ডাগর প্রেমিকা
শ্যামল কুমার রায়
তমার নাগর,আশিক আহমেদ কথা রেখেছিল। ধাপে ধাপে রিপুদের বাড়ির ভোল পাল্টে দিয়েছিল চোরাচালানকারী আশিক আহমেদ। খালি গাড়ি নিয়ে ফেরার পথে হাই রোডে মাঝেসাঝে স্বাদ বদলাতে যেত রিপু। লাম্পট্য এখন ওর ধমনীতে ধাবমান। ছেলের বদ খেয়াল বেশ টের পেয়েছিল তমা। তাই সময় থাকতে ছেলের বিয়ে দেয়ার চেষ্টা শুরু করল। বাস্তবের মাটিতে ঠোকর খাওয়া তমা ছেলে বৌ কে বাড়িতে একটা সুস্থ পরিবেশ দিতে বদ্ধপরিকর ছিল। তাই এতদিন যে নাগর দিনে দুপুরে রাতে নিত্যসঙ্গী ছিল, তার সাথে ঝগড়াঝাঁটি শুরু করেছিল। শেষে রেপ্ কেসের ভয় দেখিয়ে জাঁদরেল আহমেদ সাহেবের আসা ধাপে ধাপে কমিয়ে বন্ধ করে দিল তমা। তমার এই পরিবর্তন বেশ চোখে ঠেকেছিল রিপুর। মায়ের উপর পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে গেল রিপুর। পঁচিশ পার হতে না হতেই বেশ দূরে রিপুর শ্বশুর বাড়ি করে দিল তমা। রিপুর স্ত্রী রিপুর চেয়ে বছর পাঁচছয়েক এর ছোট। ঘরোয়া মেয়ে। বাবার ছোট্ট ফলের স্টল। বয়স সেই সবে কুড়িতে পা দিয়েছিল। নাম স্বাতী। সঙ্গমে মহা পারঙ্গম রিপুর ফুলশয্যা বেশ রসেবশেই কাটল। চরম তৃপ্ত রিপু আর স্বাতী। রাতভোর রক্তক্ষয়ী নিরাভরণ সংগ্রামে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত অথচ তৃপ্ত রিপু - স্বাতীর তাল কাটল; যখন কাক ভোরেই তমা- 'রিপু, ওঠ। সকাল হয়ে গেছে।'- বলে ডেকে উঠল। মেজাজটা খিঁচে গেল রিপুর। বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ছিল, সামলে নিল। বিয়ের লৌকিক আচার অনুষ্ঠান বেশ ভালোভাবেই মিটল। সব কিছুই মধ্যেই কাবাবে হাড্ডির মতো শাশুড়ি মার খিটখিটে মেজাজ,স্বাতীর সব কাজে খুঁত ধরা রিপুর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। না পারছিল বউকে কিছু বলতে, না পারছিল মাকে কিছু বলতে। অশান্তির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল ওদের দাম্পত্যের উপর। এর মধ্যেই স্বাতী ভীষণ উত্যক্ত হচ্ছিল ওর শাশুড়ির নিত্য খুঁত ধরার অভ্যাসের কারণে। ধীরে ধীরে তা সহনশীলতার মাত্রা পার করতে লাগল। রোজ রাতে স্বাতীর এই অভিযোগের ঝাঁপি রিপুরও অসহ্য লাগছিল। শেষে সারাদিন খেটে এসে রিপু সকালের আনাজ কেটে দিত। সাত সকালে উঠে রাস্তার টাইম কল থেকে জল এনে দিত। এমনকি তিনজনের জামা কাপড় কেচে মেলে দিয়ে যেত। সংসারে শান্তি বজায় রাখার জন্য রিপু কত চেষ্টাই করতে লাগল। ফল হল বিপরীত। পাড়ার কাকিমা, মাসিমা, বৌদিদের কাছে ও বৌ এর ভেড়া বনে গেল। সব থেকে তাজ্জব ব্যাপার হল , এই নিন্দেমন্দ তে ওর মা, তমার প্রত্যক্ষ মদত ছিল। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স চালাতে চালাতে অন্যমনস্ক হয়ে পরতে লাগল রিপু। একবার তো প্রাণে বেঁচে গেল বরাতের জোরে। স্বামীর কথা ভেবে স্বাতী সব মুখ বুজে সহ্য করে নেবে ঠিক করল। বাড়ির এই চাপা উত্তেজনা প্রভাবিত করল ওদের দাম্পত্য সম্পর্ককে। শরীরী সুখের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে রাতে সবার অলক্ষ্যে কাঁদত স্বাতী। আর রিপুর কেমন যেন অনীহা চলে এল যৌনতার উপর। এতদিনের বহুগামী রিপু শরীরী তৃপ্তি নিতে ও দিতে ব্যর্থ হতে লাগল। ফলস্বরূপ, অশান্তি , অশান্তি আর অশান্তি।
কিন্তু, ওর এই পৌরুষ নষ্টের কারণ খুঁজে পেতে রোগী নিয়ে যাওয়ার নাম করে একদিন ষোড়শী গমন করল। অশান্তি মুক্ত সঙ্গসুখ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করল। নিজেকে আবিষ্কার করল রিপু। এদিকে ঘরে ফিরে দেখে স্বাতীর গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে উদ্যত ওর মা তমা। আর কালক্ষেপণ না করে ছোট হাতি ভাড়া করে নূন্যতম দরকারী জিনিস নিয়ে এক কাপড়ে স্বাতীর হাত ধরে পা বাড়াল এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।