বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯




                                       জবাবি খাম
                                   দেবযানি বসু


              পুরানো আমলের বক্ষবন্ধনী প্রজাপতি আজ
              জল থেকে তরঙ্গ তুলে নেবার আনন্দছবি
              রক্তের বুদ্বুদ বেলুনের ত্বক শুষে নেয় জেনে রেখো
              আমরা সকাল বিকাল অসুখ চিবিয়ে খাই
             ডাকঘরের লকগেট ভেঙে চিঠিগুলো প্রজাপতি হল
             শুঁয়োপোকার সঙ্গে সঙ্গমে মত্ত ছিল চিঠিরা একসময়
             লেস রাখি পুঁতি বসাই কলমে সেলাই করি প্রভা 
             কাউকে ভুলি না বাতিল করি নি তাও উড়ে যায় পতঙ্গ।

                                              মর্ম 
                    দেবাশীষ তেওয়ারি

          এক মুঠো বিশ্রাম অবস্থান করে আছে সরলরেখায়
              সিঁথির থেকে বয়ে চলেছে অন্ধকারের দিকে
              আমি ধারাপাত আটকাতে জানি না
             জানি না শহরের সঠিক সর্বনাম
             এখান থেকে পৃথিবী অনেক দূর
             হারিকেন নিভিয়ে দিলে অন্ধকারের বাহুতে-
             ফাটা দাগ হু হু করে মাথা উঁচিয়ে হাসছে
             কিছুক্ষণ পর ছড়িয়ে যাবে শরীরের সমস্ত সীমানায়
            ঠোঁটের কোণে তখন ভিজতে থাকে বেনামি কাব্যেরা
            ছায়া গুলো মূর্তি হয়ে যাক
           সেভাবে আমি তলিয়ে যাব,ছায়াদের প্রতিযোগিতায়.....
           যেভাবে  কবরের কাছে সুখ রেখে যায় বিষণ্ণ মানুষ ।   

                         শুঁড়ি খানার কবিতা 
                     সনাতন মাজি (ময়না)

    মানুষের ডিম ভাজে আহারী টোলার পাশে,
   দোপাখা উনুনে জ্বলে চন্দন কাঠের গুঁড়ি।
   নষ্ট বীজ পাশাপাশি জাগে আলো ফুট্ -টু-
   ডুম্ , উহ‍্য থাকে জাহান্নাম উঁকি দেয় হাসাহাসি। গাছের যৌনাঙ্গ ফুল     খিলখিলায় রাতে, মুখে গোঁজা জললিঙ্গ
   ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচে।কবিতার খোঁজ করি
   শুঁড়িখানায় এসে , হো হো করে হাসে কবিতা শরম খুলে দেখায় ।


                                         ভ্যা অ ক্যা
                       জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
      প্রেম লিখতে পারে নি তাই প্রজাপতিটি
      অরসিকেষু রসস্য নিবেদনং...... বল খুব হেসেছিল পাখিদের                      চিৎকারেও বিছুটি
     কিছু কম ছিল না।ভ্যাবলাকান্তের দ্বিধাবিদ্ধ লজ্জা
     কনেদেখা আলোর সাথে ১০০ মিটার রেসে চ্যাম্পিয়ন
     এরপর কপালে কে যেন অবুঝকান্ত স্টিকার লাগায়।
     বেশ কটা তীক্ষ্ণ ভ্রূ তির হয়ে চাঁদমারি ছেঁড়ে।
     হাসি আঁকতে পারেনি বলে খুশিগঞ্জের ঘর ছেড়ে
    সে এখন রামগরুড়ের ভাড়াটিয়া।আকাশের দিকে
    তাকায় আর  খুশিমেঘ খোঁজে মেঘদূত কোন ছাড়
    হিমালয়ের মতো গম্ভীর কটি পর্বত কচ্ছপ হাঁটে।
    খোলা রোদে মেলানিন হাসে সে এখন কালো দুপাশে আগুন
     হিম টিম নেই ....... হাসিমুখ ডাকে।
     ফুল দেখে হাসি আঁকা হলো কিন্তু কেউ দেখে না
     তাই খুশিমুখ নাম দিল ক্যাবলাকান্ত।
    তাতে বেশ খানিক প্রশ্রয় লেগে।

                                 সংকট 
                        আব্দুস সালাম
       
                 সুন্দরী মাছরাঙাদের দেখে পরাণ জুড়ায়
                  শ‍্যাওলা মাখা জীবনে প্রেম স্বপ্ন দেখায়
                  উঁকি মারে উত্তাপহীন ক্ষয়াটে সময় 
                  আস্তিনে চাপা পড়ে আছে মেঘলা সন্দেহ
                  অপেক্ষা করে আছে কূটীল ভবিষ্যৎ

                          এক আকাশ নীল রং 
                                     কুনাল গোস্বামী

        আবারও কি ফিরে পাওয়া যায় কবিতা
           স্পর্শ করে প্রেমিকার কম্পিত ঠোঁট, পাঠিকার নরম হাত?
            যাক্ যা গেছে চলে
           এক আকাশ নীল রঙ শুধু থাক আমারই তবে।
           প্রেমরসে যে কবি খুঁজেছিলে তুমি
           সে কবি হারিয়ে গেছে গাঢ় অন্ধকারে ছায়াদের মতো
           উতফুল্ল জীবন স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারিনি বলে
          আজও আমার কবিতায় নিদ্রাহীন অশ্রুনদের নোনতা স্বাদ                           মেলে।
          হয়তো আরও কিছুটা বছর পর যখন ফিরে চাইব অতীত                            স্মৃতিগুচ্ছের দিকে
          তখন জীবনের সাদা ক্যানভাসে লিখে যাব আমার মৃত্যু                              চাই,মৃত্যু চাই,মৃত্যু চাই,
           আর চাই এক আকাশ নীল রঙ।

                              অণুগল্প
   
                                    স্বখাতসলিল
                                    মন্টু কুম্ভকার

ত কয়েকদিন বাড়িতে ছিলাম না । কুলুঙ্গিতে রাখা কড়াই টিতে বড্ড ধুলো জমেছে। আমার আবার কমরে অমানুষিক  কনকনানি । এদিকে বউ এর উঁচু গলা আমার মাথা ছাপিয়ে যায়। ধূলো ঝাড়বার ক্ষমতা আমার যেমন নেই ,তেমন চুপটি করে শুনি-দেখি-ভাবি আর নিজেকে হারানোর বাহানা খুঁজি। কখনো সহজ সরল লাইন বানাই : কবিতা।নিন্দুকের মুখ খুলতে শুরু করে।
বার বার অনুনয় করি-হে বিধাতা এক বালতি মৃত্যুই না হয় দাও মাথাটা চুবিয়ে শান্তি পাই!
আমার ক্ষীণ কন্ঠস্বর বুজে যায় বউ এর আঁচলায় । থমকে যাই।আর মৃত্যু নয় এক বালতি জল দিলে তাড়াতাড়ি ভাত টা ফুটিয়ে নিতাম।

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৯


                                 দীর্ঘ বিষাদ শেষে 
                         অনুপম চক্রবর্তী


                            দীর্ঘ বিষাদ শেষে পড়ে থাকে
                           পৃথিবীর শেষ আবাহন
                           রাত্রি নিবিড় হয়
                           আকাশে বিষ্ময়ের চাঁদ
                           চেয়ে থাকে পাড় ভাঙা দূরত্বের মত
                           দীর্ঘ বিকেল শেষে ঘুমের আলাপ
                           আঙুলে শ্রাবণ নামে
                           টুপটাপ আদরের গায়ে
                          পেরিয়ে বাঁকের পরে বাঁক
                           মুগ্ধতা খুঁজে যায়
                          কোন এক দীর্ঘ জীবনে । 


                                 ★ অনুপ্রবন্ধ 
                         কাঁটা তারে ঝুলে থাকা শব
                                        বৈদুর্য সরকার


দেশের সত্তরোর্ধ্ব স্বাধীনতার হাল হয়েছে পেনসন নাথাকা হাঁপানি ও বাতের ব্যাথায় ভোগা খিটখিটে বুড়ো-স্বরাজ বসুর মতো । যার স্ত্রী ভারতী, ছেঁড়া শাড়িতেসাক্ষাৎ ভারতমাতা । ছেলেরা কেউ বাইরে চাকরিকরছে, নকশাল টাইমে একজন মরেছে, কেউ পাড়ারদাদা হয়েছে, কলেজে পড়ার সময় বাড়ি ছেড়েপালানো বড় মেয়ে ডিভোর্স করে বাপের বাড়ি ফিরেএসেছে, আরেক মেয়ে প্রতিবন্ধী – বাইরে বেরোতেপারে না । মানে, যাকে বলে – একদম সুখের সংসার। তবে ভারতমাতার এই সংসারে বাজারে কিছু ধারজমে যাওয়া সত্ত্বেও কোনও রোববার দুপুরে খাসিরমাংসের খুসবু বেরোয়, পুজোয় সবার নতুন জামা হয়,ছাদ দিয়ে বর্ষায় কয়েক ফোঁটা করে জল পড়লেওইলিশ ভাজার গন্ধও পাওয়া যায় এক আধদিন। শীতেরসন্ধেয় ছাদের টবে ফোঁটা বেলফুলের গন্ধ হাওয়ায়ভাসে বেশ । ভারতীর বন্ধু পাশের পাড়ার হাসিনাঈদের দিন সিমুই দিয়ে যায় ।  নাতি নাতনিরাক্রিসমাসের ছুটিতে এসে টুপি আর কেক নিয়েহুটোপাটি করে । সব মিলিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছে দিন ।            
                       ★
চালু ধারণা, ভারতে মানবসভ্যতার ইতিহাস ( সিন্ধুসভ্যতাকে প্রামাণ্য ধরলে ) পাঁচ হাজার বছর ।  এতবছরেও ভারতবাসী সঠিক বুঝে উঠতে পারলো না –তারা আর্য নাকি অনার্য অথবা মঙ্গোল কিংবাককেশীয় । ভারতে এত বছরে এতরকম আক্রমণ এতরাজার রাজত্ব এসেছে – আসল পরিচয়টাই মুছে গেছে। এত লোকের পূর্বপুরুষ কে যে কোথা থেকে এসেছিলকোনও হদিস নেই ! তাই সাড়ে বত্রিশ ভাজার মতোশুধু টিকে আছে একটাই পরিচয় – ইণ্ডিয়ান । যদিওজানা গেল – আজও সবার নাম নথিভুক্ত নয় ।
                       ★
মাধ্যমিক পরীক্ষায় ম্যাপ পয়েন্টিংয়ে যে ম্যাপ দেওয়াহতো – তার অনেকটাই কল্পিত । লজ্জায় মাথা কাটাগেছে – একদিকের অংশ পাকিস্তান অধিকৃত আজাদকাশ্মীর, আরেকদিকে অক্ষয় চীন । সেখানে এখনপ্রতিবেশী দেশের সেনাবাহিনী মোচ্ছব করছে ।অরুণাচল সীমান্তও অরক্ষিত প্রায় – যে কোনও সময়েক্ষমতাসম্পন্ন চীনের হানাদাররা ধেয়ে আসতে পারে ।তিব্বত নিয়েও দীর্ঘদিনের মন কষাকষি । কাশ্মীরেরঅবস্থা প্যালেস্তাইনের মতো – গুলি থামে না । জম্মুই সম্ভবত ম্যাপের ওপর দিকের সেই প্রান্ত যেখানেনির্বিঘ্নে স্বাধীন ভারতের তেরঙা উড়বে পতপত করে ।যদিও এককালে এখান থেকে যে সব পণ্ডিতরা হারিয়েগেছিল, তাদের কোনও খোঁজ মেলেনি  আজও ।
                       ★
স্বাধীনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন সংগঠনবিভিন্নরকম পতাকা ব্যবহার করলেও ১৯৪৭-র ২২জুলাই থেকে অন্ধ্রের পিঙ্গালি ভেঙ্কইয়ার ডিসাইন করাত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা ব্যবহৃত হচ্ছে । স্বাধীনতাকি প্রকৃত অর্থেই ত্রিবর্ণরঞ্জিত নাকি স্বাধীনতার রংসশস্ত্র বিপ্লবীদের রক্তের মতো লাল অথবা বর্ডারপেরোনো মানুষর মতো পাংশু কিংবা কারাগারেরঅন্ধকারের মতো কালো – সে উত্তর জানতে পারিনিএখনও । লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনেরসময় জঙ্গী হামলার খবর যে ভেসে আসবে না – তাইবা কে বলতে পারে ! কেউ কি বলতে পারে সার্বভৌমরাষ্ট্রের ধারণা নস্যাৎ করে – আঞ্চলিক ম্যাপগুলোক্রমাগত বদলে চলেছে কাদের উস্কানিতে !সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বেশ গালভরা একটা কথাহলেও – তা থেকে গেছে বিজ্ঞাপনী প্রচারের মতো ।যেগুলো নিয়মমাফিক প্রচারিত হয় – কেউ বিশেষকান দেয় না । ভারতে সেক্যুলার গপ্পো নিয়ে রাজনীতিকরে একদল, আরেকদল তার উল্টো কথা বলে লোকখ্যাপায় ।
                       ★
ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ার আগে ভারত কখনও সমষ্টি হিসেবেথাকেনি, বেঁচে ছিল অনৈক্য এবং আঞ্চলিকতায় ।মধ্যযুগে মোগল সুলতানরা, খিলজি-লোধি কেউইপারেনি গোটা ভারত একযোগে শাসন করতে । তারআগে মৌর্য গুপ্ত কুষান যুগেও হয়নি সের’মসম্প্রসারণ । স্বাধীনতা এসেছিল যেহেতু দেশভাগেরপরিণতির মাধ্যমে এবং তা মূলত ধর্মের ওপর ভিত্তিকরে, তাই ধর্মের অনুশাসনগুলো নিয়ে আজকেরবিজ্ঞান প্রযুক্তির এতরকম অগ্রগতির পরেও দেশেরঅধিকাংশ মানুষ ভীষণ ভাবিত । ইতিহাস অনুযায়ীপাঞ্জাব ও বাংলার কিছু অংশ স্বাধীনতার সময়অদলবদল হয়েছিল। হায়দ্রাবাদের নিজাম পাকিস্তানেযেতে চেয়েছিল কিন্তু ওখানকার বেশীরভাগ মানুষছিল হিন্দু। আবার কাশ্মীরে উল্টো ব্যাপার । রাজাহিন্দু কিন্তু প্রজারা মুসলমান । পুরোপুরি কনফিউজিংঅবস্থায় র‍্যাডক্লিফের আগোছালো ম্যাপ অনুযায়ীতাড়াহুড়ো করে দেশভাগ করে কংগ্রেস ও মুসলিমলীগের নেতারা গদিতে বসে পড়ে । যার জের এখনওচলছে – হয়তো যতদিন উপমহাদেশে সভ্যতা থাকবে,ততদিন ভাঙন ধরা এককালের যৌথ পরিবারের মতোখিটমিটি লেগেই থাকবে।
                       ★
পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতসক্রিয় থেকেছিল – রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক যেকারণেই হোক । ফলে এই দেশে আশ্রয় দিতে হয়েছেঘর হারানো কোটি মানুষকে । ১৯৭১ থেকে আসামানুষের স্রোত এখনও অব্যাহত – ওদিক থেকেএদিকে । শোনা যায় একই কায়দায় বাংলাদেশ থেকেকলকাতা হয়ে জঙ্গিদেরও অনুপ্রবেশ ঘটছে । যদিওনাকি তারা সেফ করিডর হিসেবে ব্যবহার করারসুবিধের জন্যই কলকাতায় বিশেষ হাঙ্গামা করে না । 
এই অনুপ্রবেশকে আটকাতে – তৈরি হওয়া অসমেরখসড়া জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিতর্ক চলছে,অরুণাচল নিয়েও একই সংকট । ঘরহারাদের মাথাগোঁজার ঠাই যেমন একটা সেন্টিমেন্ট, ভূমিপুত্রদেরজীবন জীবিকা সংক্রান্ত সমস্যাও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ ।তাই তর্কের কোনও শেষ হয় না । বৃহত্তম গণতন্ত্রেসম্ভবত ভোটারের সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে – কয়েককোটি মানুষের সঠিক পরিচয় জানা গেল না আজও।এটাও জানা গেল না – আনুমানিক আরও কত বছরসংরক্ষণ চালু থাকলে অনগ্রসর মানুষেরা দেশেরমুলস্রোতে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব ।

                                     অণুগল্প 

                           ব্রেক আপের পরের পৃষ্টা
                              অনুপকুমার সরকার

প্যাচপ্যাচেভেজা আঁখি পল্লব জোড়ায় শ্রাবণের ধারা বেয়ে চলেছে । মায়ের ডাক শুনে দ্যুতি হকচকিয়ে কোনমতে চোখ মুছে বলল, কী মা ? তোর বাবাকে একবার ফোন করে দেখ তো কোথায় আছে, এতো দেরি হওয়ার তো কথা নয় । যা গরম পড়েছে আজকে । হ্যাঁ মা করছি দাড়াও একটু । সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে তাদের সম্পর্কের । নীলাদ্রি রোজ ফোন করেই যায় ব্রেক আপ হওয়া সত্ত্বেও । জোড়া তালি দিয়ে হলেও সম্পর্কটা রক্ষা করতে চেয়েছিল নীলাদ্রি । সম্পর্কের টানাপোড়েন নয়, কবেই যে ইতি ঘটেছে সেসব ঠাওর করতে পারছে না । বর্ষাকালীন সময়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা কোনো কোনো নদীও একসময়ে শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিনত হয়ে যায় । মাঝে মাঝে মনে হয়, আদৌ কি এখান দিয়ে কোনো নদী বয়ে গেছে । নীলাদ্রি সাথে দ্যুতির সম্পর্কটাও ঠিক ঐ রকম বর্তমানে ।
দ্যুতি মোটেও হতে চায় না অতীত কাহিনীর গল্পের লাইন । সম্পর্কের অবনতি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে । দিন দিন দ্যুতি ঠিক কেমনই যেন হয়ে যাচ্ছে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না । মেয়েটা কম কথা বলে, ঐ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মুখ হাত ধুয়ে জানালার গ্রিল ধরে বসে থাকে । দ্যুতির দুঃখের গাঙ অনেক গভীর । দেখে ঠাওর করার উপায় নাই । বেশ কয়েক দিন ধরেই মা বাবার সাথেও ব্যবহার ঠিক হচ্ছে না, সেটাও উপলব্ধি করতে পারছে দ্যুতি । রাতেও ঠিক সময়ে ঘুমায় না । দিন দিন শরীরের যে কি হাল হচ্ছে, দেখে মনে হয় খুবই অসুস্থ মেয়েটা । রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন জানালার গ্রিল ধরে আঁধফালি বাকা চাঁদকে গোলাকার হতে দেখেছে । আবার পুনরায় গোলাকার চাঁদকে কমতে কমতে সেই আঁধফালি হতে দেখেছে । আর তখন তার নিজের জীবনের গল্প গুলো আর খুনসুটি দেয় না হৃদয়ের জঞ্জালযুক্ত আঙিনায় । রোজ রাতে তার অতীত বৃতান্তের কাছে ধর্ষিতা হয় দ্যুতি । তাকে কামড়ে জখম করে ছিঁড়ে খায় । তখন দ্যুতি একা একাই মিট মিট করে হাসে । একা একাই কত কথকতা কয় । সন্ধ্যার জানালায় দ্যুতি খুঁজে পায় জোনাকির মিট মিটে আলো আর সঙ্গে ঝি ঝি পোকার কলরব । দ্যুতি কেমনই যেন দিন দিন প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার ঘেরার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে । পূর্ণিমার জ্যোৎস্না জানালার গ্রিল ভেঙে যখন বিছানায় আসে দ্যুতি সেই জ্যোৎস্নার আলোর সাথে খুনসুটি করে । আবার অমাবস্যার কালো অন্ধকারেও একটা জোনাকির মৃদু আলো সমস্ত ঘরকে আলোকিত করে দিয়ে যায় ।