সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

কবিতা : সৌরভ বর্ধন


 
মশান চক্রে আমি স্থির হন্যে ব্যাঘ্রের মতো অবশ হয়ে আছি
নৃত্য-যোনির ভেতর দীর্ঘায়ু ফুটে বেরোচ্ছে আমার পদ্মকোষ
আমার নাদের অন্তরালে পরিশ্রমের পাল্টা ল্যাকটিক আমি
কখনও ছুঁইনি তাই জারিত বিশ্রাম মুক্তি নামের শাপ দিয়েছে
ফলত বিদ্রোহী অন্ধকারের কুটো-চামড়া খুলে উড়ছে রাংতা
পরতে পরতে ঝিমিয়ে আসছে কাব্যকল্পদ্রুম আর ধ্যানস্থ ধী
আমার এক আদি-অস্ত্রাল সন্তান এত এত পাখি বলতে পারে
যে সব মৎস্য উড়ে যায় মোক্ষ নামের অপরাধবোধ গিলে...
নির্বাণ মানে শূন্য-বিজ্ঞান-মহাসুখ হওয়ায় আমি আবার ফিরে
যাই শামুকের উৎসে দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রহ করি শম্বুক-খোল
হাড়গোড়হীন সে এক যুগপৎ সুপ্তহত্যার হাত ধরে নিজেদের
মূলাধার চেটে নিই অনির্বাণ ভরকেন্দ্রের দৌলতে যুদ্ধ ঘোষণা
করি অনাক্রম্যতার সলতের নীল চোখে কর্ণিয়া রাখি রোজ
দুহাতে চন্দ্রাহত শাকসবজি নিয়ে অগ্রন্থিত পুস্তকাদি সাজাই

কবিতা : অনুশ্রীতা বিশ্বাস

  
   প্রভাতী সুরের গানের  দোলায় -
               
   আকাশ ভরা সূর্যের হাসির মতো 
   তোমার আমার জীবনে আগমন। 

   আগমন টা ছিল সন্ধ্যা। 
   সূর্যের আলো রশ্মি যখন আমাকে দাহ করছে 
   তুমি চন্দ্রিমার প্রেমময় আগমন  ঘটালে। 

   তুমি শুধু তোমার বলো নি? 
   তুমি  আমাদের বুঝিয়েছ। 
   তুমি তুলি দিয়ে   - 
   আমার ফাঁকা ক্যানভাসে 
   রঙের বর্ষণ করেছ ।

   হৃদয়ের ক্ষুদা তুমি জাগিয়াছো। 
   প্রেমিকস্বতা তুমি -
   প্রেমিকার আত্মঅহংকার  দাতা। 

   পিপাসিত ওষ্ঠে তুমি    -
   নীলকণ্ঠের মতো পতি পরমেশ্বর। 

   মানবী আমি তোমার তৃষ্ণায়ে  তৃষ্ণার্থ। 

   হৃদয়ের বৈশাখী জোছনার তুমি --
   কালবৈশাখী। 

কবিতা : দেবস্মিতা দাস


আরও একটা ক্ষুধার্ত রাত নামে,
হিংস্র পোকামাকড়ের কামনার বলি হওয়া এক গোলাপ
আজও লাল হয়ে ফুটে আছে ।
দূর থেকে ভেসে আসে শিকারির জালে ফুলের প্রলাপ ।

 এই বুঝি তার পালা এল ,
শিশিরসিক্ত উজ্জ্বল পাপড়ি এই বুঝি আঁধার
হয়ে শুকনো বৃন্তে মিলালো ।
ঐ আসে তার জীবনের কালো মেঘের আষাঢ় ।
কুঁড়িতে ধর্ষিত হওয়া আরও একটা ফুলের উপসংহারে ,
খুঁজে পাই ভূমিকা না হওয়া এক নিষ্পাপ বালিকারে ।

কবিতা : শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস


সমুদ্র ভর্তি এক গ্লাস জল। 

নুনের ছিটা দেওয়া মন- আগুনের ভেতর থেকে
গলগল করে কেঁদে উঠলো ঘরের ধোঁয়া।  

রংমহলের টাওয়ার ফেল করছে। 

গলগণ্ড
আকাশে মেঘ না থাকলে,
চেনা আঁচলের গিঁটে বাঁধা অসুখের পাশে
তোমার আমার কথা হবে পৃথিবীর আশ্চর্য শহরের যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে।     

কবিতা : সাত্যকি


    আজ অনেকগুলো দিন পরে 
    আবার আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কথাদের
    রোজ একটু একটু করে হারাচ্ছি 
    চেনা মানুষের শব্দ ভিড় গন্ধ 
    পরিমিত সব হারাচ্ছে এই বিকেলের রোদে
    দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি 
    চেনা পৃথিবী বদলাচ্ছে কি দ্রুত 
   বসন্ত ফিকে হচ্ছে চৈত্র অবসানে!

কবিতা : অর্ঘ্য কমল পাত্র


            মোটরবাইকে লং ড্রাইভে গিয়ে
            ছেলেটি দেখেছে—
            কীভাবে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং,
            হলুদ ল্যাম্পপোস্ট আর
           ওয়েলকাম লেখা পোস্টার
            ছেড়ে চলে যায় সকলকে...

           তাই ছেলেটি গাছের নীচে বসে
           সিগারেট খাচ্ছে আর ভাবছে
           —এই বসন্তে, কোনো রং
           সে মাখবে না

কবিতা : অরুণাভ নিয়োগী


   নিজেকে গলিয়ে নিই জামার ভিতর 
   আকন্ঠ গিলে নিই তোমার উপদেশ 
   হাঁটতে হাঁটতে হাঁটুকে ছুঁয়ে কথা বলি চৌরাস্তায়। 

   যেভাবে খালে ভিজে গেছে আমাদের শৈশব 
  সেভাবেই ডুবতে দেখে জলকে আপন করেছে 
  একা একা মজে যাওয়া নদী। 

   বাঁধানো স্নানের ঘাট যেভাবে বর্ষায় ভেসে গেছে
  সেভাবেই ভাসতে ভাসতে একটা আস্ত নদী 
  আমার হাতের তালুতে মাথা রেখেছে ! 

      

কবিতা : সৌরভ মান্না


আর কিছু ভাঙা অসম্ভব -
ভাঙতে-ভাঙতে,গড়ার প্রক্রিয়াটাই 
অবাধে লুপ্ত হয়েছে ;
প্রতিদিন যেন রক্তপান করে চলেছি !
তোমাদের ক্ষোভ,ক্রোধ,বিরহ,বিচ্ছেদ ,
লাল চোখ রাঙানী 
এসবের নির্দয় অশিক্ষায় ,বেঁধোনা -
কিছু ভাইরাসহীন ভালোবাসায় 
কটাদিন নয়,নির্মোহে বেঁচে থাকি।

কবিতা : অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়


              সোনালী রঙ মেহগিনি পাতা গলে
              ঢলে পড়ছে পশ্চিমে
              লালধুলেবালি ডানা মেলে
              উড়ে যায় ময়ূরাক্ষী জলপথে
              মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে থাকা
              এমন সময় না- বলা প্রেম
              অনেক কথা বলে যেতে চায়
              এলোমেলো হয়ে যায় মুহূর্ত
              কেটে যায় ঘুড়ির মতন দিগভ্রান্ত
              চলে যায় শূন্যে..…...

কবিতা : হামিদুল ইসলাম


বসন্তের ছোঁয়ায় পাততাড়ি গুণি এবেলা ওবেলা 
নজরবন্দি পলাশ শিমূল
নৈঃশব্দের বাতাবরণ ভেঙে বেরিয়ে আসে এক মায়াবী মুখ 
অস্থিরতা তার শরীর জুড়ে 
তার চোখের কোণে স্নান সারে খরস্রোতা নদী  ।।

অস্বচ্ছ ভাবনায় ভাঙি ছবির দেয়াল 
আগুনে পোড়াই সমস্ত অনুভূতি 
তবু দেখি তার অনর্থক ফেরার পথে আমার অসম্ভব ব‍্যাকুলতা  
নিজের অস্তিত্ব অনুভব করি 
এক বিশাল ময়াল মৃত‍্যুকোষ গিলে খায় নিরবধি  ।।

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০

কবিতা : বদরুদ্দোজা শেখু


ঘুমঘোরে জেগে উঠি , ঝিরিঝিরি ভোরের মলয়
শিরশিরে আমেজ দ্যায়, দেহমন বিরহী হৃদয়
আপ্লুত নন্দিত হয় , পাখিরাও শুনি অনুভব করে এই প্রসন্নতা , মৃদু মৃদু সুখী কলরব
ইতস্ততঃ ভেসে আসে, আশপাশে নীরব স্থবির
ঘরবাড়িগুলো ঢুলে দেউড়ির দরমা-টাটির
খিল তুলে, অনাবিল শান্তির প্রহর ঘুরে যায়
জগতের বিপন্ন সত্ত্বার  আতঙ্কিত অসহায়
জনপদ জুড়ে জুড়ে, ফুঁড়ে উঠে প্রাগৈতিহাসিক
মানব-সভ্যতা, প্রত্ন খায় বিশ্বত্রাস করোণা-বৃশ্চিক !!

কবিতা : মিঠুন রায়

         তোমার অতসীপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করেছে অনেক আগেই,
         রান্নাঘরে বাটা হলুদের মতো তোমার মুখশ্রী,
         সবুজ বণানী জুড়ে ফুটে উঠেছে শ্বাশত প্রেমের শতদল।
         আমি তোমার প্রেমিক নাকি অন‍্য কেউ,জানিনা।
         বৃষ্টির সোঁদা গন্ধে সমোহিত হয়ে পড়ি অপ্রত‍্যাশিত,
         প্রেমের মোহে তোমার সহস্র ভুলেও খুঁজে পাই বিবর্ণ অজ্ঞানতা,
         শুধু স্বপ্নের সুতোয় নক্সীকাঁথা বুনি।

কবিতা : অরূপ সরকার


      এ ছাদ ও ছাদ পায়চারি করে রোদ।
      বাডির  উঠানে চুল খুলে বসে নদী
      বিস্মৃতিতে  এটাই ভুলে গেছি
     শেষবার কবে কেঁদেছিল হৃদি ,

     ঘনিয়ে এসেছে মনের  নিম্নচাপ
     জ্বর মেপে নেয়  কপালের উত্তাপ,
     মন বুঝে নেয় নির্বাক  সংলাপ।

     মেঘ চলে যায় পাশের পাড়ার দিকে
     গান শোনায় অভিমানী সন্ন্যাসী।
     আমি আজও হেঁটে পার হয়ে যাই  কত শত 
     অভিশাপ রাশি।

কবিতা : ডঃ চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী

 
   রাত-ঘুম ভেঙে দু-লাইন লিখে ফেলার পর
   বড়ো প্রশান্তি এসে ঘিরে ধরে
  নৈ:শব্দ হাতড়ে তখন স্বপ্ন আছড়ে চৌচির করি
  দু:স্বপ্নরা পাড়ি জমায় অন্যত্র! 
  এক আঁধার রাতই যথেষ্ট মনে হয় 
  আসল মুক্তোর ছটায় নিজেকে খুঁজে পেয়ে
  আমি দাঁড়াই এসে অমিতপরাক্রমী--

  হে আর্কিমিডিস, তুমি বার বার আসো,
  ফিরে ফিরে আসো 
   তবেই না সৃষ্টি বাঁচে শাশ্বতকাল !

কবিতা : প্রণব কুমার চক্রবর্তী


উপত্যকা জুড়ে বইছে এক নোতুন হাওয়া  .......

এঁকে দিচ্ছে মাটির বুকে কান্না ভেজা মৃত্যুর                                       একটা সুন্দর হিম-শীতলতা 
ক্রমশ নিশ্চুপ হয়ে পড়ছে উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা 
শঙ্কিত সব গার্হস্থ  আলোচনা আর
                                      সকাল-সন্ধ্যার প্রার্থনা  
শূন্যতার করিডরে তৈরি হওয়া 
নোতুন এক যন্ত্রণার ব্যাকরণ 
সূর্য এবং চন্দ্রের উত্তাপ মেখে বৃষ্টি হয়ে 
নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে ......

শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০

কবিতা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



নিথর দুপুরের গায়ে তুমি সারাদিন মিশে থাকো
নৈঃশব্দ্যের ঠোঁট থেকে যে অবাধ চুম্বন ঝরে পড়ে
তার আলোকিত পেলবতা তোমার শরীর সম্পদে

স্থির হয়ে পান করি লালারস
স্পর্শে উন্মাদ হই তোমার উদ্দাম মুখরতা

দুজনেই ঘুমিয়ে
তবুও চেনা সমীকরণের
গোপনীয় ইঙ্গিতে স্পষ্ট আমাদের উদ্দাম লীলা

আমরা আমৃত্যু হেঁটে যাব।

অনুগল্প : পৌলমী সরকার

 একটা চড়, সিদ্ধান্তটা নিতে খুব একটা দেরি করেনি মেয়েটি, হাতের কাছেই পেয়েছিল উপকরণ; ঠাকুমার ঘুমের ওষুধের শিশিটি। মেয়ের অধঃপতনের খবর পেয়েছিল শিল্পী বাবা। সে সমস্ত সত্তা বিকিয়ে দিয়েছে সামান্য কটা টাকার জন্য। ন্যুড মডেল হয়ে টাকা ইনকাম করেছে। এমন মেয়ের বাবা হয়ে বেঁচে থাকার কষ্টে তিনি বাঁচতে চান না একমুহূর্ত... বিছানায় শুয়ে থাক

অনুগল্প : প্রতিমা ভট্টাচার্য মণ্ডল

আজ খুব ভোরেই ঘুম ভাঙ্গলো ঊর্মিলা দেবীর,যদিও তিনি রোজ সকাল সকাল বিছানা ছাড়েন।তারাতারি স্নান সেরে ঠাকুরের কাছে জোর হাত করে বললেন-"ঠাকুর আমার বাবাই এর আজ চল্লিশতম জন্মদিন ওকে ভালো রেখো, সুখে শান্তিতে ভরিয়ে দিয়ো।" মনে মনে ভাবতে লাগলেন ছোট বেলায় নিজেই পায়েস রান্না করে ঠাকুরকে নিবেদন করে ছেলের মুখে দিতেন।এখন সে উপায় নেই।বাবাই এর বাবা মারা গেছেন আট বছর হতে চললো, তার পরের বছরই হরিদ্বার বেরাতে নিয়ে আসে বাবাই আর বৌমা,সঙ্গে দু'বছরের নাতি।তারপর সেই যে হরিদ্বারের ঘাটে রেখে চলে গেলো আর এলোনা। দেখতে দেখতে ছয় বছর পার হয়ে গেলো ঊর্মিলা দেবী জানেন তাঁরা আর কোনদিন আসবে না।

অনুগল্প : কৃষ্ণেন্দু দাস ঠাকুর

বাঁশি বাজছে। গাছের পাতাগুলো ক্রমশ টানটান হয়ে যাচ্ছে। নদীর জল স্থির। বহু কষ্টে জোগাড় করা পাখির মুখে খড়-কুটো মাটিতে পড়ে যাচ্ছে । 
"তুমি তো দারুণ বাঁশি বাজাও। আহা! এত সুর বাঁশিতে! সত্যি শুনে মনটা উদাস হয়ে যায়। মনে হয়--- এ-জগৎ, এ-সংসার সবই মিথ্যা।"

অপুর কানে সেসব কিছুই ঢোকে না। ও গাছে হেলান দেয়, আবার চোখ বন্ধ করে, বাঁশিতে ফুঁ দেয়। একটা, একটা করে বাঁশির ফুটোয় হাত দেয়, আবার ছাড়ে এক অনাবিল স্বর্গীয় সুর ওঠে--- বাবা-মার শরীর খিদের জ্বালায় টানটান হয়ে যাচ্ছে। ভাতের জল ফুটতে ফুটতে একসময় গভীর রাতের মতো স্থির হয়ে যাচ্ছে। খড়ের অভাবে ঘর থেকে মাটি গলে গলে পড়ছে। 

"তোর মতো যদি বাজাতে পারতাম। শিখিয়ে দিবি আমায় কোন ফুটোতে কি সুর বাজে...?"

অনুগল্প : রবিন বসু

বেশ খেলছিল সত্যব্রত। নিঁখুত গেম । বিভিন্ন মেয়েকে বিয়ের কথা দিয়ে সুযোগ নিয়ে আবার পাঁকাল মাছের মত পিছলে যাচ্ছিল। 
কিন্তু গোল বাধল এই শুভমিতার বেলায়। হাত ঝেড়ে ফেলতেই প্রমাণ সহ পাড়ার মহিলা সমিতিকে জানিয়ে দিল। ফলস্বরূপ আজ তাকে ছাঁদনা তলায় বসতে হয়েছে। নিমরাজি চাঁদ সদাগরের মনসা পুজোর মত তাকেও বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে । মহিলা সমিতির সেক্রেটারি মিসেস পাকড়াশি মোবাইলে তোলা ভিডিওটা দেখিয়ে বলেছিলেন, ''আপনার সামনে দুটো বিকল্প আছে। হয় শুভমিতাকে বিয়ে করুন। নাহলে শ্রীঘর ।" 
মধ্যবয়স্ক সত্যব্রত এখন বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাঁ হাতে শুভমিতার কপালে সিঁদুর তুলে দিচ্ছে। 

অনুগল্প : সিদ্ধার্থ সিংহ



হিন্দি সিনেমার আইটেম গার্ল। ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বেরোচ্ছেন। সুইজারল্যান্ডের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়ামে তাঁর শো। লাইফ টেলিকাস্ট হবে সারা পৃথিবী জুড়ে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ওই দিন স্পেশাল ফ্লাইট দিচ্ছে। লোকে বলে, ডাক্তাররা নাকি এখন আর কাউকে ভায়াগ্রা প্রেসক্রাইব করেন না। বলেন, ওঁর নাচ দেখুন, তা হলেই হবে।
সব ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা হল, ওই শোয়ে কী পরবেন তিনি! উনি কল করলেন পৃথিবীখ্যাত এক ডিজাইনারকে। একটা ছোট্ট লেডিজ রুমাল দিয়ে বললেন, আমাকে একটা ড্রেস বানিয়ে দিন।
ডিজাইনার চুপ। তাঁকে চিন্তিত দেখে আইটেম গার্ল বললেন, কী হল? এতে হবে না?
ডিজাইনার বললেন, হবে না কেন? আমি ভাবছি, যে কাপড়টা বাঁচবে, সেটা দিয়ে কী বানাব!

অনুগল্প : নিখিল মিশ্র ঠাকুর


নব্বোই এর দশকে গ্রাম থেকে আমাকে প্রতিদিন সাতকিমি পথ হেঁটে এবং দেড়ঘন্টা বাস করে সিউরি বিদ্যাসাগর কলেজে পড়তে যেতে হতো। রাস্তায় বড়োবাঁদ নামের পুকুরটার দুই পাশের মাঠ গুলোতে শামুক ভাঙা কেউটে নামে এক প্রজাতির  বিষধর ও হিংস্র সাপ থাকতো।
বর্ষাকালের এক সন্ধ্যায় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে বাসস্ট্যান্ডে নেমে আমি চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকারে হা্টছি। বড়োবাঁদের আগের মাঠগুলোতে এসে হঠাৎ করে আমার পা পিছলে গেল। আমি যেই মাঠে পড়েছি,সাথে সাথেই মাঠের অন্যদিক থেকে জলে কিলবিল করে আওয়াজ। আমি বুঝতে পারলাম শামুক ভাঙা কেউটে আসছে। তড়িমরি করে মাঠের আলে উঠে এলাম। আমার একপাটি হাওয়ায় চটি মাঠে গেঁথে রয়ে গেল। 
 
আমি মাঠের আলে নড়াচড়া না করে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি কখন একটা জোরে বিদ্যুৎ চমকাবে।  কিছুক্ষণের মধ্যেই খুব জোর বিদ্যুতের ঝলকানি। আমি ঝপাস করে চটি তুলে নিয়ে আপাতত ভরতের মতো খরম মাথায় দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

অনুগল্প : সোমনাথ বেনিয়া


মা ফোন করলে অফিসে কাজের অজুহাতে ছেলে ফোন ধরে না।মা উদ্বেগে থাকে। টান বড়ো বালাই! 
     অন‍্যদিকে ছেলে বাবাও বটে। তাই মেয়েকে ফোন করলে, মেয়ে কলেজে পড়ার অজুহাতে ফোন ধরে না। বাবা উদ্বেগে থাকে কারণ টান বড়ো বালাই! 
     নিউটন তার থার্ড ল নিয়ে আমাদের পাশেই থাকে ...


দিনলিপি : সবুজ সরকার





১০ এপ্রিল ২০২০ শুক্রবার


রোজকার ন্যায় আমার চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরে সকালের রোদের উষ্ণতা আসতেই ঘুম ভেঙে গেল। শুয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ , তার পরেও। আকাশ-পাতাল ভাবলাম। ঘরের পাশের দেবদারু গাছে ততক্ষণে পাখিদের সভা বসেছে। তারা নিজেদের মধ্যে গল্প করতে ব্যস্ত, দুটো পাখি রীতিমতো ঝগড়া করছে সেই সাত সকালেই। কাচের জানালা খুললেও তারা আমাকে মোটেও তোয়াক্কা করল না। গ্রাহ্য করলো না আমার উপস্থিতি। আমি তারিয়ে তারিয়ে  উপভোগ করতে লাগলাম। অধিকাংশই শালিখ পাখি। ধূসর রঙের পাখি ও ছিল বেশ ক' টা। ওদের গা জোয়ারিটাই একটু বেশি। কয়েকটা কাক এসে এই আলোচনায় যোগদান করতে চাইলেও বাকিরা মোটেও পাত্তা দিল না। ইতিমধ্যে কোত্থেকে একটা কাঠঠোকরা উড়ে এসেছে। এদের দলে সে রীতিমত বেমানান। উপায় না পেয়ে ছুটে এলো আমার কাঁচের জানলার কাছেই। সতর্ক চোখ আর ধারালো ঠোঁটে রীতিমতো যোদ্ধা পাখি বলে মনে হচ্ছিল। পাখিগুলোর কোন তাড়া নেই। ব্যস্ততা নেই জীবনে। বেশ লাগছিল। করোনা নিয়ে ভাবনা নেই কোন। জানেই না এসব সম্বন্ধে। আমারও তাড়া নেই আজ। তাই ওদের সাথে কাটিয়ে দিলাম অনেকক্ষণ। সারাদিন যখন এসেছি ঘরে, দেখেছি দেবদারু গাছে কিছু না কিছু পাখি ঠিক আছে। গোটা বিকেল জুড়ে দুটো পাখি মনের সুখে গান গাইলো। ভাষা বুঝতে না পারলেও, সেই সুরে যে প্রাণের ছোঁয়া আছে আমার বুঝতে বাকী নেই। সন্ধ্যে হলে, ঝুপ করে দেবদারু গাছটা একা হয়ে গেল। আমিও। এখন শুধু দেবদারু গাছ আর আমি। আমি আর দেবদারু গাছ। 


দিনলিপি : অবাস্তব ডায়েরি

"ধুর বিপ্লব,তোর দ্বারা কিছুই হবে না। একটা পড়াও ঠিক মত বলতে পারিস না। না পড়ে করিস টা কি?" রেগে ক্লাসে সবার সামনে বললেন কণিষ্ক বাবু। 
"খেলি স্যার, খেলতে আমার খুব ভাল লাগে।" বলল বিপ্লব।
"খেলে কোন উপকারটা হবে শুনি। রায় বংশের মুখ ডোবাবি দেখছি তুই। না খেলে একটু পড় ভবিষ্যতে কাজে দেবে। যা এখন ক্লাসের বাইরে কান ধরে দাঁড়া!!!"

শেষ বলে ছয়টা মারলে অনেক বছর পর ভারত আবার বিশ্বকাপটা পাবে। টিভির পর্দায় তাকিয়ে কণিষ্ক বাবু চাইছিল যেনো ছয়টা হয়। বলটা ক্রিজ পার করার সাথে সাথে গ্যালারিতে পাঠিয়ে অনেক বছর পর ভারতের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিল বিপ্লব রায়।

সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০

মার্চ সংখ্যা: প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র



                                           সূচিপত্র 



কবিতা : মলয় রায় চৌধুরী ,অনুশ্রীতা বিশ্বাস ,অনুরুপা পাল চৌধুরী, দেবাশিস সাহা, নিত্য রঞ্জন মণ্ডল, বদরুদ্দোজা শেখু, রথীন পার্থ মণ্ডল,উত্তম চৌধুরী,অনুপ মণ্ডল, শুধব্রত রাউত,বিকাশ চন্দ, 

অনুগল্প : নিখিল কুমার মিত্র,আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস


প্রবন্ধ : শঙ্কর ব্রহ্ম, সিদ্ধার্থ সিংহ

কবিতা : মলয় রায় চৌধুরী


নখ কাটা ও প্রেম
মলয় রায়চৌধুরী

রবীন্দ্রনাথ, দেড়শ বছর পর একটা প্রশ্ন আপনাকে :
কে আপনার নখ কেটে দিত যখন বিদেশ-বিভুঁয়ে থাকতেন--
সেই বিদেশিনী ? নাকি চৌখশ সুন্দরী ভক্তিমতীরা ?
যুবতীরা আপনার হাতখানা কোলের ওপরে নিয়ে নখ
কেটে দিচ্ছেন, এরকম ফোটো কেউ তোলেনি যে !
ওকামপোর হাঁটুর ওপরে রাখা আপনার দর্শনীয় পা ?

মহাত্মা গান্ধীর দুই ডানা রাখবার সাথিনেরা
বোধহয় কেটে দিত নখ ; কেননা বার্ধক্যে পৌঁছে
নিজের পায়ের কাছে নেইলকাটার নিয়ে যাওয়া, ওফ, কি
কষ্টকর, আমার মতন বুড়ো যুবতী-সঙ্গীহীন পদ্যলিখিয়েরা
জানে ; প্রেম যে কখন বয়সের দাবি নিয়ে আসে !

ফিসফিসে-লোকে বলে সুনীলদার প্রতিটি নখের জন্য
উঠতি-কবিনী থাকে এক-একজন। জয় গোস্বামীরও
ছিল, তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে সমুদ্রের পাঁকে চোখ বুজে।
চাইবাসার ছোটোঘরে শক্তিদার নখ কেটে দিচ্ছেন প্রেমিকাটি
দেখেছি যৌবনে। বিজয়াদিদির নখ কেটে দেন কি শরৎ ?

যশোধরা তোর নখ কেটে কি দিয়েছে তৃণাঞ্জন কখনও ?
সুবোধ আপনি নখ কেটে দিয়েছেন মল্লিকার পা-দুখানি
কোলের ওপরে তুলে ? কবি কত একা টের পেতে তার পা-এ
তাকালেই বোঝা যায় । যেমন জীবনানন্দ, হাজার বছর
খুঁজে চলেছেন কোনো এক বনলতা নখ কেটে দিয়ে যাবে তাঁর...।

কবিতা : অনুশ্রীতা বিশ্বাস


                                  চিত্রপট 
                                      অনুশ্রীতা বিশ্বাস 


                                             ১
                                       দৃশ্য অদৃশ্য 
                                      চেনা অচেনা 
                                      অন্তর বাহির 
                                     চিরকাল তপ্ত দহনলোকে 
                                     সুপ্ত দেহজ বাসনার 
                                    কামস চেতনা বড়ই অসহ্য। 

                                              ২
                                     রোমন্থন যেন 
                                     আজ দেহের ভিত্তিক 
                                    ওই রজনী আজ নারীর 
                                     স্মৃতি চিন্হ। 

                                               ৩
                                      ফুলের সজ্জা
                                      আজ রংবিহীন 
                                      মৃত সাদা যৌবন 
                                      আজ মুমুর্ষ। 
   

কবিতা : অনুরুপা পাল চৌধুরী

                                     

                                    র‍্যাটালিক লুফটিন

                                    অনুরূপা পালচৌধুরী

আসক্ত আগুনের স্বাদ তবু নিত্য জানলার মগজ বড্ড বিনিয়াৎ অলিগলি। রোদখালি কাগজের মৃত পার্ক চুঁইয়ে ট্রিগারে সকাল মাখিয়ে উষ্ণ ভাঁড়ের লাশকোড বেমালুম বেমারি বরফ। মৃত্যুর রঙ সাঁতরালাম নিছকই ব্যালিক ভাবনার নিশাচর নদীটি। সেঁকা চাঁদ আর স্যাঁতসেঁতে পাঁজরার মাটি মৃতদ্বারের অ্যারোফেজ গলা বসে যায় অহরহ জলচিজ : চোরাহিমের কুরিয়ারে তুমি ভুলের বাষ্প গুলে জুবেল আগড় আড়মোড়া ভীড় বাজতে বাজতে ভয় তুলি অপেক্ষার লোকেশ। বদলে আগুন বাতলে বাতাস তুলি হিসাবের খুনি মিউকাস।



কবিতা : উত্তম চৌধুরী

  
 ছায়াবৃত্তে জেগেছে কুসুম   
  উত্তম চৌধুরী

                               ছায়াবৃত্তে জেগেছে কুসুম
                              আমিও জেগে উঠতে চাই,
                              আমাদের অতিপ্রিয় ঘুম
                             ছোট্ট হতে হতে বনসাই।

                            যে আলোকে অন্ধকার আসে
                            আমি তার প্রথম দোসর,
                            অপসূর অনুসূর খেলা
                           চোখ মেলে দেখেন ঈশ্বর।
    
                               জলশব্দ বায়ুশব্দে লীন
                               ডান বাম বৃত্ত সমতল
                              চোখ মুখ আবর্তিত মুখে,
                              উল্কাপাতে আলোকিত নদী
                             পারম্পর্য ধরে ঘণ্টা পল
                            জানালায় ঝোলে অন্তহীন।

কবিতা: রথীন পার্থ মণ্ডল

                              নদীর কাছে  
                           রথীন পার্থ মণ্ডল


                                   এভাবেই যেতে হয়
                                   নদীর কাছে
                                   কিছু কথা বলতে

                                  বালুচরে অল্প জলে
                                 পা ডুবিয়ে শান্ত বসে

                                 আপন মনে
                                 ভাবতে হয় খেয়ালিপনা 
                                 তুলে রাখা দুপুরবেলা 
                                 আর
                                 না মেলা হিসেব

                                এভাবেই...

কবিতা : বদরুদ্দোজা শেখু

                                                  মুখগুলো  

                                         বদরুদ্দোজা শেখু


মুখগুলো ক্ষতবিক্ষত
মুখগুলো ভয়ার্ত সন্ত্রস্ত বিধ্বস্ত
মুখগুলো বিপন্ন আতঙ্কগ্রস্ত
মুখগুলো আর্তনাদ করছে , প্রাণভয়ে
চীৎকার করছে  ,আপ্রাণ প্রাণভিক্ষা করছে
মুখগুলো পুড়ে যাচ্ছে
পুড়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি বস্তি বাজার , পুড়ে যাচ্ছে ,জ্বলে'পুড়ে' সব খাক হ'য়ে যাচ্ছে

ভয়ঙ্কর লুঠপাট খুন ধর্ষণ হিংসার অট্টহাসির
ভিতর
মুখগুলো বীভৎস করুণ কদাকার 
মুখগুলো নিরাশ্রয়
মুখগুলো নিরপরাধ
মুখগুলো রিক্ত নাচার হতভাগ্য

মুখগুলো মানুষের 
মুখগুলো কোনো মুখোশ নয়
মানুষ শুধু মানুষ পুড়ছে
আবালবৃদ্ধবনিতা পুড়ছে
জ্বলে'পুড়ে' ছাই হচ্ছে
পুড়ছে সভ্যতা , পুড়ছে  মানবতা 
পুড়ছে সম্প্রীতি, পুড়ছে সমাজ !


মুখগুলো ক্যানভাস
সারি সারি শুধু জ্বলন্ত মুখ
কাঁপছে কাঁপছে আর কাঁপছে


দাউ দাউ ক'রে জ্বলছে সংবাদ
যুদ্ধে দাঙ্গায় হিংসায় সন্ত্রাসে
পুড়ছে সভ্যতা, ভয় ও ভিক্ষায়
পুড়ছে মানবতা, দায়হীন
দীক্ষাহীন দাক্ষিণ্যহীন
পুড়ছে না বিবেক খুনে' রাষ্ট্রশক্তির
কিংবা তার খুনে' সাঙাৎকুলের,

ফুলের মতোন মুখগুলো
পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে
যার জন্য আদৌ তারা দায়ী নয় ,
ভয় চারিপাশে শুধু দমবন্ধ ভয় - -