রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৯

                                      -:অনুগল্প:-

                         একাকীত্ব
                      রানা চ্যাটার্জী
                    
একাকীত্ব আজ প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে আপন মহিমায় বিরাজমান । আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে ঘুণপোকার বাসার  মতোই অন্যতম  সঙ্গী হয়ে উঠেছে একাকীত্ব। ব্যস্ত জীবনে বেড়েছে মোলাকাৎ, হই হুল্লোড় , গেট টুগেদার তবুও একাকীত্বের নখর আঁচড় বসাচ্ছে,গহন মনে, বাহ্যিক আচরণে । 
আপনজনের সাথেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে সংসার জীবন তবু যেনো একটা শূন্যতা ।বড্ড ব্যস্ত জীবনে একাকীত্বের চতুর থাবা । একাকীত্বকে নির্মূল করতে,  আমরা নিজেদের ব্যস্ত রাখার শত শত চেস্টাও  করি, একাকীত্বের অন্যতম দোসর অবসাদ কে ভুলতে কতো রকম ভাবে নিজেদের  ব্যস্ত রাখার প্রচেস্টা । যে ছেলে বা মেয়েটি সারাদিনের ব্যস্ততা, পড়াশোনা কিংবা কর্মক্ষেত্রের চাপের মধ্যে মুখ গুঁজে কাজ করে চলেছে , কত দেশ বিদেশের মানুষের সাথে ইন্টারনেটে কথোপোথন । কিন্তু  যে মুহূর্তে সে একদম একাকী হয়ে নিজের সঙ্গ দেয় , অল্পেই অধৈর্য্য হয়ে ওঠে , সময় কাটতে চায়না,চিন্তা কেড়ে নেয় ঘুম ,এক রাশ অবসন্নতার পাহাড় জমে।
 একঘেঁয়েমি জীবনে মানিয়ে চলতে চলতে কখন যে, আমরা রোবট হয়ে পড়ি খেয়াল থাকে না । পুতুল দের মতো আচার আচরণ করি এই বিরাট পৃথিবীর নাট্য মঞ্চে । আমরা স্রোতে ভেসে ভেসে চলছি , পরিমিত হাসি , পরিমিত খাওয়া ,অভ্যাসে রপ্ত মানব কুলের দৈনন্দিন জীবন ধারণ একাকীত্বের ভেলায় চড়ে । 
কত হারিয়ে গেছে সে সব খেলা , পিঠের ভারী ব্যাগ আর ইস্কুলের দৈত্যাকার সিলেবাসের কল্যাণে । জানালার গরাদ ধরে জুল জুল চোখে বাচ্ছা , ফ্লাটের খাঁচা বারান্দা থেকে নিজের লোক জন , গাড়ির গতিময়তা নচেৎ টেলিভিশনে সিনচেন , নবিতা , মোটু পাতলুর চওড়া  মুখের হাসি দেখে বড়ো হয় আর ফাঁকা হলেই একাকীত্বের পিঠে সওয়ার । 
আগে যৌথ পরিবারে হই হই করে খেলা , পড়াশোনা ,যৌথ কাজকর্মে কি সুন্দর দিন গুলো কাটতো,  ছেলে মেয়েগুলো মানুষ হয়ে যেতো ঘরের মানুষদের ওপর ভরসা করে ,কোলে পিঠে চড়ে ! এখন পরিস্থিতি অনেক আলাদা । উপার্জন বেশি তবু এক সন্তান মানুষ করতেই দিশেহারা অভিভাবকগণ,তাই একাকিত্বই সঙ্গী।

কোন মন্তব্য নেই: