সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৯




কবিতাঃ-
       
            সায়ন্তনী হোড়, অনুপম চক্রবর্ত্তী, আবদুস সালাম,
                    কিশলয় গুপ্ত,     বিশ্বাস, কৃপণ মৈত্র

গল্প:-
                    বটু কৃষ্ণ হালদার,পারমিতা ভট্টাচার্য



                             সাঁতারের ওপার থেকে

                       অনুপম চক্রবর্তী


                       সব স্মৃতি সাধ্যে মেলানো যায় না
                       ক্ষতের গায়ে লুকিয়ে থাকে প্রবণতা ,
                       আমি তার চেনা দাগে বিকেল আঁকি ।
                      সমস্ত না পারার মুখোমুখি জেগে থাকে
                      সমস্ত প্রয়োজন বোধ -
                     জীবন আঁকি ফুরিয়ে যাওয়ার কৌশলে । 
                     সব আলো রাস্তা ভেজায় না
                     প্রকাশ্যে যেটুকু পাওয়া -
                    তারই মাঝে চরিত্র হারায় অন্ধকার ।
                    জলে পড়ে থাকে কিছু বে-কায়দা
                    কিছু সাঁতারের ওপার থেকে ,
                     নির্লিপ্ত উঠে আসে ।


                      অবহেলিত সেলাই

                         সায়ন্তনি হোড়         
পুড়তে থাকা এসব
কাঁচা অনুভূতিদের গায়ে আজও লেগে থাকে
কিছু  সূক্ষ্ম জলীয় নকশা ,
           যাদের খুব  গোপনে আমাদের অলিখিত সংসারের কাছে গচ্ছিত রাখি  
প্লিজ  এভাবে ঠোঁট সেলাই করে রেখো না ,
  মরচে পড়ে যাচ্ছে   শব্দের উপর ।
দ্যাখো !  তোমার সবটুকু অবহেলার ঋণ শোধ
করে দিয়েছি  ,
                    এই বিক্ষত আয়নার কাছে ।
গর্ভবতী হচ্ছে  আকাশ ।  সূর্যের ভাঙা ভাঙা আলো ।
   তবুও এই ফাটল ধরতে থাকা আলোর মধ্যেও একটা ফুলের আত্মহত্যার গল্প খুঁজে পাওয়া সম্ভব  ।। 




                                      নতুন বছর
                                আবদুস সালাম


               মৃতময়  বিশ্বাসের আঙিনায় রতিগলা ভোরের চোখ
              উন্মাদনার তরঙ্গে মিশে যাচ্ছে কফিন বন্দী লাশ
             আত্মনির্ভর ঘাসে শিহরিত তামাটে জীবন
             কুয়াশার ভিতর নুইয়ে পড়ে ভাঙনের নীরবতা
            শ‍্যাওলা মাখা ভবিষ্যত চেয়ে আছে ওপারে
            কি পাবো না পাবো ভাবতে ভাবতে নীরবতা সিদ্দ হয়
           কুয়াশার ফুল ঝরে যায়
           খুলে পড়ে ব‍্যস্ত উপমার অভিনব উল্লাস
           ভিন্ন উচ্চারণে প্রথিত হয় মুর্ছনার প্রাচীর
           বেজে ওঠে অত‍্যাচারের বাজনা,
           কাঁপে প্রতিবেশীর রঙমহল
           অবধারিত সত্য হার মানে
           ব‍্যতিক্রমী অভ‍্যাসে খেলা করে অলৌকিক চাঁদ
           নতুন বছর আসে
           ভাসে শপথের বন‍্যায় 
           মানবিক শপথের মঞ্চে গলা ফাটায় ইবলীসের দল
           নিপীড়িত মানুষ দেখে ভিন্ন ভিন্ন হাহাকার  ভিন্ন ভিন্ন রঙের                   তীব্র নীল স্রোত ।


                               ছায়া দেখে দাড়াও
    
                                  কিশলয় গুপ্ত


                            ছায়া দেখে দাঁড়াও- রোদ্দুরে
                           অমলকান্তি পুড়েছিল খনিজপ্রেমে
                          এখন আর শান্তিকল্যান লেখা নেই
                          সাদা কবুতরের শ্রীচরনে
                          হা কৃষ্ঞ বলার মতো একটা মানুষ
                          রামরাজ্যে খুঁজে পাওয়া দায়!
                         আকাশ জোড়া লেজ ঝোলা ঘুড়িতে
                         ছয়লাপ অসুখের হাজারো বার্তা
                         অভিমানের সব উপসংহার আছে
                         মন খারাপের মতো সুবর্ণ সকালে
                         অমলকান্তি পুড়েছিল রোদ্দুরে
                         ছায়া দেখে দাঁড়াও-


              চিকের আড়ালের গল্প থেকে
                          শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস


         গাল-গল্প ঠিক করে দেওয়া সম্ভব হলে ছাপাবেন।
         এমনটা হয়নি কিছুই ইতিহাস ক্লাসে।
         স্যারের হাতের কাজের ছোঁয়ায় মীরজাফর চিকের আড়ালে। 
        গল্পটি প্রথম মাতৃভাষার দিন পঠিত হলো পলাশী পাড়া উচ্চ                বিদ্যালয়ের ফুটন্ত জলের মত সপ্তম শ্রেণীর জন্য।
       শ্রেণীশিক্ষক হিসেবে মাঠ মাঠ হলুদরঙ- কে
       নীল করে দিতে হাজারদুয়ারীর গঙ্গায় ছিপ ফেলেছে চিকের               আড়ালের গল্পটা।


                                   গোপন লজ্জা
                                   কৃপান মিত্র
                  নগ্নকুমারীর গোপন লজ্জার মতো মেঘঢাকা
                  চাঁদ আমার শয‍্যায় দৃঢ় আলিঙ্গনে আবিষ্টতায়
                 শুয়ে আছে রমনের আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে
                 সূর্যকে বিদায় দিয়ে বিষন্নতার নিশিফুলের
                 পাপড়ি সবে মেলতে শুরু করেছে পেঁচার
                 স্থিরদৃষ্টির আয়নায় শিকার আহ্বান ,রতিরমন
                 নিশর্ত আত্মসমর্পণ, আমার ভাঙা জানালার
                 উদাম আহ্বান দুটি দেহ একাকার ,গোপন
                 দৃষ্টিরা কৌতূহলি চোখে দরজার ওপারে,
                 পাতাছায়া মেহেদি লাম্পট‍্যের অত‍্যাচারে
                সেরাসুন্দরীর  লজ্জাহর কামুক বাদশা...









                                       ছন্দপতন
                    পারমিতা ভট্টাচার্য            

                       
আজ রাস্তার দু ধারে আবীরের সমারোহ দেখে রাইয়ের মনে পড়ে যায় অর্কর কথা। আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে অর্ক মারা যায় ক্যান্সারে। রাই কে ওর বাপের বাড়ির লোকজন অনেক চেষ্টা করেছিল নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এক মাত্র ছেলের মা বাপ ছিল ওর শ্বশুর শ্বাশুড়ি। রাই কে ভালোবাসতও ভীষন তারা। তা ছাড়া শ্বশুর বাড়ির চারিদিকে, সারা বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে আছে অর্কর স্মৃতি। ইচ্ছে করলেও এই বাড়ি থেকে পা ওঠেনি রাইয়ের। তাই পাঁচ বছরের মেয়ে তৃষা কে নিয়ে সে শ্বশুর বাড়ি তেই রয়ে গিয়েছিল। অর্কর অফিসের কাজটা বহু চেষ্টা করে সে জোগাড় করেছিল। না হলে মেয়ের পড়াশোনা, বৃদ্ধ দুই মানুষের খরচ, সংসার খরচা কী করে চালাবে সে? 
আজও হোলি। ঠিক দু বছর আগে অর্ক এদের ছেড়ে চলে গেছে। শুধু অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে রাস্তার ধারে চূড় করে রাখা আবীরের দিকে রাই, আর ভাবে নিজেদের ফাগুয়া নিয়ে মাতামাতির কথা। তার পর কী যে হলো! আসতে আসতে ওজন কমে যেতে লাগলো ওর। বীভৎস রকমের রোগা হয়ে গেল সে। ধরা পড়লো ক্যান্সার। কেমো থেরাপির ফলে সারা মাথা প্রায় ন্যাড়া হয়ে গেল। চোখ দুটো কোটর থেকে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায় যন্ত্রণায়। শেষটায় আর সহ্য করা যেত না অর্কর চিৎকার। রাইও পারেনি সহ্য করতে। তাই চিরতরে মুক্তি দিয়েছিল অর্ক কে। আলমারি তে অতি সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখা ফাঁকা পয়জনের শিশিটা প্রতি হোলির দিন দরজা বন্ধ করে বের করে সে। আর অর্কর ছবির সামনে ভেঙ্গে পরে কান্না। কতটা ভালোবাসলে যে মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবা যায় তা শুধু সেই জানে। 



                              ডঃ খালকোর চেম্বার

                      বটু কৃষ্ণ হালদার

        
রাত প্রায় একটা নীলাচল এক্সপ্রেস এসে দাঁড়া ল আদ্রl স্টেশন এ, বড়বাবু নেমে পড়ে, স্টেশন পুরো ফাঁকা, বৃষ্টি তখনও টুপ টুপ ঝরে চলেছে, কয়েকটা আর পি এফ পুলিশ এসে জিজ্ঞেস করে
আপনি কোথায় যাবেন?
বড় বাবু উত্তর দেয়, আমি চাণ্ডিল পি ওয়ে অফিস এর বাবু, যাবো পুরুলিয়া তে কিন্তু এত রাতে তো কোনো গাড়ি নেই কি যে করি
একটা পুলিশ জবাব দেয় স্টেশন চত্বর বাজারে র মাস্তান রঘু খুন হয় সন্ধ্যা তাই সব জায়গায় পাহারা চলেছে, আপনার তো এখানে থাকা হবে না বড় বাবু,
ঠিক আছে আমি তাহলে রেল হাসপাতালে একটু যোগাযোগ করি, চলি, নমস্কার জানিয়ে বড়ো বাবু রওনা দেয় হাসপাতালে 
ইমারজেনসি ওয়ার্ড এর নার্স টা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, বড় বাবু টেবিলে টোকা দিতে ধড়  পড় করে জেগে উঠে, কে?  কে? বলে চিৎকার করে ওঠে
তার পর বলে কাকে চাই?
ওরে বাবা পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে খুব, আর সহ্য হচ্ছে না ম্যাডাম পেটে হাত বোলাতে থাকে বড় বাবু 
নার্স টি চশমা টা নামিয়ে তার দিকে কট কট করে তাকিয়ে কি যেনো দেখতে থাকে
বড় বাবু একটু ভয় পেয়ে যায়
নার্স টি দৌড়ে ভিতরে চলে যায়, মিনিট দুই তিন পর ফিরে আসেন, একা নন সদলবলে, প্রায় চার জন.
গেলেন একা এলেন চার জন কে সঙ্গে নিয়ে, তিন জন মহিলা, এক জন পুরুষ 
বড়ো বাবু এবার সত্যই ভয় পেয়ে গেলেন. ব্যপার টা তার বোধগম্য হচ্ছে না কোনো মতে, তার উপর হাসপাতাল একেবারে ফাঁকা, দুই একটা জীর্ণ রোগী ভর্তি কেবল মাত্র যে কোনও মুহূর্তে হয় তো টেসে যাবে, মনে মনে ভাবতে লাগল, তবে কি রেল কর্মীদের কোনো অসুখ করছে না.
হঠাৎ লোকটি বড় বাবুর দিকে এগিয়ে এলেন, জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে আপনার?
ডাক্তার বাবু আমার তল পেটে খুব ব্যথা. 
ডাক্তার হাত দিয়ে সেই জায়গায় টিপতে থাকে,
বড় বাবু উফ বলে আওয়াজ করে. 
কেশ তো সিরিয়াস মনে হচ্ছে, আপনি ভর্তি হয়ে যান, কয়েকটা ওষুধ দিচ্ছি খাবার খেয়ে, খেয়ে নেবেন, তার পর কাল সকালে যা করার করব.
একটা নার্স তাকে নিয়ে গিয়ে বেড দেখিয়ে বলে, আপনি এখানে জামা কাপড় ছেড়ে রেস্ট নিন, একটু পরে আপনার খাবার ও ওষুধ  দিয়ে যাবে, 
বড় বাবু অগত্যা জামা কাপড় ছেড়ে বেডে, ফ্রেশ হয়ে শুতে যাবে, এমনে সময়ে  দুরের বেড দিয়ে একটা হাসির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে, 
এত রাতে এ কার হাসি, ভূতের নয় তো, হাসপাতাল গুলো তে তো আবার এমন অপঘlতি আত্মার কথা অকছার মিথ্যা নয়, পিছন ফিরে তাকাতে আঁতকে ওঠে বড়ো বাবু, 
একটা বুড়ো, দাঁত নেই, টাক মাথা, কালো কুচকুচে, পাঁজরের হাড় বেরিয়ে আসতে চাইছে, বুক থেকে,
এখানে কি মনে করে এসেছেন বাবু, আমি তো মরা রুগ্ন মানুষ বটে, পালিয়ে যান, পালিয়ে যান, এ ডাক্তার নয় বাবু, কসাই বটে, পালিয়ে যান, হে হে, হে, হাসতে হাসতে গিয়ে নিজের বেড এ শুয়ে পড়েন,
একটা নার্স এসে খাবার টেবিল এ খাবার টা রাখে, উঠে পড়ুন খেয়ে নিন, ওষুধ টা একটু পরে দিয়ে যাচ্ছি,
এমনিতেই এই সব কান্ড দেখে বাবুর খিদে গেছে ঘুছে, শুধু ভাবছে, একটু রাত কাটানোর মিথ্যা অজুহাতে, সত্যই প্রাণ টা যাবার জোগাড়, উপায় নেই দেখে খাবার টা খেতে থাকে,
মনে মনে বলে আগে তো খাবার টা একটু খেয়ে নিন, তার পর ভাবl যাবে, কোনো মতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে খেতে থাকে,
পিছন থেকে কে যেনো বলে খেয়ে নেন বাবু, ভালো করে খেয়ে নেন, হে হে হে.... 
এমনে সময় একজন লোক কে তার কাছে আসতে দেখে বাবু র একটু সাহস হয়, তার হাতে গোটা কয়েক ওষুধ এর প্যাকেট, ভাবে যেই আসুক না কেন এর রহস্য আমি উন্মোচন করবোই.
লোক টি কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে আরে বাবু আপনি এ অসময়ে এখানে?
কে বটে রে, নন্দী নাকি?
চিনতে পারলেন তাহলে, আমি সেই অধম বাবু,
তা আপনি কেনো এখানে মরতে এলেন?
সব ঘটনা খুলে বললেন, কিন্তু হাসপাতালের এই অবস্থা কেনো রে?
দাঁড়ান বাবু,, নন্দী এদিক ওদিক তাকিয়ে মেন দরজা টা আস্তে করে বন্ধ করে দেয়, তার পর একটা ব্যাগ থেকে বোতল বার করে, কি যেনো ঢাললো, কাঁচের গ্লাসটাতে , নিন বড়ো বাবু
এসব জোগাড় ও তোর কাছে আছে তাহলে. 
কি যে বলেন বাবু, আমি তো আপনার শিষ্য বটে, নিন,  তার পর দেখে
বড়ো বাবু এক নিশ্বাসে সে টুকু শেষ করে, আরো একটু ঢেলে দেয় গ্লাস এ 
বছর দুই আগে এসেছিলাম এখানে, আমাদের অফিসের রবি ও ভর্তি ছিল পা ভেঙে, জানিস আমি তো ডাবের মধ্যে মদ ভরে এনেছিলাম রবি র জন্যে, মনে আছে তোর 
সে কথা বলতে, কিন্তু এখন খুব খারাপ অবস্থা হাসপাতালের, শুনেছি ডাক্তার নাকি ভগবান, আর এত কসাই বাবু, রোগী ভর্তি হলে, আগে অপারেশন করার জন্যে ছটফট করতে থাকে, কি রোগ হয়েছে জানার দরকার নেই, এখন দেখ বেন  চলুন, যন্ত্র পাতি গুলো পূজা করছে, আপনাকে অপারেশন করবে বলে
কি বলিস রে, আমাকে বাঁচা রে নন্দী, 
বাবু ওই পিছনের দিকে একটা ভাঙা দরজা আছে, আমি খিল টা খুলে দিচ্ছি, ওখান দিয়ে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে সোজা দক্ষিণ দিকে দৌড়াতে থাকবেন, ওই ভাবে  অনেকেই বাঁচিয়ে ছি, কিন্তু সাবধানে লাফ দেবেন কিন্তু, নিন প্যান্ট জামা পরে নিন
বড়ো বাবু সুযোগ বুঝে সব গুছিয়ে নেয়, নন্দী দরজা টা খুলে দেয়,
বাবু বেরিয়ে গিয়ে সোজা লাফ দিয়ে দৌড়াতে থাকে প্রাণ পনে
কয়েকটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে বাবুর পিছনে পিছনে ধাওয়া করে, অবশেষে স্টেশনে পৌঁছায়, সেখানে হাপাতে হাপাতে একটা চেয়ারে গিয়ে বসে, তখন সময় প্রায় সাড়ে পাঁচটা, হাওড়া চক্রধর পুর প্যাসেঞ্জার গাড়ির আসার সময় হয়েছে, গ্রীন সিগন্যাল টা জ্বলজ্বল করছে, গাড়ি প্লাটফর্ম এ আসে, বাবু সোজা গাড়ি তে উঠে গিয়ে, একটা সিট এ শুয়ে পড়ে।


শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

সাহিত্য কালচার মাসিক সাহিত্য পত্রিকা
                     প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা

        
                          
    
    কবিতা:-
   
            আবদুস সালামসৌরভ ঘোষ,
          সনাতন মাজী (ময়না)কৃষ্ণেন্দু দাস ঠাকুর,
          মারুফ আহমেদ নয়নশিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়
                         

   
      গল্প:-
                                         সোহম ঘোষ
                          

                  
                       পায়ে পায়ে

                              কৃষ্ণেন্দু দাস ঠাকুর

                       এই যে, 
                              মেঘ --বৃষ্টিতে ভাসায় 
                                        মাটি --আঁকড়ে ধরে
                   গাছ পাতাকে গর্ভবতীর মতো যত্ন নেয় 
                   বাতাস তাকে স্বাদ দেয়
                   কিশোরীর চোখের মতো শাপলা ফুল।
                   নীল রঙের স্বপ্ন পুড়েও পালক
                                     ছেড়ে যায় ডানা
                  আমি জানি। তুমিও জানো।তবু অজানা
                  জানালা বড়ো প্রিয়।দাগ পড়ে যায় রেখায় 
                  ঘাস রেখে দাও বুকপকেটে 
                  বাদামী খামের ঠিকানা ভিজে যাবে
                 একবার,পা আর হাত মিলিয়ে মিলিয়ে ফেলি।


                                    নেশাতুর

                                    সৌরভ ঘোষ

                  জিন- হুইস্কির ককটেল,
                 চোঁয়া ঢেঁকুরের গন্ধে জলীয় বাষ্প সম্পৃক্ত
                 হাইওয়ের ডিভাইরডার গুলো নিছক পদ্য
                 স্ট্রিট ল্যাম্প ঠিকঠাক,হেডলাইট অভদ্র,
                 আঁতুড় চোখে খড়কুটোর নকসা, তুরীয় মায়া,
                পৃথিবীময় ছন্দহীন জিঘাংসা,আমি ছায়া...
                 অ্যামোনিয়া গন্ধ টেনে নিয়ে যায় সুলভ শৌচাগারে
                 র‍্যাবিপ্রাজোলের ঘোর অবাধ্যতা, 
                 ইমিউনিটির জীর্ণ দশা। 
                বেসিন ছেড়ে কোমোট জড়িয়ে ধরি
                 ফ্লাস অন করতেই,
                 অ্যাসিডিটি গন্ধ ছাড়া সব ধুয়ে যায়...
                 টয়লেটের রকমারি আয়নায়-
                 বিবিধ প্রতিবিম্ব, দৈনন্দিন অবক্ষয়  ...


 ----*------*-----*------*------*------*--


                                            ইচ্ছেরা

                              শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়

         
                          কত ইচ্ছেরা ডানা মেলে প্রতিদিন

                          প্রতিদিন, নব-উল্লাসে,

                         কত ইচ্ছের দহন হয় প্রতিদিন

                         বুকের গভীরে...

                         ভয়ের স্বপ্নে, যে ভাবে ভেঙে যায় ঘুম
                     
                         সেই ভাবেই, কত ইচ্ছেরা

                         হয়ে যায় লীন --

                         একান্ত গোপন খাতায়...

                         মৃত ইচ্ছেরা আদুরে মেয়ের মত

                         ফিরে আসে বারবার

                         চুপিসারে ...

   ------*-------*-------*---------*------

     

                                          নটরাজ

                             সনাতন মাজী (ময়না)

                        
                      নিজস্ব বাগানে বেশ বসে আছি একা ,

                     বাড়ীর বারান্দায়  ঘুঘু চরাচ্ছি রোজ ।

                    কত ঋতুর আসা যাওয়া দেখলাম ,

                    কিছুই স্থায়ী হচ্ছেনা , কোন ফুল ফল !

                   আসন্ন কালের স্পর্ধার নীচে সব্বাই -- 

                    শ্মশানেই নাচে সুখ ধন‍্য নটরাজ !

  ----*------*------*-------*-------*----

                                       মানচিত্র
                                  আব্দুস সালাম

            
                     অজন্তার গুহায় খুঁজি জীবনের আশ্রয়
                     সন্দিপন আলোয় ভেসে ওঠে জীবনের বীজ
                  একটা সকাল রঙের মুখ দেখার অনন্ত প্রয়াস

                 জীবনের ঘ্রাণ চেটে পুটে নেয় স্বপ্নীল বিশেষণ
                বিষাদ বীণার তারে ঝঙ্কার তোলে নষ্ট দিনের গান 
                সর্বগ্রাসী  অহংকার যেন প্রেমের ফিনিক্স পাখি

                  দহন জুড়ে খেলা করে আইবুড়ো চৈতন্য
                 বিবস্ত্র চাঁদ গেয়ে ওঠে পিচ্ছিল ভাটিয়ালী
               পরিবর্তনে পুড়ে মরে কলঙ্কের নৌকা

         দুর্ভেদ্য জীবন এঁকে যায় অন্তঃস্বারশূন‍্য ভৌগোলিক মানচিত্র



-------*--------*-------*--------*-------







কোন রূপসীর প্রতি

মারুফ আহমেদ নয়ন



     ঘুমন্ত কোন রুপসীকে দেখলে আমার শুন শান অতীত স্মৃতির 
    ভেতরে একলা এক পাতাকুড়ানি মেয়ে পাতার বাঁশি বাজিয়ে 
      হেঁটে যাচ্ছে,তার সুরে জেগে উঠছে বন, একটা প্রাসাদ,সম্মুখে
     তার সৈন্য সমাহার,আর খাঁচার ভেতরে এক সিংহের গর্জন,

   মনে পড়ে শুধুমাত্র একটি সোনার আপেলের লোভ দীর্ঘক্ষণ ঘুম           পাড়িয়ে রেখেছিলো সবুজ পাথরের উপর...


   ----*------*------*-----*------*-----


           
              মহারাজা তোমারে সেলাম

                                     সোহম ঘোষ


২১, রজনী সেন রোডের বাড়ির সামনে যখন লালমোহন বাবুর মাদ্রাজী সবুজ আ্যাম্বাসাডারটা দাঁড়াল ঘড়িতে তখন নটা পাঁচ। ফেলুদা সেই কোন সকালে উঠে ব্যায়াম করা, দাড়ি কাটা, স্নান সারা সব করে ওর আই-পডটাতে কি করছে। সবুজ খেরোর খাতা ছেড়ে এখন সব কিছু ওটাতেই তুলে রাখে। দু-একবার উঁকি মেরে দেখতে গেলাম তাতে ফেলুদা গাট্টা মারবে বলে শাসানি দিল। আমি সোফায় আধশোয়া হয়ে 'চাঁদের পাহাড়' পড়ছিলাম। ফেলুদা আড়চোখে দেখে নিয়ে বলল, "প্রচ্ছদটা কার আঁকা বলতো?"

"কার?"

আর কিছু না বলেই আই-পডে মন দিল ফেলুদা।এমন সময় লালমোহনবাবু ঢুকলেন।

ফেলুদা চোখ না উঠিয়ে প্রশ্ন করল,"আপনার সুডোকুর সমাধান পেলেন?"

লালমোহনবাবু খানিকটা অবাক হয়ে বললেন,"না, মানে ইয়ে আপনি জানলেন কি করে মশাই?"

"আপনার ডান পকেট থেকে আজকের কাগজটি উঁকি মারছে। আর বাঁহাতের তালুতে পেন দিয়ে লেখা সংখ্যাগুলোও বেশ চোখে পড়ছে। দাড়িয়ে রইলেন কেন, বসুন।"

লালমোহনবাবু বললেন, "হেঁ হেঁ। আর বলবেন না মশাই। সুডোকু নিয়ে আমি যাকে বলে ওভারহোয়েলম্যড। সুমাত্রায় সুডোকু বলে আমার শেষ গল্পে প্রখর রুদ্র সুমাত্রায় যায় সুডোকুর উৎস সন্ধানে। সুনামি ঢেউএর মাথায় চড়ে ভায়া ভারত মহাসাগর।"

"এসব লিখেছেন নাকি?"

"হ্যাঁ। ৩০০০০ কপি ছাপতে দিয়ে এলাম। পয়লা বৈশাখ বেরোবে। আপনি যখন কাল বললেন মানিকবাবু ডেকেছে। আমি ভাবলাম যাই, ওনাকেই নয় বলি বইএর উদ্বোধনে। ব্যস, সেলিং লাইক হট কচুরীস। কিন্তু কিছু ভুল হয়ে গেল নাকি মশাই!"

"সে তো হয়েছেই। সেসব পরে বলে দেব। তোপসে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেরতে হবে। তুই চট করে তৈরি হয়ে নে।"

লালমোহনবাবু সোফায় বসে আমায় জিজ্ঞেস করলেন, "কি তপেশ ভাই। কেমন কাটছে?"

"ভাল।আপনি ব্রেকফাষ্ট করেননি তো?"

"সে চিন্তা নেই ভাইটি। যাবার পথে আজ খাব। হট কচুরীস।"

সবাই নিচে নামলাম যখন ঘড়িতে নটা কুড়ি। হরিপদবাবু আনন্দবাজারটা ভাঁজ করে গাড়িতে স্টার্ট দিলেন। ফেলুদা সামনে বসে আই প্যাডের হেডফোন কানে গুঁজে। গাড়ি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জ্জী রোডে উঠল।

লালমোহনবাবু ফিসফিস করে বললেন,"হাইলি ট্যালেন্টেড লোক মানিকবাবু। ৫০ টার বেশি ন্যাশানাল আ্যাওয়ার্ড।"

"৩২ টা।"

"৫০ নয়?" বিড়বিড় করে মিইয়ে গেলেন।

"অবশ্য ভারতরত্ন তো একাই একশো।"

"বলছ? তবে!"

"ফেলুদা বলছিল ওকে নাকি তিনবার দাবাতে হারিয়ে দিয়েছিলেন"

"তিনবার নয়। দুবার" সামনের সিট থেকে বলে উঠল ফেলুদা "ওয়েস্টার্ন মিউজিকের উপরও অগাধ পান্ডিত্য।"

টালিগঞ্জ থানার সামনে দিয়ে গাড়িটা যাচ্ছিল। ফেলুদা কাউকে একটা হাত নাড়াল।

রাসবিহারী ক্রসিংএ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। ফেলুদা একটা চারমিনার ধরিয়ে রিং ছুড়তে লাগল। বিশপ লেফ্রয় রোডে গাড়িটা ঢুকল। ফেলুদা বলল,"তোপসে জানিস এই রাস্তাটা এক আইরিশ সাহেব জর্জ আলফ্রেড লেফ্রয়ের নামে। লাহোরের বিশপ ছিলেন তিনি। ওর লেখা একটা বই আছে। দ্য লেদার ওয়ার্কারস অব দরিয়াগঞ্জ। সিধুজ্যাঠার কাছ থেকে এনে পড়েছিলাম। ১৮৮৪ তে লেখা। পড়ে দেখতে পারিস।"

বলতে বলতে গাড়ি ১/১ র সামনে দাড়াল। লি রোড ক্রসিং। উপরে শোবার ঘরে মানিকবাবু।

ঘরে এক ভদ্রলোকও আছেন। টাক মাথা সাদা দাড়ি।

ফেলুদা ঘরে ঢুকে,"মানিকবাবু নমস্কার।"

তারপর ভদ্রলোককেও একইভাবে নমস্কার জানালেন। " তারিণীখুড়ো নন। সাদা দাড়ি। ধূলোতে ধূসর মানে দূর থেকে আসছেন। আপনি প্রোফেসর না? প্রোফেসর শঙ্কু?"

"হ্যাঁ।"

মানিকবাবু প্রোফেসর শঙ্কুকে বললেন," আলাপ করিয়ে দিই। প্রদোষ সি. মিটার। ডিটেকটিভ। লালমোহন গাঙ্গুলি, লেখক। তপেশরঞ্জন মিত্র, প্রদোষের খুড়তুতো ভাই।"

"আচ্ছা আজ উঠি মি. রায়।" 

"তারপর ফেলু কেমন আছ?"

"আপনি বলুন আগে কেমন আছেন?"

"আমি ভালই আছি। তবে বয়স হচ্ছে। শুনলাম এই পাশের লি রোডটার নাম সত্যজিৎ রায় ধরণী হল। একটু খোঁজ নিও তো এরকম কেনই বা হল? এর আগে কোথাও হয়েছে এরকম? আচ্ছা তোমার হাতে কোনও কেস নেই তো?"

"না না। কাফকার একটা অনুবাদ করছি। কিন্তু সেটা এমন কিছু তাড়াহুড়ো নেই। আমি ফাঁকাই আছি।" 

লালমোহনবাবু অনেকক্ষণ উসখুশ করছিলেন।

" লালমোহনবাবু কি কিছু বলবেন?"

"আচ্ছা, বিজয়া দেবী কি আপনার ফার্স্ট কাজিন ছিল?"

কটমট করে তাকাল ফেলুদা। রাশভারী সত্যজিৎ বাবু গোমড়া হতে গিয়েও হেসে ফেললেন।

"আমার থেকে একবছরের বড় ছিল বিজয়া। প্যারিসে পড়ত। ৮ বছরের প্রেম আমাদের। ফেলু, বোধহয় জানো চিত্তরঞ্জন দাস আমার মামাশ্বশুর হন। বাড়িতে মানছিল না। আমরা ৪৯এর অক্টোবরে রেজস্ট্রি করি বাড়ির অমতে। পৃথ্বীরাজ কাপুর আসেন আশীর্বাদে। মার্চে বাড়িতে মেনে নেয়। নশুবাবু খুব বোঝায় মাকে। আমিও আবার ওকে বিয়ে করলাম। বাঙালি মতে।"

ফেলুদা বলল,"ET দেখে আপনার মনে হয়নি এটা আপনার সিনেমা। বঙ্কুবাবুর বন্ধুতে তো আপনি এটাই করতে চান।"

"হাইলি সাসপিশাস।" লালমোহনবাবুর গলা।

"আমি ওসব ভুলে গেছি ফেলু। একপয়সাও দেয়নি কেউ। ছাড়ো। সব ধরতে নেই।"

আমিও প্রশ্ন করলাম,"কাঞ্চনজঙ্ঘাই কি প্রথম রঙিন বাংলা ছবি?"

"হুম। ১৯৬২ তে। তার আগের বছর কবি সুভাষ আর আমি আবার সন্দেশ চালু করলাম।"

এমন সময় হরিপদবাবু কচুরী নিয়ে উপরে এলেন। সদ্য ভাজিয়ে আনা। আমরাও উঠে পরলাম।

"ব্যাপারটা দেখো ফেলু।"মনে করিয়ে দিলেন মানিকবাবু।

হেসে ঘাড় নাড়িয়ে নেমে এল ফেলুদা। পিছুপিছু আমরাও।

লালমোহনবাবুর পিঠে হাত দিয়ে ফেলুদা বললেন,"থ্যাঙ্কস লালমোহনবাবু। আমি একদম ভুলে গেছিলাম কিছু নিয়ে আসতে। আপনি আর হরিপদবাবু বাঁচালেন আমায়।"

"আরে মশাই। আপনাকে তো আগেই বলেছি এ বি সি ডি। আর আমি হলাম ই এফ।"

"সেটা আবার কি?"

"ইস্পেশ্যাল ফ্রেন্ড।আপনার"

বাড়ির পথে রওনা হলাম আমরা।


       *-------*--------*--------*-------*