছড়া বললেন শিখালেন পোড়ালেন। আমাদের কে আদর করে বোঝালেন সেদিন আর কোন ভয় ছিল না।
       দিদিমণি আমাদের সাথে নাচতে লাগলো আর ছড়া বলতে লাগলো আমি কি যে খুশি হলাম তখন ভয় কোন দিকে চলে গেল। বাড়িতে এসে মাকে বললাম খুব খুশি হয়ে আমার এই কথা শুনে মা খুবই খুশি হলেন। তখন থেকে আমি আর কোন দিন স্কুলে যেতে ভয় করতাম না ভয় জিনিস ছিল না আমার মনের মধ্যে শুধুমাত্র ছিল দিদিমনির প্রতি আর স্কুলের প্রতি আমার ভালোবাসা ফুর্তি আনন্দ। শুধু হৃদয় জুড়ে ছিল আনন্দ আর আনন্দ। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলা করতাম। সে ছিল বড় সুখের দিন।
    ক্রমে ছয় বছর ছাড়িয়ে গেলাম। এবার ভর্তি হলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রথম দিনে ভীতু ভীতু অবস্থায় স্কুলে গেলাম। মাস্টার মশাই ক্লাসে ঢুকলেন এবং আমাদেরকে পোড়াতে লাগলেন। আমরা মাস্টার মশাই এর সাথে পড়তে লাগলাম। আমাকে পড়া জিজ্ঞাসা করলেন মাস্টার মশাই আমি চট করে বলে ফেললাম। মাস্টারমশাই খুশি হয়ে আমার মাথায় হাত বুলালেন আর বললেন খুব ভালো করে পড়াশোনা করো অবশ্যই একদিন তুমি ভালো হবে। সেই কথা আমার আজও মনে আছে।
                                      -:অনুগল্প:-

                         একাকীত্ব
                      রানা চ্যাটার্জী
                    
একাকীত্ব আজ প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে আপন মহিমায় বিরাজমান । আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে ঘুণপোকার বাসার  মতোই অন্যতম  সঙ্গী হয়ে উঠেছে একাকীত্ব। ব্যস্ত জীবনে বেড়েছে মোলাকাৎ, হই হুল্লোড় , গেট টুগেদার তবুও একাকীত্বের নখর আঁচড় বসাচ্ছে,গহন মনে, বাহ্যিক আচরণে । 
আপনজনের সাথেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে সংসার জীবন তবু যেনো একটা শূন্যতা ।বড্ড ব্যস্ত জীবনে একাকীত্বের চতুর থাবা । একাকীত্বকে নির্মূল করতে,  আমরা নিজেদের ব্যস্ত রাখার শত শত চেস্টাও  করি, একাকীত্বের অন্যতম দোসর অবসাদ কে ভুলতে কতো রকম ভাবে নিজেদের  ব্যস্ত রাখার প্রচেস্টা । যে ছেলে বা মেয়েটি সারাদিনের ব্যস্ততা, পড়াশোনা কিংবা কর্মক্ষেত্রের চাপের মধ্যে মুখ গুঁজে কাজ করে চলেছে , কত দেশ বিদেশের মানুষের সাথে ইন্টারনেটে কথোপোথন । কিন্তু  যে মুহূর্তে সে একদম একাকী হয়ে নিজের সঙ্গ দেয় , অল্পেই অধৈর্য্য হয়ে ওঠে , সময় কাটতে চায়না,চিন্তা কেড়ে নেয় ঘুম ,এক রাশ অবসন্নতার পাহাড় জমে।
 একঘেঁয়েমি জীবনে মানিয়ে চলতে চলতে কখন যে, আমরা রোবট হয়ে পড়ি খেয়াল থাকে না । পুতুল দের মতো আচার আচরণ করি এই বিরাট পৃথিবীর নাট্য মঞ্চে । আমরা স্রোতে ভেসে ভেসে চলছি , পরিমিত হাসি , পরিমিত খাওয়া ,অভ্যাসে রপ্ত মানব কুলের দৈনন্দিন জীবন ধারণ একাকীত্বের ভেলায় চড়ে । 
কত হারিয়ে গেছে সে সব খেলা , পিঠের ভারী ব্যাগ আর ইস্কুলের দৈত্যাকার সিলেবাসের কল্যাণে । জানালার গরাদ ধরে জুল জুল চোখে বাচ্ছা , ফ্লাটের খাঁচা বারান্দা থেকে নিজের লোক জন , গাড়ির গতিময়তা নচেৎ টেলিভিশনে সিনচেন , নবিতা , মোটু পাতলুর চওড়া  মুখের হাসি দেখে বড়ো হয় আর ফাঁকা হলেই একাকীত্বের পিঠে সওয়ার । 
আগে যৌথ পরিবারে হই হই করে খেলা , পড়াশোনা ,যৌথ কাজকর্মে কি সুন্দর দিন গুলো কাটতো,  ছেলে মেয়েগুলো মানুষ হয়ে যেতো ঘরের মানুষদের ওপর ভরসা করে ,কোলে পিঠে চড়ে ! এখন পরিস্থিতি অনেক আলাদা । উপার্জন বেশি তবু এক সন্তান মানুষ করতেই দিশেহারা অভিভাবকগণ,তাই একাকিত্বই সঙ্গী।
                                  প্রবন্ধ
             ইংরেজি সাহিত্য ও নষ্ট কথা

                              শাবলু শাহাবউদ্দিন


বে কিছু বছর হল ইংরেজি সাহিত্যের লেকচারার কিংবা অধ্যাপকদের উপর বিভিন্ন অভিযোগ আনা হচ্ছে । তাদের বিভিন্ন চাপের মুখে ফেলে নানা রকম হেনস্থা করা হচ্ছে । এমন কী হত্যা পর্যন্ত করা হচ্ছে । এই তো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম স্যারকে হত্যা করা হল , তিনি নাকি নাস্তিক ছিলেন বলে । আসলেই কি তিনি নাস্তিক ছিলেন নাকি অন্য কিছু হাছিল করার উদ্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?  এটা সবার জানবার কথা । এই কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ স্যারকে ( বর্তমান উইএসটি এর ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা) গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছিল । কিন্তু কেন ? প্রশ্ন টা সবার মনে আসার কথা । আমারও এসেছিল । পেপার পত্রিকা পড়ে বুঝতে পারলাম যে , অধ্যাপক সাহেব নাকি ক্লাস রুমে নষ্ট কথা বলতেন । নষ্ট কথা বলতে বুঝানো হয়েছে যৌনতা কিংবা সেক্স বিষয়ক কথা । 
এইবার বলি , বলুন কেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক কিংবা লেকচারার Sexual কথা বলেন ? নিশ্চয়ই কোন কারন আছে ! ধরুন আপনি চিনি খাচ্ছেন , আগে কখনও মধু পান করেন নি, তাহলে কি চিনি  খেয়ে মধুর স্বাদ বর্ণনা করতে পারবেন কিংবা মধুর গুণ কী বুঝতে পারবেন । কিংবা ধরুন আপনাকে সরিষার তেল খেতে দেওয়া হলো এবং বলা হলো যে বলুন মধুর স্বাদ কেমন ? যদি আগে কখন মধু না খেয়ে থাকেন তাহলে কি মধুর স্বাদ সম্পর্কে কিছু বলতে কিংবা  লেখতে পারবেন ? উত্তরে হয় তো আশা করি না বলবেন ।
ঠিক এমনই, ইংরেজি সাহিত্যে যেখানে মধু আছে সেখানে মধুর স্বাদ বর্ণনা করতে হয় কিংবা যেখানে চিনির স্বাদ আছে সেখানে চিনির স্বাদ বর্ণনা করতে হয় । আবার যেখানে সরিষার তেলের স্বাদ আছে সেখানে সরিষার তেলের স্বাদ বর্ণনা করতে হয় ।কারণ, ছাত্রছাত্রীদের সঠিক জ্ঞান দান করা একজন শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব । তারা যদি ভ্রান্ত জ্ঞান দান করেন , তাহলে নতুন প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে পতিত হবে । তাই তো বলা হয়, শিক্ষক জাতি গড়ার কারিগর ।
কোন শিক্ষক যদি সফোক্লিস এর নাটক ঈদিপাস রেক্স পড়ান , তিনি অবশ্যই বর্ণনা করবেন মায়ের সাথে ছেলের বিয়ে এবং তাদের Sexual জীবন কাহিনী । যে শিক্ষক বর্ণনা করবেন তিনি তখন আপনার (কঠোরপন্থীদের) কাছে নিশ্চয়ই নাস্তিক রূপে আত্মপ্রকাশ পাবে । আসলে কী তাই ? ঐ শিক্ষক কী নাস্তিক নাকি চরম সত্য প্রকাশ করছে । আমি ঐ সকাল কঠোরপন্থীদের বলতে চাই যে আপনারা পতিতাবৃত্তি মহিলাদের নিয়ে গবেষণা করুন,  এমণ হাজারও ঘটনা স্বাক্ষ্য পাবেন । যেখানে মা ও ছেলে জীবনের অজান্তে নষ্ট কাজ (সেক্স) করছে একে অন্যের সাথে।
ইংরেজি সাহিত্যে Sexual শব্দ ব্যবহার নিয়ে কঠোরপন্থীদের যত এলার্জি, সেই উপলক্ষে একটি কথা বলি, আপনার অবশ্যই পথ চলতে দেখবেন অমুক হারবাল , তমক হারবালে সাইনবোর্ড । সেখানে হাজারও Sexual শব্দ ভরপুর । ওখানে কেন আপনাদের এলার্জি জাগ্রত হয় না । যত এলার্জি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে কেন ? 
ধরুন হেনরি ফিল্ডিং এর উপন্যাস টম জোনস্ কোন শিক্ষক পড়াচ্ছেন, যেখানে টম নানা মহিলার সাথে প্রেমের কৌশলে দৈহিক মিলন করছে । এটা কি অবাস্তব কোন ঘটনা ? আসলেই না । এটা প্রাত্যহিক ঘটনা । গোপন সমাজ তার হাজারো স্বাক্ষি । এমন অসংখ্য ক্যানসার সমাজকে গোপনে গিলে ফেলছে । চক্ষু লজ্জা আর কত দিন চলবে ?
অবশেষে এটাই বলতে চাই যে, ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষকেরা শুধু নষ্ট কথা বলেন না, তারা সমাজ থেকে নষ্ট জিনিস দূর করতে চান । ধর্ম যেখানে শুধু ভাল প্রচার করে , সাহিত্য সেখানে নষ্ট প্রচার করে সমাজের ক্যানসার সারাতে সাহায্য করে । সাহিত্য জানে যে সমাজে ক্যানসার থাকে সে সমাজ উঠে দাঁড়াতে পারে না ।  তাই সমাজের ক্যানসার সারানোর দায়িত্ব তো ইংরেজি সাহিত্যে শিক্ষকেরাই নিয়েছেন । আশা রাখি কঠোরপন্থীদের মগজে একটু হলেও সত্য বস্তুটি প্রবেশ করবে যে, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকেরা ক্লাসে Sexual কথা বলেন না, তারা সমাজের গোপন রোগ ক্যানসারের চিকিৎসা করেন ।