বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৯


                                     অণুগল্প 

                           ব্রেক আপের পরের পৃষ্টা
                              অনুপকুমার সরকার

প্যাচপ্যাচেভেজা আঁখি পল্লব জোড়ায় শ্রাবণের ধারা বেয়ে চলেছে । মায়ের ডাক শুনে দ্যুতি হকচকিয়ে কোনমতে চোখ মুছে বলল, কী মা ? তোর বাবাকে একবার ফোন করে দেখ তো কোথায় আছে, এতো দেরি হওয়ার তো কথা নয় । যা গরম পড়েছে আজকে । হ্যাঁ মা করছি দাড়াও একটু । সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে তাদের সম্পর্কের । নীলাদ্রি রোজ ফোন করেই যায় ব্রেক আপ হওয়া সত্ত্বেও । জোড়া তালি দিয়ে হলেও সম্পর্কটা রক্ষা করতে চেয়েছিল নীলাদ্রি । সম্পর্কের টানাপোড়েন নয়, কবেই যে ইতি ঘটেছে সেসব ঠাওর করতে পারছে না । বর্ষাকালীন সময়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা কোনো কোনো নদীও একসময়ে শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিনত হয়ে যায় । মাঝে মাঝে মনে হয়, আদৌ কি এখান দিয়ে কোনো নদী বয়ে গেছে । নীলাদ্রি সাথে দ্যুতির সম্পর্কটাও ঠিক ঐ রকম বর্তমানে ।
দ্যুতি মোটেও হতে চায় না অতীত কাহিনীর গল্পের লাইন । সম্পর্কের অবনতি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে । দিন দিন দ্যুতি ঠিক কেমনই যেন হয়ে যাচ্ছে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না । মেয়েটা কম কথা বলে, ঐ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মুখ হাত ধুয়ে জানালার গ্রিল ধরে বসে থাকে । দ্যুতির দুঃখের গাঙ অনেক গভীর । দেখে ঠাওর করার উপায় নাই । বেশ কয়েক দিন ধরেই মা বাবার সাথেও ব্যবহার ঠিক হচ্ছে না, সেটাও উপলব্ধি করতে পারছে দ্যুতি । রাতেও ঠিক সময়ে ঘুমায় না । দিন দিন শরীরের যে কি হাল হচ্ছে, দেখে মনে হয় খুবই অসুস্থ মেয়েটা । রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন জানালার গ্রিল ধরে আঁধফালি বাকা চাঁদকে গোলাকার হতে দেখেছে । আবার পুনরায় গোলাকার চাঁদকে কমতে কমতে সেই আঁধফালি হতে দেখেছে । আর তখন তার নিজের জীবনের গল্প গুলো আর খুনসুটি দেয় না হৃদয়ের জঞ্জালযুক্ত আঙিনায় । রোজ রাতে তার অতীত বৃতান্তের কাছে ধর্ষিতা হয় দ্যুতি । তাকে কামড়ে জখম করে ছিঁড়ে খায় । তখন দ্যুতি একা একাই মিট মিট করে হাসে । একা একাই কত কথকতা কয় । সন্ধ্যার জানালায় দ্যুতি খুঁজে পায় জোনাকির মিট মিটে আলো আর সঙ্গে ঝি ঝি পোকার কলরব । দ্যুতি কেমনই যেন দিন দিন প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার ঘেরার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে । পূর্ণিমার জ্যোৎস্না জানালার গ্রিল ভেঙে যখন বিছানায় আসে দ্যুতি সেই জ্যোৎস্নার আলোর সাথে খুনসুটি করে । আবার অমাবস্যার কালো অন্ধকারেও একটা জোনাকির মৃদু আলো সমস্ত ঘরকে আলোকিত করে দিয়ে যায় ।

কোন মন্তব্য নেই: