বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৯

         অকৃতজ্ঞ

           তৈমুর খান 

মৃত্যু ছলকাচ্ছে
                 আর্তনাদ পড়ে আছে
       রক্তে ভেজা মাটি
                                   কোন্ সকাল 
আজ ?
নিষ্ঠুর হাসাহাসির ভেতর কোথাও দাঁড়াবার জায়গা নেই
সহানুভূতি পালিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের নির্বাসনে

বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৯

       ছুঁয়ে  দেবো 

    আবির্ভাব ভট্টাচার্য 


শিশিরের মতো স্বচ্ছতায় ছুঁয়ে দেবো একবার।
প্রতিদিন কতকিছু ছুঁয়ে যাই, অবশ চেতনায়, ইচ্ছায় – অনিচ্ছায়
বাজারের থলের ভার, মেছনীর ফেরত দেওয়া ন্যাতানো দশ টাকার নোটের আর্দ্রতা
খবরের কাগজের সংক্রমণ, ওষুধের পাতার আলিঙ্গন
এমনকি কম্পিউটার কি-বোর্ডের মোহ -
এই সবকিছু পেরিয়ে এসে
ভীষণ অন্যরকম, অমলিন ছুঁয়ে দেবো তোমায়।
গভীর রাত্রে ঘুমচোখে যেভাবে ছুঁয়ে দেখি জানলার ঘুমন্ত পর্দাকে
যেভাবে ছুঁয়ে দেখি সন্ধ্যাতারার ঘুম
একদিন সেরকম ছুঁয়ে দেবো একবার তোমাকে।

                 গাছ

           সুতনু হালদার 

গাছের প্রসঙ্গে কিছু বললেই অমাবস্যার যৌক্তিকতা
সম্পর্কে একটা প্রশ্নচিহ্ন চলে আসে অথচ প্রশ্নরা
কখনোই নির্বান্ধব হয় না, যদি অমাবস্যার কথা
বলতে হয় তাহলে জ্যোৎস্নাগুলোর অবদান
কুয়াশার খুনসুটিতে মেতে ওঠে
যেমন প্রতিটা মানবজীবনে হয়ে থাকে...
গভীর বোধের মধ্যেও অমাবস্যার কিছুটা
নিকশ কালো অন্ধকার ঢাকা থাকতে পারে
তবে গাছের সালোকসংশ্লেষে তারা একান্তই বেমানান
আর বেমানান বলেই দিনের আলোতে
সেগুলো আড্ডা মারলেও
অভিযোজিত হতে চিরকাল সময় নেয়


                   ঘেরাটোপ 

               সুতনু হালদার

         যে ঘনঘটা বুকের মধ্যে
         অরণ্যের গর্জন তোলে
        ক্ষণিকের মাধুকরী
       নদীখাতের নিষিক্ত প্লাবনে
       অনেক সময় সংসারী হয়
       সভ্যতার আসল ইতিহাস
       স্ফূটনাংক নির্ভরতায় বড্ড চপল!
       মনের কৌশিক জল নিটোল বৃষ্টিকণার
       আলিঙ্গনকে আজীবন সন্ধান করতে করতে
        সবুজের হাহাকার চিনে ফ্যালে,
        অরণ্যের নিজস্ব স্বরলিপি
        ব্রহ্মচর্যের ঘেরাটোপে প্রতিবিম্বিত

      আমি

   জ্যোতির্ময় মুখার্জি 


রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছি
হাঁটতে হাঁটতে হাঁটাগুলো সব রাস্তা হয়ে গেল
ভেতর ভেতর রাস্তারা সব, হাঁটা হচ্ছি আমি
আমাকে হাঁটা পেয়ে আমার ভেতর, রাস্তা হেঁটে গেল
হাঁটা ও রাস্তা, এই দুইয়ের দূরত্বে আমি
হাঁটতে হাঁটতে রাস্তাগুলো সব আমি হয়ে গেল

      অভ্যাস 

        রীতা রায় 

দিন অবসান হল সারাদিনের ক্লান্তিভার কাঁধে..
কাঁধের ব্যথাটাও বেড়েছে জোরদার..
জর্দার খালি শিশি থেকে এখনও সুগন্ধ বেরুচ্ছে..
বেরুচ্ছে আর মিলিয়ে যাচ্ছে ক্ষীণ ইচ্ছাশক্তি..
শক্তিদ্ভূত অনন্ত অধ্যাত্মচেতনা..
চেতনার প্রতিক্রিয়ায় দিব্যঞ্জান স্বরূপ নিত্য অভ্যাস..

  সমাজের খাদ্য

   সৌরভ ঘোষ 


নুয়ে পড়া খোলা চাল,
ভেঙে পড়া ডাল;
একরাশ পিচুটি চোখে নির্ঘুম পৃথিবী...
মরা শালিক পাখিটা যেন নড়ে ওঠে...
মায়ের দুঃখ, চাষীর চোখেও জল;
জামার হাতা গুটিয়ে সমাজ এসব খায়..
ছোটো ছেলেটাও সব জানে;
এলেবেলে হাতে সে'ও বর্ণহীন মেঘ আঁকে
আর ভেঙে দেয়...

       প্রয়োজন 

       অনুপম চক্রবর্ত্তী

আমার ফুরিয়ে আসার শেষ প্রান্তটুকু বিকেলের ক্লান্তি মাখা অবসরে স্মৃতিহীন আবহের দৈনতার চেনা অধ্যায় আর নিয়মের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যকুলতা জুরে রাত-দিন যেভাবে ইচ্ছের বর্ণচোরা গন্ধ ফুরিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যায় , তার প্রতিটি মুহূর্ত নালিশের বেঁচা-কেনায় অবহেলা গন্ধের সীমা পেরিয়ে চিন্তার নোনা ধরা ভিতে এসে আছরে পড়ে । আমি চোখ মুছি , চোখ বুঁজি, চোখের আগুনে স্বপ্নের জল ফোটে, টুকরো টুকরো বাস্পের স্বীকারোক্তিতে নিভে যায় ভেতরের শবদাহ । তবুও নীরবে, নির্জনে, নিয়মের আড়ালে বেড়ে ওঠা কোন আত্মঘাতী চিন্তার চোরা কুঠুরিতে প্রতিটি রাত এসে যেভাবে ধরা দেয় ক্লান্ত বিষ্ময়ের কাছে , অবাক প্রজন্মের লালিত মুহূর্ত থেকে সবকটা প্রতিবাদী যন্ত্রনার ফসল বেড়ে ওঠে নিজের খেয়ালে । যতটা প্রয়োজন থাকে না বোঝার , যতটা প্রয়োজন থাকে ভেঙে ফেলা অতীতের কাছে , ততটা প্রয়োজন এ জীবনে আর খুঁজে পাই না ।

                 আদরের ফুল             

                   অনুপম চক্রবর্ত্তী

একটা অকারণ নিয়মের নদী টপকে অন্য নদীতে ভেসে ওঠা স্রোতের গায়ে সারাদিনের পরিশ্রমে ডুবে যাওয়া মাছের আহত কাঁটার খোঁচায় বৃষ্টির ফাটল কাহিনীর সমান্তরাল থেকে যেটুকু জল ছিটকে এসে প্রয়োজনের গায়ে লাগে , তার কাদা মাখা অস্বস্তিকর মুহূর্তের কিছু অবান্তর কৌতুহল খেয়ালহীন আবহের দৃষ্টি নালিশের ছায়াদীর্ঘ আঙুল শুকনো আদরের পাশে ভাঙচুর আপষের পোষ মানা কথারা সাজিয়ে রাখে বিকেলের পাতাঝরা ক্যানভাসে । একটা নিরুত্তাপ চেনা মুখে জোনাকীর আলোটুকু ধরে রাখা মনখারাপের জলরং তুলিতে আলতো স্বভাবসিদ্ধ আবেগের নীরব প্রতিক্রিয়া সাজিয়ে রাখা ঠান্ডা আগুনের গা ঘেঁসে প্রতিটি অগ্রায়ণ নেমে যাওয়া চোখের পাতার টুকরো কাজলে বাতাসের চেনা ডাকে যখন ভেসে ওঠে আলো , তাকে পেরিয়ে যাওয়া একটা দিগন্ত থেকে গুঁড়ো মেঘ আর ভেজা রোদের সবটুকু নিয়ে আধভেজা অক্ষরের চিহ্ন থেকে অবাক রাতের ফুরিয়ে আসা স্বপ্নগুলো জেগে থাকে কোন এক গোপন বেলার প্রতিটি নালিশে । তবুও সামঞ্জস্য মেনে চলা ফ্রেমে লতানো চাঁদের জোছ্নায় আবেদন রেখে যায় ইচ্ছের শেষটুকু ভেঙে যাওয়া অভিমানে আদরের প্রতিটি ফুল । 

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯

      ভালবাসি 

          অর্পিতা ঘোষ 

ভালবাসা কথাটা শুধু একটা অক্ষর নয়,
ভালবাসি বললেই যেন ভালবাসা হয়।
অজানা পথ দিয়ে, শহর পেড়িয়ে-
আঙুলে আঙুল জড়িয়ে
তোর সাথে যখন বেড়ায়,
তোর চোখের খুশি দেখে
মন তখন আকাশের সামিয়ানায়
বলাকার মালা হয়ে উড়ে যায়।
তোকে ছাড়া আমার জীবন ছন্দে-
বেসুরো গীতি বাজে,
পিয়াসী মন শুধু একমুঠো সুখ
তোর মাঝেই খোঁজে।
তাকাস যখন আমার দিকে
অভিসারের সাজে,
কুমারী আলোয় হয়ে যায়
চোখ লজ্জাবতীর লাজে।
আজও তোর বুকে হাত দিলে-
উষ্ণ পরশ পাই,
যেখানে আছে ভালোবাসার প্লাবন-
নিস্পাপ মনে পরিপূর্ণতায়।
তুই ছিলি, তুই আছিস, তুই ই থাকবি-
আমার মনের ফাগুয়া বাতাসে,
স্বপ্নের রঙিন ছবি হয়ে তা থাকবে-
দিগন্তের ক‍্যানভাসে।

দম্পতি 

কৌশিক ডাম

  সারারাত কাজ করে ভোররাতে বাড়ি ফিরলো জয়িতা, ক্লান্ত অবসন্ন । বাথরুমে ঢুকে শরীর পরিস্কার করছে , ঘসে ঘসে, কত ঘাম , থুথু অনেক বীর্য। মন পরিস্কার করার সাবান এখনো আবিষ্কার হয় নি, হলে একটা কিনতো। এখনো ঘুমিয়ে বাচ্চা আর বাচ্চার বাবা। জয়িতা স্নান সেরে চা বসিয়েছে, বাচ্চার বাবার ঘুম ভাঙলো। মালের আর ঘুমের নেশায় টলমল পায়ে এগিয়ে আসলো মরদ। লেডিজ ব্যাগটা খুলে টাকা গুলো গুনলো, 1200 টাকা, এবার আবার হাত ঢোকাল ব্যাগে 3 টা কন্ডম আছে। হিসেবে গরমিল , প্রতিদিন 10 টা করে কন্ডম দেয় , প্রতি কন্ডম 200 টাকা হিসেবে , সেই হিসেবে 200 কম। মাথা আগুন হয়ে উঠলো, চুলের মুঠি ধরে ওর বউ যা সেটাই বলে বললো 200 কি করলি?  জয়িতা উত্তর দেবে আবার সংসার টাও করবে, কি আশ্চর্য!

ডাগর প্রেমিকা 

  শ্যামল কুমার রায় 


তমার নাগর,আশিক আহমেদ কথা রেখেছিল। ধাপে ধাপে রিপুদের বাড়ির ভোল পাল্টে দিয়েছিল চোরাচালানকারী আশিক আহমেদ। খালি গাড়ি নিয়ে ফেরার পথে হাই রোডে মাঝেসাঝে স্বাদ বদলাতে যেত রিপু। লাম্পট্য এখন ওর ধমনীতে ধাবমান। ছেলের বদ খেয়াল বেশ টের পেয়েছিল তমা। তাই সময় থাকতে ছেলের বিয়ে দেয়ার চেষ্টা শুরু করল। বাস্তবের মাটিতে ঠোকর খাওয়া তমা ছেলে বৌ কে বাড়িতে একটা সুস্থ পরিবেশ দিতে বদ্ধপরিকর ছিল। তাই এতদিন যে নাগর দিনে দুপুরে রাতে নিত্যসঙ্গী ছিল, তার সাথে ঝগড়াঝাঁটি শুরু করেছিল। শেষে রেপ্ কেসের ভয় দেখিয়ে জাঁদরেল আহমেদ সাহেবের আসা ধাপে ধাপে কমিয়ে বন্ধ করে দিল তমা। তমার এই পরিবর্তন বেশ চোখে ঠেকেছিল রিপুর। মায়ের উপর পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে গেল রিপুর। পঁচিশ পার হতে না হতেই বেশ দূরে রিপুর শ্বশুর বাড়ি করে দিল তমা। রিপুর স্ত্রী রিপুর চেয়ে বছর পাঁচছয়েক এর ছোট। ঘরোয়া মেয়ে। বাবার ছোট্ট ফলের স্টল। বয়স সেই সবে কুড়িতে পা দিয়েছিল। নাম স্বাতী। সঙ্গমে মহা পারঙ্গম রিপুর ফুলশয্যা বেশ রসেবশেই কাটল। চরম তৃপ্ত রিপু আর স্বাতী। রাতভোর রক্তক্ষয়ী নিরাভরণ সংগ্রামে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত অথচ তৃপ্ত রিপু - স্বাতীর তাল কাটল; যখন কাক ভোরেই তমা- 'রিপু, ওঠ। সকাল হয়ে গেছে।'- বলে ডেকে উঠল। মেজাজটা খিঁচে গেল রিপুর। বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ছিল, সামলে নিল। বিয়ের লৌকিক আচার অনুষ্ঠান বেশ ভালোভাবেই মিটল। সব কিছুই মধ্যেই কাবাবে হাড্ডির মতো শাশুড়ি মার খিটখিটে মেজাজ,স্বাতীর সব কাজে খুঁত ধরা রিপুর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। না পারছিল বউকে কিছু বলতে, না পারছিল মাকে কিছু বলতে। অশান্তির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল ওদের দাম্পত্যের উপর। এর মধ্যেই স্বাতী ভীষণ উত্যক্ত হচ্ছিল ওর শাশুড়ির নিত্য খুঁত ধরার অভ্যাসের কারণে। ধীরে ধীরে তা সহনশীলতার মাত্রা পার করতে লাগল। রোজ রাতে স্বাতীর এই অভিযোগের ঝাঁপি রিপুরও অসহ্য লাগছিল। শেষে সারাদিন খেটে এসে রিপু সকালের আনাজ কেটে দিত। সাত সকালে উঠে রাস্তার টাইম কল থেকে জল এনে দিত। এমনকি তিনজনের জামা কাপড় কেচে মেলে দিয়ে যেত। সংসারে শান্তি বজায় রাখার জন্য রিপু কত চেষ্টাই করতে লাগল। ফল হল বিপরীত। পাড়ার কাকিমা, মাসিমা, বৌদিদের কাছে ও বৌ এর ভেড়া বনে গেল। সব থেকে তাজ্জব ব্যাপার হল , এই নিন্দেমন্দ তে ওর মা, তমার প্রত্যক্ষ মদত ছিল। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স চালাতে চালাতে অন্যমনস্ক হয়ে পরতে লাগল রিপু। একবার তো প্রাণে বেঁচে গেল বরাতের জোরে। স্বামীর কথা ভেবে স্বাতী সব মুখ বুজে সহ্য করে নেবে ঠিক করল। বাড়ির এই চাপা উত্তেজনা প্রভাবিত করল ওদের দাম্পত্য সম্পর্ককে। শরীরী সুখের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে রাতে সবার অলক্ষ্যে কাঁদত স্বাতী। আর রিপুর কেমন যেন অনীহা চলে এল যৌনতার উপর। এতদিনের বহুগামী রিপু শরীরী তৃপ্তি নিতে ও দিতে ব্যর্থ হতে লাগল। ফলস্বরূপ, অশান্তি , অশান্তি আর অশান্তি।
              কিন্তু, ওর এই পৌরুষ নষ্টের কারণ খুঁজে পেতে রোগী নিয়ে যাওয়ার নাম করে একদিন  ষোড়শী গমন করল। অশান্তি মুক্ত সঙ্গসুখ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করল। নিজেকে আবিষ্কার করল রিপু। এদিকে ঘরে ফিরে দেখে স্বাতীর গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে উদ্যত ওর মা তমা। আর কালক্ষেপণ না করে ছোট হাতি ভাড়া করে নূন্যতম দরকারী জিনিস নিয়ে এক কাপড়ে স্বাতীর হাত ধরে পা বাড়াল এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

প্রোগ্রেস

      সৌমেন সরকার  

ওরা পাঁচ বন্ধু আপার প্রাইমারী ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে এল হতাশ হয়ে।এম.এল.এ সাহেব বলেছিলেন,সাত-আট লাখ টাকা অলরেডি জমা পরেছে সিটগুলোর জন্য।তাই টাকা না হলে চাকরী হবেনা।অবশ্য সবই হয়েছিল গোপনে।
ওদের কারও বাবা মাছ বিক্রি করে,কারও বাবা নেই।মা পরের বাড়ী কাজ করে সংসার চালায়।কেউ বা লেবার বা মুদির দোকানে থাকে অথবা অসুস্থ।ওরা পাঁচজন নিজেরা কোচিং করে টিউশন পড়িয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে।প্রত্যেকের অনার্স আছে এবং ৫০%+ মার্কস।এটাই প্রশিক্ষণ ছাড়া চাকরীর শেষ সুযোগ ছিল।প্রাইমারীতে পাঁচ লাখ টাকার কথা বলেছিল।ওদের যা অবস্তা তাতে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে ওরা অপারক।আবার বি.এড ছাড়া এস.এস.সি ও আর দিতে পারবে না।বা কোন প্রশিক্ষণ ও নিতে পারবেনা।সে ক্ষমতা কারও নেই।সব নেতৃবৃন্দের হাতে পায়ে ধরেও কোন কাজ হলনা।
হতাশায় ভেঙে না পরে ওরা ঠিক করল বছর দুই লেবারি করবে।তারপর পাঁচজন কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে ব্যবসা শুরু করবে।অবশ যদি দাদারা করতে দেন...
ওরা কিছুদিন পর দেখল পুঁটি বা ভোলার মত ক্যান্ডিডেট রা সব সেজেগুঁজে স্কুলে পড়াতে যাচ্ছে।ওরা কিন্তু এখনও ইংরাজীতে পুরো অ্যাড্রেস লিখতে পারেনা...আর লিখতে গেলে অজস্র বানান ভুল করে...
              
            ★★--সমাপ্ত--★★

মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯


              মে সংখ্যা যাদের লেখা দ্বারা সমৃদ্ধ



 কবিতা:-
                 আবদুস সালাম, দেবযানী বসু, অনুপম চক্রবর্ত্তী,
               অনুপ মন্ডল, শিবাশিস দত্ত, সুপ্রীতি বর্মন, সৌরভ বর্ধন,                      আরিয়ান প্রিয়স পাল, জ্যোতির্ময় মুখার্জি, রবিন বনিক,                      চিত্তরঞ্জন গিরি, দেবব্রত রায়, জীবন রাজবংশী,                                  সৌরভ ঘোষ, কৌশিক চক্রবর্ত্তী, চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় ।
গদ্য:-
                    অনুপম চক্রবর্ত্তী
গল্প:-
                    সৌমেন সরকার, বিনয় ভট্টাচার্য্য,পারমিতা ভট্টাচার্য্য



                    মে দিবসের চিত্রকল্প
                                           আব্দুস সালাম

রাক্ষসের  দশমুখ থেকে  বেরিয়ে আসছে  আগুনের হলকা
পুড়ে মরছে  বিশ্বপ্রহসনময় মে দিবসের প্রজাপতি
বহুজাতিক মানচিত্রে আঁকা সুদ কষা পাটিগণিত
অনাহার, অর্ধাহার,অচিকিৎসায় ধুঁকছে অগুনতি -পা
অভিজ্ঞ শকুনের চোখ টর্চের মতো জ্বলে
ফেরেশতারাও মাতোয়ারা হয় মে দিবসের গানে
পর্দার আড়ালে কারা যেন চাবুক হাতে রচনা করাচ্ছে শ্রমদিবসের সংবিধান
লোনা ঘামে তৈরী হয় সভ‍্যতার গন্ধধূপ
পৃথিবীর যুপকাষ্টে ছাঁটা যায় শ্রমিকের ডানা।


                                       নখের আঁচড়
                             অনুপম চক্রবর্তী

                            রোদ স্নানে বিকেল উদাসী হয়
                           ভেতরের গন্ধ বাস্প জুরে ,
                           ফুরিয়ে আসে সব সমান্তরাল ।
                          প্রতিটি সম্ভাবনার গা ঘেঁসে
                          অনেক ভাঙচুর থাকে -
                          নিয়ম মাফিক আলাপচারিতায় । 
                          আঁচলের শূন্যতায় বাঁধা টুকরো
                         মাংসাশী আবেগের মত ,
                         নখের আঁচড়ে ক্ষত হয় অন্ধকার । 


                                     রবিন বণিক

                          কবির রক্ত

          তারপর একটু একটু করে কবির রক্ত দিয়ে
         জোড়া দিয়ে যাচ্ছ রোদ—
         প্রত্যাশা করিনি,প্রকাশ্যেও বলিনি
        যারা ফেলে রেখে গেছে রুগ্ন অন্তরীক্ষ—
        তখনও জন্ম হয়নি চাঁদের
       যে অতীত সামনে এসে দাঁড়িয়েছে নতমস্তকে
       তাকে বলো আর কিছু না হোক– কবির রক্তে
       উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একশো যুবতী গ্রাম
       কথার কথা সাজিয়ে ওরা আকাশ ভেজায় জলে
      কবির রক্তে পাতা ভিজিয়ে রাখছে গাছ—


                             
পোড়ামাটির গাছ

হাঁটতে হাঁটতে কবিতার মাঝপথে এসে একদিন
চোখে পড়লো এক উঁচু পাথর, তাতে লেখা ছিল
যা কিছু পুড়ে যায় তা আমার জলরঙ—
বুঝিনি— আসলে আমার পুড়ে যাবার মতো
কিছুই ছিল না, একটু একটু করে ভীষণ ছায়া
নিভৃতে পুড়ে পুড়ে পাথর হয়েছিল , কাঁদতে পারিনি
সেদিন আমার মা–র বুকে কোনো নদী ছিল না
একটা একটা করে সমস্ত নৌকো উল্টে পড়েছিল
নিঃসঙ্গ আঁচলে, বিস্তীর্ণ উঠোন জুড়ে ছিল শীতের ইতিহাস
পিতামহের ঘরে জলরঙের কোনো উদ্ভিদ ছিল না
বাবার পুরোনো আসবাব ঘেঁটে জানতে পারি সেখানেও
পোড়াবার মতো কোনো কৃতজ্ঞতা ছিল না, কোনো
উপত্যকা রঙের মৃদঙ্গ ছিল না—
আসলে
সব ছায়াপথের শেষে অপেক্ষা করে থাকে পোড়ামাটির গাছ—



                                    শিবাশিস দত্ত

                                           ঈশ্বরীয়

এ কোন জোনাকিসন্ধ্যা....মোহফুল ফোটার পর আবছা আলো ঘিরে থাকে কাচপোকার দল... বহ্নিমান অতীত থেকে নেমে আসে সিভিলাইজড সন্তাপ ! 
অস্তি আর নাস্তির মাঝে যে জটিল বিভাবনা, কিংবা দেহাতি ভাষার কোনো তাজ্জব স্বপ্ন-- এ কোন অনঙ্গ অমৃতাশন? কাঠকয়লায় আঁকা দেবীমুখ ভুলে গেছো, নির্বাণের আবেশ কিংবা অনুরাগে পথভ্রষ্ট হলে বুঝি !
তরল ছায়ায় টানা ঘোড়ামুখ উত্তোলিত হলে নিওলিথ যুগের ভাবাবেগ জেগে ওঠে। তূষানলে দগ্ধ হয় অরুন্তূদ প্রেম, সংবিতের কানাকড়ি নিয়ে গোল বাধে।
জড়ভরতের দেশে ঘুমন্ত কবি-লেখকদের নাসিকাগর্জন শুনি, মশানের কম্প্র আলোর প্রচ্ছদ দেখে ভালুকের চোখে জল আসে। গানের ভেতর শাব্দিক দুর্ঘটনার আবহ রচিত হয়, বিশ্বাসের খুদকুড়ো নিয়ে বসে থাকে পরাণের মা। রাত গভীর হলে কপালের টিপ খসে পড়ে, জলে মুখ ঢাকে নিস্তনী বনিতা।
***********
                   আত্মজ্ঞান

আঁধারের বুক চিরে নেমে আসে অনিবার্য শূন্যতা
মুঠোভর্তি দেহতাপ নিয়ে হেঁটে যায় অভুক্ত রমণী
অস্থিরতা আর অপূর্ণতার মাঝে যা কিছু ভিস্যুয়াল
তা থেকে তুলে নাও ব্রেকাপের রং, অপরিণত মৃত্যুর জটিল নকশা।
নির্দিষ্ট স্নেহসুখ নিয়ে বেড়ে ওঠে মায়াজল,
সবুজ রঙের পাখি, নক্ষত্রপ্রেমের পূর্বরাগ।
স্বপ্ন কিম্ভুতকিমাকার হতে পারে
গাছেদের শয্যা ভেবে বাঘছাল পাতি
বনকপোতের ভীড়, কবচকুণ্ডল হারিয়ে ফেলার পর
সুফিদের সিলসিলা ঘুরে জেনে নিই আত্মজ্ঞান কাকে বলে।
আবে কোন শালা আমার কী করবে বে
আমি এখন এ শহরের আঁভাগার্দদের দলে।

শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯


              মে সংখ্যা যাদের লেখা দ্বারা সমৃদ্ধ



 কবিতা:-
                 আবদুস সালাম, দেবযানী বসু, অনুপম চক্রবর্ত্তী,
               অনুপ মন্ডল, শিবাশিস দত্ত, সুপ্রীতি বর্মন, সৌরভ বর্ধন,                      আরিয়ান প্রিয়স পাল, জ্যোতির্ময় মুখার্জি, রবিন বনিক,                      চিত্তরঞ্জন গিরি, দেবব্রত রায়, জীবন রাজবংশী,                                  সৌরভ ঘোষ, কৌশিক চক্রবর্ত্তী, চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় ।
গদ্য:-
                    অনুপম চক্রবর্ত্তী
গল্প:-
                    সৌমেন সরকার, বিনয় ভট্টাচার্য্য,পারমিতা ভট্টাচার্য্য

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৯


                                 দেবযানী বসু



জ্বর জয়ন্তী

প্রকাশ্য রাস্তায় হাঁড়িকাঠ
মালাবদল ঘটে যায় আর রজত জয়ন্তী
বার করে আনি তাঁর দাঁতের ফাঁক দিয়ে
পোড়া গির্জা নোত্রদোম
উঠোনের বাঘিনীর লেজ পোড়ে ধাপে ধাপে
তাঁর কবিতা পড়ি গভীর লাপিস লাজুলি
ফুটকি ফেলে ফেলে
ভালোবাসার উঠোনে কাঠবিড়ালিদের ঘাসফুল চর্চা
মেলে ধরা ছাতার তাপে সেঁকে নিচ্ছি ছোট্ট জ্বর
*********
শুক্র মায়া
যে কোনো বিশ্বাসের বাইরে আসলে শুক্রবার ঝলমল করে ওঠে। পোড়ো বাড়ির নিঃশ্বাসে নবরত্ন কুল কুল। বিশ্বাসের বাইরেটা সহ্য করা যায় পঞ্চাশ ডিগ্ৰি সেলসিয়াসে। আমাদেরকে ভয়াবহ বোঝানো হয়। কতো কতো দীর্ঘ অতীত নিজের আবহাওয়া তৈরি করে নেয়‌। এগিয়ে চলেছে গপ্পুড়ে অফিস। খুব দ্রুত ইচ্ছেগুলো পিকু করে নাও শরীরে। শুক্রমায়া বুঝে নাও।এ বিষয়ে হাঁড়িকাঠ নতুন কোনও.... 


                           অনুপ মণ্ডল
                          

                                               হ্রসস্বর
ডাকিনি তন্ত্রের ললন্তিকা স্তনকলায় বিষ ছিল না,দুঃখও ঝরেনি
অল্প জলে আঁশটে গন্ধের মতো মদ বসেছিল হাঁটু মুড়ে
রোদের উঠোনে ভালোবাসা উলকো মাছের মতো লাফায়
তোমার রচিত দুপুরের নির্জনতা  ভালো করেই চিনে নিয়েছি
                                   হ্রস্বস্বরে পেঁচিয়ে  ছিল মগ্ন দাঁড়াস
        পাড়ার কনিষ্ঠতম বেশ্যাকেও
   আমি তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পেয়েছি।জানি
      আমারই মতো তারও একটা উল্টো জামা পরা মহাকাশ আছে।

                                          
বিবাহ
    অতিরিক্ত নীলের আকাঙ্ক্ষায় আপনা থেকে সেেও কাছে  আসেে
        আয়নার মতো ভালোবাসা হয়।আপন মনে কথা বলে স্বচ্ছতা
                ক্রমে আলো নিভে আসে
     অন্ধত্ব সম্পূর্ণ হয়ে এলে একদিন বিবাহ উৎসব
     একদিন কথাকলি কলাবৃত্ত তো আর একদিন
     সব  আলো নিভিয়ে চিিরচেনা মহাকাশের পরিক্রমণশীল ঝড়।

                                    সুপ্রীতি বর্মন


মৌচাক

শীর্ণকায় মরাল শরীর বুক দিয়ে হাঁটে
রুক্ষসূক্ষ বসবাস ইমন কল্যান
গর্ভবতী ফুলের শুক্রাণুর শোকে।।
সন্যাসী দুপুরে ঢুলঢুল চোখে
দুরন্ত উঠানামা শ্বাস ভাদর বৌয়ের আচরণের ভাঁজে।।
আজানুলম্বিত অতলান্ত দৃষ্টি মাধুকরীর
লজ্জাশীলা অধিবাস মৌচাক ভাঙা গৃহদস্যু
অলস আজানুলম্বিত দীর্ঘকায় ক্যালেন্ডার আঁচল
গতানুগতিক ধান্ধায় মুখ গুঁজে দোহন দুগ্ধবতী গাভী।।
ফর্দ করা পাতায় শিরার বাকল ঘষে মুখশুদ্ধি।।
ডেইলি সোপে অতিরঞ্জিত সাতকাহন পুরুষ নারী
হেলতে দুলতে গরুর গাড়ির অগ্রগতির চাকা
সমান্তরাল কর্ষণে মধ্যবর্তী ক্ষুধার ফাঁকে।।
********

ব্যঙ্গার্থ জীবন

ব্যঙ্গার্থ জীবনের মধ্যযুগীয় স্তম্ভ অনেকটা মাতৃবৎসল মেরুদন্ড অপলকা 
তোমার ক্ষয়ে যাওয়া বৈভবের মক্ষীরানী অহেতুক ঘ্যান ঘ্যান বাবুয়ানীর চটুল স্রোত
যৌনগন্ধী ফাঁদে তোমার চড়া সুদের সস্তা প্রেক্ষাগৃহ আড়মোড়া ভাঙা ক্লিভেজ রোদে বিছানার অভয়ারণ্যে
ব্যাকক্লিপে আঁটা যুবতী বাৎসল্য তোমার দীঘল চোখের সোহাগ রস উন্নাসিক ক্ষুন্নিবৃত্তি 
নাভিনমনে তোমার উত্থিত শ্বাসে উপপাদ্য কামার্ত শীৎকারে তোমার হাভাতে জিভে মহাকালের প্রলয় নাচনে প্রেমিকের জন্মদাগ
উত্তুঙ্গ স্তনে তোমার আড়চোখে সমুদ্র শোষণ অগস্ত্যের পুরুষ্টু কমন্ডুলে শেষনাগ ফণীর রতিদগ্ধ মণির কবচে প্রেতযোনির নাদান ঘাট।


                                      বহুগামী
                                  সৌরভ বর্ধন


                  শীতকালে শুধু পায়ের পাতা
                 ডোবাতে পারবে ভেবে       হাত বাড়াও
                ওই আগুনও ধোঁয়ায় উড়বে কিছু পাখি
                তাদের কি বাসা নেই
               নাকি গিলেছে সবই কৃষ্ণগহ্বর
              এসময় তারাদের ঠোঁট পুড়ে গ্যাছে ভেবে
              হাত বাড়াও
              কোথাও মরু গোলাপ নেই , কিচ্ছু নেই ভেবে
              হাতের আলনায় সাজিয়ে রাখো মাংসমজ্জা
              ধমনী লোম আদর করো
                                          এই আদর-কফিনে
            শেষ পেরেক পুঁতবে দাঁত ও তার সহযোগীরা
             আমি অপেক্ষা করো
            তুমি হাত বাড়াচ্ছি গরম বুকে, এখন শীতকাল
           শীতকাল বহুগামী হতে চায় না, আমিও তাই
          চেয়ে চেয়ে আজ আমাকেও উদভ্রান্ত বলা যায়

                        আরিয়ান প্রিয়স পাল
                                                ১
             
              সৌরভ বিশাই

কথা কাছে সাক্ষী থেকে এগিয়ে গেছে সে,
নরম মাটির,ফলক ভিড়ে,একটু দেওয়াল ঘেসে।
মেঘের সাথে আপোস করা প্রথম ভোরের বৃষ্টি
অবাক ঠোঁটের উজ্জ্বলতা,মিষ্টি লাগে সত্যি।
ঝলমলিয়ে ছুটছে জলে,তোমার চেনা বেশে
বার্তা যারই স্বপ্ন কুটির,তফাৎ গোনার শেষে।
মন খারাপের আত্মগোপন বর্ণ গঠন গিফ্ট
এমন কিছু শব্দ গেঁথে জোড়া আমার স্ক্রিপ্ট।
মধ্যে থাকা আকাশ বিচার,নীল থেকে বাইরে
ঠাঁই নিয়েছে পদ্ম ভিড়ে,কাঁটা ফুলের সাইরেন।
পথ খুঁজেছে নবীন চোখে শীতল স্মৃতির প্রান্তে
দিনের মতো রাত মেখে নেয় বাতাস ছোঁয়ার অন্তে।
দিগন্তে তার ভীষণ চেনা কলকাতারই বর্ষা দিন
প্রথম আবেগ,পরশপাথর তোমার জন্মদিন.....
*******
 
                   
রিমা
চোখের নিচে জ্যোৎস্না আলোক সজ্জারত দিক।
ঘোড়ায় পেশা নতুন ডিমে কুসুম খোঁজার মতো
সন্ধ্যে সরল মেঘগণিকায় নতুন কোনো তারিখ
আঘাত তখন মন খারাপের দুপুর গড়ার ক্ষত।
তরল সুবাস জলে নীচে মেঘ জমেছে আজব।
আজ লুকোনো গন্ধ বিরাগ বশত গোনা রথি
শাড়ির পারে স্বপ্ন মাখে লাল হলুদের আভাস
সেই মেয়েটাই বৃষ্টি দিনে হয়ত কারোর সাথী।
নিরাশ করা আলতো চুলে মুখ ডুবিয়ে দেখি
দুঃখ জমে রুটির সাথে মরিচ পাতায় মিশে
স্মরণ খেলা ছোঁয়ায় প্রেমে শক্ত নাকের বুটি
রাগের শেষে কষ্টগুলো আঙুল দিয়ে পেশে।
আঘাত তবে বুঝতে বোধহয় আগন্তুকের হাসি
মেঘ শুকালে বিষাদ ঠোঁটে রক্ত জমে বাসি।।


                           জ্যোতির্ময় মুখার্জী

                                            

ছায়ার ভিতর খসে পড়ছ সহজ
আর তুমি যেভাবে খুলেছ বিকাল
অপেক্ষা
তারিখরা খরখরিয়ে উঠল। ঘরগুলো লজিক‍্যাল হল। শব্দগুলো বেলুন হতে হতে ফুস্ করে চুপসে নিল আমাকে
ঢেকে রাখার মধ‍্যে
কোনো ছলছল সুখ নেই রে পাগলী
বরঞ্চ বোতাম খোলো
*********


                                         

    ভুল চেহারা
   এখানে মৃত্যুরা হেলে আছে বৃষ্টির ছায়ার মতো
  আর, চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে মা
  গভীর ঘুমে
  খর্ব হবে
  খর্ব হবে
  তোমার ভুল চেহারা ।



                            আহত পাখির গান
                  জীবন রাজবংশী        


                     ধূলিকণা মিশ্রিত ভস্যমান দুঃখ গুলো
                     উড়তে উড়তে আকাশের বুকে দানা বাঁধে।
                     জমতে জমতে একদিন -
                     দমকা হাওয়ায় বর্ষার সুরে ঝরে পরে বৃষ্টি হয়ে।
                    বৃষ্টির নূপুরের ধ্বনিতে শোনা যায়,
                    আহত পাখির গান। 

                              স্বরলিপি
                
                                 চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়

চড়ুই পাখির ছোট বাসা, সময়ের আসা যাওয়া সস্তা মিছিলে;
নতুন শহর এলে, ঠোঁটে ধরা কুটো, ছবি আঁকি রঙ পেন্সিলে।
অগোছালো কবিতার খাতা, এক একটা পাতা ছিড়ে
উনুনে ঢোকাই,
পারমানবিক চুল্লির, পোড়া শেষ হয়ে গেলে - পড়ে থাকে, মুঠো মুঠো ছাই।
আগেও যা ছিল থাক, রাখঢাক, আমার তো চিরকালই কম;
কাঠফাটা বৈশাখী রোদে, প্রেমের বারুদে, আচমকা সিগারেটে দম।
ভিনদেশী কিশোরীর মত, বেড়ে ওঠে রোদে জলে, ক্যালেন্ডারের মল মাস,
দুহাতের মুঠো, ভরে দেয় উড়ো হাওয়া, কথায় কেবল বাড়ে কথা, দীর্ঘশ্বাস।
আমিও তো সুখ খুঁজে ফিরি, আদতে ভিখারি, অনুবীক্ষনে;
রাইকিশোরীর সাথে দেখা, আরশিনগর মুখোমুখি, কোন কুক্ষনে।
ফিরে যায় হুইসেলে ট্রেন, বেঁধে রাখা সযত্নে,  লোটাকম্বল;
যে যার মতন বেঁচে থাক, কবির তো সঞ্চয় সামান্য, স্বর সম্বল।

                     শিমূল তোর জন্যই

                                চিত্তরঞ্জন গিরি
                        

জ্যোৎস্নার পা ছুঁয়ে পৃথিবীর ধূলি মেখে ছিলেম ।
অনেক জনমের বধিরতায় রুদ্ধদ্বারে শুধু জং লেগে যায়
হালকা রং- ক্রমশ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে থাকে
ওরা আমার গতিকে কমিয়ে দিতে চাইছে
কুরুক্ষেত্রের মহাশ্মশানে গান্ধারীর যত অভিশাপ অগ্নিবান হোক, অবিচল শ্রীকৃষ্ণ কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে উঠেনি
একবছর নয় ,হাজার  বছর, লক্ষ বছর ,বিপ্লবের দাঁড় বেয়ে চলেছি
দু এক ফোঁটা বৃষ্টি মিলেছে সান্তনার
ভিজে গেলেও বারুদ এখনো জেগে রয়েছ কাল জন্মের শুদ্ধ বাষ্পের প্রতীক্ষায়
এখনো আধো আলোয় সবুজ টিয়া ফসিল হয়ে জেগে রয়েছে
সেলুলোজ এর স্থূলতা গতিহীনতায় যতই ভুগুক ধ্রুবতারার অস্তিত্ব ,গাঢ় রাত্রির কোরকে।তাকে যে আসতেই হবে, শিমুল ফুল ফোটানোর জন্য  ।

                    একটি অন্ধকারের বিস্মরণ
   
                                   দেবব্রত রায়


                           নিরস্ত্র তুমিও ছিলে   
                          অথচ,মাংসাশী, ক্ষিপ্র এবং চতুর।
                         ( জংলি-চিতা--- শেয়ালের মতো)
                         সেই ভীতি আজও নিরব হরিণ-চোখে!
                        একটি আগুন-ফুলকি-র
                        ব্যবধান-ই তোমাকে শিখিয়েছিল
                        দ্রুত পরিবর্তনের একমাত্র
                        সমার্থক শব্দ
                       (অথচ),চরম-পরিস্থিতিতেও তুমি
                     কোনোকিছুর-ই সঠিক ব্যবহার
                     শিখলে না এমনকি,ভুল-ও না!অপ-
               ব্যবহারে এখন শধু-ই একটি অন্ধকারের বিস্মরণ! 


                                       সৌরভ ঘোষ
                            পরিত্যক্ত নদীর বাঁকে চুপচাপ  


                   মাঝে বান এসেছিলো...
                   চলে গেছে-
                 আরও বেশি ফাটাফুটি ফেলে
                কলমের ঠকিয়ে দেওয়া লেবু গাছ আমি
                কাঁটাগাছের প্রথম ফল শেষ ছিল...
                জানি,
               অশোক গুল্মের মত একদিন কাটা পড়ব
               আমাকে সমূলে উপড়ে ওরা পুঁতে দেবে
              ভালো জাতের কোনো আসল কদম চারা
              তা'হলে,
             অন্তত কয়েক বছরেই কাঁচা কাঠ পাওয়া যাবে...



                                          ★★গদ্য★★
                                        আত্মহরণ
                    অনুপম চক্রবর্তী   
অবহেলার ঠোঁটে এক চুমুক বিষ , আত্মহননের স্বাদ চেখে দেখে । কিন্তু পোষ্টমর্টেম রিপর্টে শুধু বিষেরই উল্লেখ থাকে , ঠোঁট দুটোর কোন উল্লেখ থাকে না । কেননা ঠোঁটের কারুকার্য বিষের উৎকর্ষতায় দগ্ধতার সারিবদ্ধ বিস্ফোরনে ক্রমাগত মৃত্যুবরণ করে । সেই মৃত্যু কখনো আনন্দের হয় , আবার কখনো নির্মম হয় । সেই নির্মমতাও এক বিচিত্র বিবর্ন সময়ের নৈশয়িক যৌনতার পরিনতির দিকে যায় । এক চলমানতার ধৈর্য্যশীল পথের বাঁকে বাঁকে যেখানে পাওয়া আর না পাওয়ার অনেক জটিলতা পেরিয়ে
হৃদয়ের সহজলভ্যতা খুঁজে নেয় এক অনিবার্জ টিকে থাকার প্রতিনিয়ত অভ্যেস ছুঁয়ে দেখা বাস্তবতার প্রতিটি মুহূর্ত । বোঝা আর না বোঝার মধ্যে যতটা দূরত্ব থাকে , ঠিক ততটাই আপোস থাকে । মানুষ প্রতিনিয়ত এক অদেখা মৃত্যুর শিকার যা আস্তে আস্তে গ্রাস করে । আত্মহত্যা একদিনের নয় । প্রতিনিয়ত টুকরো টুকরো অবহেলার যুক্তবর্নে প্রতিহিংসার এক নেগেটিভ উৎকর্য , যেখানে পরাজয়ের গ্লানি সুসজ্জিত আত্মমর্যাদার অস্তিত্ব খোঁজে । আর এর পরিনতি হয় আত্মহনন । 

                                       বাৎসল্য
                                 পারমিতা ভট্টাচার্য্য
                                
কাজরী খুব গরীব। এক ছেলে, এক মেয়ে আর ঘরে পঙ্গু স্বামী কে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। আর আছে কমলা। নিজের মেয়ের মতই স্নেহ করে কাজরী কমলা কে। কমলাও খুব বাধ্য কাজরীর। সেও কাজরী কে খুব ভালোবাসে। যা বলে তাই শোনে। কমলা হলো আসলে কাজরীর পোষা গরু। গত তিন দিন হলো তার একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাছুর হয়েছে। দেখতে হয়েছে ঠিক কমলার মত। কপালে তার একটা মস্ত বড় চাঁদ। তাই কাজরীর ছোট্ট ছেলেটা তার নাম রেখেছে - চাঁদা। বড্ড ভালোবাসে চাঁদা কে ওরা দুই ভাই বোন। অন্য দিকে কাজরীও খুব ভালোবাসে কমলা কে, কারণ ওর দুধ বেচেই মূলত সংসার চলে কাজরীর। শুধু কি দুধ? ঘি, ঘুঁটে সব কিছুই। তাই সংসার খরচের বাইরে গিয়েও কাজরী যত্ন করে কমলা কে। চানা, খোল, ভুসি সবই খাওয়ায় কমলা কে। একটু বেশি দুধের আশায় কোথায় হালি ঘাস, কাঁটানটে, কুকসিনে পাতা প্রভৃতিও কমলার জন্য জোগাড় করতো কাজরী। এই ক'দিন কমলার দুধ কী করে কমে গেল সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পাচ্ছিল না কাজরী। এতো খাটে গরু টার পিছনে,  সবই কি তাহলে পন্ডশ্রম? এক দিন কাজরী দেখে এই সবই তার গুণধর ছেলের কাজ। দিন কুড়ি হয়ে যেতেই কাজরী কমলার বাছুর টাকে রাতের দিকে বেঁধে রাখতো। কারণ বাছুরে দুধ খেয়ে নিলে আর বেশি দুধ পাওয়া যাবে না। অন্য দিকে কমলার ছোট বাছুরের কষ্ট কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারতো না কাজরীর ছোট্ট ছেলেটা।  সে মা কে বারবার বলতো, চাঁদা কে ছেড়ে দিতে। ছোট ছেলের কথায় কে আর কান দেয়। তাই সে ভোরের বেলা উঠে ছোট্ট বাছুরটা কে চুপিচুপি মায়ের চোখের আড়াল করে চোরের মত দুধ খাইয়ে আসতো। চুরি করে খেতেও যেমন মজা তেমন চুরি করে খাইয়েও তেমন আনন্দ, তা ওই টুকুনি ছোট্ট হৃদয় অনুধাবন করতে পেরেছিল। মায়ের কাছে ধরা পড়তেই কাজরী তার ছোট্ট ছেলে কে কান মোলা দেয়। ছেলেটির মধ্যে একটুও অনুশোচনা আঁচ পেল না কাজরী। বরং দেখল একটি অবলা প্রাণীর জন্য তার ছোট্ট ছেলেটির গভীর আকুতি। মা ও সন্তানের যে গভীর মেলবন্ধন তা শুধু মাত্র মনুষ্য জগতের জন্য যে সীমাবদ্ধ তা নয়, সমগ্র প্রাণী জগতই এর আওতাভুক্ত। এটাই কাজরীর ছোট্ট ছেলেটি অনুধাবন করতে শিখিয়েছিল তাকে। আসলে এই চৌর্যবৃত্তি তে কারো কোনও ক্ষতি ছিল না। এটা একটা ছোট্ট হৃদয় কে মহান করেছিল মাত্র। দিন আনা - দিন খাওয়া সংসারে নিজে না খেয়ে অপরের কথা ভাবা, বিশেষ করে মায়ের কাছে বকুনি খেয়েও এতো টুকুনিও মন খারাপ না করে আনন্দে মন ভরে ওঠার মাঝেও একটা অসম্ভব পরিতৃপ্তি আছে, সেটাই বাচ্চা ছেলেটি আত্মস্থ করতে পেরেছিল। 


                     বেচারাম স্বামী
                               বিনয় ভট্টাচার্য
বেচারাম বাবুর শরীর অসুস্থ ।নিতান্ত আর্থিক কষ্টে ভুগছিলেন বেচারা বেচারাম ।বন্ধু কেনারাম আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো ।সুযোগ বুঝে বেচারামের বাড়ি বেচে দিয়ে কেনারাম তার বৌকে নিয়ে পালিয়েআয় ,? গেলো । বেচারাম সুস্থ হয়ে উঠলো ।
এলাকা ছেড়ে সে পাড়ি জমালো হিমালয়ের পথে ,এখন সে মঠে মন্দিরে শিষ্যদের মনুষ্যত্বের পাঠ দেয় । বলে মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ ।বেচারাম স্বামী ভক্তদের দানে পরিতৃপ্ত  পরিতুষ্ট এখন সে মঠাধ্যক্ষ্য । মানুষ তাকে প্রবঞ্চনা করেছিলো ,সেই মানুষই তাকে  পরমানন্দের পথ দেখালো ।

                           গঙ্গা আর ফিরবে না
                             
গতকাল রাত থেকে গঙ্গাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।পাঁচ বছরের ছোট্ট একরত্তি মেয়েটা যে কোথায় গেল তার কোন পাত্তাই যেন মিলছেনা।ওর বাবা স্থানীয় থানায় কমপ্লেন করেছে,এই দুদিন যাবৎ সারা বসিরহাট এলাকা চষে ফেলেছে,তবুও তার খোঁজ মেলেনি।কাউন্সিলার থেকে শুরু করে মন্ত্রী সকলেই আশ্বাস দিয়েছে তাকে খুঁজে দেবার।
চারিদিকে দাঙ্গা হাঙ্গামা চলছে  ফেসবুকে অশ্লীল ছবি না কি একটা পোস্ট করা নিয়ে-গঙ্গার বাবা সেসব বোঝে না।তার একটা ছোট চায়ের দোকান।ওর মায়ের হাল এই দুদিনেই কেঁদে কেঁদে মৃতপ্রায় হয়ে উঠেছে।
তিনদিন কেটে গেল।অবশেষে গঙ্গার খবর পাওয়া গেল।স্থানীয় পুলিশ এসে জানাল যে,মিসিং রিপোর্ট লেখানোর তিনদিন পর তার খোঁজ মিলেছে।একটা পুরোনো বাড়ীর কুঁয়ো থেকে তার টুকরো টুকরো হওয়া দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ!
ওর বাবা ভাবল,তিনদিন আগেই তো যখন বসিরহাটের নানান প্রান্ত থেকে খুনোখুনির খবর আসছিল তখন গঙ্গা ওই দিকেই পুরোনো বাড়ীটার কাছে সকলের চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিল।
কাউন্সিলার থেকে মন্ত্রী-সকলে এসে সমবেদনা জানিয়ে গেলেন।কথা দিলেন এর একটা বিহিত হবেই।গঙ্গার বাবার হাতে দিলেন একটা এক লক্ষ টাকার চেক ক্ষতিপূরণ হিসাবে!গঙ্গার মায়ের জ্ঞান ফিরছে না,গঙ্গার বাবা দুচোখে সবকিছু ঝাপসা দেখছে।চেকের শক্ত কাগছটা তার কাছে একটা ছোট্ট রাখী বলে মনে হল!