মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০


                                            লাথি
                             আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস   
  

   "কি গো দাদি,কি করছ?"
     "বিড়ি বাঁধছি।আয়।বোস।"
     জরিনার এটা নিজের দাদি নয়।তার নিজের দাদি নেই।অনেক দিন আগে স্তন ক‍্যানসারে মারা গেছে।জরিনার এটা পাড়া দাদি।নাম নূর বিবি।
     জরিনা বসল গিয়ে,"কেমন আছো?"
     "ভালো আছি।তুই ভালো আছিস?"
     "হ‍্যাঁ দাদি,ভালো আছি।"
      নূর বিবি তখন বলল,"তোদের যে এখন ভালো থাকারই বয়স।তা ভালো তো থাকবিই ।"তারপর বলল,"তা হ‍্যাঁ রে জরিনা,শুনলাম, তোর বলে বিয়ের কথা আলোচনা চলছে?কাল বলে তোকে দেখতে লোক আসবে?তা সত্যি নাকি?"
      জরিনা বলল,"হ‍্যাঁ, সত্যি।"
      নূর বিবি তখন বলতে লাগল,"তা এখুনি বিয়ে করে ফেলবি?সে কি রে!সবে তো ক্লাস নাইনে উঠলি।কলেজে পড়বি না?"
      জরিনা বলল,"পড়ার ইচ্ছে তো ছিল।কিন্তু মা আর না পড়ালে কি করে পড়ব?"
     "তোর মা'র কথা তুই শুনবি কেন?সে পড়াশোনার মূল্য কি বোঝে?"
      জরিনা তার উত্তরে বলল,"মা-রও হয়তো ইচ্ছে ছিল পড়ানোর।কিন্তু না পারলে কি করে পড়াবে?মা-র অবস্থার কথাও তো দেখতে হবে।জুলুম করে শুধু পড়লে তো হবেনা।বাপ বেঁচে থাকলে অবশ্য এখন বিয়ে দিত না।আমিও বিয়ে করতে রাজি হতাম না।মা-র হঠাৎ যদি এখন কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কে বিয়ে দিবে?চতুর্দিক ভেবে চিন্তে দেখে বিয়ে করতে রাজি হলাম।"
       নূর বিবি অমনি টপ্ করে বলে ফেলল,"কেন,আমরা ছিলাম না?আমরা তোর বিয়ে দিতাম। আমরা বুঝি তোর কেউ না!"
       জরিনা বলল,"কেউ হবেনা কেন?আমি কি বলেছি,কেউ হও না?"
        নূর বিবি বলল,"মুখে না বললে কি হবে? তোর কথা থেকে সেটাই বোঝা যাচ্ছে।যাইহোক,কোন দেশে বিয়ের কথা আলোচনা চলছে তাই বল।"
        জরিনা বলল,"গ্রামের নাম রূপ খালি।"
        নূর বিবি বলল,"অতদূরে বিয়ে করবি?যদি তোকে মেরে ফেলে?তা অতদূরে কে বিয়ে লাগাল শুনি?"
        জরিনা বলল,"সম্পর্কে আমার খালুজি হয়।"
        "তোর মায়ের কি বুদ্ধি নেই?অতদূরে কেউ মেয়ের বিয়ে দেয়? যেতে পারবে তো?বাসে তো চাপতে পারে না।বমি করে।মাথা ঘোরে বলে। তাহলে একটা বেটির অতদূরে বিয়ে দেওয়া কেন?তা ছেলে কি করে?"
       "কি করবে?জমিতে চাষ আবাদ করে।"
       "তারমানে ছেলে মাঠে খাটে তাইতো?"
       "হ‍্যাঁ।" তারপর জরিনা বলল,"তাছাড়া আমাদের মতো ঘরের মেয়েছেলেদের কি চাকরি করা ছেলের সাথে বিয়ে হবে?কোন দিনই হবে না।"
        নূর বিবি সেটা মানতে পারল না।সে বলল,"না হওয়ার কি আছে। কপালে থাকলে হতেও পারে।"
       জরিনা বলল,"যদিওবা হয় লাখে একটা। ওকে হওয়া বলে না।"
       "বেশ,তোর কথাই ঠিক হল।"জরিনার কথা নূর বিবি পরে মেনে নিল।নিয়ে বলল,"ছেলে দেখতে ফর্সা তো?"
        "খুব একটা ফর্সা হবেনা।সে না হোক।ওতে অসুবিধা নেই।আমি তো ফর্সা আছি।"
       শুনে নূর বিবি চমকে উঠল,"কি বললি!ছেলে ফর্সা হবেনা?তোর মতো মেয়ে শেষে মাঠে খাটা একটা কালো কুচ্ছিত রাখাল ছেলেকে বিয়ে করবি?ছি:!ছি:!ছি:!"
      জরিনা বলল,"তুমি যত কালো বলছ, অত কালো হবেনা।"
      "তুই দেখেছিস?"
      "দেখিনি।"
      "তো?"
      "আমার সেই ঘটক খালুর মুখে শুনেছি।"
      "তারমানে যা বলেছি তার থেকে আরো বেশি কালো হবে ধ‍র।ঘটকরা কোনদিন সত্যি কথা বলে না।তোকে ওরকম বলেছে তাই।আমি বলছি, তুই ও ছেলেকে বিয়ে করিসনা।কালো ছেলে বিয়ে করে জীবনে সুখী হতে পারবিনা।আমার কথা শোন।টাকা পয়সা লাগছে না নাকি?"
      "তো লাগছে না?টাকা ছাড়া আজকাল বিয়ে আছে নাকি?পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ লাগছে। বাপের তো কিছু ছিল না।বাড়ির মাটি টুকু ছাড়া।তবে মা তার বাপের মাঠান পাঁচ কাঠা জমি পেয়েছে।ওই জমিটা বিক্রি করে আমার বিয়ের টাকা দিবে।"
       টাকা লাগার কথা শুনে নূর বিবি আরো চমকে উঠল,"কি বললি,পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগছে!" তারপর সে বলল,"টাকা দিয়ে কালো ছেলে বিয়ে করবি কেন?টাকা যদি দিতেই হয় একটা ভালো ছেলেকে দিবি।তোর মা না হয় স্কুলে লেখাপড়া করেনি।তার বুদ্ধি কম থাকতেই পারে।তুই তো লেখাপড়া করেছিস।তা-ও তোর বুদ্ধি এত কম!"
       "কি করব বলো।আমার কপালে যদি কালো ছেলে লেখা থাকে ফর্সা ছেলে পাবো কোথায়?"
       নূর বিবি অমনি মুহূর্তের মধ্যে জরিনার কথা উড়িয়ে দিল,"ছাড় তোর কপাল!আমার কথা শুনে ও ছেলেকে তুই বিয়ে করবিনা।ফর্সা ছেলে বিয়ে কর।"
       জরিনা বলল,"তোমার কথা শুনে করব নাহয়।কিন্তু ফর্সা ছেলে পাবো কোথায়?তোমার হাতে আছে নাকি?"
       "আমার হাতে আছে কি রে!আছেই তো।না থাকলে বলব কেন?খুব সুন্দর একটা ছেলে আছে আমার হাতে।দেখতে একেবারে নায়ক।তোর সঙ্গে দারুণ মানাবে ।রোজগার করে খুব ভালো।তোর কোন জিনিসের অভাব রাখবে না।পাকা বাড়ি। বাড়ির ভিতরেই পায়খানা, বাথরুম।মাঠে পায়খানা ফিরতে যেতে হবেনা।নিজস্ব মোটরসাইকেল আছে।মোটরসাইকেলে চেপে দু-জনে হলে সিনেমা দেখতে চলে যাবি।আহা,কি সুখ!"
       জরিনা বলল,"ছবি আছে?"
       "থাকবে না কেন?ঘরে বাক্সের ভিতর ঢোকানো আছে। বের করে এনে তোকে দেখাচ্ছি।"নূর বিবি অমনি ঘরের ভিতর থেকে বাক্স খুলে ছবি বের করে এনে জরিনাকে দেখাল,"দ‍্যাখ!"
       জরিনা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখল।পরনে নীল জিনস প‍্যান্ট।গায়ে রঙিন শার্ট।চোখে চশমা পরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে।দেখতে দেখতে জরিনা একবার নূর বিবির দিকে তাকাল।
       নূর বিবি বলল,"দেখতে নায়ক নয়?"
       জরিনা মুচকি হেসে বলল,"হ‍্যাঁ।"
      নূর বিবি এবার ছবিটা তার হাত থেকে নিয়ে বলল,"এই ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে লাগাব।"
       "লাগাও।"জরিনা তখন মুখে বিয়ে লাগাতে বললেও পরে বলল, "বড়লোকের ছেলে আমার মতো গরিবের মেয়েকে বিয়ে করবে?"
       নূর বিবি বলল,"করবে।"
       "করবে?"
       "হ‍্যাঁ, করবে।"
       জরিনা তখন বলল,"করেও যদি টাকা বেশি চাইবে।আমার মা-র কি বেশি টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে?তাহলে বিয়ে আর হচ্ছে না।"
       নূর বিবি তখন অমনি বলে দিল,"অত চিন্তা করছিস কেন?এক টাকা চাইবে না।তোকে শুধু বিয়ে করবে।"
      "তোমাকে বলেছে?"
      "না বললে জানলাম কি করে?কালই তো ফোন করেছিল। করে একটা ভালো মেয়ে দেখতে বলল আমাকে।বলল,কোন টাকা পয়সা লাগবেনা।শুধু মেয়েটা ভালো চাই।গরিব ঘরের মেয়ে হলেও কোন অসুবিধা নেই।তাই তোকে বলছি, ওই কালো ছেলে তুই আর বিয়ে করবি না।রাকিবকে বিয়ে কর।আরে,সুন্দর স্বামী কাছে আর স্বর্গে থাকা এক জিনিস।এক বেলা খেতে না পেলেও শান্তি।বুঝলি?"তারপর বলল,"রাকিব কে চিনতে পারলি?"
      জরিনা বলল,"কে?"
      নূর বিবি বলল,"যার ছবি দেখলি।আমার বাপের দেশে বাড়ি।থাম,রাকিবকে একবার ফোন লাগিয়ে দিই।কথা বল।"
      জরিনা ফোন লাগাতে নিষেধ করল,"থাক,এখন ফোন লাগাতে হবে না।আমি ফোনে কথা বলব না।লজ্জা লাগবে।"
      "ফোনে কথা বলবি তো লজ্জা কি?"নূর বিবি শুনল না। অমনি ফোন লাগিয়ে দিল।
      "হ‍্যালো!"
      "কে,রাকিব?"
      "হ‍্যাঁ, বলো।"
      "বলছি,তুই একটা মেয়ে দেখতে বলেছিলি না?তো একটা মেয়ে দেখেছি।মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর।আমাদের নিজেদের মধ্যে।ব‍্যবহারও খুব ভালো।যাকে বলে অমায়িক মেয়ে।বিয়ে করলে তুই সুখী হবি জীবনে।শান্তি পাবি জীবনে।সে এখন আমার কাছে বসে আছে।কথা বল।..." বলতে বলতে নূর বিবি জরিনাকে ফোনটা হঠাৎ দিয়ে দিল,"নে জরিনা,কথা বল।"
       জরিনার ফোনটা না ধরে আর উপায় হল না,"হ‍্যালো!"
      "কে,জরিনা?"
      "হ‍্যাঁ।কিন্তু আপনি কি করে জানলেন,আমার নাম জরিনা?"জরিনা বলল।
      "এক্ষুনি নূর বিবির মুখে শুনলাম না?"
      "ও,আচ্ছা।"
      "তোমার নামটা কিন্তু দারুণ!"
       জরিনা হাসল।
       রাকিব বলল,"আমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি,জরিনা।তুমি দেখতে খুবই সুন্দরী।তাই আমি তোমাকেই বিয়ে করব।"
        জরিনা বলল,"দাদির মুখে আপনার অনেক গল্প শুনলাম।এবং আপনার ছবি দেখলাম। আপনি বড়লোকের ছেলে। এবং দেখতে খুব সুন্দর।আপনি কি আমার মতো গরিব মেয়েকে বিয়ে করবেন?"
       "বিশ্বাস হচ্ছে না?তুমি ওখানেই থাকো।আমি এক ঘণ্টার মধ‍্যে চলে আসছি।আর হ‍্যাঁ,ফোনটা নূর বিবিকে একটু দাও।তার সঙ্গে জরুরি দুটো কথা আছে।বলে নিই।"
        জরিনা নূর বিবিকে ফোনটা দিল,"নাও।তোমার সঙ্গে কথা বলবে।"
        নূর বিবি ফোনটা হাতে নিয়ে কানে ধরে একটু সরে গিয়ে বলল,"কি,বল।"
        "তুমি এক্ষুনি জরিনাকে এক কাপ চায়ের সঙ্গে ট‍্যাবলেটটা গুলে খাইয়ে দাও।দিয়ে তোমার কাছে বসিয়ে রাখো।আমি এক্ষুনি আসছি।"
        "ঠিক আছে, আয়।"
         সঙ্গে সঙ্গে রাকিব লাইন কেটে দিল। নূর বিবি জরিনাকে তখন বলল,"রাকিব আসছে।তুই একটু বোস।আর হ‍্যাঁ,তোকে এক কাপ চা বানিয়ে দিই।খা।"
       জরিনা বলল,"তা বানাও,খাই।"
       নূর বিবি এরপর ঘর থেকে এক কাপ চা বানিয়ে আনল।জরিনা চা খেতে শুরু করল।খেতে খেতে বলল,"চা খেতে খুব একটা ভালো লাগছে না, দাদি।মন বলছে,ফেলে দিই।"
      নূর বিবি বলল,"আমি কি আর তোদের মতো অত ভালো চা বানাতে পারি?ফেলবি কেন, খেয়ে নে। খেলেই কাজ দেবে।"
       নূর বিবির কথায় জরিনা খেয়েই নিল।সে তাকে বুঝতেই দিল না যে,চায়ের সঙ্গে সে একরকম একটা ট‍্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছে।যা খেলে মেয়েদের শরীরে ও মনে অকস্মাৎ কামক্ষুধা জেগে ওঠে।কোন পুরুষ তার সঙ্গে তখন অনায়াসে মিলিত হতে পারে।তাই  চায়ের স্বাদ তাকে বিস্বাদ লাগছে।
                                             ★ দুই★
       সাদা রংয়ের একটা আর টি আর মোটরবাইকে চেপে রাকিব চলে এল ।এসে বাইকের উপর থেকে নামল।ছবিতে আগে দেখা ছিল বলে জরিনা তাকে দেখেই চিনতে পারল। সত্যি সে নায়ক একটা।
       রাকিবের তাকে আগে দেখা ছিল না।তবু তার তাকানো আর লাজুক হাসি দেখে সে তাকে ঠিকই  চিনতে পারল।অতএব সে তাকে বলল,"আমি বলেছিলাম না,আমি আসব?এলাম?"
      জরিনা মুখ টিপে হাসল।
      রাকিব বলল,"আমি মুখে যা বলি কাজেও তাই করি।অন্য কোন প্রেমিকের মতো আমি শুধু মুখেই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে প্রেমিকার মন ভোলাই না।"
         জরিনা এবারও হাসল।
        রাকিব তার সেই হাসি দেখে বলল,"অপূর্ব!" ও সে পরে নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল,"কই গো,বসতে জায়গা টায়গা দেবে না নাকি?"
        নূর বিবি তাদের বসার জন্য একটা বন্ধ ঘরের দ‍রজা খুলে দিল।দিয়ে বলল,"তোরা এই ঘরে বোস। বসে গল্প কর।আমি বাইরে আছি।কোন প্রয়োজন হলে জানলা দিয়ে টুক করে ডাকবি। তাহলেই আমি দ‍রজা খুলে দেব।"
       ভিতরে তারা ঢুকে গেল।পরে নূর বিবি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।ভিতরে একটা চৌকি আর দুটো বালিশ ছাড়া কিছু নেই।নিচে পা ঝুলিয়ে চৌকির উপর তারা তখন পাশাপাশি বসল।বসে রাকিব বলল,"আমি যে তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি এবার সেটা প্রমাণ হল তো?"
       নত মুখে জরিনা বলল,"হল।"
       রাকিব জরিনার চিবুক ধরে তখন বলল,"তুমি খুব সুন্দর, জরিনা।তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।"
      জরিনা বলল,"আমাকে তাহলে বিয়ে করবেন তো?"
      "করব না তো কেন এসেছি?...." বলতে বলতে রাকিব জরিনার মাথার চুলের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিল ।ও চুল নাড়তে নাড়তে বলল,"তোমার মাথার চুল খুব সুন্দর !"তারপর নাকে শুঁকে ঘ্রাণ নিয়ে বলল,"আ:,কি সেন্ট!কি মেখেছ!"
      জরিনা বলল,"কি মাখব?কিছু মাখি নি।"
      রাকিব এবার জরিনার হাত ধরল।ও তার হাতের আঙুল নাড়ল।নাড়তে নাড়তে বলল,"তোমার হাতের আঙ্গুল গুলো কি সুন্দর!"
     জরিনা এবার চুপ করে থাকল।
     রাকিব এরপর জরিনার ঠোঁটে হাত দিল,"তোমার ঠোঁটও দারুণ !"
      জরিনা এবারও কিছু বলল না।এবারও চুপ করে থাকল।ও চৌকির উপর শুয়ে গেল।
      তার চুপ করে থাকা ও কিছু না বলা আর চৌকির উপর শুয়ে যাওয়া দেখে রাকিব বুঝতে পারল,ওষুধের কাজ শুরু হয়েছে।রাকিব তখন আর দেরি করল না। তার মনের নেশা মেটাতে শুরু করল।....
     এরপর সন্ধ্যার অন্ধকার যখন ঘনিয়ে এল  রাকিব তখন জরিনাকে বলল,"তোমার সঙ্গে যখন আমার শারীরিক সম্পর্ক ঘটেই গেল তখন আমি তোমাকে আর রেখে যাবো না। আজকেই তোমাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করব।তুমি কি বলছ, বলো।"
     জরিনা বলল,"আমি কি বলব?"
     "তাহলে আজকেই আমার সঙ্গে তোমাকে যেতে হবে।"
      জরিনা এক কথায় রাজি হয়ে গেল,"যাবো।"ও রাকিবের হাত দুটো ধরে বলল,"নিয়ে গিয়ে  আমাকে কষ্ট দিওনা হবে?আমি তোমাকে বিশ্বাস করে----"
        রাকিব বলল,"কষ্ট দেব না।"
        "ঠিক আছে, চলো তাহলে।"
        জরিনা বললে পরে রাকিব সঙ্গে সঙ্গে জানলা দিয়ে মুখ বের করে নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল,"কই গো,আছো নাকি?"
        নূর বিবিও সঙ্গে সঙ্গে জানলায় চলে এল, "হ‍্যাঁ, আছি।"
         "তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও।"
         নূর বিবি দরজা খুলে দিল।
         রাকিব তাকে তখন বলল,"আমরা এক্ষুনি বেরিয়ে যাব।"
          রাকিবের বলা হলে পরে জরিনা বলল,"মা তো খুব খোঁজাখুঁজি করবে।এবং কান্নাকাটি করবে।তুমি মাকে বুঝিয়ে রেখো।"
          নূর বিবি জরিনাকে সাহস দিল,"তুই কোন চিন্তা করিসনা।আমি ঠিক বুঝিয়ে রাখব।"
         "ঠিক আছে, আমরা যাচ্ছি তাহলে।"রাকিব বলল।
          নূর বিবি বলল,"তোরা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছিস।আমাকে কিছু দিয়ে যাবিনা মিষ্টি খেতে?"
         "অবশ্যই দিয়ে যাবো।"রাকিব প‍্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে নূর বিবির হাতে দিল,"এটা তোমাকে দিলাম।তোমার যা ইচ্ছা করবে কিনে খেয়ো।"
          নূর বিবি খুব খুশি হল,"আমি পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ি।প্রত‍্যেক নামাজ অন্তে আমি তোদের জন্য জায়নামাজে বসে দোয়া করব।তোদের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়।তোরা যেন খুব সুখী হোস।"ও পরে বলল,"যাবি তো এক্ষুনি চলে যা।শুভ কাজে দেরি করতে নেই।তোরা গেলে পরে আমি সন্ধ‍্যার নামাজ পড়ব।তাছাড়া হঠাৎ যদি তারমিনা চলে আসে তোদের বিয়ে ভালো করেই দিবে।আমারও।"তারমিনা যে জরিনার মা হয় সেটাও বলল।
         শুনে রাকিব তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে জরিনাকে নিয়ে সে তখন ছুটল।
        ওজু করে নূর বিবি এবার সন্ধ্যার নামাজ পড়বে।তার আগে রাকিব তাকে কত টাকা দিয়ে গেল মুঠি খুলে সে একবার দেখে নিল।পাঁচ হাজার টাকা।রাকিবের সঙ্গে এটাই তার চুক্তি হয়েছিল।
                                          ★তিন★
         রাকিবের গাড়ি পবনের চাইতেও বেগে উড়ে চলল।ফলে জরিনার মাথার চুল, বুকের উড়না সব এলোমেলো হয়ে গেল।বাতাসের ঝাপটায় তার চোখ দিয়ে জল ঝরল।জরিনা তাই গাড়ি আস্তে চালাতে বলল,"গাড়ি আস্তে চালাও।"
         মাথায় হেলমেট পরা রাকিব জরিনার কথা শুনতে পেল কি পেল না কোন উত্তর করল না।খানিক বাদে জরিনা ফের বলল,"গাড়ি আস্তে চালাও।"এবার সে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আগের থেকে জোরে বলল।
         রাকিব বলল,"এখন কি গাড়ি আস্তে চালানোর সময় আছে?ধরা পড়ে গেলে তুমি আমি দু'জনেই ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো।তোমার কি কোন অসুবিধা হচ্ছে?"
       "পড়ে যাবো বলে ভয় লাগছে।আর বাতাসে চোখ দিয়ে জল ঝরছে।"
       "পড়বে না।তুমি আমাকে ভালো করে ধরো। আর চোখ বন্ধ করে বসো।"
       রাকিবের কথা মতো জরিনা তাই করল।প্রায় ঘণ্টা খানেকের উপর গাড়ি একইভাবে ছোটাল। এরপর রাকিব শহরে পৌঁছে গেল।শহরের একটা পাঁচতলা হোটেলে গিয়ে তারা উঠল।জরিনাকে হোটেলের একটা রুমে বসিয়ে রেখে রাকিব বলল,"তুমি এখানে একটু বসো,জরিনা।আমি একটু আসছি।"
         "কোথা থেকে?"
         "বাইরে থেকে।"
         জরিনা বলল,"আমি একা বসতে পারব না। একা বসতে আমার ভয় করবে।আমিও তোমার সঙ্গে যাবো।"
        রাকিব জরিনাকে সাহস দেওয়ার জন্য তখন বলল,"ভয় কি!কোন ভয় নেই।"
        "না।তা-ও আমার ভয় করবে।কেউ যদি এসে চেপে ধরে আমি তখন কি করব।এখানে আমি কাকে চিনি?"
        রাকিব ফের তাকে সাহস দিল,"বললাম তো ভয় নেই।এখানকার মানুষ সবাই খুব ভালো।কেউ তোমাকে কিছু শুধিয়ে দেখবেনা।বিরক্ত করবে না।"
        জরিনা তখন বলল,"তুমি বাইরে কোথায় যাবে?"
        রাকিব বলল,"সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। এখানে তো সিগারেট পাওয়া যাবে না।তাই রাস্তার ওপারে একটু যেতে হবে।"
       "আজ অমনি থাকো।সিগারেট খেতে হবে না। একটা রাত সিগারেট না খেলে কি হবে?"
        "তোমার মাথা খারাপ !সিগারেট না খেলে হয়?"রাকিব বলল।
       জরিনা যখন কোন ভাবেই তাকে আটকাতে না পারল তখন অত্যন্ত ভীতা হয়ে বলল,"যাচ্ছ যাও।কিন্তু খুব বেশি দেরি করোনা যেন।তাড়াতাড়ি চলে এসো।"
        রাকিব "যাবো আর আসব" বলে বেরিয়ে এল।
                                            ★চার★
         ঘণ্টা খানেক হতে চলল তবু রাকিব ফিরে এল না।একা ঘরে জরিনার ভয় করতে লাগল। তার কাছে কোন ফোনও নেই যে সে ফোন করে ডাকবে।যদি না আসে সে কি করবে?কোন পুরুষ এসে যদি তাকে এখন....ভয়ে জরিনার কণ্ঠতালু শুকিয়ে গেল।আর সে বারবার ঢোঁক গিলল।
        আর ঠিক এই সময় রাকিবের থেকে বয়সে কিছু বড় হবে এক ব‍্যক্তি ঘরে এসে ঢুকল,"কি করছ,সুন্দরী?" বলে।
       জরিনা ভীষণ ভাবে আঁতকে উঠল।তারপর চিৎকার করে উঠল,"কে আপনি?"
       "বলব।অত ব‍্যস্ত হচ্ছ কেন?আগে দরজাটা বন্ধ করতে দাও।বন্ধ করি।"
        জরিনা চিৎকার করে উঠল,"না,দরজা বন্ধ করবেন না।দরজা বন্ধ করবেন না,বলছি।"
        সে শুনল না।দরজা বন্ধ করেই দিল,"কি হল,এবার বলো।"
        "আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন?দরজা খুলে দিন।দরজা খুলে দিন,বলছি।নাহলে রাকিব এসে পাবেনা।"
        সে তখন বলল,"রাকিব আর আসবে না।"
        জরিনা ভীতা হয়ে তখন পিছনের দেওয়ালের দিকে সরে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল,"আপনি কে?এখানে কেন?বেরিয়ে যান।বেরিয়ে যান,বলছি।"
         হাসতে হাসতে সে বলল,"আমি এই হোটেলের মালিক।সুতরাং তুমি বেরিয়ে যেতে বললেই কি আমি বেরিয়ে যাবো?কক্ষনো না।"
        দৃপ্ত কণ্ঠে জরিনা এবার তার উত্তরে বলল,"আপনি হোটেলের মালিক হতে পারেন।তা বলে একা একটা মেয়ের ঘরে আসতে পারেন না।এটা অন‍্যায়।আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান।রাকিব আসুক তখন যা বলার ওকে বলবেন।আমার সঙ্গে আপনার কোন প্রয়োজন নেই।আপনি এখন আসতে পারেন।"
        "রাকিবের সঙ্গে প্রয়োজন আমার মিটে গেছে।প্রয়োজন এখন আমার তোমার সঙ্গে।"
        "আমার সঙ্গে!আমার সঙ্গে আপনার কি প্রয়োজন?"
        সে বলল,"অত দূরে থাকলে কি করে বলব?কাছে এসো তবে তো বলব।"জরিনাকে সে আহ্বান করল।
        জরিনা তখন 'না' বলে বলল,"আপনি ভালোই ভালোই বেরিয়ে যান বলছি।নাহলে রাকিব এলে তাকে সব বলে দিয়ে আপনাকে কঠিন শাস্তি দেওয়াব।"
        জরিনার কথা শুনে সে 'হো হো' করে হাসল,"তুমি এখনো রাকিবের কথা ভাবছ?রাকিব আর আসবে না বললাম না?"
         "কে বলল আসবে না?"
         "আমি বলছি।রাকিব চলে গেছে।"
         "চলে গেছে!কোথায় চলে গেছে?"
         "বাড়ি।"
          জরিনা বিশ্বাস করল না।সে বলল,"এ হতে পারেনা।সে আমাকে ভালোবাসে।আমিও তাকে ভালোবাসি।আর আপনি বললেই হল না?রাকিব সিগারেট কিনতে গেছে।হয়তো দোকানে ভিড় আছে বলে দেরি ক‍রছে।পেয়ে গেলে সে ঠিকই ফিরে আসবে।রাকিব কথা দিয়েছে সে আমাকে বিয়ে করবে।"
          জরিনার কথার উত্তরে সে বলল,"তুমি হলে পাড়া গ্রামের অতি সাধারণ মেয়ে।তাই বুঝতে পারোনি।রাকিব তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে।ফিরে আসবে না।"
        "কি!"
        "হ‍্যাঁ।"
         তখন চমকে উঠলেও পরে জরিনা বলল,"আমি আপনার কোন কথা বিশ্বাস করি না। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।হ‍্যাঁ,আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।"
        "আমি মিথ্যা কথা বলছি না।আমি তোমাকে সত্যি কথাই বলছি,জরিনা।"
         জরিনা তার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হল,"এ কি!আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?"
         সে হাসল,"টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় রাকিব আমাকে বলে গেছে।"তারপর বলল,"জানো তো,মেয়েছেলে আমি কেনাবেচার ব‍্যবসা করি।তোমাকে রাকিব বিয়ে করবে বলে নিয়ে এসে আমার কাছে বিক্রি করেছে।শুধু তুমি নও,আরো অনেক মেয়েকে সে বিয়ে করবে বলে এই ভাবে নিয়ে এসে বিক্রি করেছে।তোমরা মেয়েরা হলে বোকা।তাই তোমরা যেকোন ছেলের প্রেমের প্রলোভনে পড়ে যাও।আর তার সঙ্গে বেরিয়ে চলে আসো।আসার আগে তার সম্পর্কে একবারও কোন কথা ভেবে দেখ না।"
         জরিনা বলল,"আমি তাকে বুঝতে পারিনি।আমি তাকে চিনতে পারিনি।"
         সে বলল,"তুমি তো কোন চেষ্টাই করোনি। তুমি আসলে রাকিবের সুন্দর চেহারা দেখে ভুলে গিয়েছিলে।জানো তো,রাকিব তার ওই সুন্দর চেহারার জন‍্যই তোমাদের মতো মেয়েদের সহজে পটাতে পারে।তোমাকে ধরলে পরে  রাকিবের একশো একটা মেয়ে বিক্রি করা হল।সব তারা তোমার মতো গরিব ঘরের মেয়ে।সব গ্রামে ওর একটা করে মেয়ে ফিট করা আছে।তারাই রাকিবকে মেয়ে ঠিক করে দেয়।রাকিবের কাছ থেকে তারা কমিশন খায়।"
          জরিনার অমনি নূর বিবির কথা মনে পড়ে গেল।তার এই দাদিই তাকে সেরেছে ।সে তখন বুঝতে পারল।এবং পরে তার মনে হল,এখান থেকে সে যদি বেরোতে পারে ওই নূর বিবির বিরুদ্ধে বিচার ডাকবে।তাকে শাস্তি দিতেই হবে। নাহলে সে আরো অনেক মেয়ের সর্বনাশ করবে।তার সর্বনাশের হাত থেকে গ্রামের মেয়েদের বাঁচাতে হবে।বিষয়টা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে হবে।ও সে নিজে একটা সংগঠন গড়ে তুলবে।হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মেয়েদের নিয়ে ।সেই সংগঠনের কাজ হবে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।মেয়েদের সত‍র্ক করা।ভুল পথে ভুল করেও যাতে তাদের পা না পড়ে। ভালোবাসার শিকার মেয়েরা যাতে না হয়।...
        এরপর জরিনা তার কাছে মুক্তি চাইল,"...আপনি আমায় মুক্তি দিন।"
         সে মুক্তি দিল না।....
      
                                            ★পাঁচ★
       রাত্রে জরিনার মা জরিনার খোঁজে বের হল। পাশের বাড়ি গুলো দেখল।ও আরো অনেক লোককে ধরে জিজ্ঞেস করল।কিন্তু জরিনার খোঁজ কেউ দিতে পারল না।জরিনাকে কেউ দেখেনি বলল।জরিনার জন্য তার মনে তখন চিন্তা হল।মন খারাপ করে সে বাড়িতে বসে থাকল। থাকতে থাকতে তার নূর বিবির কথা মনে পড়ল।জরিনা তার কাছে যায়।বসে।সব বাড়ি গেলেও তার নূর বিবির বাড়ি যাওয়া হয়নি।তার কাছে গেলে সে জরিনার খোঁজ পেতে পারে।ভেবে সে নূর বিবির বাড়ি গেল।গিয়ে নূর বিবির পাশ খানে বসল,"চাচি,আজ তোমার কাছে আমার জরিনা আসেনি?"
          নূর বিবি বলল,"না তো।"তারপর বলল,"তুমি এসেছ ভালো হল।নাহলে তোমার কাছে আমাকেই যেতে হতো।তোমার জরিনা আমাকে ফোন করেছিল ।খবরটা দেওয়ার জন্য।"
          জরিনার ফোন করার কথা শুনে সে চমকে উঠল, "ফোন করেছিল!"
         "হ‍্যাঁ।"
         "কখন?"
         "আধঘণ্টা হল।"
         "কিন্তু জরিনার কাছে তো মোবাইল নেই।ও তাহলে ফোন করল কি করে?"
         নূর বিবি বলল,"কার মোবাইল থেকে করেছিল তা তো বলতে পারব না।আমার নাম্বার ও জানে ।তাই আমার মোবাইলে করেছিল।"
       "করে কি বলল?"সে জানতে চাইল।
       "তোমাকে খোঁজাখুঁজি করতে এবং চিন্তা করতে নিষেধ করল।"
       "কোথায় আছে বলল?"
       "সেসব কিছু বলল না।জিজ্ঞেস করলাম তা-ও বলল না।তবে একটা কথা বলল।"
       "কি বলল?"
        নূর বিবি বলল,"কাল বলে ওকে দেখতে লোক আসবে।ছেলে বলে দেখতে ভালো না। কালো।কালো ছেলেকে ও বিয়ে করবে না।তাই  কোথাকার একটা ছেলের সঙ্গে বেরিয়ে গেছে।"
        "কি বললে তুমি!"
        "হ‍্যাঁ।ফোনে আমাকে যেরকম বলল আমি তোমাকে সেরকমই বললাম।"
        সে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না।তারস্বরে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল,"জরিনা,ও জরিনা,এ তুই কি করলি মা...এ তুই কি করলি...জ‍রিনা..."
        নূর বিবি তাকে কাঁদতে নিষেধ করল।এবং আল্লার কাছে জরিনার জন্য দোয়া করতে বলল।
        দুই হাত তুলে সে তখন দোয়া করতে লাগল,"আল্লা,ও আল্লা।আমার জরিনাকে তুমি সুখে রাখো।ভালো রাখো। হেফাজতে রাখো।...."
                                             ★ছয়★
         তিন বছর বাদে জরিনা বাড়ি ফিরে এল। হোটেলের এক সিকিউরিটির সঙ্গে হাত করে পালিয়ে।বাড়ি এসে জরিনা সব কথা তার মাকে খুলে বলল। দুই মা মেয়ে গলা ধরে খুব কাঁদল। পরে তারা দুই মা মেয়ে মিলে নূর বিবির বিরুদ্ধে সালিশ ডাকল। সালিশে প্রচুর লোক জমায়েত হল।সকল লোকের সামনে উঠে দাঁড়িয়ে জরিনা তার বক্তব্য পেশ করল।সকলে বক্তব্য শুনল।শোনার পর নূর বিবিকে  সালিশের লোক উঠে দাঁড়াতে বলল।নূর বিবি উঠে দাঁড়াল। সালিশের লোক তাকে তখন জরিনার বক্তব্যের সত‍্যতা জিজ্ঞেস করল।অর্থাৎ জরিনা যা বলল সেসব কি সব সত্যি?
         কালো ঘোমটার আড়ালে নূর বিবির মুখ ঢাকা ছিল।ঘোমটার আড়াল থেকে সে বলল,"না।বিলকুল মিথ্যা।"
         জরিনা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল,"না।ও মিথ্যা কথা বলছে।ওর কথা আপনারা কেউ বিশ্বাস করবেন না।শুনবেন না।"
         সালিশের মধ্যের একজন লোক তখন জরিনাকে বলল,"তুই-ই যে সত্যি বলছিস তার গ‍্যারান্টি কি?"
         জরিনা বলল,"রাকিব আমাকে যে হোটেলে বিক্রি করেছিল সেই হোটেলই হল গ‍্যারান্টি প্রমাণ।"
         নূর বিবি জনগণকে সাক্ষী মেনে বলল,"আমি যে এরকম কাজ করব আপনাদের কি সেটা মনে হয়?"
         সালিশের অর্ধেকেরও বেশি লোক হাত উঁচিয়ে তখন বলল,"না,আমাদের সেটা মনে হয় না।"
         আর অর্ধেক লোক চুপ করে থাকল।
         নূর বিবি বলল,"আমি কিছু বলব না।গ্রামের মানুষ আপনারাই ভালো জানেন, আমি কি রকম মানুষ।আমার স্বামী কি রকম মানুষ।তাছাড়া  আমরা পবিত্র মক্কা ভূমি ভ্রমণ করে এসেছি।আর ও একটা চরিত্র হীনা মেয়ে।তিন বছর হোটেলে ছিল।ওর জাত ধর্ম বলে কিছু নেই। সব চলে গেছে।আপনারা ওর কথা কি শুনছেন?ওকে মারুন, মারুন ওকে।"
         তারপরই সালিশের লোক উত্তেজিত হয়ে জরিনাকে মার শুরু করল।আর অশ্রাব্য গালি। শালি,একটা খানকি মেয়ে।....
         ভদ্র সালিশের ব‍্যবহারে জরিনার মা স্তম্ভিতা হয়ে গেল ।এর প্রতিবাদের সে  কোন রাস্তা খুঁজে পেল না।দম দম করে সে শুধু লাথি মারল মাটিতে!....
         পুনশ্চঃ নূর বিবির মতো মানুষেরা সমাজে এই ভাবেই বেঁচে যায় চিরকাল।আর মার খায় জরিনারা।

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯

নভেম্বর সংখ্যা

                 নভেম্বর সংখ্যার সূচিপত্র



                                           কবিতা
                       রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য~ জেগে থাকে লুব্ধক
                       কুনাল গোস্বামী~     স্বপ্নের কালপুরুষ
                      অভিজিৎ মান্না~  অর্ধেক আকাশ
                      কল্যান মাহাতো~   সময়
                      কৌশিক চক্রবর্ত্তী~  বৃষ্টিপাত
                      রুনা দত্ত~  ফেলিন স্বপ্ন
                       বদরুদ্দোজা শেখু~  সুলতান
                      
                                           প্ৰবন্ধ  
                   রাণা চ্যাটার্জী~  ভ্রমন পিপাসু বাঙ্গালি
                                         অনুগল্প
                     সিদ্ধার্থ সিংহ:~   সত্যি সত্যি
                     ডঃ রুমলা মুখার্জী:~ অনুতাপের আগুন


                                   জেগে থাকে লুদ্ধক
                                 
                                  রঞ্জনা ভট্টাচার্য

 ডিউলার কিচেনে বাসি তরকারি জ্বাল দেবার পর টবে জল দিই। আমার কোন অভাব নেই।
শুধু গতজন্মের বিষাদ আছে। মাঝরাতে লালপাড় সাদা শাড়ি পরে পালতোলা নৌকার কাছে বসি, ছলাৎ ঢেউ থেকে উঠে আসা হাওয়া
আমার আঁচল খসিয়ে দেয়। শেষরাতে গোল
চাঁদ ওঠে আকাশে,লক্ষ্মীর পা আঁকা চাঁদ।
ঘরে ফিরে যেতে বলে। প্রচুর হোমটাস্ক দিয়ে
দেয় নিবিড় তারাগুলো। কোন দিন ভুল ঘরে ঢুকি নি, তবু চাবি হারিয়ে ফেলা আমার অভ্যাস।
কিছু বৃন্তচ্যুত ফুল পিছু ডাকে, তবু ঘরে ফিরতে হয় নৌকা ছেড়ে, কিছু আলো আলো মুখে  জেগে থাকে লুব্ধক।

                          স্বপ্নের কালপুরুষ....
                                কুনাল গোস্বামী


     অবিন্যস্ত নীলাম্বরী ছুঁতে চায় দ্রাঘিমার চিবুক
     ঈর্ষায় ভেঙে পড়ে স্বপ্নের কালপুরুষ
     কত নৈসর্গিক সুখের অভিলাষে সে আজ প্রাক্তন, প্রাক্তনই বটে...
    ক্রমবর্ধমান সময়ের চক্রে
    হতে পারে মেঘেদের অশ্রুধারায় বেড়ে চলেছে নীলিমার লবণাক্তের      পরিমাণ 
    তাতেও কি মিটেছে আশ?ছুঁতে পেরেছে দ্রাঘিমার চিবুক?
    সহস্র ঢেউয়ের মৃদু মৃদু আর্তনাদ এসে আছড়ে পড়ে প্রেমিকের বুকে
    যে বুকে আজও কোনো শিল্পীর স্পর্শে তুফান গড়ে ওঠে

                                 অর্ধেক আকাশ 
                           অভিজিৎ মান্না 

                        আমি ক্রমশ ঝুঁকে যাচ্ছি
                        তুমি হাসছো নতুন ভঙ্গিমায় l
                        শুকনো বাতাস আর ঘোলা জল ঝিটিও না
                        এ যে কষ্ট টানে গভীরতার  সিঁড়ি ভেঙে l
                        ঠাঁই হবে না এ নৌকায় 'বুঝে গেছি তুমি অন্য মেঘ l 

                                               সময়
                                   কল্যাণ মাহাতো
                
                       পল পল করে পলকে নিবেছে সময়
                       ছুটন্ত গাড়িতে যাত্রী যেমন
                      তেমনি ফেলে এসেছি
                      সময়ের পোড়া জঞ্জালের পাঁশ
                      আর ধোঁয়া
                      পুনর্নবীকরণের আশা নেই জেনেও
                      ঘেঁটেছি ছাই
                      অমূল্যরতনের আশে ...

                                              বৃষ্টিপাত         
                                   কৌশিক চক্রবর্তী  

তুমি যেটুকু আগুন ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছ শখের বিছানা থেকে
আমি ততটা ঘাসমাঠও তৈরি করে রাখি নি তোমার বুকে
শুধু আমার সমস্ত কবিতা থেকে প্রথম চারটি পংক্তি 
খুব অনায়াসে কাকভেজা হয়ে উঠতে দেখেছি চিরকাল
কোনোদিন কোনও নক্ষত্র মেনে বসন্ত আসেনি এইখানে
কোনোদিন পাতা খসে পড়বার আগে মিলিয়ে নেয় নি সমাধির বরাদ্দ মাটি
তবু কিকরে বলেছিলে তুমি আমার শোবার জন্য তোলা আছে নির্দিষ্ট ঘর?
আজও সুযোগ বুঝে আমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি দেয়ালের পরে
কেন জানি না আজ সকাল থেকেই এই বন্ধঘরেও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল...

                                       ফেনিল স্বপ্ন
                                         রুনা দত্ত
                   কিছু এলোমেলো আদুরে মুহুর্ত
                   তোমার মতো আমার ও আছে।
                   যেখানে পায়রার বুকের মতো 
                   নরম তুলতুলে উষ্ণতায় ওম নিতে নিতে
                  আমি মোমের মতো গলে গলে পড়ি ।
                  উষ্ণতায় আর্দ্রতায় জারিত হতে হতে
                   জাফরানি রঙের সুগন্ধী ছুঁয়ে
                  ভীষণভাবে নারী হয়ে উঠি ।
                  সব সীমারেখা অতিক্রম করে
                  মহব্বতের দিলদরিয়ায়
                 ফেনিল স্বপ্নের মতো ভেসে যেতে থাকি । 

                                          সুলতান          
                                  বদরুদোজা শেখু

কে বলে আমি উলুখাগড়া ? আমিই সুলতান , আমিই রাজা
আফিম চরস তাই ছেড়েছি, ধরেছি অধম কল্কি গাঁজা
নেশায় ক্যামন্ বুঁদ হ'য়ে যাই , উড়িয়ে দিই এক্কাগাড়ি
পক্ষীরাজের ডানায় ডানায় তেপান্তরে জমাই পাড়ি,
সেইখানে ঝুন-পাকা দাড়ি পীর বাবাজীর দরগাহ্ আছে
আস্ত তারার আশরফি সব ফুল ফুটে' রয় শুকনো গাছে
এক ফালি চাঁদ দিচ্ছে উঁকি দিনের বেলায় ভেল্কিবাজি
কাউকে পেলেই পাঞ্জা লড়েন , জপেন মুখে  ' গাজী গাজী ' ,
আমি রাজী , এই বাবাজীর কাছেই নাকি হারাবো মান ?
কারণ আমি গাঁজার সাধক, আমিই রাজা আমিই সুলতান,
আমিই ওড়াই এক্কাগাড়ি মঙ্গলে আর চাঁদের দেশে - - -
নইলে কি আর শ্রেষ্ঠ হতাম এই পৃথিবীর প্রাণের দেশে ??



                          ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি
                                রানা চ্যাটার্জী

বেড়াতে যেতে পারলে কে না খুশি হয়।শীতের মরসুম হোক আর গরমের ছুটি অথবা একঘেয়েমি জীবনে নিদেনপক্ষে শনি,রবি বার মিলিয়ে আর তিন চার দিনের ছুটির সুযোগ এলেই এক পায়ে একটু হাওয়া বদলের অপেক্ষায় থাকি অনেকে।সারা বছর মনে মনে  বেড়ানোর পরিকল্পনা তৈরি তে কিন্তু আমরা বাঙালির জুড়ি নেই ।কিন্তু বেড়ানোর সুযোগ হলেও সবাই কিন্ত মনের জোরে বেরিয়ে পড়তে পারে না,ঠেলে গুঁজেও কাউকে জোড় করে কৈ রে যা রে পরিবার নিয়ে ঘুরে আয় এটাও যে খুব ফলপ্রসূ হয় তা নয়।এর জন্য চাই যে বা যারা বেরুবে তাদের মনের তাগিদ,
বেড়ানোর খিদে ও ,"বেরুবো,যা হবে দেখা যাবে",এই মানসিকতার বেশ প্রয়োজন।
বেড়ানোর দিক থেকে শুধু ভারত বর্ষে নয় পৃথিবীতে যত জাতি আছে,বাঙালি তার নামের সাথে যথেষ্ট সুনাম রেখে চলে আজও। অতীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না থাকলেও ,"থাকবো না কো বদ্ধ ঘরে,দেখবো এবার জগৎ টাকে বলে বেরিয়ে পড়তে বাঙালি বেশ সিদ্ধ হস্ত ছিল বলেই প্রমান।পাশের রাজ্যে সমুদ্র সৈকতে যত না সেই রাজ্যের পর্যটক,বাঙালির আনা গোনা স্রোতের মতো বারো মাস,আবার সে বেনারসের ঘাট হোক আর আগ্রার তাজমহল,দক্ষিণী কন্যাকুমারী,কি রাজস্থানের কোন আনাচে কানাচে কিংবা দার্জিলিং বা সিকিমের ছাঙ্গু, গুরুদংমার যাইহোক সর্বত্র ভ্রমণ পিপাসু বাঙ্গালীর চরণ ধূলি ও উৎসুক মুখের জয় জয়কার।
তাই দেখবেন,যেখানে যত দূরেই যান,দু চার জন নিজের লোকের মতো বাঙালি,অনর্গল এই মিষ্টি ভাষায় বকে যাওয়ার লোক ঠিক জুটে যায়। সেবার মহারাষ্ট্রে মহা বালেশ্বরের কাছে এক গুহায় যখন পৌছালাম,কিছু আগে বৃষ্টি হয়ে অন্ধকার যেন আরো ঝুপ করে নেমে গেছে। গাইড বললেন খুব সাবধানে নামলে নামুন,নইলে ছেড়ে দিন,প্রচুর ছোট বাঁদর ও আছে নিচে।জাস্ট দু চারটে সিঁড়ি , বসে বসে চেষ্টা করছি নামার,ও বাবা,বাঁদর দের কিচ কিচানির সাথে কানে এলো বাংলায় অনর্গল বক বক করা দুই প্রেমিক প্রেমিকার গল্প। আর নামিনি,না না অন্ধকার আর বাঁদরের ভয়ে নয়,ওদের প্রাইভেসি যাতে নষ্ট না হয় এটা  মনে করেই উঠে এসেছিলাম।
সেবার একটু চেন্নাই ছুঁয়ে মাইসোর যাবার পরিকল্পনা ছিল পরিবার নিয়ে।ট্রেনের সামনের সিটে বসা দুই ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা কিছুক্ষন পর খুব ভাব জমিয়ে ফেললেন।অবশ্য আমার কেউ সামনে অপরিচিত বসলে সে যদি খুব বেশি মুখ বুজে থাকা মানুষ না হয়,কিছুক্ষন পর যে বক বক করে গল্প করবেনই এই নিয়ে আমি নিশ্চিত থাকি। কথায় কথায় ওই ভদ্রমহিলা দিদির একটা কথা আমায় ভীষণ  উৎসাহিত করে ছিল।উনি কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন,"একঘেয়েমি এই জীবনে সারা বছর ধরেই একটু একটু করে সঞ্চয় করি,বেড়াতে আমাদের বেরুতেই হবে,এমনকি তাতে খাবার মেনুতে চার দিনের পরিবর্তে তিন দিন মাছ করেছি। "ওনার এই জীবন কাহিনী সত্যিই আমায় ভীষণ উৎসাহিত করে ওনার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়েছিল,কমায় নি। ভালো লেগেছিল ওনার ভাবনা। বেড়ানো যে পরিমান এনার্জি দেয় এই ব্যস্ত জীবনে মানুষের,সামান্য হলেও এই ভ্রমণ  খোলা হাওয়া যে নিয়ে আসে আমাদের জীবনে তা যারা সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পরে তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন।সব সময় যে অর্থই বেড়ানোর প্রতিবন্ধকতা হয় তা নয়,বেড়ানোর ইচ্ছাটাও বেশ গুরুত্বপূর্ন


                              সত্যি সত্যি 
                        সিদ্ধার্থ সিংহ
মুর্শিদাবাদ ঘুরতে যাচ্ছে বানেশ্বর। ট্রেনের দোলানিতে বেশ তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। ভাবছিল, গতকালের কথা।
গতকাল বিকেলবেলায় জীবনদ্বীপের উল্টো দিকে এলিয়ট পার্কে বসেছিল ওরা। ও মুর্শিদাবাদ যাচ্ছে শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ঝুম্পার। সেটা দেখে ও বলেছিল, দুটো দিনের তো ব্যাপার। যাব আর আসব।
--- দু... উ... উ... উ... টো... দিন! তোমাকে দু'দিন, মানে আটচল্লিশ ঘণ্টা না দেখে থাকতে হবে!
বানেশ্বর বলেছিল, তুমি আমাকে খুব ভালবাসো, না?
--- হু। লজ্জা পেয়ে উপর-নীচে মৃদু মাথা দুলিয়েছিল ঝুম্পা।
--- আচ্ছা, তুমি কি এ রকম ভাবে আর কাউকে ভালবেসেছ?
--- ধ্যাৎ, আজেবাজে কথা বোলো না তো...
--- না, বলছি, আমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে? --- না।
--- আচ্ছা, তা হলে গত পাঁচ বছরে?
--- না। ঝুম্পা বলেছিল।
--- গত আট বছরে?
--- উঁহু, না।
--- তা হলে বারো বছরে?
---  কোন সাল সেটা? কোন সাল! না... না... নাঃ।
--- গত কুড়ি বছরেও কি এত ভালবাসিনি কাউকে? সত্যি বলছ? আমাকে ছুঁয়ে আছে কিন্তু। মিথ্যে বললে আমি মরে যাব।
ঝুম্পা বলেছিল, সত্যি বলছি, বিশ্বাস করো। আমি কাউকেই তোমার মতো এত ভালবাসিনি।
গতকালের সেই কথা ভাবতে ভাবতে বানেশ্বরের চোখ বুজে এসেছিল। হঠাৎ হুড়মুড় করে কারা যেন চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়ল। সবাই বুঝতে পারল, এরা কেউ ছিঁচকে চোর, ছিনতাইবাজ কিংবা ডাকাত নয়। এরা টেরোরিস্ট। উগ্রপন্থী। এই ট্রেনটাকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য এরা একেবারে তৈরি হয়ে এসেছে। যে কোনও সময় যা কিছু ঘটে যেতে পারে।
ও মুর্শিদাবাদে যাচ্ছে হাজারদুয়ারি দেখতে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! তা হলে কি গতকাল ওর চোখে চোখ রেখে ঝুম্পা মিথ্যেকথা বলেছিল!

সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯


                            অনুতাপের আগুন  
                        ডঃ রমলা মুখার্জী
  
   ড় কাল্পনিক আর উদার পরাগকে  রূপসার বড় ভালো লাগে।পড়াশোনায় বেশ ভালো,সবাইকে বেশ সহযোগিতাও করে।ইংরাজী অনার্সে ভালো ফল করে পরাগ ভর্তি হয়েছে এম.এতে।রূপসাও একই সংগে পড়ে।
     রূপসার ভালো লাগা ক্রমশই ভালোবাসায় পরিণত হল পরাগের সাথে কিছু অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশনের সময়ে।অসাধারণ আবৃত্তি করে পরাগ,রূপসা পরাগের প্রেমে একেবারে পাগল হয়ে উঠল।বড়লোকের খামখেয়ালী মেয়ে,তাই  পরাগ রূপসাকে এড়িয়ে চললেও শেষ পর্যন্ত রূপসার পাগলামিতে ধরা দিয়ে বসল।এম এতে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে,নেট পরীক্ষায় ভালো ফল করে পরাগ গবেষণা করতে শুরু করল।কিন্তু রূপসা আর ধৈর্য্য ধরতে পারল না,দুম করে একদিন পাকাপাকিভাবে চলে এল পরাগের কাছে।পরাগের গবেষণা শেষে অধ্যাপনা করার ইচ্ছে,আর তখনই বিয়ের কথা ভাবত।কিন্তু কি করবে,রূপসার বাড়িতে নাকি বিয়ের জন্য রোজই কোন না কোন পাত্রপক্ষ আসছে।একজায়গায় তো প্রায় ঠিকঠাক।মধ্যবিত্ত পরাগের সাথে বিয়ে রূপসার বাড়ি থেকে দেবে না।
    বিধবা মা রমাদেবীকে নিয়ে সুখের সংসার পরাগের। মায়ের পেনশন আর তার  ফেলোশিপের টাকায় ভালোভাবেই চলে যায়, প্রাচুর্য না থাক শান্তি তো আছে।কিন্তু রূপসা আসার কিছু মাস পর থেকেই সেই মহাশান্তির সংসারে জ্বলল অশান্তির আগুন।
   রূপসার দামী দামী পোশাক আর বিউটি পারলারের ঠেলায় পরাগ একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়ল।
রূপসারও ততদিনে মোহভঙ্গ হয়েছে,ধনী ব্যবসাদার অনলের সাথে ঘর বাঁধল রূপসা।
    পরাগ অধ্যাপক হয়েছে,তবুও বিয়ে করছে না।একটা কিসের প্রতীক্ষায় সে দিন গোনে। রমাদেবী বিয়ের কথা পাড়লেই পরাগ বড় রেগে যায়,এর কারণ কি কিছুই রমাদেবী বুঝে উঠতে পারেন না,তাই আর বেশি জোর করেন না।
     প্রবল শীতের এক ঝড়-বৃষ্টির  রাতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার মত এসে হাজির হল রূপসা। সারা শরীরে ক্ষত,অনলের অত্যাচারের চিহ্ন।রমাদেবীর প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করেও পরাগ রূপসাকে ঠাঁই দিল।অনুতাপের আগুনে দগ্ধ রূপসা এখন খাঁটি সোনা।

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯




                                       জবাবি খাম
                                   দেবযানি বসু


              পুরানো আমলের বক্ষবন্ধনী প্রজাপতি আজ
              জল থেকে তরঙ্গ তুলে নেবার আনন্দছবি
              রক্তের বুদ্বুদ বেলুনের ত্বক শুষে নেয় জেনে রেখো
              আমরা সকাল বিকাল অসুখ চিবিয়ে খাই
             ডাকঘরের লকগেট ভেঙে চিঠিগুলো প্রজাপতি হল
             শুঁয়োপোকার সঙ্গে সঙ্গমে মত্ত ছিল চিঠিরা একসময়
             লেস রাখি পুঁতি বসাই কলমে সেলাই করি প্রভা 
             কাউকে ভুলি না বাতিল করি নি তাও উড়ে যায় পতঙ্গ।

                                              মর্ম 
                    দেবাশীষ তেওয়ারি

          এক মুঠো বিশ্রাম অবস্থান করে আছে সরলরেখায়
              সিঁথির থেকে বয়ে চলেছে অন্ধকারের দিকে
              আমি ধারাপাত আটকাতে জানি না
             জানি না শহরের সঠিক সর্বনাম
             এখান থেকে পৃথিবী অনেক দূর
             হারিকেন নিভিয়ে দিলে অন্ধকারের বাহুতে-
             ফাটা দাগ হু হু করে মাথা উঁচিয়ে হাসছে
             কিছুক্ষণ পর ছড়িয়ে যাবে শরীরের সমস্ত সীমানায়
            ঠোঁটের কোণে তখন ভিজতে থাকে বেনামি কাব্যেরা
            ছায়া গুলো মূর্তি হয়ে যাক
           সেভাবে আমি তলিয়ে যাব,ছায়াদের প্রতিযোগিতায়.....
           যেভাবে  কবরের কাছে সুখ রেখে যায় বিষণ্ণ মানুষ ।   

                         শুঁড়ি খানার কবিতা 
                     সনাতন মাজি (ময়না)

    মানুষের ডিম ভাজে আহারী টোলার পাশে,
   দোপাখা উনুনে জ্বলে চন্দন কাঠের গুঁড়ি।
   নষ্ট বীজ পাশাপাশি জাগে আলো ফুট্ -টু-
   ডুম্ , উহ‍্য থাকে জাহান্নাম উঁকি দেয় হাসাহাসি। গাছের যৌনাঙ্গ ফুল     খিলখিলায় রাতে, মুখে গোঁজা জললিঙ্গ
   ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচে।কবিতার খোঁজ করি
   শুঁড়িখানায় এসে , হো হো করে হাসে কবিতা শরম খুলে দেখায় ।


                                         ভ্যা অ ক্যা
                       জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
      প্রেম লিখতে পারে নি তাই প্রজাপতিটি
      অরসিকেষু রসস্য নিবেদনং...... বল খুব হেসেছিল পাখিদের                      চিৎকারেও বিছুটি
     কিছু কম ছিল না।ভ্যাবলাকান্তের দ্বিধাবিদ্ধ লজ্জা
     কনেদেখা আলোর সাথে ১০০ মিটার রেসে চ্যাম্পিয়ন
     এরপর কপালে কে যেন অবুঝকান্ত স্টিকার লাগায়।
     বেশ কটা তীক্ষ্ণ ভ্রূ তির হয়ে চাঁদমারি ছেঁড়ে।
     হাসি আঁকতে পারেনি বলে খুশিগঞ্জের ঘর ছেড়ে
    সে এখন রামগরুড়ের ভাড়াটিয়া।আকাশের দিকে
    তাকায় আর  খুশিমেঘ খোঁজে মেঘদূত কোন ছাড়
    হিমালয়ের মতো গম্ভীর কটি পর্বত কচ্ছপ হাঁটে।
    খোলা রোদে মেলানিন হাসে সে এখন কালো দুপাশে আগুন
     হিম টিম নেই ....... হাসিমুখ ডাকে।
     ফুল দেখে হাসি আঁকা হলো কিন্তু কেউ দেখে না
     তাই খুশিমুখ নাম দিল ক্যাবলাকান্ত।
    তাতে বেশ খানিক প্রশ্রয় লেগে।

                                 সংকট 
                        আব্দুস সালাম
       
                 সুন্দরী মাছরাঙাদের দেখে পরাণ জুড়ায়
                  শ‍্যাওলা মাখা জীবনে প্রেম স্বপ্ন দেখায়
                  উঁকি মারে উত্তাপহীন ক্ষয়াটে সময় 
                  আস্তিনে চাপা পড়ে আছে মেঘলা সন্দেহ
                  অপেক্ষা করে আছে কূটীল ভবিষ্যৎ

                          এক আকাশ নীল রং 
                                     কুনাল গোস্বামী

        আবারও কি ফিরে পাওয়া যায় কবিতা
           স্পর্শ করে প্রেমিকার কম্পিত ঠোঁট, পাঠিকার নরম হাত?
            যাক্ যা গেছে চলে
           এক আকাশ নীল রঙ শুধু থাক আমারই তবে।
           প্রেমরসে যে কবি খুঁজেছিলে তুমি
           সে কবি হারিয়ে গেছে গাঢ় অন্ধকারে ছায়াদের মতো
           উতফুল্ল জীবন স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারিনি বলে
          আজও আমার কবিতায় নিদ্রাহীন অশ্রুনদের নোনতা স্বাদ                           মেলে।
          হয়তো আরও কিছুটা বছর পর যখন ফিরে চাইব অতীত                            স্মৃতিগুচ্ছের দিকে
          তখন জীবনের সাদা ক্যানভাসে লিখে যাব আমার মৃত্যু                              চাই,মৃত্যু চাই,মৃত্যু চাই,
           আর চাই এক আকাশ নীল রঙ।

                              অণুগল্প
   
                                    স্বখাতসলিল
                                    মন্টু কুম্ভকার

ত কয়েকদিন বাড়িতে ছিলাম না । কুলুঙ্গিতে রাখা কড়াই টিতে বড্ড ধুলো জমেছে। আমার আবার কমরে অমানুষিক  কনকনানি । এদিকে বউ এর উঁচু গলা আমার মাথা ছাপিয়ে যায়। ধূলো ঝাড়বার ক্ষমতা আমার যেমন নেই ,তেমন চুপটি করে শুনি-দেখি-ভাবি আর নিজেকে হারানোর বাহানা খুঁজি। কখনো সহজ সরল লাইন বানাই : কবিতা।নিন্দুকের মুখ খুলতে শুরু করে।
বার বার অনুনয় করি-হে বিধাতা এক বালতি মৃত্যুই না হয় দাও মাথাটা চুবিয়ে শান্তি পাই!
আমার ক্ষীণ কন্ঠস্বর বুজে যায় বউ এর আঁচলায় । থমকে যাই।আর মৃত্যু নয় এক বালতি জল দিলে তাড়াতাড়ি ভাত টা ফুটিয়ে নিতাম।

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৯


                                 দীর্ঘ বিষাদ শেষে 
                         অনুপম চক্রবর্তী


                            দীর্ঘ বিষাদ শেষে পড়ে থাকে
                           পৃথিবীর শেষ আবাহন
                           রাত্রি নিবিড় হয়
                           আকাশে বিষ্ময়ের চাঁদ
                           চেয়ে থাকে পাড় ভাঙা দূরত্বের মত
                           দীর্ঘ বিকেল শেষে ঘুমের আলাপ
                           আঙুলে শ্রাবণ নামে
                           টুপটাপ আদরের গায়ে
                          পেরিয়ে বাঁকের পরে বাঁক
                           মুগ্ধতা খুঁজে যায়
                          কোন এক দীর্ঘ জীবনে । 


                                 ★ অনুপ্রবন্ধ 
                         কাঁটা তারে ঝুলে থাকা শব
                                        বৈদুর্য সরকার


দেশের সত্তরোর্ধ্ব স্বাধীনতার হাল হয়েছে পেনসন নাথাকা হাঁপানি ও বাতের ব্যাথায় ভোগা খিটখিটে বুড়ো-স্বরাজ বসুর মতো । যার স্ত্রী ভারতী, ছেঁড়া শাড়িতেসাক্ষাৎ ভারতমাতা । ছেলেরা কেউ বাইরে চাকরিকরছে, নকশাল টাইমে একজন মরেছে, কেউ পাড়ারদাদা হয়েছে, কলেজে পড়ার সময় বাড়ি ছেড়েপালানো বড় মেয়ে ডিভোর্স করে বাপের বাড়ি ফিরেএসেছে, আরেক মেয়ে প্রতিবন্ধী – বাইরে বেরোতেপারে না । মানে, যাকে বলে – একদম সুখের সংসার। তবে ভারতমাতার এই সংসারে বাজারে কিছু ধারজমে যাওয়া সত্ত্বেও কোনও রোববার দুপুরে খাসিরমাংসের খুসবু বেরোয়, পুজোয় সবার নতুন জামা হয়,ছাদ দিয়ে বর্ষায় কয়েক ফোঁটা করে জল পড়লেওইলিশ ভাজার গন্ধও পাওয়া যায় এক আধদিন। শীতেরসন্ধেয় ছাদের টবে ফোঁটা বেলফুলের গন্ধ হাওয়ায়ভাসে বেশ । ভারতীর বন্ধু পাশের পাড়ার হাসিনাঈদের দিন সিমুই দিয়ে যায় ।  নাতি নাতনিরাক্রিসমাসের ছুটিতে এসে টুপি আর কেক নিয়েহুটোপাটি করে । সব মিলিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছে দিন ।            
                       ★
চালু ধারণা, ভারতে মানবসভ্যতার ইতিহাস ( সিন্ধুসভ্যতাকে প্রামাণ্য ধরলে ) পাঁচ হাজার বছর ।  এতবছরেও ভারতবাসী সঠিক বুঝে উঠতে পারলো না –তারা আর্য নাকি অনার্য অথবা মঙ্গোল কিংবাককেশীয় । ভারতে এত বছরে এতরকম আক্রমণ এতরাজার রাজত্ব এসেছে – আসল পরিচয়টাই মুছে গেছে। এত লোকের পূর্বপুরুষ কে যে কোথা থেকে এসেছিলকোনও হদিস নেই ! তাই সাড়ে বত্রিশ ভাজার মতোশুধু টিকে আছে একটাই পরিচয় – ইণ্ডিয়ান । যদিওজানা গেল – আজও সবার নাম নথিভুক্ত নয় ।
                       ★
মাধ্যমিক পরীক্ষায় ম্যাপ পয়েন্টিংয়ে যে ম্যাপ দেওয়াহতো – তার অনেকটাই কল্পিত । লজ্জায় মাথা কাটাগেছে – একদিকের অংশ পাকিস্তান অধিকৃত আজাদকাশ্মীর, আরেকদিকে অক্ষয় চীন । সেখানে এখনপ্রতিবেশী দেশের সেনাবাহিনী মোচ্ছব করছে ।অরুণাচল সীমান্তও অরক্ষিত প্রায় – যে কোনও সময়েক্ষমতাসম্পন্ন চীনের হানাদাররা ধেয়ে আসতে পারে ।তিব্বত নিয়েও দীর্ঘদিনের মন কষাকষি । কাশ্মীরেরঅবস্থা প্যালেস্তাইনের মতো – গুলি থামে না । জম্মুই সম্ভবত ম্যাপের ওপর দিকের সেই প্রান্ত যেখানেনির্বিঘ্নে স্বাধীন ভারতের তেরঙা উড়বে পতপত করে ।যদিও এককালে এখান থেকে যে সব পণ্ডিতরা হারিয়েগেছিল, তাদের কোনও খোঁজ মেলেনি  আজও ।
                       ★
স্বাধীনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন সংগঠনবিভিন্নরকম পতাকা ব্যবহার করলেও ১৯৪৭-র ২২জুলাই থেকে অন্ধ্রের পিঙ্গালি ভেঙ্কইয়ার ডিসাইন করাত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা ব্যবহৃত হচ্ছে । স্বাধীনতাকি প্রকৃত অর্থেই ত্রিবর্ণরঞ্জিত নাকি স্বাধীনতার রংসশস্ত্র বিপ্লবীদের রক্তের মতো লাল অথবা বর্ডারপেরোনো মানুষর মতো পাংশু কিংবা কারাগারেরঅন্ধকারের মতো কালো – সে উত্তর জানতে পারিনিএখনও । লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনেরসময় জঙ্গী হামলার খবর যে ভেসে আসবে না – তাইবা কে বলতে পারে ! কেউ কি বলতে পারে সার্বভৌমরাষ্ট্রের ধারণা নস্যাৎ করে – আঞ্চলিক ম্যাপগুলোক্রমাগত বদলে চলেছে কাদের উস্কানিতে !সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বেশ গালভরা একটা কথাহলেও – তা থেকে গেছে বিজ্ঞাপনী প্রচারের মতো ।যেগুলো নিয়মমাফিক প্রচারিত হয় – কেউ বিশেষকান দেয় না । ভারতে সেক্যুলার গপ্পো নিয়ে রাজনীতিকরে একদল, আরেকদল তার উল্টো কথা বলে লোকখ্যাপায় ।
                       ★
ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ার আগে ভারত কখনও সমষ্টি হিসেবেথাকেনি, বেঁচে ছিল অনৈক্য এবং আঞ্চলিকতায় ।মধ্যযুগে মোগল সুলতানরা, খিলজি-লোধি কেউইপারেনি গোটা ভারত একযোগে শাসন করতে । তারআগে মৌর্য গুপ্ত কুষান যুগেও হয়নি সের’মসম্প্রসারণ । স্বাধীনতা এসেছিল যেহেতু দেশভাগেরপরিণতির মাধ্যমে এবং তা মূলত ধর্মের ওপর ভিত্তিকরে, তাই ধর্মের অনুশাসনগুলো নিয়ে আজকেরবিজ্ঞান প্রযুক্তির এতরকম অগ্রগতির পরেও দেশেরঅধিকাংশ মানুষ ভীষণ ভাবিত । ইতিহাস অনুযায়ীপাঞ্জাব ও বাংলার কিছু অংশ স্বাধীনতার সময়অদলবদল হয়েছিল। হায়দ্রাবাদের নিজাম পাকিস্তানেযেতে চেয়েছিল কিন্তু ওখানকার বেশীরভাগ মানুষছিল হিন্দু। আবার কাশ্মীরে উল্টো ব্যাপার । রাজাহিন্দু কিন্তু প্রজারা মুসলমান । পুরোপুরি কনফিউজিংঅবস্থায় র‍্যাডক্লিফের আগোছালো ম্যাপ অনুযায়ীতাড়াহুড়ো করে দেশভাগ করে কংগ্রেস ও মুসলিমলীগের নেতারা গদিতে বসে পড়ে । যার জের এখনওচলছে – হয়তো যতদিন উপমহাদেশে সভ্যতা থাকবে,ততদিন ভাঙন ধরা এককালের যৌথ পরিবারের মতোখিটমিটি লেগেই থাকবে।
                       ★
পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতসক্রিয় থেকেছিল – রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক যেকারণেই হোক । ফলে এই দেশে আশ্রয় দিতে হয়েছেঘর হারানো কোটি মানুষকে । ১৯৭১ থেকে আসামানুষের স্রোত এখনও অব্যাহত – ওদিক থেকেএদিকে । শোনা যায় একই কায়দায় বাংলাদেশ থেকেকলকাতা হয়ে জঙ্গিদেরও অনুপ্রবেশ ঘটছে । যদিওনাকি তারা সেফ করিডর হিসেবে ব্যবহার করারসুবিধের জন্যই কলকাতায় বিশেষ হাঙ্গামা করে না । 
এই অনুপ্রবেশকে আটকাতে – তৈরি হওয়া অসমেরখসড়া জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিতর্ক চলছে,অরুণাচল নিয়েও একই সংকট । ঘরহারাদের মাথাগোঁজার ঠাই যেমন একটা সেন্টিমেন্ট, ভূমিপুত্রদেরজীবন জীবিকা সংক্রান্ত সমস্যাও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ ।তাই তর্কের কোনও শেষ হয় না । বৃহত্তম গণতন্ত্রেসম্ভবত ভোটারের সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে – কয়েককোটি মানুষের সঠিক পরিচয় জানা গেল না আজও।এটাও জানা গেল না – আনুমানিক আরও কত বছরসংরক্ষণ চালু থাকলে অনগ্রসর মানুষেরা দেশেরমুলস্রোতে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব ।

                                     অণুগল্প 

                           ব্রেক আপের পরের পৃষ্টা
                              অনুপকুমার সরকার

প্যাচপ্যাচেভেজা আঁখি পল্লব জোড়ায় শ্রাবণের ধারা বেয়ে চলেছে । মায়ের ডাক শুনে দ্যুতি হকচকিয়ে কোনমতে চোখ মুছে বলল, কী মা ? তোর বাবাকে একবার ফোন করে দেখ তো কোথায় আছে, এতো দেরি হওয়ার তো কথা নয় । যা গরম পড়েছে আজকে । হ্যাঁ মা করছি দাড়াও একটু । সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে তাদের সম্পর্কের । নীলাদ্রি রোজ ফোন করেই যায় ব্রেক আপ হওয়া সত্ত্বেও । জোড়া তালি দিয়ে হলেও সম্পর্কটা রক্ষা করতে চেয়েছিল নীলাদ্রি । সম্পর্কের টানাপোড়েন নয়, কবেই যে ইতি ঘটেছে সেসব ঠাওর করতে পারছে না । বর্ষাকালীন সময়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা কোনো কোনো নদীও একসময়ে শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিনত হয়ে যায় । মাঝে মাঝে মনে হয়, আদৌ কি এখান দিয়ে কোনো নদী বয়ে গেছে । নীলাদ্রি সাথে দ্যুতির সম্পর্কটাও ঠিক ঐ রকম বর্তমানে ।
দ্যুতি মোটেও হতে চায় না অতীত কাহিনীর গল্পের লাইন । সম্পর্কের অবনতি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে । দিন দিন দ্যুতি ঠিক কেমনই যেন হয়ে যাচ্ছে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না । মেয়েটা কম কথা বলে, ঐ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মুখ হাত ধুয়ে জানালার গ্রিল ধরে বসে থাকে । দ্যুতির দুঃখের গাঙ অনেক গভীর । দেখে ঠাওর করার উপায় নাই । বেশ কয়েক দিন ধরেই মা বাবার সাথেও ব্যবহার ঠিক হচ্ছে না, সেটাও উপলব্ধি করতে পারছে দ্যুতি । রাতেও ঠিক সময়ে ঘুমায় না । দিন দিন শরীরের যে কি হাল হচ্ছে, দেখে মনে হয় খুবই অসুস্থ মেয়েটা । রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন জানালার গ্রিল ধরে আঁধফালি বাকা চাঁদকে গোলাকার হতে দেখেছে । আবার পুনরায় গোলাকার চাঁদকে কমতে কমতে সেই আঁধফালি হতে দেখেছে । আর তখন তার নিজের জীবনের গল্প গুলো আর খুনসুটি দেয় না হৃদয়ের জঞ্জালযুক্ত আঙিনায় । রোজ রাতে তার অতীত বৃতান্তের কাছে ধর্ষিতা হয় দ্যুতি । তাকে কামড়ে জখম করে ছিঁড়ে খায় । তখন দ্যুতি একা একাই মিট মিট করে হাসে । একা একাই কত কথকতা কয় । সন্ধ্যার জানালায় দ্যুতি খুঁজে পায় জোনাকির মিট মিটে আলো আর সঙ্গে ঝি ঝি পোকার কলরব । দ্যুতি কেমনই যেন দিন দিন প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার ঘেরার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে । পূর্ণিমার জ্যোৎস্না জানালার গ্রিল ভেঙে যখন বিছানায় আসে দ্যুতি সেই জ্যোৎস্নার আলোর সাথে খুনসুটি করে । আবার অমাবস্যার কালো অন্ধকারেও একটা জোনাকির মৃদু আলো সমস্ত ঘরকে আলোকিত করে দিয়ে যায় ।